পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
একের পর এক নতুন মাদক দেশে আসছে। আর ওইসব মাদকে আসক্ত হচ্ছেন উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তানরা। শুধু তাই নয়, ওইসব মাদকে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর জীবন এখন বিপন্ন। এছাড়াও সমুদ্র সৈকতে, পাহাড়ি রিসোর্টে, কোনো বিনোদন স্পটে প্রকৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এই মাদকের ব্যবহার করা হয়ে তাকে বলে জানিয়েছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
র্যাব জানায়, দীর্ঘ গোয়েন্দা নজরদারি ও তদন্তের ভিত্তিতে রাজধানীর তেজগাঁও থেকে নিষিদ্ধ মাদক এলএসডি ও ডিএমটি’সহ চার মাদক কারবারিকে গ্রেফতারা করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃতরা হলেন- সৈয়দ মঈন উদ্দিন আহমেদ ওরফে শাদাব, মো. আব্রাহাম জোনায়েদ তাহের, স্বপ্নীল হোসেন ও সিমিয়ন খন্দকার। এ সময় তাদের কাছ থেকে ৪০ ব্লট আলোচিত মাদক এলএসডি, নতুন মাদক ডিএমটি ৬০০ মিলিগ্রাম, আমেরিকান ক্যানাবিজ ৬২ গ্রাম এবং মাদক সেবনের বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়।
গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-২ এর অধিনায়ক (সিও) লে. কর্নেল খন্দকার সাইফুল আলম বলেন, ইদানিং দেখা যাচ্ছে যে মাদক চোরাকারবারী এবং মাদকসেবিরা প্রতিনিয়ত নতুন নতুন পন্থা অবলম্বন করছে। বিশেষ করে সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে প্রচলিত নয় কিন্তু বিভিন্ন উন্নত দেশে প্রচলিত এমন কিছু মাদকের ব্যবহার পরিলক্ষিত হচ্ছে এবং ধীরে ধীরে আমাদের যুব সমাজ এতে আসক্ত হচ্ছে।
এ বিষয়ে র্যাব গোয়েন্দা নজরদারি ও ছায়া তদন্তের ভিত্তিতে গত শনিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে র্যাব সদর দফতর গোয়েন্দা শাখা ও র্যাব-২ এর একটি বিশেষ আভিযানিক দল রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানাধীন লাভ রোড এলাকা থেকে ওই চার যুবককে গ্রেফতার করে। তিনি বলেন, এলএসডি সম্পর্কে এরইমধ্যে আমরা জেনেছি। এটি মূলত বিদেশ থেকে পোস্টাল সার্ভিসের মাধ্যমে বাংলাদেশে আনা হয় এবং উচ্চমূল্য হওয়ায় মূলত এর ব্যবহারকারী উচ্চবিত্তের মধ্যেই সীমাবদ্ধ।
অপরদিকে উদ্ধার নতুন মাদক ডিএমটি যার চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় নাম ‘ডাইমেথাইলি স্টিপ্যামিন’। এটি একটি হ্যালুসিনোজেনিক ট্রিপটামাইন ড্রাগ। মূলত এটি মুখে এলএসডি সেবনের মতো, যা ধোঁয়ার মাধ্যমে শ্বাস নিয়ে বা ইনজেকশনের সঙ্গে নেয়া যায়। এটি সেবনের পরে ৩০ থেকে ৪০ মিনিট গভীর আসক্তি তৈরি করে। জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারদের ভাষ্যমতে, এটি সেবনের পর দ্রুত হ্যালুসিনেশন হয় এবং তারা কল্পনার জগতে প্রবেশ করে। মূলত এ থেকে মারাত্মক দুর্ঘটনা হতে পারে এমনকি জীবননাশও হতে পারে।
জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, গ্রেফতার সৈয়দ মঈন উদ্দিন আহমেদহ শাদাব উত্তরায় স্থানীয় এক ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল থেকে ও লেভেল শেষ করার পর ভারতের দার্জিলিংয়ে ২০১৩ সালে এ লেভেল পড়াশোনা করে। এরপর সে ২০১৫ সালে বিবিএ পড়ার জন্য থাইল্যান্ডে যায়। এক বছর সে থাইল্যান্ডে বিবিএ পড়ার সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুদের সঙ্গে এলএসডি ও ডিএমটি মাদকে আসক্ত হয়ে পড়ে। পরে বাংলাদেশে এসেও ওই মাদক গ্রহণ ও সংগ্রহ অব্যাহত রাখে। শাদাব মূলত এই ড্রাগ বিদেশ থেকে বিভিন্ন পোস্টাল সার্ভিসের মাধ্যমে নিয়ে আসে এবং বাংলাদেশে নিজে গ্রহণ ও বিক্রি করে।
অপরদিকে আব্রাহাম জোনায়েদ তাহের রাজধানীর এক ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল থেকে লেভেল শেষ করে মালয়েশিয়া যায়। ২০১৫-১৬ সাল পর্যন্ত পড়ালেখার জন্য অবস্থান করে। পরে সে উচ্চশিক্ষার জন্য ইংল্যান্ডে যায়। সেখানে সে নিয়মিত এলএসডি ও ডিএমটি গ্রহণ করত। সেখান থেকে এমবিএ শেষ করে ২০২০ সালে বাংলাদেশে ফেরত আসে এবং বাংলাদেশে নিয়মিত এলএসডি ও ডিএমটি গ্রহণ ও বিক্রি করে। অপর দুই গ্রেফতার স্বপ্নীল হোসেন এবং সিমিয়ন খন্দকার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছে।
লে. কর্নেল খন্দকার সাইফুল আলম আরো বলেন, সমুদ্র সৈকতে, পাহাড়ি রিসোর্টে, কোনো বিনোদন স্পটে প্রকৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এই মাদকের ব্যবহার করে থাকে বলে গ্রেফতাররা জানিয়েছে। এসব নতুন নতুন মাদক ছড়িয়ে পড়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাংলাদেশে এর আগে এলএসডি মাদক জব্দ হয়েছে। সেবনকারী ও ব্যবহারকারী গ্রেফতার হয়েছে। তবে ডিএমটি নামক এই মাদক এর আগে আগে কখনো জব্দ হয়েছে বলে জানা যায়নি। এই মাদক প্রকৌশল বা রাসায়নিক গবেষণাগারেও তৈরি করা সম্ভব। এখন পর্যন্ত এই দুই শ্রেণির মাদক বিশেষ শ্রেণির হাতেই রয়েছে। তারা নিজেরা পরিচিতদের মাধ্যমে ডিএমটি ও এলএসডি আমদানি করে। কখনো নিজেরা গিয়েও নিয়ে আসে। কুরিয়ার বা পোস্টাল সার্ভিসের মাধ্যমে চিঠি বা বইয়ের মাধ্যমে এগুলো সহজে নিয়ে আসা সম্ভব। এসব মাদক সহজলভ্য বা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থেকে র্যাব নজরদারি বৃদ্ধি করেছে।
র্যাব-২ অধিনায়ক বলেন, গ্রেফতাররা নিজেরাই মাদক সেবন করে, বিক্রি করে এবং নতুন নতুন মাদক গ্রহীতা তৈরি করে যা সমাজের জন্য খুবই আশঙ্কাজনক। এসব মাদকের উৎস এবং এর সরবরাহকারীদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে র্যাবের অভিযান অব্যাহত থাকবে। আটকদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
জানা গেছে, গত ২৩ মে হাফিজুর রহমান নামের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর লাশ ঢামেক হাসপাতালের মর্গে স্বজনরা সনাক্ত করেন। হাফিজুর রহমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ভিত্তিক মুকাভিনয় সংগঠন মাইম এ্যাকশানের সাধারণ সম্পাদক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যবিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী। আত্মহত্যা করে মারা গেছেন বলে ওই শিক্ষার্থীর লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। পরে পুলিশ বিষয়টি নিয়ে তদন্তে নামে। মৃত্যুর ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে পুলিশ নতুন মাদক এলএসডি’র (লাইসার্জিক অ্যাসিড ডাইথ্যালামাইড) সন্ধান পায়। এর এ ঘটনার সাথে জড়িত বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের মধ্যে বেশিরভাগই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।