Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

উপকূলবর্তী জমিতে লবণাক্ত সহিষ্ণু গম উদ্ভাবন

কলাপাড়া (পটুয়াখালী) উপজেলা সংবাদদাতা : | প্রকাশের সময় : ২৩ মার্চ, ২০২১, ১২:০২ এএম

উপকূলবর্তী এলাকায় জমিতে লবণাক্ত সহিষ্ণু নতুন জাতের গম উদ্ভাবন করেছেন গবেষকরা। পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার নীলগঞ্জ ইউনিয়নের হাজিপুর গ্রামের সোনাতলা নদীর পাড়ে লবণাক্ত জমিতে গম চাষে সফলতা পেয়েছেন। এর ফলে এলাকার হাজার হাজার একর পতিত জমি চাষাবাদের আওতায় আসবে। উৎপাদন বাড়বে খাদ্য শস্যের। খাদ্য ঘাটতির সাগর পাড়ের এলাকা পরিণত হবে খাদ্য উদ্বৃত্ত এলাকা হিসেবে। দীর্ঘ চার বছর লবণাক্ত জমিতে গবেষণার পরে এমনটাই জানিয়েছেন গবেষণায় সংশ্লিষ্টরা।
বাংলাদেশ গম ও ভূট্টা গবেষণা ইনস্টিটিউট’র সাইন্টিফিক অফিসার ড. এম মোস্তফা খান জানান, এ অঞ্চলে শুধু লবণাক্তাই সমস্যা নয়। সেচযোগ্য পানিরও সমস্যা রয়েছে। মূলত: এই দুই সমস্যার কারণে এই অঞ্চলে এক লাখ হেক্টরেরও বেশি জমি শুস্ক মৌসুমে অনাবাদী থাকে। এসব জমিকে আবাদযোগ্য করার লক্ষ্যে অস্ট্রেলিয়ার এসিআইএআর এবং বাংলাদেশের কেজিএফ এর অর্থায়নে ইউনিভার্সিটি অব ও ওয়ের্স্টান অস্ট্রেলিয়া, সিএসআইআরও, বাংলাদেশে কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ গম ও ভূট্টা গবেষণা ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এবং এগ্রেরিয়ান রিসার্চ ফাউন্ডেশন যৌথ প্রকল্পের আওতায় ২০১৭ সাল থেকে গবেষণার কাজ শুরু করেন।
তিনি আরো বলেন, এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলের জন্য লবণাক্ততা ও প্রতিকূলতা সহিষ্ণু গম ও ডাল জাতীয় ফসলের জাত ও প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা। এই প্রকল্পের আওতায় বাংলাদেশ গম ও ভূট্টা গবেষণা ইনস্টিটিউট এবং অস্ট্রেলিয়ার সিএসআইআর ও যৌথভাবে গম ফসলের জাত এবং প্রযুক্তি উদ্ভাবনে গত চার বছর ধরে কাজ করছেন। প্রকল্পের আওতায় প্রথম দুই বছরের গবেষণা থেকে বাংলাদেশ গম ও ভ‚ট্টা গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত দুইটি অগ্রবর্তী লাইন বিএডাবিøউ-১১৪৭ ও বিএডাবিøউ-১২৯০কে লবণাক্ততা সহিষ্ণু জেনোটাইপ হিসেবে সনাক্ত করা হয়েছে। এই দুইটি লবণাক্ত সহিষ্ণু জাতের সাথে বারিগম ২৫ ও বøাস্ট রোগ প্রতিরোধী জিংক সমৃদ্ধ জাত বারিগম ৩৩ পটুয়াখালী, খুলনা ও সাতক্ষীরায় প্রদর্শনী করা হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৯-২০২০ মৌসুমে বিএডাবিøউ জেনোটাইপটি জাতীয় বীজ বোর্ড কতৃক লবণাক্ত সহিষ্ণু জাত হিসেবে অবমুক্তির জন্য মূল্যায়ন করা হয়েছে।
এরই মধ্যে পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার নীলগঞ্জ ইউনিয়নের হাজিপুর গ্রামের সোনাতলা নদীর পাড়ে লবণাক্ত জমিতে গম চাষ মাঠ প্রদর্শনী সরজমিনে পরিদর্শন করেছেন বাংলাদেশ গম ও ভূট্টা গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. মো. এছরাইল হোসেন, ইউনিভার্সিটি অব ওয়ের্স্টান অষ্ট্রেলিয়ার ডেপুটি প্রজেক্ট লিডার ড. এম. জি নিয়োগী, বাংলাদেশ গম ও ভূট্টা গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. গোলাম ফারুক, বাংলাদেশ গম ও ভূট্টা গবেষণা ইনস্টিটিউটের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. মোস্তফা খান ও কলাপাড়া উপজেলা কৃষি অফিসার আবদুল মান্নান। এ সময় স্থানীয় কৃষকরা উপস্থিত ছিলেন।
হাজিপুর গ্রামের গম চাষি কালাম খান বলেন, তিনি এবছর সাড়ে সাত বিঘা পরিত্যক্ত জমিতে গম চাষ করেন। ধান চাষ করতে যে পরিমাণ খরচ হয় গম চাষে খরচ হয় তার অর্ধেক। তার এ গম চাষ দেখে একই গ্রামের আবুল বাশার ফরাজী দুই বিঘা জমিতে গম চাষ করেন। এছাড়া গিয়াস উদ্দিন হাওলাদার, রহিম ভ‚ইয়াসহ আরও অনেক কৃষক তাদের পরিত্যক্ত জমিতে গম চাষ করেছেন।
ইউনিভার্সিটি অব ওয়ের্স্টান অষ্ট্রেলিয়ার ডেপুটি প্রজেক্ট লিডার ড. এম. জি. নিয়োগী বলেন, উপকূলীয় অঞ্চলের পতিত জমিতে চাষাবাদ করলে গম আমদানির ওপর নির্ভরতা কমবে। লবণাক্ততা সহিষ্ণু গমের জাত ব্যবহার করে উপক‚লীয় অঞ্চলের বিস্তীর্ণ পতিত জমিতে আমন ধানের পর একই জমিতে শুস্ক মৌসুমে গম আবাদ করে কৃষকরা লাভবান হবে এবং দেশ হবে দারিদ্রমুক্ত।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ