Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

মহামারির বছরে ১১ শতাংশ কমেছে বিদেশী বিনিয়োগ

আঙ্কটাডের প্রতিবেদন

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২২ জুন, ২০২১, ১২:০০ এএম

২০২০ সালে বাংলাদেশে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) এসেছে ২৫৬ কোটি ৪০ লাখ ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা ২১ হাজার ৭৩৩ কোটি টাকা। এর আগের বছর ২০১৯ সালে এফডিআই এসেছিল ২৮৭ কোটি ৪০ লাখ ডলার বা বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী ২৪ হাজার ৩৬১ কোটি টাকা। সে হিসেবে করোনা মহামারিতে ১১ শতাংশ কমেছে বিদেশী বিনিয়োগ। ২০১৮ সালে এফডিআই এসেছিল ৩৬১ কোটি ৩০ লাখ ডলার। গতকাল বিশ্বব্যাপী প্রকাশিত জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়নবিষয়ক সংস্থা আঙ্কটাডের সর্বশেষ বিশ্ব বিনিয়োগ রিপোর্টে এ তথ্য উঠে এসেছে। জাতিসংঘের এই সংস্থাটি অবশ্য আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেছে যে চলতি বছর, অর্থাৎ ২০২১ সালে বিদেশি বিনিয়োগের পতন থামবে এবং তা ১০ থেকে ১৫ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে।

আঙ্কটাড মনে করছে, এফডিআই প্রবাহ আগের অবস্থায় আসতে সময় লাগবে। কারণ, বিনিয়োগ প্রতিশ্রুতি এখনো দুর্বল। তৈরি পোশাক উৎপাদনে বিনিয়োগে আগ্রহ কম বলে মনে করছে আঙ্কটাড। ২০২০ সালে প্রায় ৩০০ কোটি ডলারের বিনিয়োগ বাতিল হয়েছে বাংলাদেশের। আঙ্কটাডের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, এতে দেখা যায় যে গত বছর বৈশ্বিক এফডিআই ছয় বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো এক লাখ কোটি (এক ট্রিলিয়ন) মার্কিন ডলারের নিচে নেমে এসেছে। ২০১৯ সালে বিশ্বজুড়ে বিদেশি বিনিয়োগের মোট প্রবাহ যেখানে ছিল এক লাখ ৫৩ হাজার কোটি ডলার সেখানে ২০২০ সালে তা দাঁড়িয়েছে ৯৯ হাজার ৮৯১ কোটি ডলারে। করোনা মহামারীর নেতিবাচক প্রভাবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ লকডাউনে যাওয়ায় বিদ্যমান বিনিয়োগ প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন শ্লথ ও স্থবির হয়ে পড়ে, মন্দার আশংকায় বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো নতুন প্রকল্প গ্রহণেও সতর্কতা দেখায় বলে প্রতিবেদনে মন্তব্য করা হয়েছে। তবে উন্নয়নশীল বিশ্বে বিদেশি বিনিয়োগের পতন তুলনামূলকভাবে কম হয়েছে (আট শতাংশ), আর তা হয়েছে এশিয়ায় সার্বিকভাবে বিনিয়োগ প্রবাহ জোরাল থাকায়। ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকায় গতবছর যথাক্রমে ৮০ ও ৪০ শতাংশ হারে বিদেশি বিনিয়োগ কমে যাওয়ার বিপরীতে এশিয়ায় বেড়েছে চার শতাংশ।

গত বছর সারা বিশ্বে এফডিআই কমেছে আগের বছরের চেয়ে ৩৫ শতাংশ। গত বছর এফডিআইয়ের পরিমাণ ছিল এক ট্রিলিয়ন ডলার। ২০১৯ সালে যা ছিল দেড় ট্রিলিয়ন ডলার, যা ২০০৯ সালের অর্থনৈতিক সংকটে যে অবস্থা হয়েছিল, তার চেয়েও ২০ শতাংশ কম। গত বছর দক্ষিণ এশিয়ায় শুধু ভারত ছাড়া সব দেশের এফডিআই কমেছে। তবে চীন ও হংকংয়ের কারণে সার্বিকভাবে এশিয়াতে বিনিয়োগ আগের বছরের চেয়ে ৪ শতাংশ বেড়েছে। দক্ষিণ এশিয়ায় বেড়েছে ২০ শতাংশ। ভারতে এফডিআই বেড়েছে ২৭ শতাংশ।
এদিকে সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রকাশিত ব্যালেন্স অব পেমেন্ট (বিওপি) সংক্রান্ত হালনাগাদ প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) এই বিনিয়োগর পরিমাণ গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৩২ দশমিক ১২ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ দশমিক ৪৬ বিলিয়ন ডলার। বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো লভ্যাংশ বাবদ যে অর্থ নিয়ে যায়, মোট বিদেশি বিনিয়োগ থেকে তা বাদ দিলে নিট বিনিয়োগ পাওয়া যায়। জুলাই-এপ্রিল সময়ে মোট (গ্রস) বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ২ দশমিক ৯৯৫ বিলিয়ন ডলার, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৭ দশমিক ৮৫ শতাংশ বেশি। গত ১০ মাসে আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রবাসী বাংলাদেশিদের বিনিয়োগের পরিমাণ ৯ শতাংশ বেড়ে ১৯৩ মিলিয়ন ডলার হয়েছে। একই সময়ে আমদানির পরিমাণ বেড়েছে ১৩ শতাংশ। এর প্রভাবে বাণিজ্যি ঘাটতির পরিমাণ গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৩ বিলিয়ন ডলার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭ দশমিক ২২ বিলিয়ন ডলারে। যার প্রভাবে জুলাই-মার্চ সময়ে উদ্বৃত্ত থাকা কারেন্ট একাউন্ট ব্যালেন্স জুলাই-এপ্রিলে এসে ৪৭ মিলিয়ন ডলারের ঘাটতি তৈরি হয়েছে। যদিও গত অর্থবছরের জুলাই-এপ্রিল সময়ে কারেন্ট একাউন্ট ব্যালেন্সের এই ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৩ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন ডলার।
জানা যায়, করোনাকালীন সময়ে বিশ্বব্যাপি নতুন বিনিয়োগ কমেছে। তবে চীন, জাপান ও ইউরোপের অনেক বিনিয়োগ স্থানান্তরিত হয়েছে এ সময়ে। উচ্চ করহার, দুর্বল অবকাঠামো, সঠিক ব্যবসায় পরিবেশ না থাকা এবং উদ্যোক্তাদের ইনসেনটিভ দিতে না পারায় ২০২০ সালে কাঙ্খিত বিনিয়োগ পায়নি বাংলাদেশ। বিদেশী বিনিয়োগের ক্ষেত্রে উদ্যোক্তারা বৈশ্বিক বিভিন্ন সূচক পর্যালোচনা করে। এতে দেখা যায়, বর্তমানে ইজ অব ডুয়িং বিজনেস দেশের ১৯০টি দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ১৬৮টি। ১৪০ দেশের মধ্যে বাংলাদেশ বার্ডেন অফ গর্ভনমেন্ট রেগুলেশন সূচকে ৬৯, এফিশিয়েন্সি অফ লিগ্যাল ফ্রেমওয়ার্ক সূচকে ৮৪ এবং ওয়ার্ল্ড ওয়াইড গভার্ন্যান্স ইন্ডিকেটরস এ বাংলাদেশ মাইনাস শূন্য দশমিক ৮২ পয়েন্ট। এসব সুচক বিদেশী বিনিয়োগ না আসার ক্ষেত্রে বাধা হযে দাড়িয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশে করপোরেট করহার ৩৫ শতাংশ। ভারতে করপোরেট কর হার ৩০ শতাংশ, শ্রীলঙ্কায় ২৮ শতাংশ। আফগানিস্তানে ২০ শতাংশ, ভিয়েতনামের ২০ শতাংশ। এ ছাড়া মিয়ানমার ও ইন্দোনেশিয়ায় ২৫ শতাংশ, মালয়েশিয়ায় ২৪ শতাংশ, সিঙ্গাপুরে ১৭ শতাংশ করপোরেট কর বিদ্যমান রয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ