Inqilab Logo

রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জিলহজ মাসের প্রথম ১০ দিন খুবই মর্যাদাপূর্ণ

খুৎবা-পূর্ব বয়ান

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১০ জুলাই, ২০২১, ১২:০০ এএম

পবিত্র জিলহজ মাসের প্রথম ১০ দিন খুবই মর্যাদাপূর্ণ। আল্লাহ তায়ালা সুরা আল-ফজরে এরশাদ করেন, ‘শপথ ফজরের, শপথ ১০ রাতের’। গুরুত্ব বুঝাতে আল্লাহ তায়ালা যেই ১০ রজনী দিয়ে শপথ করেছেন, অধিকাংশ তাফসিরকারীদের মতে সেই ১০ রাত্রি বলতে জিলহজ মাসের প্রথম ১০ দিন। জিলহজ মাসের নয় তারিখের দিনে আল্লাহ তায়ালা সবচাইতে বেশি বান্দাদের জাহান্নাম থেকে মুক্তি দান করেন। গতকাল জুমার খুৎবা পূর্ব বয়ানে মসজিদের পেশ ইমাম এসব কথা বলেন। যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে রাজধানীর বিভিন্ন মসজিদে প্রচুর মুসল্লির সমাগম ঘটে।

বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের পেশ ইমাম ও ভারপ্রাপ্ত খতিব মুফতি মুহাম্মদ মুহিববুল্লাহিল বাকী গতকাল জুমার খুৎবা পূর্ব বয়ানে বলেন, আসন্ন পবিত্র জিলহজ মাসে হজ ও কোরবানি ছাড়া আরো কিছু ইবাদত রয়েছে। কেননা জিলহজ মাসের প্রথম ১০ দিন খুবই মর্যাদাপূর্ণ। আল্লাহ তায়ালা সুরাআল-ফজরে বলেন, ‘শপথ ফজরের, শপথ ১০ রাতের’। গুরুত্ব বুঝাতে আল্লাহ তায়ালা যেই ১০ রজনী দিয়ে শপথ করেছেন অধিকাংশ তাফসিরকারীদের মতে, সেই ১০ রাত্রি বলতে জিলহজ মাসের প্রথম ১০ দিন। হজরত আব্দুলাহ ইবনে ওমর (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, জিলহজ মাসের প্রথম দিনের আমল অন্য দিনের আমলের চাইতে আল্লাহ তায়ালার কাছে অধিক প্রিয় ও মর্যাদাপূর্ণ। অতএব, এই দিনগুলোতে তোমরা বেশি বেশি তাহলিল তথা লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ পড়, তাহমিদ তথা আলহামদুলিল্লাহ পড়, তাকবীর তথা আল্লাহু আকবর পড়। আল্লাহ তায়ালা সুরাহজে ইরশাদ করেনÑ ‘তারা যেন নির্ধারিত দিনগুলোতে জিকির করেন’। নির্ধারিত দিন বলতে জিলহজ মাসের প্রথম ১৩ দিনের কথা বলা হয়েছে। জিলহজ মাসের প্রথম আটদিন ঘরে-বাইরে, দোকান ও কর্মক্ষেত্রে মৃদুস্বরে প্রত্যেক মুসলমানের জন্য জিকির করা অধিক ফজিলত পূর্ণ। যেই আমলটি বর্তমানে মুসলমানদের থেকে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। তবে ৯ তারিখের ফজর থেকে ১৩ তারিখের আসর পর্যন্ত প্রত্যেক নামাজের পরে উচ্চস্বরে তাকবির পড়া ওয়াজিব। মহিলারা আস্তে আস্তে তাকবির পড়বেন।

এই ১০ দিনের অন্য একটি মুস্তাহাব আমল হলো রোজা রাখা। হজরত হাফসা (রা.) বলেন, আমি চারটি আমল রাসুল (সা.) কে ছাড়তে দেখিনি। আশুরার রোজা, জিলহজ মাসের প্রথম ১০ দিনের রোজা, প্রত্যেক মাসের চাঁদের তের, চৌদ্দ, পনের তারিখের রোজা, ফজরের দুই রাকাত সুন্নাহ। উল্লেখ্য যে, জিলহজ মাসের প্রথম ১০ দিনের রোজা বলতে প্রথম ৯ দিন পূর্ণরোজা, আর কোরবানির দিন কিছু না খেয়ে কোরবানির গোশত দিয়ে প্রথমে কিছু খাওয়া মুস্তাহাব তথা দিবসের কিছু অংশ রোজা। এরকমভাবে কোরবানি দিতে ইচ্ছুক ব্যক্তিরা জিলহজ মাসের চাঁদ দেখা যাওয়ার পর কোরবানি করা পর্যন্ত নখ-চুল না কাটাও মুস্তাহাব। জিলহজ মাসের প্রথম ১০ দিনের সব রোজা রাখতে না পারলেও, কমপক্ষে জিলহজ মাসের ৯ তারিখের রোজা রাখার চেষ্টা করতে হবে। যেহেতু এই রোজার ব্যাপারে রাসুল (সা.) বলেন, আল্লাহ তায়ালার কাছে আমি আশা পোষণ করি যে, এই রোজার মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা এক বছর আগে ও পরের গোনাহ মাফ করে দিবেন। অন্য একটি হাদিস শরিফে বর্ণিত আছে, জিলহজ মাসের ৯ তারিখের দিনে আল্লাহ তায়ালা সবচাইতে বেশি বান্দাদের জাহান্নাম থেকে মুক্তি দান করেন। যেদিনগুলোতে আমল করে জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাওয়া যায়, সেই দিনগুলোতে আমল ও তাওবা করে নিশ্চিতভাবে করোনা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।

মিরপুরের ঐতিহ্যবাহী বাইতুল মামুর জামে মসজিদ এর খতিব মুফতি আব্দুর রহিম কাসেমী গতকাল জুমার খুৎবা পূর্ব বয়ানে বলেন, পবিত্র জিলহজ মাস মুসলিম উম্মাহর নিকট অত্যন্ত গুরুত্ববহ ও তাৎপর্যপূর্ণ মাস। এ মাসেই মুসলিম উম্মাহর বৃহৎ ঈদ উৎসব পবিত্র ঈদুল আজহা ও ফরজ ইবাদত হজ পালিত হয়। রাব্বুল আলামিনের প্রেম সাগরে ভাসে পবিত্র কাবা প্রাঙ্গণ। ত্যাগ ও কোরবানির মহিমায় আল্লাহর মহব্বতের নজির পেশ করে মুসিলম বিশ্ব। এছাড়াও মুসলিম উম্মাহর জন্য এ মাসে রয়েছে পবিত্র কোরআন ও হাদীসে বর্ণিত ফযিলতসম্পন্ন বেশ কিছু আমল ও বর্জনীয় কাজ। তন্মধ্যে এ মাসের প্রথম ১০ দিনে রোজা রাখা, রাতে ইবাদত করা, এ সময় চুল-নখ না কাটা, আরাফার দিন রোজা রাখা এবং ৯ জিলহজ থেকে ১৩ জিলহজ আসর পর্যন্ত প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর তাকবিরে তাশরিক (আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা-ইলাহা ইল্লাহু, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, ওয়া লিল্লাহিল হামদ) বলা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কালামুল্লাহ শরিফে এরশাদ করেন, সামর্থ্যবান মানুষের ওপর আল্লাহর জন্য বায়তুল্লাহর হজ করা ফরজ। আর যে অস্বীকার করে, তার জেনে রাখা উচিৎ আল্লাহপাক বিশ্ববাসীর মুখাপেক্ষী নন। (সুরা আল ইমরান, আয়াত নং -৯৭)। তিনি অন্যত্র এরশাদ করেন, আপনার পালনকর্তার উদ্দেশে নামাজ পড়ুন ও কোরবানি করুন। (সুরা কাউছার, আয়াত নং-৩)। হজরত রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, কোরবানির পশুর প্রতিটি চুলের বিনিময়ে একটি সওয়াব। (ইবনে মাজাহ, হাদিস নং-২২৬)। তিনি অন্যত্র এরশাদ করেন, জিলহজের ১ম ১০ দিনের ইবাদত আল্লাহর কাছে অন্য দিনের তুলনায় অধিক প্রিয়, প্রত্যেক দিনের রোজা এক বছরের রোজার মতো আর প্রত্যেক রাতের ইবাদত লাইলাতুল কদরের ইবাদতের মতো (সওয়াব)। (তিরমিজি শরিফ, ১ম খণ্ড, ১৫৮ পৃষ্ঠা)। তিনি আরও এরশাদ করেন, আমি আশাবাদী আল্লাহর কাছে আরাফার দিনের রোজা পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সময়ে এক বছরের গোনাহর জন্য কাফফারা হয়ে যাবে। (মুসলিম : হাদিস নং-১১৬৩)। আল্লাহ তায়ালা সকলকে এ মহিমান্বিত আমলগুলো করার তৌফিক দান করুন- আমীন!

দিনাজপুর গোর-এ-শহীদ কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খতিব মাওলানা রেজাউল করিম গতকাল জুমার খুৎবা পূর্ব বয়ানে বলেন, ফজিলতপূর্ণ জিলহজ মাসের প্রথম ১০ দিন সম্পর্কে কোরআনে কারিমে সুরা ফাজর আল্লাহ তায়ালা বলেন, শপথ ফজরের। শপথ ১০ রাত্রির। এর দ্বারা জিলহজ মাসের প্রথম ১০ রাত্রিকে বোঝানো হয়েছে। হাদিসে এসেছে, আল্লাহ তায়ালার কাছে জিলহজ মাসের প্রথম ১০ দিনের ইবাদত অপেক্ষা অধিক পছন্দনীয়, আর কোনো ইবাদত নেই। এর প্রতি দিনের রোজার এক বছরের রোজার সমতুল্য। আর প্রত্যেক রাতের ইবাদত লাইলাতুল কদরের ইবাদত এর সমতুল্য। বিশেষভাবে ৯ তারিখ আরাফার রোজা। আল্লাহ সবাইকে কবুল করুন- আমীন!



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: খুৎবা-পূর্ব বয়ান

২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ