চরিত্র মানুষের শ্রেষ্ঠতম অলঙ্কার
সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাত- মানবজাতি। এ শ্রেষ্ঠত্ব মানুষ তার চরিত্র দিয়ে অর্জন করে নেয়।
ফিরোজ আহমাদ
নবীজীর নিকট সাহাবীরা আরজ করলেন, আল্লাহর নিকট ব্যবসায়ীদের মর্যাদা কিরূপ? হযরত রাসূল (সা.) বললেন, সৎ ব্যবসায়ীরা আল্লাহর বন্ধু। ব্যবসায়ীরা শত বস্ততার মধ্য থেকেও আল্লাহর স্মরণে সময় ব্যয় করে। সালাত আদায় করে। নামাজের জামায়াতে শামিল হয়। যাকাত প্রদান করে। ব্যবসায়ীরা মুমিনের দলভুক্ত। হযরত রাসূল (সা.) সৎ, নিষ্ঠাবান ও আদর্শ ব্যবসায়ীদের খুব পছন্দ করতেন। হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রা.) হতে বর্ণিত হয়েছে, হযরত রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘সত্যবাদী ও আমানতদার ব্যবসায়ী কিয়ামতের দিন নবী, সিদ্দিক এবং শহীদের সাথে থাকবে’। (তিরমিযি)। কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, এরা এমন লোক (মুমিন ব্যবসায়ী) যাদেরকে ব্যবসা বাণিজ্য ক্রয়-বিক্রয় আল্লাহর স্মরণ (যিকির) থেকে বিরত রাখে না, সালাত কায়েম করা থেকে এবং যাকাত প্রদান করা থেকে বিরত রাখে না। তারা ভয় করে সেই দিনকে, যেদিন অন্তর ও দৃষ্টি সমূহ উল্টে যাবে। পরিণামে তাদের সৎ কাজের জন্য আল্লাহ যাকে ইচ্ছা অপরিমিত জীবিকা দান করেন’। (সূরা নূর, আয়াত ঃ ৩৭,৩৮)।
হারাম নেশাজাতীয় খাদ্যদ্রব্য বিক্রয় করে অর্থ উপার্জন করলে গুনাহগার হতে হয়। হারাম খাদ্যবস্তু বিক্রয় করে অর্থ উপার্জন করা সম্পর্কে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) হতে বর্ণিত হয়েছে, হযরত রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘কোন বান্দা হারাম পন্থায় উপার্জিত অর্থ দানখয়রাত করলে তা (আল্লাহর দরবারে) কবুল হবে না এবং নিজ কাজে ব্যয় করলে তাতে বরকত হবে না। আর এরূপ অর্থ তার ওয়ারিসদের জন্য রেখে গেলে তা তার জন্য দোযখের মূলধন হবে’। (আহমদ, শরহে সুন্নাহ)। হযরত উবাইদা (রা.) হতে বর্ণিত হয়েছে, হযরত রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘হারাম ও বেজাল মিশ্রিত খাদ্যবস্তু বিক্রয়কারী ব্যবসায়ীরা ফাসেক ও গুনাহগারদের কাতারে উপস্থিত হবে’।
সৃষ্টির কল্যাণে ও মানুষের সেবার উদ্দেশ্যে হালাল ব্যবসা করার নিয়ত করাও একটি উত্তম ইবাদত। হযরত উমর ইবনে খাত্তাব (রা.) হতে বর্ণিত হয়েছে, একদিন সাহাবীরা আরজ করল, ইয়া রাসূলুল্লাহ (সা.)! কোন প্রকারের কামাই উত্তম? তিনি বললেন, নিজ হাতের কামাই এবং হালাল ব্যবসার উপার্জন’। (আহমদ)। হালাল খাদ্য না খেলে ইবাদত কবুল হয় না। তাই নিজ হাতের দ্বারা উপার্জন করা উত্তম। আর যে ব্যবসা মানুষের দুঃখ-কষ্ট বাড়িয়ে দেয় তা কোরআন হাদিস মোতাবেক বৈধ ব্যবসা নয়। অধিক মুনাফার লোভে বাজারে খাদ্যবস্তুর কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির মাধ্যমে মানুষকে কষ্ট দিলে গুনাহগার হতে হয়। এ প্রসঙ্গে হযরত উমর ইবনে খাত্তাব (রা.) হতে বর্ণিত হয়েছে, ‘হযরত রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি মুসলমানদের উপর অভাব-অভিযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে খাদ্যবস্তু গুদামজাত করবে, মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে দরিদ্র এবং কুষ্ঠরোগে আক্রান্ত হওযার আশংকা থাকবে’। (ইবনে মাজাহ, বায়হাকী, শোয়াবুল ঈমান)। হযরত মা’মার (রা.) হতে বর্ণিত হয়েছে, ‘হযরত রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি খাদ্যবস্তু গুদামজাত করে, সে গুরুতর অপরাধী। খাদ্যবস্তু গুদামজাতকারী গুনাহগার হিসেবে বিবেচিত হবে। (মুসলিম শরীফ)।
ব্যবসায় সততার লক্ষণ হলো ওজনে সঠিক দেয়া। পরিমাপে কম দেয়া গুনাহ। এ প্রসঙ্গে কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা মেপে দেয়ার সময় পূর্ণ মাপে দেবে এবং ওজন করবে সঠিক দাঁড়িপালায়, এটাই উত্তম ও পরিণামে উৎকৃষ্ট’। (সূরা বনিইসরাঈল, আয়াত ঃ ৩৫)। ব্যবসায়ীরা খাদ্যদ্রব্য সংগ্রহ করে বাজারে বিক্রয় করে। আর কোনো ব্যবসায়ী যদি মনে করেন যে তার সংগৃহীত খাবার খেয়ে মানুষ আল্লাহর গুণকীর্তন করবে। নামাজ পড়বে। রোজা রাখবে। সুস্থ থাকবে। তখন ব্যবসায়ীর পুরো ব্যবসা ইবাদত হিসেবে গণ্য হয়ে যাবে। আর আল্লাহ সৎ ব্যবসায়ীকে গায়েব থেকে অপরিমিত বরকত দান করবেন। ব্যবসার পরিধি বাড়িয়ে দিবেন। ব্যবসা বাণিজ্যে সততা বজায় রাখার জন্য আল্লাহ সকলকে তৌফিক দান করুক। আমীন।
লেখক: ইসলামিক চিন্তাবিদ ও সুফি তাত্ত্বিক গবেষক
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।