গত ১৮ জুন শুক্রবার রাত ৯টার দিকে বান্দরবান সদর উপজেলার নিকটবর্তী রোয়াংছড়ি উপজেলায় কতিপয় পাহাড়ি সন্ত্রাসী মোহাম্মদ ওমর ফারুক ত্রিপুরা নামের একজন নওমুসলিমকে সন্ত্রাসীরা গুলি করে হত্যা করে। এশার নামায আদায়ের পর বাড়ি ফেরার পথে মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডের শিকার হন মোহাম্মদ ওমর ফারুক ত্রিপুরা, তিনি ২০১৪ সালে খ্রিস্টান ধর্ম ত্যাগ করে ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হন। অনেকটাই দুর্গম অঞ্চলে তিনি ধর্ম চর্চার পাশাপাশি ধর্মীয় দাওয়াত দেওয়ার কাজও করতে থাকেন। তার দাওয়াতে ৩০টি পরিবারের শতাধিক সদস্য তার ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে। দাওয়াত দেওয়া ছাড়াও তিনি সংশ্লিষ্ট এলাকায় নিজের জমিতে একটি মসজিদ প্রতিষ্ঠা করে তাতে ইমামতির গুরু দায়িত্বও পালন করছিলেন। ধর্মান্তরিত মোহাম্মদ ওমর ফারুকের জীবনযাত্রা পর্যালোচনা করলে স্পষ্ট হয় যে, কোনো ধরনের রাজনৈতিক বা ব্যবসায়িক কারণে সন্ত্রাসীরা তাকে হত্যা করেনি। এই হত্যাকাণ্ড পার্বত্য জনপদে সংগঠিত অন্যান্য হত্যাকাণ্ড থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। অপরূপ সৌন্দর্য্যরে পাশাপাশি এখানকার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। সকল ধর্মের ও বর্ণের মানুষজন এখানে নিজ নিজ ধর্মীয় উৎসব-উপলক্ষ নির্বিঘ্নে পালন করতে পারলেও সর্বশেষ খুনের ঘটনাটি অসাম্প্রদায়িক এই জেলায় সাম্প্রদায়িকতার বিষবৃক্ষের বীজ বপন করলো না তো? সরকার ও সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের আশু কার্যকর পদক্ষেপ প্রশ্নাকারে উত্থাপিত এই অপ্রত্যাশিত আশঙ্কাকে সমূলে উৎপাটনে যথেষ্ট। কিন্তু বিচ্ছিন্ন ঘটনার তকমা লাগিয়ে পরিস্থিতিকে সামলানোর চেষ্টা করা হলে তা সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষের আগুনের জ¦ালানি হিসেবে কাজ করতে পারে। আর বিষবাষ্প ছড়িয়ে গেলে পার্বত্য জনপদের চলমান উন্নয়ন ও অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত হতে বাধ্য। শিক্ষা, যোগাযোগ, পর্যটন, সংস্কৃতিসহ আর্থ-সামাজিক খাতে উল্লেখযোগ্য উন্নয়নের প্রকৃত সুফল সর্বস্তরের সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় নিয়ে যেতে হলে নির্মম এই হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িতদের আইনের আওতায় আনার পাশাপাশি উক্ত এলাকাসহ পার্বত্য অঞ্চলে আরও যারা স্বেচ্ছায় ধর্মান্তরিত হয়ে জীবনযাপন করছে, তাদের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে। সবুজ শহরে অবৈধ অস্ত্রের ঝনঝনানি বন্ধ করে দুর্বৃত্তদের আইনের আওতায় আনতে পারলেই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির উজ্জ্বল উদাহরণ পার্বত্য জনপদের আকাশে পাখা মেলবে শান্তির পায়রা।
আবু ফারুক
বনরুপা পাড়া, সদর, বান্দরবান।