Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দক্ষিণাঞ্চলে সাড়ে ৩ হজার কোটি টাকা ব্যায়ে ৩টি সেতুর নির্র্মান কাজ আগামী জুনের মধ্যে শেষ হচ্ছে

কুয়েত জাপান চীন ওপেক এবং বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে এসব সেতু উন্নয়নের মাইল ফলক হয়ে উঠেবে

বরিশাল ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ১০ জুলাই, ২০২১, ৬:২৮ পিএম

কুয়েত, জাপান,চীন, ওপেক এবং বাংলাদেশ সরকারের সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা ব্যায়ে নির্মানাধীন ৩টি সেতু দক্ষিণাঞ্চলের আর্র্থ-সামজিক ব্যবস্থায় বড় ধরনের মাইলফলক হয়ে উঠতে যাচ্ছে। পদ্মা সেতু চালুর আগেই ঢাকাÑফরিদপুরÑবরিশালÑকুয়াকাটা মহাসড়কের লেবুখালীতে ‘পয়রা সেতু’, চট্টগ্রাম-বরিশালÑখুলনা-যশোর-বেনাপোল মহাড়কের বেকুঠিয়ায় ‘চীন-বাংলাদেশ ৮ম মৈত্রী সেত’ু এবং বরিশালÑগোপালগঞ্জ-যশোর মহাসড়কের ‘কালনা সেতু’র নির্মান কাজ শেষ হচ্ছে। এ লক্ষে পরিকল্পনা কমিশন এবং সড়ক ও সেতু মন্ত্রনালয়ের কঠোর নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ চলছে।

যদিও করোনা মহামারী সহ লকডাউনের কারনে প্রকল্পে নিয়োজিত চীন ও জাপানী প্রকৌশলীদের আসা যাওয়া সহ সেতুর সরঞ্জামাদী পরিবহন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে, তবুও সংশ্লিষ্ট নির্মান প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ এগিয়ে নেয়ার সর্বত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে বলে জানিয়েছেন সড়ক অধিদপ্তরের প্রকল্প কর্মকর্তাগন।
এরমধ্যে লেবুখালীর পায়রা সেতুর নির্মান কাজ অগামী মাসেই শেষ হবার পরে প্রধানমন্ত্রী তা অনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধনের লক্ষে প্রাথমিক কার্যক্রমও শুরু হয়ে গেছে। বরিশাল-পটুয়াখালী-কুয়াকাটা মহাসড়কের লেবুখালীতে এক হাজার ৪৪৭ কোটি ২৪ লাখ টাকা ব্যায় সাপেক্ষ ৪ লেনের ‘পায়রা সেতু’ নির্মানে কুয়েত এবং ওপেক উন্নয়ন তহবিল থেকে ১ হাজার ৭৯ কোটি টাকা এবং বাংলাদেশ নিজস্ব তহবিল থেকে ৩৬৮ কোটি টাকা ব্যায় হচ্ছে। ‘এক্সট্রা ডোজ প্রী-স্ট্রেসড বক্স গার্ডার’ টাইপের এ সেতুটির সাথে এক হাজার ২৬৮ মিটার সংযোগ সড়ক এবং প্রায় দেড় কিলোমিটার নদী শাষন কাজ চলছে। টোল প্লাজা সহ প্রকল্পের সার্বিক কাজের প্রায় ৯৮ভাগ শেষ হয়েছে। শুধু নদী শাষনের কিছু কাজ বাকী থাকলেও তা চলমান অবস্থায়ই সেতুটি যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হবে।
পায়রা সেতু চালু হলে ঢাকা সহ সারা দেশের সাথে কুয়াকাটা পর্যটন কেন্দ্র এবং পায়রা সমুদ্র বন্দর ফেরি বিহীন সড়ক যোগাযোগে যুক্ত হবে। এর ফলে ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে কুয়াকাটা পৌছা যাবে মাত্র ৭ ঘন্টায়। এমনকি সারা দেশের সাথে কুয়াকাটার দুরত্ব হবে কক্সবাজারের প্রায় অর্ধেক। চীনের ‘লংজিয়ান রোড এন্ড ব্রীজ কোম্পানী লিমিটেড’ সেতুটির নির্মান কাজ সম্পন্ন করছে। এ সেতুর মাধ্যমে পায়রা সমুদ্র বন্দরের সাথে সারা দেশের মত চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দরের সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপিত হবে।
পায়রা নদীর মূল অংশের ৬৩০ মিটার ‘বক্স গার্ডার’ ৪টি স্প্যানের ওপর নির্মিত হয়েছে। যার মূল অংশ ২শ মিটার করে দুটি স্প্যান ১৮.৩০ মিটার ভার্টিক্যল ক্লিয়রেন্স রাখা হয়েছে পায়রা সমুদ্র বন্দরে উপক’লীয় পণ্য ও জ¦ালানীবাহী নৌযান চলাচলের জন্য। এছাড়া সেতুর মূল অংশের দুপ্রান্তে ৮৪০ মিটার ভায়াডাক্ট-এ ৩০ মিটার করে ২৮টি স্প্যানে বর্ধিত অংশের ভার বহন করছে। লেবুখালী সেতুর ৩২টি স্প্যান এখন দাড়িয়ে আছে ৩১টি পিয়ার-এর ওপর। সেতুটির ২৮টি স্প্যানের ১২টি বরিশাল প্রান্তে এবং ১৬টি পটুয়াখালী প্রান্তে।
চট্টগ্রাম বরিশাল ও খুলনা বিভাগের মধ্যে বিদ্যমান উপক’লীয় মহাসড়কটিতে যানবাহন চলাচল নির্বিঘœ করা সহ দেশের ৩টি সমুদ্র বন্দরকে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ নেটওয়র্কে আনতে পিরোজপুরের বেকুঠিয়ার কঁচা নদীর ওপর চীন সরকারের অনুদানে প্রায় দেড় কিলোমিটার দীর্ঘ ‘চীন-বাংলাদেশ ৮ম মৈত্রী সেতু’র নির্মান কাজ ইতোমধ্যে ৭২ ভাগ শেষ হয়েছে। মূল সেতুটি নির্মানে চীন সরকার সম্পূূর্র্ণ অনুদান প্রদান করছে প্রায় ৬৫৫ কোটি টাকা। প্রায় ১৬৫ কোটি টাকা বাংলাদেশ সরকার ব্যায় করছে। আগামী জুনের মধ্যে এ সেতুটির নির্মানকাজ সম্পন্ন হলে চট্টগ্রামÑবরিশাল ও সমগ্র খুলনা বিভাগ এবং বেনাপোল ও ভোমড়া স্থল বন্দরের সহজতর সড়ক যোগাযোগ প্রতিষ্ঠিত হবে। এমনকি চট্টগ্রাম বিভাগের সাথে বরিশাল ও খুলনা বিভাগের সড়ক পথে দুরত্ব প্রায় ২শ কিলোমিটার পর্যন্ত হৃাস পাবে।
‘চায়না রেলওয়ে ১৭তম ব্যুরো গ্রুপ কোম্পানী লিমিটেড’ ৯টি স্প্যান ও ৮টি পিয়ার বিশিষ্ট এ সেতুটি নির্মান করছে। সর্বোচ্চ জোয়ারের চেয়ে ৬০ ফুট উচ্চতায় নির্মানাধীন সেতুটির নিচ দিয়ে চট্টগ্রাম এবং বরিশাল থেকে মোংলা সমুদ্র বন্দর সহ খুলনা নদী বন্দরের সাথে পণ্য ও জ¦ালানিবাহী বড় ধরনের নৌযান ছাড়াও নৌবাহিনীর ফ্রিগেট সমুহের চলাচলও নির্বিঘœ থাকবে। কঁচা নদীর মধ্যভাগে সেতুটির সবচেয়ে বড় স্প্যানটিতে ১২২ মিটার এলাকা নৌযান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত রাখা হচ্ছে।
পিরোজপুরের কঁচা নদীর ৯৯৮ মিটার মূল সেতুটির উভয় প্রান্তে আরো ৪৯৫ মিটার ভায়াডাক্ট নির্মিত হচ্ছে। ১৩.৪০ মিটার প্রস্থ সেতুটির পিরোজপুর ও বরিশাল প্রান্তে ১ হাজার ৪৬৭ মিটার সংযোগ সড়ক সহ পয়ঃনিস্কাশন ব্যবস্থা নির্বিঘœ রাখতে আরো ২টি সেতু ও বক্স কালভার্ট নির্মিত হচ্ছে। ইতোমধ্যে সেতুটির ৯২টি পাইল ও ১০টি পাইল ক্যাপ ছাড়াও ভায়াডাক্ট, সেতুর সব পাইল ও পাইল ক্যাপের নির্মান সম্পন্ন হয়েছে। মূল সেতুর ১০টি পিয়ার ও পিয়ার ক্যাপ এবং ভায়াডাক্টের পিয়ারও সম্পন্ন হয়েছে। মূল সেতুর সুপার স্ট্রাকচারের বক্স গার্ডার ও স্লাব নির্মানের কাজও শুরু হয়েছে। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের প্রকল্প ব্যবস্থাপক মাসুদ মাহমুদ সুমন জানান, পরিকল্পপনা কমিশনের নির্দেশনার আলোক আগামী ৩০ জুনের মধ্যে সেতুটির নির্মান কাজ শেষ করার লক্ষে সব ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
অপরদিকে জাপানী সহায়তায় বরিশাল Ñ গোপালগঞ্জ Ñ নড়াইল Ñ যশোর Ñ বেনাপোল এবং ঢাকা Ñ ভাংগা Ñ যশোর Ñ বেনাপোল মহাসড়কের কালনা’তে মধুমতি নদীর ওপর ৯৫৯ কোটি টাকা ব্যায়ে দেশের প্রথম ৬লেন ‘কালনা সেতু’র নির্র্মান কাজও আগামী ৩০ জুনের মধ্যে শেষ হচ্ছে। সাড়ে ৪ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক সহ কালনা সেতু নির্মানে জাইকা সহজ শর্তে ঋন দিচ্ছে ৭৫৩ কোটি টাকা। বাংলাদেশ সরকার ব্যায় করছে ২০৬ কোটি টাকা। ৫৯০ মিটার দীর্ঘ সেতুটির মধ্যবর্তি অংশে ১৫০ মিটার অংশ ‘নিয়েলসান লোস আর্থ টাইপ স্টিল ব্রীজ’ নির্মন করা হচ্ছে। এ অংশটি জাপানে নির্মান করে বিযুক্ত অবস্থায় প্রকল্প এলাকায় নিয়ে এসে সংযুক্ত করা হচ্ছে। জাপানের ‘টেককেন-এএমএল-ওয়াইডিসি জেভি’ নামের প্রতিষ্ঠান সেতুটির নির্মান কাজ আগামী বছরের জুনের মধ্যে শেষ করবে। ১২টি পিয়ার-এ ১৩টি স্প্যানের ওপর নির্মানাধীন এ সেতুটির এবাটমেন্ট ছাড়াও সংযোগ সড়কে একাধীক কালভার্ট ও আন্ডারপাস নির্মান করা হচ্ছে।
কালনা সেতু নির্মানের ফলে যশোর ও বেনাপোলের সাথে রাজধানী ঢাকা ছাড়াও দক্ষিণাঞ্চলের সাথে সংক্ষিপ্ত ও ফেরি বিহীন সড়ক যোগাযোগ প্রতিষ্ঠিত হবে। এমনকি দেশের প্রধান স্থল বন্দর বেনাপাল ও ভোমড়া’র সাথে বরিশাল ও ঢাকা বিভাগের সড়ক পথে দুরত্ব ৫০ থেকে দেড়শ কিলোমিটার পর্যন্ত হৃাস পাবে। ঢাকাÑমাওয়া মহাসড়ক সহ পদ্মা সেতুর পরিপূর্ণ ব্যবহারও নিশ্চিত হবে। প্রকল্প পরিচালক শ্যামল কুমার জানিয়েছেন, পদ্ম সেতু চালু আগেই কালনা সেতু যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মূক্ত করার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সেতু

১১ জানুয়ারি, ২০২৩
৩১ অক্টোবর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ