পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
করোনা মহামারির মধ্যে বিশ্বজুড়ে দ্রুত বাড়ছে খাবারের দাম। গত এক দশকের বেশি সময়ের মধ্যে তা সর্বোচ্চ পর্যায়ে অবস্থান করছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। বিবিসি জানায়, বিশ্বজুড়ে খাবারের দামের একটি বৃহৎ সূচক ব্যবহার করে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) এ পরিসংখ্যান বের করেছে। ওই ইনডেক্সে দেখা গেছে, পুরো বিশ্বেই গত ১২ মাস ধরে টানা খাদ্যপণ্যের দাম বেড়েছে। তার মধ্যে মে মাসে খাদ্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির সূচক সর্বোচ্চ ১২৭ দশমিক ১ পয়েন্টে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। এক মাস আগের (এপ্রিল) তুলনায় যা ৪ দশমিক ৮ শতাংশ বেশি এবং গত বছর মে মাসের তুলনায় ৩৯ দশমিক ৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এফএও’র ইনডেক্স অনুযায়ী, ২০১০ সালের অক্টোবরের পর এটাই এক মাসে খাদ্যেপণ্যের দাম বৃদ্ধির সর্বোচ্চ সূচক। খাদ্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ হিসেবে জোগান কমে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে। মহামারির মধ্যে পরিবহন ও শ্রমিক সংকটে খাদ্যেপণ্যের উৎপাদনে বিঘ্ন ঘটেছে। আর উৎপাদন কমে যাওয়ায় জোগানেও তার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এছাড়া কয়েকটি দেশে খাদ্যপাণ্যের চাহিদাও বেড়ে গেছে। এর ফলে বিশ্বের প্রায় সব দেশেই মুদ্রাস্ফীতি বড় উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। খাদ্যপণ্যের পিছনে মানুষের ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় মহামারি পরবর্তী বিশ্ব অর্থনীতির পুনরূদ্ধারেও তার উচ্চ প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। বিশ্বজুড়ে খাদ্যশস্য, তেলবীজ, দুগ্ধজাত খাবার, মাংস এবং চিনির মতো খাদ্যপণ্যের দাম অনুসরণ করে এফএও এ ইনডেক্স তৈরি করেছে। যে পাঁচটি উপাদানের ওপর ভিত্তি করে এ ইনডেক্স তৈরি করা হয়েছে তার সবগুলোরই দাম বেড়েছে। ভেষজ তেল, শস্য এবং চিনির দাম বেড়েছে। করোনাভাইরাস সংক্রমণের বিস্তার রোধে বিশ্বের বেশিরভাগ দেশই নানা মেয়াদে লকডাউন দিয়েছে। লকডাউনে চলাচলের ওপর নানা বিধিনিষেধ থাকায় খাদ্যপণ্যের বাজারজাতকরণ এবং সরবরাহে বিঘ্ন ঘটেছে। জোগানের অভাবে অনেক জায়গায় খাবারের সংকট দেখা দিয়েছে এবং দাম বেড়েছে। বিশেষজ্ঞরা এ বিষয়ে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, এখনও নানা দেশে লকডাউন চলছে। তার মধ্যে খাবারের উচ্চ চাহিদা এবং উৎপাদন কমে যাওয়া অব্যাহত থাকলে মুদ্রাস্ফীতি দেখা দেবে। তবে আশার কথা হলো, কিছু কিছু শিল্প মহামারির সংকট দারুণভাবে কাটিয়ে উঠতে শুরু করেছে। এছাড়া এফএও থেকেও এ বছর বিশ্বজুড়ে রেকর্ড পরিমাণে খাদ্যশস্যে উৎপাদন হওয়ার পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে, যা খাদ্যপণ্যের দাম কমিয়ে আনতে সাহায্য করবে এমন ধারণা বিশেষজ্ঞদের।
জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সামঞ্জস্য রক্ষা করে উৎপাদন বৃদ্ধি না করাই খাদ্য সমস্যার প্রধান কারণ। জনসংখ্যার দ্রুত বৃদ্ধি দেশের কৃষিজমির উপর বিরাট চাপ সৃষ্টি করে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে সীমিত জমি উত্তরাধিকারীগণের মধ্যে বণ্টিত হতে হতে জমির একক মালিকানা থাকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র খন্ডে। এতে কৃষি মুনাফাহীন হয়ে পড়ে। বাংলাদেশ কৃষিনির্ভর দেশ, অথচ মোট কৃষিজমির ষাট শতাংশই এখন পানি সেচের আওতার বাইরে। আমাদের দেশে কৃষি ব্যবস্থাও এখন পর্যন্ত প্রকৃতিনির্ভরশীল। কৃষিজমির পরিমাণ হ্রাস প্রাকৃতিক দুযোর্গ ও বন্যাজনিত কারণে গেল ক’বছর চালের উৎপাদন ছিল তুলনামূলক কম।
কিছুদিন পূর্বে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার ডিরেক্টর তাঁর বক্তব্যে বলেছেন, সারাবিশ্বের মজুদ ভান্ডারে এখন চল্লিশ কোটি পঞ্চাশ লক্ষ মেট্রিক টন খাদ্য রয়েছে, যা পৃথিবীতে মানুষের মাত্র দু’সপ্তাহের খোরাক হতে পারে। এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ অধিকাংশ দেশে খাদ্যশস্য উৎপাদন মার খাচ্ছে। এতে পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। খাদ্যসামগ্রীর চাহিদা ও জোগানের মধ্যে ফারাক বাড়ছে। সেহেতু সামঞ্জস্য বজায় রাখতে গিয়ে বিশ্বজুড়ে জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে হু হু করে। এতে খাদ্যপণ্যের উচ্চমূল্যের প্রভাব পড়ছে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে।
বর্তমানে মুষ্টিমেয় কিছু লোক ছাড়া দেশের মানুষ মোটেই সুখে নেই। যাদের দিনান্তে পান্তা ফুরোয় তারা ক্রমশ মুদ্রাস্ফীতির কারণে ন্যুব্জ হয়ে পড়ছেন আলো নেই, কেবল অন্ধকার। সামান্য আয়ের লোক, দিনমজুর, প্রান্তিক কৃষিজীবী-তাদের আয় তেমন বাড়েনি অথচ খরচ বাড়ছে হু হু করে। নিম্নবিত্তদের জন্য ডাল-ভাতের সংস্থান করা মুশকিল হয়ে পড়েছে। ১৬ কোটির এ দেশের দারিদ্র্যসীমার নিচের বিপুল সংখ্যক মানুষ শুধু নয়-মধ্যবিত্তদের ক্রয় ক্ষমতার ঊর্ধ্বে উঠে গেছে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বসীমা। নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম শুধু বাড়ছে, কেনা যাচ্ছে না। সাধারণ মানুষ আজ দিশেহারা। আন্তর্জাতিক স্তরে নিত্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধি যে ঘটছে, তা সত্য। এসব যুক্তিতর্ক শুনিয়ে কারো পেটের জ্বালা নিবৃত্তি করা যায় না। এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের মতে, খাদ্যশস্যের এ সঙ্কট আগামী তিন-চার বছর অব্যাহত থাকবে। পেটে গামছা বাঁধা ছাড়া গরিবের অন্য কোনো উপায় নেই।
বিভিন্ন তথ্যমূলক বিশ্লেষণ থেকে পাওয়া মূল্যবৃদ্ধির কারণগুলো নিম্নে আলোকপাত করা হল।
(১) গত কয়েক বছরে খাদ্যশস্যের উৎপাদন আশানুরূপ বৃদ্ধি পায়নি, আবার জনসংখ্যা বাড়ছে হু হু করে। এদিকে মুক্তবাজার অর্থনীতি, শিল্পনীতি ইত্যাদির ফলে গুরুত্ব হারিয়েছে কৃষি। বাজেট তৈরির আগে অর্থমন্ত্রী শিল্প জগতের প্রতিনিধি, সরকারি কর্মকর্তা এবং সুধীমহলের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করে থাকেন। কিন্তু কৃষক প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলারও সুযোগ হয় না। এদিকে কৃষিঋণ মওকুফের কথা ঘোষণার পরও কৃষকদের বহুক্ষেত্রে তা হয়নি বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। (২) দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির আরো একটি কারণ, অন্যান্য মুদ্রার তুলনায় মার্কিন ডলারের মূল্যে ঘাটতি। ডলারের মূল্য হ্রাস পাচ্ছে, অথচ পেট্রোলিয়াম উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব নয় তাই ওরা তেলের দাম বাড়াতে বাধ্য হয়েছে। (৩) দেশে বিশেষ কয়েক শ্রেণির লোকের হাতে প্রচুর পরিমাণে কালো টাকা জমা হওয়ার ফলে দামস্তর বৃদ্ধির প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। বিশেষ করে এক শ্রেণির মুনাফালোভী ব্যবসায়ীর অতি লোভ মূল্যবৃদ্ধির অন্যতম কারণ। (৪) বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহের ঋণদান দ্রুত সম্প্রসারণের ফলে সামগ্রিক চাহিদা দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে। দ্রব্যাদির জোগান সে অনুপাতে বৃদ্ধি পায়নি। স্বভাবত এর ফলে নিত্য ব্যবহার্য পণ্যের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। (৫) রপ্তানি প্রসারের দরুন বিভিন্ন দ্রব্যের অভ্যন্তরীণ জোগান হ্রাস পায়। তাছাড়া, আমদানি নিয়ন্ত্রণের ফলে দেশের ভোগ্যদ্রব্যের যোগানও হ্রাস পায়। সরকার কর্তৃক গৃহীত কিছু ভুল পদক্ষেপ শুরু থেকে দেশের মূল্যবৃদ্ধি এবং তৎসম্পর্কিত টাকার মূল্যহ্রাসকে প্রশ্রয় দিয়ে এসেছে। (৬) প্রতি বছর বাজেটে অত্যধিক পরিমাণে ঘাটতি ব্যয়ের দরুন জনসাধারণের আয় ও ক্রয় ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। এর ফলে খাদ্যদ্রব্য এবং কাঁচামালের মোট চাহিদা বৃদ্ধি পেতে থাকে। স্বভাবত এ সময় মুদ্রাস্ফীতির চাপ বৃদ্ধি পায়। তাছাড়া, অলাভজনক খাতে ব্যয় মাত্রাতিরিক্তভাবে বৃদ্ধি পাওয়া তথা পরিকল্পনা বহির্ভূত ক্ষেত্রে সরকারি ব্যয় প্রভূত পরিমাণে বৃদ্ধি পায়, ফলে জনসাধারণের আয় ও ক্রয় ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। এর ফলে মুদ্রাস্ফীতি দেখা দেয়। মূল্যস্তর বৃদ্ধির কারণ বিশ্লেষণ করার পর যে ফলাফল দেখা দিয়েছে সেগুলো নিম্নরূপ:
(ক) এখন বিশ্বের ৩৩টিরও বেশি দেশে খাদ্য ও জ্বালানির তীব্র সঙ্কট চলছে। নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম কমানোর দাবিতে মিয়ানমার, ফিলিপাইন, হাইতি, মিশরসহ আরো কয়েকটি দেশে ইতোমধ্যে সহিংস বিক্ষোভ এবং সরকারি খাদ্য গুদামে লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সরকার নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছে না। বাস্তবে বাংলাদেশে খাদ্য সংকট ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি রোধে নানা রকম ব্যবস্থা নেয়া হলেও ফললাভ প্রায় সম্ভব হচ্ছে না। উৎপাদন বা সরবরাহ চাহিদামতো না হলে এ মূল্যবৃদ্ধি রোধ করা কারো পক্ষেই সম্ভব নয়। এতে মুদ্রাস্ফীতিও বাড়ে। এ অবস্থায় জাতিসংঘ সংশ্লিষ্ট দেশগুলোকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, শিগগির খাদ্যপণ্যের সংকটের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে, অন্যথায় দেশগুলোতে যে কোন সময় গণ-অসন্তোষ দেখা দিতে পারে।
ভারতের মহারাষ্ট্র, বিদর্ভ ও অন্ধ্রে কৃষকেরা গণহারে আত্মহত্যা করছেন কারণ দারিদ্র, অভাব পরিবার-পরিজনদের ক্ষুধার্থ চেহারা দেখার যন্ত্রণা আর ঋণের চাপ। সাধারণ মানুষের হাল-হকিকত যে পর্যায়ে পৌঁছেছে তাতে সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ, শ্রমিক, কৃষক, নিম্ন-মধ্যবিত্ত লোকদের আত্মহননের পথ বেঁছে নিতে হচ্ছে। তাই সরকার যদি দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির পাগলা ঘোড়ার মুখে এক্ষুনি লাগাম না পরাতে পারে তবে এ ক্রোধ, ক্ষোভ কিন্তু বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। দেশের সাধারণ শ্রমজীবী মানুষ-শ্রমিক-কৃষক-কর্মচারীরা আত্মহননের পথে না গিয়ে হয়ত সরাসরি আন্দোলনে যাবে, যা হবে বড় বিপর্যয়। (খ) সরকার চাপে পড়ে কিস্তিতে কিস্তিতে সরকারি কর্মকর্তা, কর্মচারীদের বেতন অস্বাভাবিকহারে বৃদ্ধি করে যাচ্ছে। এ হিসাবে সাধারণ মানুষের আয় বাড়ছে না। গেল শতাব্দীর পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে যখন সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মাসিক বেতন তিনশ’ থেকে হাজারের মধ্যে ছিলো তখন দেশে চালের কেজি ছিল দু’টাকা। ডাল, তেলসহ নিত্য প্রয়োজনীয় সকল দ্রব্যসামগ্রীর দাম ছিল কেজি প্রতি পাঁচ থেকে থেকে পনের টাকার মধ্যে। আজ সেখানে একজন কর্মকর্তার ৫০-৬০ হাজার থেকে লক্ষাধিক টাকা মাইনে। সেখানে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বাজারে জিনিসপত্রের দাম। ষাটের দশকের দু’টাকা কিলো দরের চাল আজ ৩০ গুণ বেড়ে ৬০-৭০ টাকা। কর্মকর্তা/কর্মচারীদের মাসিক বেতন অনেকগুণ বেশি বেড়েছে। এখন দ্রব্যমূল্য জোর করে কমিয়ে যদি ষাট-সত্তর দশকের অবস্থানে নিয়ে আসা যায় তবে সঙ্গতি বা ভারসাম্য রক্ষা করার ক্ষেত্রে এক হাস্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে। তাই দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির এ হারকে স্বীকার করে নিতে হচ্ছে। (গ) এখন পৃথিবী জুড়ে চলছে ক্রেতা ও বিক্রেতা মিলে বাজার আর ব্যবসা-বাণিজ্য। এখন মূল্য যদি এতটা বৃদ্ধি পায় যে ক্রেতারা কিনতে না পারে তবে বিক্রেতারা কার কাছে পণ্য বেচবে? এতে ব্যবসাও মার খাবে। তাছাড়া, চোখের সামনে প্রয়োজনীয় দ্রব্য সম্ভার থাকতেও যারা ক্রয় করতে পারছে না তারা কতদিন আর হাত গুটিয়ে ক্ষুধা আর অভাব সহ্য করবে? তাই এক সময়ে ভয়ঙ্কর বিপর্যয় নেমে আসতে পারে।
যেমন: (১) বর্তমানে দেশে যে খাদ্যশস্যের ঘাটতি সৃষ্টি হয়েছে তা পূরণ করার জন্য যথেষ্ট পরিমাণে খাদ্যশস্য আমদানি করার ব্যবস্থা করা ও দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটানোর জন্য খাদ্যদ্রব্য রপ্তানি নিষিদ্ধ করা, তৎসঙ্গে অত্যাবশ্যকীয় আইন প্রণয়ন করে প্রয়োগের মাধ্যমে খাদ্যশস্য মজুদ নিষিদ্ধ করা এবং খাদ্যশস্য ন্যায্যমূল্যে বিক্রয় করার ব্যবস্থা করা। (২) মূল্যবৃৃদ্ধির নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য সরকারের উচিত বেশ কিছু দ্রব্যসামগ্রীর উপর থেকে আমদানি শুল্ক হ্রাস করা। তৎসঙ্গে সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীদের দুর্নীতি দূর করার পাশাপাশি মজুতদার ও কালোবাজারীদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। (৩) দামস্তর বৃদ্ধি রোধ করার জন্য বিভিন্ন ধরনের নতুন ও পুরাতন মুদ্রাগত নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি অবলম্বন করা যেমন- কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিকট বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর রক্ষিত জমার অনুপাত বৃদ্ধি করা। ব্যাংকের বাট্টার হার বৃদ্ধি করা, বিচারমূলক ঋণ নিয়ন্ত্রণ নীতি অনুসরণ করা ইত্যাদি।
দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা: (১) জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের ওপর গুরুত্ব আরোপ করা। জনসংখ্যা বৃদ্ধির একটি লক্ষ্য নির্ধারণ করা প্রয়োজন। সত্যি বলতে কী, এ বিভাগে যে কাজ হয় তা শুধু কাগজে, কলমে বাস্তবে ফল লাভ হচ্ছে বলে মনে হয় না। তথ্য ও বাস্তবে ফারাক প্রচুর। (২) ভূমি সংস্কার নীতি সঠিকভাবে প্রয়োগ করলে খাদ্যের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। (৩) কৃষিজাত ও শিল্পজাত দ্রব্যের উৎপাদন বৃদ্ধির চেষ্টা করা। খাদ্যে স্বয়ংসস্পূর্ণতা অর্জনের জন্য প্রতি জেলায় একটি খাদ্যাঞ্চল গঠন করা। কৃষকরা যাতে খাদ্যশস্যের ন্যায্যমূল্য পায় সেজন্য খাদ্যশস্যের দামের স্থিরতা আনয়নের উপর গুরুত্ব আরোপ করা। তাছাড়া, খাদ্যশস্য মজুত করার জন্য এবং খাদ্যের যথোপযুক্ত বণ্টনের নিমিত্ত খাদ্য ব্যবসায় রাষ্ট্রীয়করণের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা। (৪) কৃষি হলো দেশের ভবিষ্যৎ। তাই দেশের উন্নয়নমূলক পরিকল্পনা কৃষিভিত্তিক হওয়া প্রয়োজন। ফসলের উৎপাদন ও উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর জন্য কৃষকরা যাতে সময়মতো এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে ঋণ পায় তার লক্ষ্যে কৃষকদের জন্য ঋণ প্রদানের প্রক্রিয়াকে গুরুত্ব দেয়া। বাস্তবে ব্যাংক থেকে কৃষিঋণ পাওয়া চাষির সংখ্যা হাতেগোনা। যারা সত্যি সত্যি কৃষক এবং যাদের ঋণের প্রয়োজন তাদের অনেকেই নানা রকম হয়রানি ও ঝামেলার জন্য ব্যাংকে ঋণ নিতে যায়ই না, এতে কৃষকদের সমস্যা দিন দিন জটিল হচ্ছে। ফলে কৃষি ঋণ মওকুফের ব্যাপারটি অর্থহীন হয়ে পড়েছে। গণহারে কৃষিঋণ মওকুফের ব্যাপারটি মোটেই সমর্থনযোগ্য নয়, এর পরিণাম ধ্বংসাত্মক হয়ে উঠতে পারে। ঋণ মওকুফ আসলে কৃষকদের সমস্যার কোনো সুরাহা নয়। মাইক্রোফিনান্স এবং ঋণ প্রদান ব্যবস্থা জোরদার করার মধ্যে কৃষকদের সমস্যা সমাধানের পথ খুঁজতে হবে।
শুধু বৈঠক, সভা-সমিতি, বিবৃতি-প্রচার অথবা রাজনৈতিক মুনাফামুখী আন্দোলন নয়- সমস্ত শুভবুদ্ধিসম্পন্ন নেতা, চিন্তাবিদ, মেধাবী অর্থনীতিবিদ আর দেশপ্রেমীদের উচিত অনতিবিলম্বে মূল্যবৃদ্ধির মূল কারণগুলোকে চিহ্নিত করে এগুলোকে অচিরে নির্মূল করা। আর সেটা করতে হবে অবিলম্বে, যুদ্ধকালীন তৎপরতায়। বেকার অভাবগ্রস্থ মানুষের উপর দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির চাপ প্রতিহত করা না গেলে সারা দেশের জন্যই যে দুঃসময় সমাগত তা সবাইকে উপলব্ধি করতে হবে। এখন সময় এসেছে বিশ্বময় খাদ্য সংকট নিরসনের জন্য পৃথিবীর দেশগুলোর উদ্যোগে এক উপায় এবং পন্থা নিরূপণ করার। বিশ্বে খাদ্য বাড়-বাড়ন্ত হয়েছিল গত শতকের ষাটের দশকে সবুজ বিপ্লবের মধ্য দিয়ে। বাংলাদেশও এ উদ্যোগের অন্তর্গত ছিল। এখন তাই দরকার দ্বিতীয় সবুজ বিপ্লবের। এ জন্য গবেষণা বিশ্বময় স্তরে হওয়া দরকার অধিক উৎপাদনক্ষম বীজ আবিষ্কারের ও সরবরাহের জন্য।
লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।