Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ইসলামে বিশুদ্ধ ভাষায় কথা বলার গুরুত্ব

প্রকাশের সময় : ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

মুহাম্মাদুল্লাহ আরমান

মহান আল্লাহতায়ালা মানুষকে ভাব প্রকাশের জন্য ভাষা দিয়েছেন। ভাষা আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রদত্ত অনেক বড় নেয়ামত। এর মাধ্যমে মানুষ মনের ভাব প্রকাশ করে। ইসলামী শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিশুদ্ধভাবে মানুষের কাছে পৌঁছাতে ভাষার গুরুত্ব অপরিসীম। এজন্য প্রত্যেক নবি-রাসূলকে আল্লাহতায়ালা তাঁর জাতির ভাষা দিয়ে পাঠিয়েছেন। পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘আমি প্রত্যেক নবিকে তাঁর জাতির ভাষা দিয়ে প্রেরণ করেছি যাতে তাদের সামনে তাঁরা পরিষ্কারভাবে ব্যাখ্যা করতে পারে।’ (সূরা ইবরাহীম : ০৪)
আর এটা সর্বজনবিধিত, অন্যের কাছে নিজের মনের ভাব মার্জিত, সুন্দর ও সাবলীলভাবে উপস্থাপন করতে বিশুদ্ধ ভাষার কোনো বিকল্প নেই। নিজের গ্রহণযোগ্যতা এবং ব্যক্তিত্ব ফুটিয়ে তুলতে শুদ্ধ, প্রাঞ্জল ও সুস্পষ্ট ভাষা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিশুদ্ধভাষা ও বাগ্মিতার মাধ্যমে নেতৃত্বের গুণ তৈরি হয়। ভাষার শুদ্ধতা মানুষকে নিচু শ্রেণি থেকে উঁচু শ্রেণিতে উন্নীত করে। আল্লাহতায়ালা প্রত্যেক নবি-রাসূলকে সেই গোত্রেই প্রেরণ করেছেন, যে গোত্র বংশমর্যাদা ও বিশুদ্ধ ভাষায় সে যুগে অন্যসব গোত্র থেকে অগ্রগামী ছিল। এ কারণে কাফের-মুশরিকরা নবি-রাসূলদের শত বিরোধিতা সত্ত্বেও কখনও তাঁদের ভাষা ও ব্যক্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারেনি। ক্ষেত্রবিশেষ কাফেরদের মুখে নবিদের প্রশংসাও ওঠে এসেছে। মক্কার কাফেররা সাধারণ মানুষকে আমাদের প্রিয়নবিজি (সা.) থেকে দূরে রাখতে এই বলে সতর্ক করতো, ‘তোমরা মুহাম্মাদের কাছে যেও না। তার কাছে অন্যকে সম্মোহন ও আকৃষ্ট করার ভাষাযাদু আছে।’ (সীরাতে মুস্তাফা, কান্ধলবী ১/১৮১)
প্রিয় নবিজির জন্মের পর তাঁকে দুধপান করাতে হালিমা সাদিয়ার কাছে তায়েফে পাঠানো হয়। এটা সে যুগে আরবের সাধারণ প্রথা ছিল, কোনো বাচ্চা জন্মগ্রহণ করার পর তার শারীরিক গঠন ও ভাষার শুদ্ধতার জন্য তাকে গ্রামে পাঠিয়ে দেয়া হতো। এতে বাচ্চার বেড়ে ওঠা এবং বিশুদ্ধ বাচনভঙ্গির পথ মসৃণ হতো। হযরত আবু বকর (রাযি.) একদিন রাসূল (সা.)-কে বলেন, আপনি খুবই বিশুদ্ধভাষী। প্রতিউত্তরে নবিজি বলেন, আমি কুরাইশ বংশের আর আমি দুধপান করেছি সাআদ গোত্রে। (সীরাতে মুস্তাফা ৬৯-৭০; বেদায়া নেহায়া ২/২৩৩; আসাহহুস সিয়ার: ০৬)
পরবর্তীতে রাসূল (সা.)-এর দাওয়াতী জীবনে ভাষার শুদ্ধতা ও বাচনভঙ্গির যথেষ্ট প্রভাব ছিল। এক হাদিসে প্রিয়নবি ইরশাদ করেন, ‘আমাকে দান করা হয়েছে সর্বমর্মী বচন।’ (সহীহ মুসলিম : ৫২৩)
সুতরাং একথা নির্দ্বিধায় বলা যায়, বিশুদ্ধ ও সুস্পষ্ট ভাষায় কথা বলা প্রিয় নবিজির সুন্নাত। রাসূল (সা.) সাহাবায়ে কেরামকে শুদ্ধ ও মার্জিত ভাষায় কথা বলার প্রতি গুরুত্বারোপ করেছেন। এক হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, আমের গোত্রের এক লোক নবিজির ঘরে প্রবেশ করার জন্য অনুমতি চেয়ে বলল, ‘আ-আলিজু?’ (আমি কি ঢুকতে পারি?) তার কথা শুনে রাসূল (সা.) খাদেমকে বলেন, এই লোককে এভাবে অনুমতি চাইতে বল, ‘আসসালামু আলাইকুম আ-আদখুলু?’ (আমি কি প্রবেশ করতে পারি?) ওই লোক নবিজির কথা শুনে সেভাবেই সালাম দিয়ে অনুমতি প্রার্থনা করল। রাসূল (সা.) তাকে অনুমতি দিলেন। অতঃপর সে ঘরে প্রবেশ করল। (সুনানে আবুদাউদ : ৫১৩৪; সুনানে নাসাঈ : ৫০১৪; মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা : ২৬১৮৫)
এ হাদিসে দেখা যাচ্ছে, রাসূল (সা.) সাহাবীর ভাষা সংশোধন করে দিয়েছেন। কারণ ঘরে প্রবেশ করতে যে মার্জিত ও বিশুদ্ধ ভাষায় অনুমতি চাওয়ার দরকার ছিল তিনি তা করেননি। হাদিসটির মাধ্যমে ইসলামে বিশুদ্ধ ভাষায় কথা বলার গুরুত্ব ফুটে ওঠে। রাসূল (সা.) নিজে বিশুদ্ধ ও সুস্পষ্ট ভাষায় কথা বলেছেন। সাহাবায়ে কেরামকে বিশুদ্ধ ভাষায় কথা বলতে উদ্বুদ্ধ করেছেন। তাঁরাও নবিজির এ আদর্শ গ্রহণ করেছেন। ইমাম বুখারি (রহ.) বর্ণনা করেন, আবদুল্লাহ বিন ওমর (রাযি.) তাঁর সন্তানকে অশুদ্ধ ভাষায় কথা বলার কারণে প্রহার করতেন। (আল-আদাবুল মুফরাদ : ৮৮০)
মূসা বিন তলহা বর্ণনা করেন, আমি আয়েশা (রাযি.) থেকে বিশুদ্ধভাষী আর কাউকে দেখিনি। (জামে তিরমিযী ২/২২৭)
আল্লামা ইবনে তাইমিয়া (রহ.) বলেন, পূর্বসূরীরা ভাষায় ভুল করলে তাদের সন্তানদের শাসন করতেন। (মাজমূউল ফাতাওয়া ৩২/২৫২)
ইমাম যুহরী (রহ.) বলেন, আমর মতে বিশুদ্ধ ভাষার চেয়ে বড় আভিজাত্যের বস্তু আর কিছু নেই। (হিলয়াতুল আউলিয়া ৩/৩৬৪)

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইসলামে বিশুদ্ধ ভাষায় কথা বলার গুরুত্ব
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ