পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
করোনা মহামারির মধ্যেও থেমে নেই রাজধানীর ফুটপাথের চাঁদাবাজরা। প্রতিদিন বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত কয়েক কোটি টাকার চাঁদা আদায় করা হয়। ‘লাইনম্যানদের’ মাধ্যমে তোলা চাঁদার এ টাকা যাচ্ছে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাকর্মী, কিছু দুর্নীতিবাজ পুলিশ এবং ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকা গডফাদারদের পকেটে। গবেষণার তথ্য মতে, অবৈধ এ টাকার জোরেই ফুটপাথ কখনোই পুরোপুরি হকারমুক্ত হয় না। দৈনিক ইনকিলাবের অনুসন্ধানেও এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, গুলিস্তান, মতিঝিল এলাকাসহ রাজধানীর প্রতিটি এলাকার ফুটপাথের হকারদের তদারকি করার জন্য পুলিশ লাইনম্যান নামধারী একশ্রেণির দালাল নিয়োগ করে থাকে। এসব দালাল আবার প্রভাবশালী নেতাদের আশীর্বাদপুষ্ট। এই দালালরাই সরকারি রাস্তা ‘ভাড়া’ দিয়ে মাসে হাতিয়ে নিচ্ছে কয়েক কোটি টাকা।
জানা যায়, রাজধানীর পল্টনে বাসসের সামনের ফুটপাথের চাঁদা আদায় করেন আদালত থেকে নিষিদ্ধ হকার্স সংগঠনের সভাপতি আবুল হাসেম কবির ও তার সহযোগী মুকিদুল ইসলাম শিমুল, হযরত আলী ও সেকেন্দার হায়াত। পল্টন থানার পুলিশের ক্যাশিয়ার পরিচয়কারী বায়তুল মোকাররম পূর্ব গেটে বন্ধ রাস্তায় হকার্সদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করেন দুলাল, সেকেন্দার হায়াত ও আরিফ চৌধুরী। তাদের মধ্যে দুলালের বিরুদ্ধে ইয়াবা ব্যবসার অভিযোগ রয়েছে। বায়তুল মোকাররম পশ্চিম পাশের ফুটপাথ থেকে চাঁদা আদায় করেন অবৈধ সংগঠন হকার্স সংগ্রাম পরিষদের নেতা চাটগাইয়া হারুন ওরফে বাটপার হারুন, হিন্দু খোকন মজুমদার, মিজান, মোস্তফা ও জাহাঙ্গীর। বায়তুল মোকাররম উত্তর পাশে সাজু, মন্টু, কালা নুরু, আব্দুল্লাহ খোকন ও সুবজ। বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম ১ নম্বর গেটে বাবুল, তার দুই ছেলে আকাশ ও হৃদয়। ২ নং গেটে ও ভাসানী স্টেডিয়ামের পাশে আলী ও গফুর। বায়তুল মোকাররম লিং রোডে চাটগাইয়া হারুন, হিন্দু খোকন, মিজান, নজরুল, কোটন, ফারুক। জিপিওর দক্ষিণ পাশে বুড়া ছালাম ও নজরুল। মুক্তাঙ্গনের পাশে নাছির, আলমঙ্গীর ও মনির।
হাউজ বিল্ডিংয়ের পাশে ফলপট্টি ওসমান, আলমগীর ও জাহাঙ্গীর। কমিউনিস্ট পার্টি অফিসের সামনে হানিফ, কালাম ও আবুল হোসাইন। এল মল্লিক বিল্ডিংয়ের সামনে বিল্লাল ও টিটু। আহাদ পুলিশ বক্সের দক্ষিণ পাশে সাইদের ছেলে রিপন, জনি ও জয়নাল। আহাদ বক্সের উত্তর পাশে লম্বা হারুন ও ফোন ফ্যাক্সের দোকানি নামধারী শাহিন। সুন্দরবন স্কোয়ার মার্কেটের পূর্ব পাশে সেলিম, জয়নাল, লম্বা বাবুল, ভোলা, সালেক, আবু সাইদ ও রজ্জব। গুলিস্তান ট্রেড সেন্টারের পশ্চিম পাশে বিমল, মিন্টু ও হান্নান সিদ্দিকী, গুলিস্তান হলের সামনে টাকাওয়ালা বাবুল, খোরশেদ ওরফে বড়মিয়া, কালাম, বাচ্চু, সুলতান ও সরদার বাবুল।
আহাদ বক্সের সামনে নয়ন, মুন্সি ও হান্নান, জাতীয় গ্রন্থ কেন্দ্রের সামনে লিপু ও শহিদ। রমনা ভবনের পশ্চিম পাশে মনির, শফিক। খদ্দর মার্কেটের সামনে কাদের ও মো. আলী। রাজধানী হোটেলের সামনে বিএনপি নেতা কালা নবী, আব্দুর রব, সেলিম, নাছির। পূর্ণিমা স্ল্যাক্স ও অগ্রণী ব্যাংকের সামনে আক্তার, জাহাঙ্গীর, দুলাল ও শাহাবুদ্দিন। সোনালী ব্যাংক ও খাবার দাবার হোটেলের সামনে জুয়ারী সালাম, রহিম ও অপু। বায়তুল মোকাররম দক্ষিণ গেটে খলিল, তাজু, নবী ও আনোয়ার। ওসমানী উদ্যানের দক্ষিণ ও পূর্ব পাশে গাউরা বাবুল, লম্বা শাহজাহান, হিন্দু শাহিন, মোহন ও বাচ্চু।
মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে একাধিক মামলার আসামি সাইফুল মোল্লা, তার ছেলে সিবলু, হোসাইন, মোহর আলী, টিপু, গাড়ি পার্কের ইজারাদার রাজু ও তার সহযোগীরা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের উত্তর পাশে ইয়াবাখোর ওরফে গানজুট্টি ওরফে হারুন ও শহীদ। মতিঝিল সোনালী ব্যাংকের সামনে মকবুল, সাইদ, ফরুখ। বক চত্বরের পাশে মান্নান মোল্লা, নুরুল ইসলাম, কালা কাশেম ও ইউসুফ।
ফার্মগেটে জুতা সেলিম, চুন্নু ও আলামিন। জয়কালি মন্দির এলাকায় মহসিন ও তার স্ত্রী রিতা বেগম। নিউ মার্কেট এলাকায় যুবলীগ নেতা ইব্রাহীম ইবু, নুর ইসলাম, ছাত্তার মোল্লাহ, ইসমাইল, বিপ্লব, মোরশেদ, শাহআলী মাজার এলাকায় ধান্দাবাজ কবির, তার সহযোগী রাজিব, বাবুসহ ১০ থেকে ১৫ জন লোক চাঁদা আদায় করে।
যাত্রাবাড়ী এলাকায় চাঁদা আদায় করে গডফাদার মাসুম, সোনা মিয়া, তোরাব আলী ও তাদের আরো ১০ থেকে ১২ জন সহযোগী। কাপ্তান বাজার এলাকায় বিএনপি নেতা কাজী হান্নান, মনির, নুর ইসলাম ও তাদের সহযোগীরা। বিমানবন্দর থানা এলাকায় আক্তার, মনির, বাবলু, রুহুল ও তাদের গডফাদার আনিছুর রহমান নাইম। উত্তরা এলাকায় জাকারিয়া, হানিফ, টিটু ও আল আমিন। ওয়ারী এলাকায় উত্তম কুমার (তিনি স্থানীয় একটি স্কুলের দারোয়ানের কাজ করেন), নাছির, হাসেম। সূত্রাপুরস্থ কলতাবাজার এলাকায় গডফাদার মো. ফিরোজ, পাগলা নূর ও হামিদ চাঁদা আদায় করে।
জানা গেছে, ওই সব চাঁদাবাজ আদালত কর্তৃক নিষিদ্ধ সাতটি হকার্স সংগঠনের নামে চাঁদাবাজি চালিয়ে যাচ্ছে। সংগঠনগুলো হলোÑ বাংলাদেশ হকার্স ইউনিয়ন, বাংলাদেশ হকার্স সংগ্রাম পরিষদ, হকার্স সমন্বয় পরিষদ, ছিন্নমূল হকার্স সমিতি, ইসলামী হকার্স আন্দোলন ও বাংলাদেশ আওয়ামী হকার্স লীগ নামে আরো দু’টি সংগঠন।
গুলিস্তান, মতিঝিল, ফার্মগেট, নিউমার্কেট, উত্তরা, পল্টনসহ বিভিন্ন এলাকার হকারদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, রাজধানীতে দুই সিটি করপোরেশনের অধীনে প্রায় ১৬৩ কিলোমিটার দীর্ঘ ফুটপাথ রয়েছে। এতে প্রায় ৭০ হাজারেরও বেশি দোকান রয়েছে। হকার সমিতির হিসাব মতে, ফুটপাথের এসব দোকান থেকে প্রতিদিন গড়ে ৫ কোটি টাকা চাঁদাবাজি হয়। এই টাকার ভাগ পায় প্রভাবশালী রাজনৈতিক দলের নেতা, লাইনম্যান, স্থানীয় মাস্তান, রাজনৈতিক কর্মী ও পুলিশ।
সূত্র জানায়, রাজধানীতে ফুটপাথের চাঁদা আদায়ের জন্য সাড়ে চার থেকে পাঁচশ’ লাইনম্যান কাজ করে। স্বাভাবিক সময়ে ফুটপাথে আড়াই লাখের মতো হকার থাকে। কিন্তু করোনার কারণে ফুটপাথে হকারের সংখ্যা কমলেও কমেনি চাঁদার পরিমাণ। নিয়মিত গুনতে হয় চাঁদার টাকা। দোকানে বেচাকেনা হোক আর নাই হোক বিভিন্নভাবে প্রতিদিনই বিভিন্ন অংকের চাঁদা দিতে হয় হকারদের।
বাংলাদেশ হকার্স ফেডারেশনের হিসাব মতে, গুলিস্তান থেকে বায়তুল মোকাররম মসজিদ হয়ে ফুলবাড়ীয়া পর্যন্ত রাস্তা ও ফুটপাথে কমপক্ষে সাড়ে চার হাজার দোকান বসে। এসব দোকান থেকে প্রতিদিন কমপক্ষে ৫ লাখ টাকা চাঁদা তোলে লাইনম্যানরা। মাস শেষে এই টাকার পরিমাণ দাঁড়ায় দেড় কোটি টাকা।
হকাররা জানিয়েছেন, প্রতিদিন নির্ধারিত চাঁদার টাকা না দিয়ে কেউই ফুটপাথে টিকতে পারে না। মারধর করে তুলে দেয়াসহ পুলিশ দিয়েও হয়রানি করা হয়। গতকাল বায়তুল মোকাররম এলাকার কয়েকজন হকার ইনকিলাবকে বলেন, করোনার মধ্যে বেচাবিকি অনেক কমে গেছে। তারপরও নিয়মিত চাঁদা দিতে হয় তাদের।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগের এডিসি ইফতেখায়রুল ইসলাম ইনকিলাবকে বলেন, যেখানেই অপরাধ হচ্ছে সেখানেই পুলিশ অভিযান পরিচালনা করছে। করোনার কারণে আগের মতো ফুটপাথে হকাররা বসেন না। তবে হকার ও তাদের কাছ থেকে চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানান তিনি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।