Inqilab Logo

শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

টিকা প্রদান দ্রুত ও সহজ করতে হবে

| প্রকাশের সময় : ৪ জুলাই, ২০২১, ১২:০২ এএম

গত শুক্রবার রাতে যুক্তরাষ্ট্র ও চীন থেকে ২৪ লাখ ডোজ টিকা দেশে এসেছে। এর মধ্যে কোভ্যাক্সের আওতায় যুক্তরাষ্ট্র থেকে এসেছে মর্ডানার ১৩ লাখ ডোজ। চীনের সিনোফার্ম থেকে এসেছে ১১ লাখ ডোজ। গতকাল এসেছে মর্ডানার ১২ লাখ এবং সিনোফার্মের ৯ লাখ ডোজ। সবমিলিয়ে দেশে ৪৫ লাখ ডোজ টিকা এসেছে। এটি নিঃসন্দেহে সুসংবাদ। এর মাধ্যমে দেশে টিকা কার্যক্রম আবারো জোরেশোরে শুরু করা যাবে। গত ফেব্রুয়ারিতে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের অ্যাস্ট্রাজেনেকা টিকার মাধ্যমে দেশে গণটিকা কার্যক্রম শুরু হয়েছিল। প্রতিষ্ঠানটি থেকে প্রতিমাসে ৫০ লাখ করে ৬ মাসে তিন কোটি টিকা কেনা হয়েছিল। প্রথম চালানে ৫০ লাখ, দ্বিতীয় চালানে ২০ লাখ এবং উপহার হিসেবে ৩৩ লাখ টিকা পাওয়ার পর গত মার্চে ভারত হঠাৎ করেই টিকা রফতানি বন্ধ করে দেয়। ভারতের এমন অনাকাক্সিক্ষত আচরণে দেশের টিকা কার্যক্রম ব্যহত হয়। বাংলাদেশ চরম বিপর্যয়ের মধ্যে পড়ে। সরকার কালবিলম্ব না করে চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে টিকা কেনার আলোচনা শুরু করে। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন উৎস থেকে টিকা সংগ্রহের জোর কার্যক্রম শুরু করে। এর অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র থেকে কোভ্যাক্সের আওতাধীন মর্ডানার ও চীনের সিনোফার্মের টিকা এসেছে। এক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী, দৃঢ় ও বিচক্ষণ সিদ্ধান্তের ফলে টিকা সংগ্রহ দ্রুত গতি লাভ করে। প্রধানমন্ত্রী দ্ব্যর্থহীনভাবে বলেন, যত টাকা লাগুক টিকা কেনা হবে। মূলত প্রধানমন্ত্রীর নিষ্ঠা ও দৃঢ়তার কারণে দ্রুত টিকার ব্যবস্থা হয়। এজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আমরা আন্তরিক মোবারকবাদ জানাই। এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর দিকনির্দেশনা অনুযায়ী, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্রমন্ত্রনালয় টিকা সংগ্রহের জোর প্রচেষ্টা চালায়। তাদেরও আমরা ধন্যবাদ দেই। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, টিকার আর কোনো অভাব হবে না। ডিসেম্বরের মধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ১০ কোটি টিকা আসবে। চীনের সিনোফার্মের সঙ্গে দেড় কোটি ডোজ কেনার চুক্তি হয়েছে। প্রতি মাসে ৫০ লাখ করে আগামী তিন মাসে এ টিকা পাওয়া যাবে। বৈশ্বিক জোট কোভ্যাক্সের মাধ্যমে জনসন অ্যান্ড জনসনের ৭ কোটি টিকা ডোজ কেনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। একইসঙ্গে রাশিয়ার সঙ্গে টিকা কেনা চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। এছাড়া চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে যৌথভাবে টিকা উৎপাদনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে, টিকা নিয়ে যে সংকট ও সংশয় দেখা দিয়েছিল টিকা সংগ্রহের এসব প্রক্রিয়া শুরু হওয়ায় তা কেটে যাবে।

করোনা ভাইরাস বিশ্ব থেকে দ্রুত বিদায় নেবে এমন আশা এখন গবেষকরা করছেন না। তারা মনে করছেন, করোনার বাস্তবতা মেনে নিয়েই মানুষকে চলতে হবে, অর্থনীতি সচল রাখতে হবে। এজন্য টিকার কোনো বিকল্প নেই। কোনো কোনো গবেষণায় বলা হয়েছে, টিকার দুই ডোজ নেয়ার পর তৃতীয় ডোজও নিতে হতে পারে। আবার কারো মতে, প্রতিবছরই টিকা নিতে হবে। এ থেকে বোঝা যায়, করোনাকে সঙ্গে নিয়ে এবং একে নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমেই মানুষকে এগিয়ে যেতে হবে। ইতোমধ্যে উন্নত দেশগুলো সর্বাত্মক টিকা কার্যক্রম চালিয়ে স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ফিরেছে। অর্থনীতিকে সচল করেছে। আমরা এখনও পিছিয়ে আছি। বরং দিন দিন সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত এক সপ্তাহ ধরে রেকর্ড সংক্রমণ ও মৃত্যু হয়েছে। ইতোমধ্যে বিভাগীয় ও জেলা হাসপাতালগুলোতে অক্সিজেন সংকটে মানুষের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। গত শুক্রবার বগুড়ায় হাই ফ্লো নাসাল ক্যানোলার অভাবে অক্সিজেন সরবরাহ করতে না পারায় ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এসব মৃত্যু যে অক্সিজেন সংকটে হয়েছে তা নয়, বরং অক্সিজেন সরবরাহ করার পর্যাপ্ত ডিভাইস ও নাসাল ক্যানোলার অভাবে হয়েছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, আমাদের জেলা হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসার পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধার অভাব রয়েছে। এসব সমস্যার সমাধান হলে করোনা নিয়ন্ত্রণ অনেকটাই সম্ভব হবে। লকডাউন ও স্বাস্থ্যবিধি যেমন জরুরি, তেমনি হাসপাতালের পর্যাপ্ত চিকিৎসা সুবিধাও জরুরি। এ সমস্যা নিরসন কঠিন কাজ নয়। আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশের অর্থনীতি এগিয়ে নিতে করোনার টিকাসহ এর সব ধরনের চিকিৎসা কার্যক্রম দ্রুত শুরু করতে হবে। করোনার মধ্যেও আমাদের অর্থনীতি অনেকটা সচল রয়েছে। গার্মেন্টসহ রফতানিমুখী শিল্প-কারখানা, বন্দর কার্যক্রম চালু রয়েছে। বিদেশী বিনিয়োগেরও সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেক বিদেশী বিনিয়োগকারী বিনিয়োগের ক্ষেত্র খুঁজছে। তারা বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহী। বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এটি বাংলাদেশের জন্য বড় ধরনের সুযোগ। এ সুযোগ কাজে লাগাতে হবে। এজন্য সর্বাগ্রে করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও সহনীয় পর্যায়ে আনতে হবে। করোনার পরীক্ষার সংখ্যা বৃদ্ধি থেকে শুরু করে টিকা কার্যক্রম জোরদার করতে হবে। এক্ষেত্রে যাতে জাল-জালিয়াতি না হয়, এ বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে। বিদেশগামীদের জন্য করোনার নেগেটিভ সার্টিফিকেট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এতে ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকলে এবং বিদেশে ধরা পড়লে দেশের ভাবমর্যাদা যেমন ক্ষুন্ন হবে, তেমনি অর্থনীতিতেও বিরূপ প্রভাব পড়বে।

অর্থনৈতিক উন্নতি ও অগ্রগতির অন্যতম নিয়ামক শক্তি সুস্থ্যতা। সুস্থ্য মানুষ ছাড়া অর্থনীতি এগিয়ে নেয়া সম্ভব নয়। দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে হলে সর্বাগ্রে দেশের মানুষকে সুস্থ্য রাখতে হবে। করোনা যেভাবে সংক্রমিত হচ্ছে তা রুখে দেয়াই এখন প্রধানতম কাজ। এছাড়া অর্থনীতি সচল রাখা সম্ভব নয়। এজন্য স্বাস্থব্যবস্থা শক্তিশালী করতে হবে। আমাদের এখন এ চিন্তা মাথায় নিয়ে কাজ করতে হবে, করোনা থাকবে এবং একে নিয়ন্ত্রণ ও মোকাবেলা করেই এগিয়ে যেতে হবে। আমরা আশা করব, সরকার যেভাবে দ্রুত টিকার ব্যবস্থা করেছে তা প্রদানের বিষয়টিও সেভাবে দ্রুতায়িত করা হবে। সব মানুষকে টিকার আওতায় নিয়ে আসা হবে। সাধারণ মানুষ যাতে সহজে টিকা পায় এবং গ্রহণ করতে পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে। টিকা পাওয়া এবং প্রদানের বিষয়টি সহজ করা গেলে আশা করা যায়, অচিরেই দেশে করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনা

২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন