ইবি ভিসির অফিসে তালা, অডিও ক্লিপ বাজিয়ে আন্দোলন
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ভিসি প্রফেসর ড. শেখ আবদুস সালামের অডিও ফাঁসের ঘটনায় তৃতীয় দিনেও ভিসি
‘জীবন যুদ্ধে ফলাফলকে প্রাধান্য না দিয়ে স্বপ্নের বিশ্ববিদ্যালয় জাবির জন্য প্রাণপণ চেষ্টার আজ দুবছর। কখনো ফিরে তাকাইনি যে-আমি জাবিয়ান হতে পারবো না। কারণ, নিজের প্রতি অসীম বিশ্বাস আর দৃঢ় মনোবল ছিলো যে আমি পারবো। কিন্তু বড়ই পরিতাপের বিষয় আজ দেশের স্বনামধন্য ৪৮টি স্বায়ত্বশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে যখন ২০ টি বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের বিভাগ পরিবর্তন থেকে বঞ্চিত করে তখন দুচোখ বন্ধ করে জাবির স্বপ্নে পথ চলি। জীবনে দুটি বছর কত শত পরিশ্রম করেছি এই জাবির জন্য সেটা নিজের থেকে বেশি হয়তো কেউ জানে না। প্রতিটা সেকেন্ড টাইমার জানে রাত জাগার কষ্ট,তারাই শুধু জানে কিভাবে নিজের সর্ব সুখ বিসর্জন দিয়ে জাবির জন্য লড়াই করতে হয়। কিন্তু আজকে যদি সেই জাবি প্রতিটা সন্তানের পিতা-মাতার হাজার টাকা নষ্ট করে তাদের পরীক্ষা দিতে না দেয় তাহলে এর থেকে বড় কোনো কষ্ট পৃথিবীতে নেই।’
কথা গুলো রাসেল মাহমুদ নামের এক শিক্ষার্থী জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির ফেসবুক পেইজে মেসেজ দিয়ে লিখেছেন । তুলে ধরেছেন ভর্তি পরীক্ষায় জিপিএ বৃদ্ধি করায় তার জাবিতে ভর্তি পরীক্ষা দেয়ার স্বপ্ন ভেঙ্গে যাওয়ার কথা। এভাবে শত শত শিক্ষার্থীর তিনবছর ধরে প্রস্তুতি নেয়ার পরও তারা জাবিতে পরীক্ষা দিতে পারবেননা।
রাসেল আক্ষেপ করে বলেন, ‘ভাগ্যের নির্মম পরিহাসের কাছে হেরে গিয়ে আজ একজন সেকেন্ড টাইমার। এস এস সি তে খুব ভালো একটা ফলাফল করার পরেও ইন্টারে ভাগ্যের কাছে হেরে যাই। নিজের চেষ্টার কোনো কমতি না থাকলে ভাগ্যের কমতি ছিলো। তাইতো ভালো কোনো ফলাফল আসেনি।’
ওই মেসেজে রাসেল আরও জানান, ‘জাবির পূর্বের নোটিশ সামনে রেখে হাজার হাজার শিক্ষার্থী প্রস্তুতি নিয়ে আসছে, শেষ সময়ে এসে বি, সি ইউনিটে মোট পয়েন্ট ৩.০০ থেকে ৩.৫০ করা এবং বিভিন্ন বিষয় পয়েন্ট রিকুয়ারমেন্ট বাড়িয়ে দেয়া সম্পূর্ণ অযৌক্তিক বলে মনে করি। আপনারা যেহেতু আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে সেকেন্ড টাইম রাখবেন না। তাই আপনাদের প্রতি বিনীতভাবে আকুল আবেদন- সার্কুলারে কোনো পরিবর্তন না এনে সকল সেকেন্ড টাইমারদের পরীক্ষার সুযোগ করে দিন। আপনাদের অবগতির জন্য বলতে চাই এবার অটো পাশের মাধ্যমে শতভাগ পাশ এবং জিপিএ ৫ এর পরিমাণ এত বেশি যে আমরা সেকেন্ড টাইমাররা দিশেহারা। তাই মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে, নিজের সন্তান ভেবে আমাদের দিকে তাকান।’
এভাবে প্রতিনিয়ত ফেসবুকে হতাশার কথা ব্যাক্ত করছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা। তাদের দাবি, ভর্তি পরীক্ষায় আগের জিপিএ বহাল রাখা হোক।
জানা যায়, ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শুরু থেকেই বিতর্কিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করছে। ফলে ভোগান্তিতে পড়েছে ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থীরা। দেশের একমাত্র আবাসিক উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি প্রথমে সিলেকশন পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়। পরে ছাত্রছাত্রীদের প্রতিবাদের মুখে সে সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে।
সর্বশেষ গত ১৮ই জুন প্রকাশিত হয় জাহাঙ্গীরনগরের ভর্তি বিজ্ঞপ্তি এবং ভর্তি আবেদন শুরু হয় ২০শে জুন থেকে। কিন্তু এবারের ভর্তি বিজ্ঞপ্তিতে বাড়ানো হয় আবেদনের যোগ্যতা। এতে বিপদে পড়েছে তিন বছর ধরে প্রস্তুতি নেওয়া সেকেন্ড টাইম শিক্ষার্থীরা।
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, গাণিতিক ও পদার্থবিজ্ঞান বিষয়ক এ-ইউনিটে আবেদনের যোগ্যতা এসএসসি ও এইচএসসিতে আলাদাভাবে ন্যূনতম ৪ ও সর্বমোট জিপিএ-৮ দশমিক ৫০ থাকতে হবে।
সমাজবিজ্ঞান অনুষদের বি-ইউনিট এবং কলা ও মানবিক অনুষদের সি-ইউনিটে আবেদন যোগ্যতা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে আলাদাভাবে ন্যূনতম ৩ দশমিক ৫০ ও সর্বমোট জিপিএ-৮ নির্ধারণ করা হয়েছে।
সি-১ ইউনিটের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগে আবেদনের জন্য আলাদাভাবে ন্যূনতম জিপিএ-৩ দশমিক ২৫ এবং সর্বমোট ৬ দশমিক ৫, চারুকলা বিভাগের জন্য আলাদাভাবে ন্যূনতম জিপিএ-৩ দশমিক ৫০ এবং সর্বমোট জিপিএ-৭ থাকতে হবে।
জীববিজ্ঞান অনুষদ তথা ডি-ইউনিটে আবেদনের জন্য আলাদাভাবে ন্যূনতম ৪ এবং সর্বমোট জিপিএ-৯ থাকতে হবে।
বিজনেস স্টাডিজ অনুষদ তথা ই ইউনিটের জন্য এসএসসি ও এইচএসসিতে আলাদাভাবে জিপিএ ন্যূনতম ৩ দশমিক ৭৫ এবং সর্বমোট ৭ দশমিক ৫০ ও বিজ্ঞান শাখার জন্য আলাদাভাবে জিপিএ-৪ এবং সর্বমোট ৮ থাকতে হবে।
আইন অনুষদ অর্থাৎ এফ-ইউনিটে আবেদনের জন্য এসএসসি ও এইচএসসিতে জিপিএ আলাদাভাবে ন্যূনতম ৪ এবং সর্বমোট ৮ থাকতে হবে। তবে বিজ্ঞান শাখার শিক্ষার্থীদের জন্য সর্বমোট জিপিএ-৮ দশমিক ৫০ থাকতে হবে।
আইবিএ ইনস্টিটিউট অর্থাৎ জি-ইউনিটে আবেদনের জন্য জিপিএ আলাদাভাবে ন্যূনতম ৪ এবং সর্বমোট ৮ থাকতে হবে। তবে বিজ্ঞান শাখার শিক্ষার্থীদের জন্য জিপিএ থাকত হবে সর্বমোট ৯।
ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন টেকনোলজি বা এইচ-ইউনিটে আবেদনের ক্ষেত্রে এসএসসি ও এইচএসসিতে আলাদাভাবে ন্যূনতম জিপিএ-৪ এবং সর্বমোট জিপিএ-৯ থাকতে হবে।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু ও তুলনামূলক সাহিত্য ও সংস্কৃতি তথা আই-ইউনিটের জন্য জিপিএ আলাদাভাবে ন্যূনতম ৩ দশমিক ৫০ করে সর্বমোট ৭ দশমিক ৫০ থাকতে হবে। তবে বিজ্ঞান ও ব্যবসায় শিক্ষা শাখার শিক্ষার্থীদের জন্য জিপিএ সর্বমোট ৮ থাকতে হবে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয় এ, বি, সি, ডি ও ই-ইউনিটের প্রতিটিতে আবেদনের জন্য ইউনিট ফি ধরা হয়েছে ৬০০ টাকা। এছাড়া সি-১, এফ, জি, এইচ, আই ইউনিটের জন্য আবেদন ফি ধরা হয়েছে ৪০০ টাকা। আবেদন ফি মোবাইল ব্যাংকিং বিকাশ, নগদ, রকেটের মধ্যমে পরিশোধ করা যাবে।
এই বিষয়ে ভর্তিচ্ছু নাফিসা নামের এক ছাত্রী বলেন, ‘এর আগে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পূর্বের নিয়মে পরীক্ষা গ্রহণের কথা বলেন। কিন্তু এখন যোগ্যতায় পরিবর্তন এনে আমাদের সাথে প্রতারণা করা হয়েছে।’
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।