পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বিদেশ গমনেচ্ছু কর্মীদের নির্বিঘ্নে যাত্রায় করোনা ভ্যাকসিনের বিকল্প নেই। করোনা টিকার দাবিতে বিদেশগামী নারী গৃহকর্মী ও পুরুষ কর্মীরা রাজপথে নেমে এসেছেন। বৈশ্বিক করোনা মহামারি সংক্রমণ রোধে ভ্যাকসিন গ্রহণ ছাড়া অভিবাসী কর্মী নিতে অনীহা প্রকাশ করছে আমদানিকারক দেশগুলো। মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রী এম সারাভানান গত মাসে প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ইমরান আহমদের কাছে এক চিঠিতে দেশটি প্লাটেশন খাতে ৩২ হাজার কর্মী নেয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেন। ঐ চিঠিতে করোনা ভ্যাকসিন ব্যতীত কোনো কর্মী নেয়া হবে না বলেও উল্লেখ করা হয়।
সউদী সরকার তার দেশটিতে জননিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে কর্মরত সকল অভিবাসী কর্মীকে গত মার্চ মাস থেকে বিনা মূল্যে করোনা ভ্যাকসিন দেয়া শুরু করেছে। সউদী আরবে হোটেল কোয়ারেন্টিনের উচ্চ ব্যয় বহন করতে হিমশিম খাচ্ছে বিদেশগামী কর্মীরা। অবিলম্বে করোনা ভ্যাকসিনের দাবিতে গতকাল বৃহস্পতিবার বিভিন্ন জেলা থেকে লকডাউনের মধ্যেও শত শত সউদীগামী কর্মী ইস্কাটন রোডস্থ প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। অবিলম্বে করোনা ভ্যাকসিনের দাবিতে বিক্ষোভকালে সউদীগামী কর্মীরা বলেন, ভ্যাকসিন দিন; না হয় বিষ দিন। ভিসা আর ইকামার মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে চাকরি হারাতে হবে। বিক্ষুব্ধ কর্মীরা এনআইডি’র পরিবর্তে পাসপোর্টের মাধ্যমে করোনা ভ্যাকসিন দেয়ার নিবন্ধনের সুযোগ দেয়ার জোর দাবি জানান।
বি-বাড়িয়ার সিভিল সার্জন ডা: মোহাম্মদ একরাম উল্লাহ গত ২১ জুন এক সার্কুলারে বিদেশগামী কর্মীদের করোনা টিকার জন্য রেজিস্ট্রেশন করার প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করার নির্দেশনা জারি করে। এ নির্দেশনা ফেসবুকের মাধ্যমে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়লে বিভিন্ন জেলা থেকে সউদীগামী কর্মীরা লকডাউনের মধ্যে গতকাল প্রবাসী ভবনে জড়ো হতে শুরু করে। বি-বাড়িয়া সিভিল সার্জন একরাম উল্লাহর কথিত সার্কুলারের খবর পেয়ে মাদারীপুর থেকে আগত সউদীগামী কর্মী রমজান ও হৃদয় বিক্ষোভকালে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, অবিলম্বে ভ্যাকসিন দিন; না হয় বিষ দিন। ভিসা ও ইকামার মেয়াদ চলে গেলে বিদেশের চাকরিও যাবে আর মানসম্মান সবই যাবে। হৃদয় কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, আগামী ৩ জুলাই সাউদিয়া এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট (এসভি-৮০৩) যোগে সউদী যাওয়ার কথা।
সউদীর হোটেল কোয়ারেন্টিনের ৭০ হাজার টাকা যোগাতে না পেরে ভ্যাকসিন পাওয়ার আশায় প্রবাসী ভবনে ছুটে এসেছি। সউদীগামী কর্মী বি-বাড়িয়ার শামসুল হক, শরীয়তপুরের রিহাদ, ভোলার মো. রাসেল, মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখানের মধুপুরের রঞ্জিৎ দাস ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, প্রবাসী মন্ত্রণালয় থেকে করোনা টিকার নিবন্ধন করার খবর পেয়ে বহু কষ্ট করে ঢাকায় এসেও কোনো কাজ হলো না। তারা বলেন, ঋণ করে এবং ভিটেমাটি বিক্রি করে বিদেশে গিয়ে আমরা রেমিট্যান্স পাঠাই আর আমাগো কথা শোনার কেউ নেই। এ সময়ে প্রবাসী মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. আহমদ মনিরুছ সালেহীন, বিএমইটির মহাপরিচালক মো. শহিদুল আলম ও একজন ম্যাজিস্ট্রেট প্রবাসী কল্যাণ ভবনের নিচে নেমে বিক্ষোভকারী সউদীগামী কর্মীদের শান্ত হবার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, আমরা আপনাদের ভাই। আমরা করোনা ভ্যাকসিন দেয়ার মালিক না। তবে আমরা বিদেশগামী কর্মীরা যাতে করোনা ভ্যাকসিন পায় তার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আগামী এক সপ্তাহ পর এনআইডি ছাড়াই বিদেশগামী কর্মীরা পাসপোর্ট ও স্মার্টকার্ড দিয়েই করোনা ভ্যাকসিনের নিবন্ধন করতে পারবে। এ সময় বিক্ষোভকারী সউদীগামী কর্মীরা ভ্যাকসিনের দাবিতে দফায় দফায় ¯েøাগান দিতে থাকেন।
এদিকে, সরকারি সিদ্ধান্ত ছাড়াই বি-বাড়িয়ার সিভিল সার্জনের এ ধরনের সার্কুলার জারি করায় গতকাল চেক বিতরণের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী ইমরান আহমদ বিব্রতবোধ করেন এবং প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় করোনা টিকা দেয়ার মালিক নন বলেও উল্লেখ করেন। এ ধরনের সার্কুলার জারি করায় বিদেশগামী কর্মীরা হয়রানির শিকার হওয়ায় প্রবাসী মন্ত্রী ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
সম্প্রতি বায়রা সম্মিলিত সমন্বয় পরিষদ সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বলেন, অবিলম্বে বিদেশগামী কর্মীদের সহজ শর্তে টিকা দেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। অন্যথায় রেমিট্যান্স আয়ের সবচেয়ে বড় খাত জনশক্তি রফতানিতে ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে আসতে পারে। জরুরি ভিত্তিতে তাদের জন্য ১ লাখ ২০ হাজার টিকা বরাদ্দ দেয়ার উদ্যোগ নিতে হবে। প্রয়োজনে ভ্রাতৃপ্রতিম দেশ সউদী আরবের কাছে প্রবাসী কর্মীদের জন্য টিকা চাওয়ার উদ্যোগ নেয়া হোক। সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন বায়রার সাবেক সভাপতি ও সম্মিলিত সমন্বয় পরিষদের প্যানেলপ্রধান আলহাজ আবুল বাসার।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, টিকা না দেয়ায় প্রবাসী কর্মীদের সউদী আরবে গিয়ে সাত দিন হোটেল কোয়ারেন্টিনের ৭০ হাজার টাকার অতিরিক্ত ব্যয়ভার বহন করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। হোটেল কোয়ারেন্টিনের জন্য সরকারি প্রণোদনার ২৫ হাজার টাকা না দিয়ে সকল কর্মীর জন্য টিকা নিশ্চিতের দাবি জানানো হয়। টিকার নিবন্ধন অ্যাপস-এ ৪০ বছর বয়স উল্লেখ থাকায় বিদেশগামী ২১ থেকে ৩৯ বয়সের কর্মীরা সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে দেশের স্বার্থে সকল বয়সী বিদেশগামী কর্মীদের টিকার আওতায় আনার দাবি জানানো হয়। এক প্রশ্নের জবাবে বায়রার সাবেক নেতা ফখরুল ইসলাম বহির্বিশ্বের শ্রমবাজার ধরে রাখতে জরুরি ভিত্তিতে বিদেশগামী কর্মীদের জন্য ১ লাখ ২০ হাজার টিকা বরাদ্দ দিতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন। তিনি সউদী সরকার মনোনীত টিকা বিদেশগামী কর্মীদের জন্য বরাদ্দ দেয়ার আহŸান জানান।
এক প্রশ্নের জবাবে বলা হয়, বর্তমানে সউদী গমনেচ্ছু প্রায় ৫০ হাজার কর্মী অপেক্ষমাণ। এসব কর্মীকে টিকা দেয়া সম্ভব না হলে সউদীর হোটেল কোয়ারেন্টিনের ব্যয়ভার বহন করতে প্রায় ৩৭৫ কোটি টাকা খরচ হবে। তারা বিদেশগামী কর্মীদের বিমান ভাড়া কয়েক গুণ বৃদ্ধি করায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে যৌক্তিক ভাড়া নির্ধারণের দাবি জানান।
বিদেশগামী কর্মীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে চীনের উপহার দেয়া সিনোফার্মের ভ্যাকসিন দেয়া শুরু হচ্ছে। দেশের সব সরকারি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, সরকারি জেনারেল হাসপাতাল, জেলা সদর হাসপাতাল কিংবা ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালের নির্দিষ্ট কেন্দ্রের মাধ্যমে করোনা ভ্যাকসিন দেয়া হবে। গত সপ্তাহে স্বাস্থ্য অধিদফতর টিকার অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত জনগোষ্ঠীর তালিকায় বিদেশগামী কর্মীদের অন্তর্ভুক্ত করে একটি চিঠি জারি করেছে। বিদেশগামী কর্মীদের করোনা ভ্যাকসিন প্রদানের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদ।
উল্লেখ্য, ১৬ জুন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদ বিদেশগামী কর্মীদের অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে করোনা টিকা প্রদানের বিষয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী প্রবাসী কর্মীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টিকা প্রদানের বিষয়ে আশ্বাস দেন। গতকাল রাতে রিক্রুটিং এজেন্সিজ ঐক্য পরিষদের সভাপতি এম টিপু সুলতান ইনকিলাবকে বলেন, বর্তমানে করোনা টিকার অভাবে নতুন-পুরাতন মিলে দু’লাখ কর্মী বিদেশে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছে। তিনি দেশের স্বার্থে জরুরি ভিত্তিতে এনআইডি’র পরিবর্তে পাসপোর্ট, ভিসা ও ইকামার মাধ্যমে করোনা টিকা নিবন্ধনের সুযোগ দেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, করোনা টিকা না দেয়ার কারণে সউদীতে হোটেল কোয়ারেন্টিনের ব্যয় বহন করতে প্রতি মাসে তিনশ’ কোটি টাকা দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে। রাতে সউদীর জেদ্দা থেকে কনসাল জেনারেল-এর লেবার কাউন্সিলর মো. আমিনুল ইসলাম ইনকিলাবকে জানান, সউদীতে প্রায় বিশ লাখ বাংলাদেশি কর্মীকে গত মার্চ মাস থেকে সউদী সরকার বিনা মূল্যে করোনা টিকা দিতে শুরু করেছে। সউদী হোটেল কোয়ারেন্টিনে প্রবাসী কর্মীরা সঠিকভাবে খাবার পাচ্ছে না এবং মানসম্পন্ন আবাসনের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে কাউন্সিলর আমিনুল ইসলাম বলেন, সাউদিয়া এয়ারলাইন্স ও বিমান বাংলাদেশ এয়ালাইন্স হোটেল কোয়ারেন্টিনের ব্যবস্থা করছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।