Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

লালমনিরহাটে প্রায় ১০ হাজার পরিবার পানিবন্দি

লালমনিরহাট জেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ৯ জুলাই, ২০২১, ৭:২০ পিএম

ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমার ১০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন লালমনিরহাটের ৫ উপজেলার তিস্তার চরাঞ্চলের ১০ হাজার পরিবার। পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে দেখা দিয়েছে তীব্র ভাঙ্গন । গত ঘন্টায় তিস্তার ভাঙ্গনে ২০টি পরিবারের ঘরবাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। পরিবার গুলো খোলা আকাশের নিচে আশ্রয় নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে।

শুক্রবার (৯ জুলাই) বিকেল ৩টায় দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প লালমনিরহাটের হাতীবান্ধার তিস্তা ব্যারেজ ডালিয়া পয়েন্টে পানিপ্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫২ দশমিক ৭০ সেন্টিমিটার, যা বিপদসীমার ১০ সেন্টিমিটার উপর (স্বাভাবিক বিপদসীমা ৫২ দশমিক ৬০ সেন্টিমিটার) দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এদিকে ব্যারেজ রক্ষায় ৪৪টি গেট খুলে দেয়া হয়েছে।

ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার রাত থেকে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। সর্বশেষ রাত ১২টায় পানি ৫২ দশমিক ৯০ সেন্টিমিটার প্রবাহিত হয়। যাহা বিপদসীমার ৩০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। শুক্রবার সকাল থেকে তিস্তার পানি কমতে শুরু করেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, বিকেল ৪টায় ব্যারেজ পয়েন্টে পানি কমে বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে ব্যারেজ পয়েন্টে পানি কমলেও ভাটিতে পানি বৃদ্ধি পাবে বলে পাউবো কর্মকর্তারা জানান।

জানা যায়, তিস্তা ব্যারেজ এলাকায় পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ইতিমধ্যে তিস্তা নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল গুলো ডুবে বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। হঠাৎ করে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নদী তীরবর্তী মানুষজন গবাদিপশু ও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে বাঁধ এবং বন্যা আশ্রয় কেন্দ্রে এসে আশ্রয় নিয়েছেন।

এদিকে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পাওয়া হাতীবান্ধার গড্ডিমারী, সিঙ্গামারি, সিন্দুর্না, পাটিকাপাড়া, ডাউয়াবাড়ী, কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী, শৈইলমারী, নোহালী, চর বৈরাতি, আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নের চৌরাহা,দক্ষিণবালাপাড়া, কুটিরপাড়,চরগোবরধন, সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ, রাজপুর, গোকুন্ডা, ইউনিয়নের নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলে পানি প্রবেশ করে প্লাবিত হয়েছে ।

এদিকে আদিতমারী উপজেলার চরগোবরধন গ্রামে প্রায় ৩ শতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

মহিষখোচা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোসাদ্দেক হোসেন চৌধুরী বলেন, হঠাৎ করে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় চরাঞ্চলের বাসিন্দারা পানিবন্দির পাশাপাশি চৌরাহা ও কুটিরপাড় এলাকার লোকজন ভাঙ্গন আতঙ্কে রয়েছে।

হাতীবান্ধা উপজেলার নিজ গড্ডিমারী গ্রামের দিনমজুর জপির আলীর ঘরবাড়ি নদীতে ভেসে গেছে। তিনি বলেন, ঘুমোত আছিনো হঠাৎ পানি আসি ঘর ভাসি নিয়া গেইছে। কোন মতোন বউ বাচ্চা নিয়া বাচি আসছি।

হাতীবান্ধা উপজেলার গড্ডিমারী ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আবু বক্কর সিদ্দিক জানান,গতরাত থেকে তিস্তার পানি বৃদ্ধির ফলে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে শতাধিক পরিবার। নদীর পানিতে প্রায় ৫ জনের ঘরবাড়ি বিলীন হয়েছে।

সদর উপজেলার গোকুন্ডা ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা স্বপন বলেন, ‘তিস্তার পানি কয়েকদিন স্বাভাবিক অবস্থায় ছিল। বৃহস্পতিবার রাত থেকে আবারও বাড়তে শুরু করে পানি। পানি থেকে বাঁচতে কিছু পরিবার উঁচু জায়গায় আশ্রয় নিয়েছে। রাতেই বন্যা কবলিত এলাকাগুলো পরিদর্শন করে লোকজনদের খোঁজ খবর নেয়া হচ্ছে।

লালমনিরহাটের জেলা প্রশাসক (ডিসি) আবু জাফর জানান, প্রায় ৭৭ লক্ষ টাকা ও ৮ মেট্রিক টন শুকনা খাবার বন্যার্ত পরিবারের জন্য মজুদ রয়েছে। বন্যার জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া আছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: লালমনিরহাট


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ