Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পর্যাপ্ত মজুদেও দাম বেড়েছে লবণের

সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে সরকার

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৩ জুলাই, ২০২১, ১২:০১ এএম

প্রতিবছর কোরবানির ঈদ এলেই চামড়া ও তাতে ব্যবহৃত অন্যতম অনুসঙ্গ লবন নিয়ে শুরু হয় সিন্ডিকেট। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। পর্যাপ্ত মজুদ থাকা সত্ত্বেও ঈদের এক সপ্তাহ আগেই চামড়া সংরক্ষণের প্রধান উপাদান লবণের দাম বেড়েছে। এক সপ্তাহ আগেও যেখানে প্রতি বস্তা লবণ বিক্রি হতো ৫৫০ টাকায়, কয়েক দফা বেড়ে এখন এক বস্তা লবন বিক্রি হচ্ছে ৭০০ টাকা দরে। তবে লবন সিন্ডিকেটের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে সরকার। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রতিবারই সংকটের কথা বলে একটি অসাধু চক্র কোরবানির আগে লবণের দাম বাড়িয়ে দেয়। এবারও তারাই দাম বাড়াচ্ছে। পাইকার ও আড়ৎদারদের দাবি সরবরাহের ঘাটতির কারণে দাম সামান্য বেড়েছে। তবে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে চাহিদার তুলনায় দেশে লবণের পর্যাপ্ত মজুদ আছে। সিন্ডিকেট করে যারা দাম বাড়াবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ার করা হয়েছে। কাঁচাচামড়া সংরক্ষণের সঙ্গে জড়িত পোস্তার ব্যবসায়ীরা বলছেন, কোরবানির আগে লবণের দাম বেড়ে যাওয়ায় চামড়া সংরক্ষণের খরচ বাড়বে। আবার অনেকে ব্যয় কমাতে গিয়ে প্রয়োজনের তুলনায় কম লবণ ব্যবহার করবে। এতে করে চামড়ার গুণগত মান নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকছে। লালবাগ লবণের খুচরা ব্যবসায়ী আল-আমিন বলেন, কোরবানির পশু চামড়া সংরক্ষণে ব্যবহৃত আয়োডিন বিহীন মোটা লবণের প্রতি বস্তা (৭৫ কেজি) এখন ৬৮০ টাকা থেকে ৭০০ টাকায় বিক্রি করছি, যা ১০ থেকে ১৫ দিন আগে ছিল ৫৫০ টাকা। পাইকারি ও আড়ৎদাররা দাম বেশি নিচ্ছে তাই আমাদের বাধ্য হয়ে বেশি মূল্যে বিক্রি করতে হচ্ছে বলে তিনি জানান। এ লবণ গবাদিপশুকে খাওয়ানোর ও ডাইং কারখানায়ও ব্যবহৃত হয়।

বাংলাদেশ লবণ মিল মালিক সমিতির সাবেক সভাপতি পরিতোষ কান্তি সাহা বলেন, চাষীরা ক্রুড লবণের (মোটা লবণের কাঁচামাল) দাম বাড়িয়েছে। এছাড়া সরবরাহ কম ছিল। এ কারণে কোরবানির পশু চামড়া সংরক্ষণে ব্যবহৃত মোটা লবণের দাম প্রতি কেজিতে দেড় থেকে দুই টাকা বেড়েছে। এক বস্তায় ৭৫ কেজি থাকে অর্থাৎ প্রতি বস্তায় দাম বেড়েছে ১৫০ টাকা। লবণের পর্যাপ্ত মজুদ আছে বলে দাবি করছে সরকার। তাহলে কেন দাম বাড়ছে? জানতে চাইলে লবণ মিল মালিকের সাবেক এ নেতা বলেন, যদি মজুদ পর্যাপ্তই থাকতো তাহলে দাম কেন বাড়ে। সরকারের কাছে যে মজুদের তথ্য আছে তা সঠিক নয়। তাদের তথ্য সঠিক হলে সংকটের কারণে বাজারে দাম বাড়তো না।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব হাজি টিপু সুলতান বলেন, সারা বছরে যে পরিমাণ কাঁচা চামড়া সংগ্রহ হয়, তার ৫০ শতাংশই আসে কোরবানিতে। প্রতি বছর দেখা যায়, কোরবানি সামনে রেখে চামড়া সংরক্ষণের প্রধান উপাদান লবণের কৃত্রিম সংকট তৈরি হয়। এবারও গত কয়েক সপ্তাহ ধরে লবণের দাম ঊর্ধ্বমুখী। আগে যে লবণের বস্তা ছিল ৫৫০ টাকা, এখন তা কিনতে হচ্ছে ৬৮০ থেকে ৭০০ টাকায়। এ বিষয়ে সরকারের কোনো পদক্ষেপ নেই।

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) তথ্য অনুযায়ী, চলতি লবণ মৌসুমে লবণ মাঠে ১৬ লাখ ৫১ হাজার টন ক্রুড লবণ উৎপাদন হয়েছে। চলতি লবণ মৌসুমে নতুন লবণ আসার আগ পর্যন্ত পুরাতন লবণের মজুদ ছিল তিন লাখ ৪৮ হাজার টন। সব মিলিয়ে মোট লবণের পরিমাণ ১৯ লাখ ৯৯ হাজার টন। চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত মাঠ ও মিল পর্যায়ে লবণের মোট মজুদ ছিল ১১ লাখ ৪৫ কোটি টন (লবণ মাঠে নয় লাখ ৬০ হাজার টন এবং মিলে লবণ এক লাখ ৮৫ হাজার টন)। এছাড়াও, দেশের বিভিন্ন জেলায়, উপজেলায় অবস্থিত ডিলার, পাইকারি, খুচরা বিক্রেতাদের কাছে পর্যাপ্ত লবণ মজুদ আছে। বিসিক চেয়ারম্যান মোশতাক হাসান বলেন, একটি অসাধু চক্র বেশি মুনাফার লোভে কোরবানির আগে দাম বাড়াচ্ছে। যার কোনো যৌক্তিক কারণ নেই। কারণ দেশে এখন চাহিদার তুলনায় পর্যাপ্ত লবণ মজুদ আছে। আমরা মিল মালিকদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা জানিয়েছেন দাম বাড়বে না। তারপরও যারা দাম বাড়াচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও তিনি জানান। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ঈদুল আজহায় সম্ভাব্য কোরবানি যোগ্য পশুর সংখ্যা এক কোটি ১৮ লাখ। এর মধ্যে গরু ও মহিষ ৪৫ লাখ ৩৮ হাজার এবং ছাগল ও ভেড়া ৭২ লাখ ৫৬ হাজার। কোরবানি যোগ্য পশুর সংখ্যার ভিত্তিতে প্রতিটি গরু-মহিষের চামড়া সংরক্ষণে ১০ কেজি এবং ছাগল ও ভেড়ার চামড়া সংরক্ষণে পাঁচ কেজি লবণের প্রয়োজন হয়; যার পরিমাণ ৮১ হাজার ৮২০ টন। ঈদুল আজহায় দেশব্যাপী কোরবানির পশুর চামড়া সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণের জন্য কম-বেশি এক লাখ টন লবণের সম্ভাব্য চাহিদা ধরা হয়েছে। এ হিসাবে বর্তমানে মজুদ করা লবণ দিয়েই আসন্ন ঈদে কোরবানির পশুর চামড়া সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণসহ ভোজ্য লবণের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: লবণ

১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২১

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ