মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশগুলোতে ভারতে পাওয়া করোনার ডেলটা ভ্যারিয়েন্টের জেরে সংক্রমণ তীব্রভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এর ফলে দক্ষিণ কোরিয়া থেকে অস্ট্রেলিয়ার মত যেসব দেশগুলো করোনা মোকাবেলায় উচ্চতর সাফল্য পেয়েছিল, সেখানে মহামারীর তৃতীয় তরঙ্গ শুরু হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বুধবার ডেলটা ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ ঠেকাতে অস্ট্রেলিয়ার বৃহত্তম শহর সিডনিতে লকডাউনের সময়সীমা আরও এক সপ্তাহের জন্য বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে।
অস্ট্রেলিয়ায় প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে ১০ শতাংশেরও কম টিকা পেয়েছেন। দেশটির নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্যে সংক্রমণ চূড়ান্তভাবে বেড়েছে। শুক্রবার শেষ হওয়া দুই সপ্তাহের লকডাউন এখন ১৬ জুলাই শেষ হবে বলে সিডনিতে রাজ্যটির প্রধানমন্ত্রী গ্লাডিস বেরেজিকালিয়ান সাংবাদিকদের জানিয়েছেন। আরো এক সপ্তাহ বাড়িয়ে ১৬ জুলাই পর্যন্ত করা হয়েছে। নিউ সাউথ ওয়েলসের গভর্নর জানিয়েছেন, বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় লকডাউনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। এজন্যই লকডাউন বাড়ানো হয়েছে।
সিডনিতে প্রতিদিনেই করোনা রোগী আক্রান্ত হচ্ছেন। শহরটিতে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে ডেলটা ভ্যারিয়েন্ট। বুধবার ২৭ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে সিডনিতে। তবুও এখন পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ায় মাত্র ১০ শতাংশের কম মানুষকে ভ্যাকসিনের আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে। সিডনিতে স্থানীয় পর্যায়ে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ খুবই কম ছিল। এরপর হোটেলে ৮০ জনের বেশি আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের ক্রুর করোনা শনাক্ত হয়। পরিস্থিতি যখন স্বাভাবিক হয়ে আসছিল, ঠিক তখন হঠাৎ সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
বৃহত্তর সিডনি, ইউলংগং ও সেন্ট্রাল কোস্ট এলাকার ৫০ লাখেরও বেশি বাসিন্দা ‘বাড়িতে অবস্থান করুন’ আদেশের অধীনে আছেন। আগামী সপ্তাহে স্কুলও বন্ধ থাকবে। এখন পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ার ১০ শতাংশেরও কম নাগরিকের করোনাভাইরাস টিকা নেয়া সম্পন্ন হয়েছে। সরবরাহে ঘাটতির কারণে দেশটির অনেক নাগরিকই চলতি বছরের শেষ মাসগুলোর আগে টিকা নেয়ার সুযোগ পাবেন না। গেলো ২৬ জুন থেকে লকডাউন চলছে সিডনি শহর জুড়ে। এখন পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে ৯১০ জন মানুষ মারা গেছে, আক্রান্ত হয়েছে ৩১ হাজার মানুষ।
চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ বুধবার জানিয়েছে, দেশটির মূল ভূখণ্ডে ৬ জুলাই নতুন করে ৫৭ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। ৩০ জানুয়ারির পর এটিই ছিল সব্বোর্চ সংখ্যা। এর আগেরদিন সেখানে আক্রান্ত হয়েছিলেন ২৩ জন। জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশন এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, নতুন আক্রান্তদের মধ্যে ইউনান প্রদেশে মায়ানমারের সীমান্তবর্তী রুইলি শহর থেকে ১৫ জন শনাক্ত হয়েছেন। প্রতিক্রিয়া হিসাবে, কর্তৃপক্ষ শহরটিকে লকডাউন করে দিয়েছে। সর্বশেষ আক্রান্তদেরকে বাসিন্দাদের গণ পরীক্ষার সময় শনাক্ত করা হয়। শহরটিতে শনাক্তদের মধ্যে চীন এবং মিয়ানমারের নাগরিকও অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন, যেখানে একটি সক্রিয় আন্তঃসীমান্ত বাণিজ্য রয়েছে। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ আরো কঠোর করবে। ভ্যাকসিনেশনের গতি বাড়িয়ে তোলার পরেও, মহামারী নিয়ন্ত্রণে চীন কঠোর লকডাউন কৌশল এবং গণ পরীক্ষার উপর নির্ভর করেছে। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলেছেন যে, তারা জনসংখ্যার ৮০ শতাংশকে টিকা দিতে চান।
দক্ষিণ কোরিয়ায়, যেখানে টিকাদান ধীর গতিতে রয়েছে, কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, মঙ্গলবার সেখানে নতুন করে ১ হাজার ২১২ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। ২০২০ সালের ডিসেম্বরের পরে এই সংখ্যা সর্বাধিক। এর আগে ক্রিসমাসের দিনে দেশটিতে রেকর্ড ১ হাজার ২৪০ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। ইওনহ্যাপের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অত্যন্ত সংক্রামক ডেলটা ভেরিয়েন্টের কারণে সংক্রমণ দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে, বিশেষত রাজধানী সিউলে। টিকা না নেয়া ২০ থেকে ৩০ বছর বয়সীরা এতে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন। তবে চলতি মাস থেকে সরকার বেসরকারী সামাজিক জমায়েতে চার থেকে বাড়িয়ে ছয় জনকে অংশগ্রহণের অনুমতি দিয়েছে। পাশাপাশি, রেস্তোঁরাগুলোকে দুই ঘন্টার জন্য আভ্যন্তরীণভাবে খাবার পরিবশেনের অনুমতিও দেয়া হয়েছে। তবে সংক্রমণ বাড়ায় সিউল এবং আশেপাশের অঞ্চলগুলোকে এই সুবিধার আওতায় রাখা হয়নি। বুধবার পর্যন্ত দক্ষিণ কোরিয়ার মাত্র ৩০ শতাংশ মানুষ ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ পেয়েছেন। দেশটির প্রধানমন্ত্রী কিম বু-কিয়ুম বলেছেন, পরের দুই বা তিন দিন ট্রান্সমিশন বাড়তে থাকলে কর্মকর্তারা কঠোর সামাজিক দূরত্বের নিয়ম বিবেচনা করবেন।
থাইল্যান্ডেও ডেলটা রূপটি ছড়িয়ে পড়ছে – নতুন করে ৬ হাজার ৫১৯ জন আক্রান্ত ও ৫৪ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে বুধবার কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। ব্যাংককে আক্রান্তদের মধ্যে বেশিরভাগই নতুন ডেলটা ভ্যারিয়েন্টের শিকার। ইন্দোনেশিয়ায় করোনা মহামারি দুঃস্বপ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে। দেশটির হাসপাতালগুলো সামর্থ্যের শেষপ্রান্তে চলে এসেছে। মরিয়া পরিবারগুলো বাড়িতেই রোগিদের চিকিৎসার জন্য অক্সিজেন ট্যাঙ্ক সংগ্রহের চেষ্টা চালাচ্ছেন। করোনায় এর মধ্যে প্রায় এক হাজার ইন্দোনেশিয়ান চিকিৎসা কর্মী মারা গেছেন। সূত্র : ইউকে স্ট্যান্ডার্ড, দ্য গার্ডিয়ান।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।