বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
মার্কিন রোমাঞ্চকর উপন্যাস লেখক ড্যান ব্রাউন বলেছিলেন ‘‘কোনও রাজনীতিকের অহংকারকে কখনই দমাতে যাবেন না।’’ কিন্তু ব্যাখা করেননি এর রূপ রস। স্বভাবতই বলা যায়, একজন রাজনীতিকের সফলতার পূর্ণতা পায় জনপ্রতিনিধি হওয়ার গৌরবে। সেটাই তার অহংকার অহমিকা। সিলেট-৩ আসনের উপ-নির্বাচনে অংশ গ্রহণে ইচ্ছুক ছিলেন বহু রাজনীতিক। যৌবনে মিছিলে গেছেন, রাজনীতিক যুদ্ধে বীরত্ব্ও দেখিয়েছিলেন। নির্মম পরিহাস এদের কারো ভাগ্যে জুটেনি রাজনীতিক দলের মনোনয়ন। নেশা পেশা যাদের রাজনীতি তারা মনোনয়ন নিরুপায়। তার বদলে তাদের পাকা ধানে মই দিয়ে মনোনয়ন নিশ্চিত করেছেন ব্যবসায়ী কাম রাজনীতিকরা। সেকারনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, ড্যান ব্রাউনের সেই বক্তব্যের যথার্থতা নিয়ে। বক্তব্য যদি অভিজ্ঞতার পরশে নির্ধারিত হয়, তাহলে অহংকার খর্বের ফলাফল নিশ্চয় হতে পারে অপ্রত্যাশিত কিছু। সেকারনে হয়তো অপেক্ষা করতে হবে নির্বাচন পর্যন্ত। তবে মনোনয়ন যুদ্ধে আপাতত ব্যবসায়ীরা উৎরে গেছেন নিজস্ব মহিমায়। রাজনীতিকরা হয়েছেন কোনঠাসা আপন ক্ষেত্রে। পরিহাস হয়তো সময়ের! বিশেষ করে সিলেট-৩ আসনে জাপা প্রার্থী আতিকুর রহমান আতিক, আ’লীগ প্রার্থী হাবিবুর রহমান হাবিব ও বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা, স্বতন্ত্র প্রার্থী শফি আহমদ চৌধুরী সহ ৩জনই ব্যবসায়ী।
জাতীয় পার্টির প্রার্থী আতিকুর রহমান আতিক প্রিন্স গ্রুপ অব কোম্পানির চেয়ারম্যান। এ ছাড়া প্রিন্স রিয়েল এস্টেট প্রাইভেট লিমিটেড, প্রিন্স মেডিক্যাল সেন্টার ও সিলেট সিটি মেডিক্যাল সেন্টার নামে আরও তিনটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে তার। আওয়ামী লীগের প্রার্থী হাবিবুর রহমান হাবিব প্রবাসী পল্লী গ্রুপ নামের একটি আবাসন কোম্পানির উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি)। স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়া বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য (সম্প্রতি বহিষ্কৃত) শফি আহমদ চৌধুরী আমদানি-রপ্তানি প্রতিষ্ঠান অ্যালবার্ট ডেভিট প্রাইভেট লিমিটেডের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক। পূবালী ব্যাংকের চেয়ারম্যানের দায়িত্বেও ছিলেন তিনি। ৪ প্রার্থীর মধ্যে আয় সবচেয়ে বেশি শফি আহমদ চৌধুরীর। আর আবাসন ব্যবসায়ী হলেও হাবিবুর রহমান নিজের কোনো আয় নেই বলে উল্লেখ করেছেন হলফনামায়।
প্রার্থীদের মধ্যে ব্যবসায়ীদের আধিক্য প্রসঙ্গে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘আগে সংসদে প্রাধান্য দেয়া হতো আইনজীবীদের। কেননা সংসদ আইন প্রণেতাদের জায়গা। কিন্তু বর্তমানে দেখতে পাচ্ছি সংসদে ব্যবসায়ীদের আধিক্য। মনোনয়ন বর্তমানে ব্যবসায়ী নির্ভর হয়ে গেছে। ইদানিং বাজেটে ব্যবসায়ীদের বেশি সুবিধা দেয়া হচ্ছে।’ দীর্ঘদিন ধরেই রাজনীতি ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণে চলে যাচ্ছে বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, নির্বাচনে ব্যবসায়ীরাই মূল্যায়িত হন বেশি। মাঠের রাজনীতিবিদরা উপেক্ষিত থেকে যান। এটা রাজনীতি ও দেশে জন্য মঙ্গলজনক নয়, ভালো লক্ষণ নয় এটা মোটেও।’
নির্বাচন কমিশনে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্রের সঙ্গে দাখিল করা হলফনামা ঘেঁটে দেখা গেছে, আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ও সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য হাবিবুর রহমানের শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতক পাস। নির্বাচন কমিশনে দেয়া হলফনামায় বার্ষিক আয়ের অংশে এই প্রার্থীর কোনো তথ্য দেয়া নেই। তবে কৃষি খাত থেকে তার স্ত্রীর বছরে ১ লাখ ২৭ হাজার ৪৫০ টাকা আয় হয়। অস্থাবর সম্পদ হিসেবে হাবিবুরের নামে ৮৭ লাখ ৫২ হাজার ৫ টাকা ও স্ত্রীর নামে ১ কোটি ৭৯ লাখ ৫৮ হাজার ৭৩০ টাকা রয়েছে। নিজ নামে ৫২ হাজার ২৪৪ টাকা ও স্ত্রীর নামে ৯ হাজার ৪৪৮ টাকা ব্যাংকে জমা রয়েছে। নিজের নামে রয়েছে ৩ হাজার ৫০০ শেয়ার, যার মূল্য ৭ লাখ ১০ হাজার টাকা। স্থাবর সম্পদ হিসেবে নিজ নামে ৫ লাখ ৩৯ হাজার ৩৯৮ টাকার অকৃষি জমি রয়েছে। নিজের নামে ঢাকার পূর্বাচলে আছে ৭ কাঠার প্লট। হলফনামায় এর মূল্য ১৮ লাখ ৭৫ হাজার টাকা উল্লেখ রয়েছে। যৌথ মালিকানায় হাবিবুরের ব্যাংক ঋণ রয়েছে। পূর্বাচল প্রবাসী পল্লী লিমিটেডের নামে ঋণের পরিমাণ হচ্ছে ৯ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। হলফনামায় আয়ের বিষয়ে উল্লেখ না করা প্রসঙ্গে হাবিবুর রহমান রোববার বলেন, ‘এটা ভুলবশত হয়ে গেছে। বিষয়টি নিয়ে আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলব।’
স্বতন্ত্র প্রার্থী শফি আহমদ চৌধুরীর বার্ষিক আয় ৮০ লাখ ১৩ হাজার ৫৮৮ টাকা। নিজ নামে ও জমা মিলিয়ে ব্যাংকে রয়েছে ২ কোটি ৭৬ লাখ ৫১২ টাকা। বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে তার নিজ নামে শেয়ার রয়েছে। রাজধানী ঢাকার গুলশান ২-এর ৭৯ নম্বর রোডে নিজ নামে ১ কোটি ১১ লাখ টাকা মূল্যের একটি বাড়ি রয়েছে। ৪৬ লাখ ২৮হাজার ৮৪৭ টাকা মূল্যের একটি নতুন (রেইন রোভার জিপ) গাড়ি ও ২ লাখ টাকা মূল্যের একটি পুরোনো গাড়ি রয়েছে। স্থাবর ও অস্থাবর মিলিয়ে মোট ৪৯ কোটি ২৫ লাখ ৪ হাজার ৩৯৪ টাকা মূল্যের সম্পদের মালিক তিনি। তার ৭ কোটি ৫ লাখ ৮৩ হাজার ৫৭১ টাকা ঋণ রয়েছে। শফি চৌধুরীর শিক্ষাগত যোগ্যতা বিএ পাস। জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থী ও দলটির সভাপতিমন্ডলীর সদস্য আতিকুর রহমান আতিকের ব্যবসা থেকে বার্ষিক ১১ লাখ ২০ হাজার টাকা। তার নির্ভরশীলরা ৩ লাখ ৪৭ হাজার টাকা আয় করেন। অস্থাবর সম্পদ হিসেবে নিজের নামে ২২ লাখ ৮ হাজার ৪৯৩ টাকা ও স্ত্রীর নামে ৮ লাখ ৪৫ হাজার টাকা রয়েছে। নিজের নামে ২০ লাখ ৭০ হাজার ১৬৯ টাকা ও স্ত্রীর নামে ৫ লাখ টাকা ব্যাংকে জমা রয়েছে। তিনি নিজের নামে ১০ লাখ টাকার জিপ গাড়ি, কোম্পানির নামে ৩৫ লাখ টাকা মূল্যের প্রাডো গাড়ি ব্যবহার করেন।
আতিকুরের স্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে, নিজের নামে দক্ষিণ সুরমার হরগৌরী মৌজায় ১৫ শতক জমি, হবিগঞ্জের লাখাইয়ে ৫ লাখ টাকা মূল্যের ধানি জমি। এ ছাড়া স্ত্রীর নামে ঢাকার সাঁতারকুল মৌজায় (নিকুঞ্জ) ১০কাঠা জমি, যার মূল্য ৮০ হাজার টাকা উল্লেখ করেছেন। এসব ছাড়াও নিজের, স্ত্রীর ও ছেলের নামে এবং যৌথ মালিকানায় ঢাকার নিকুঞ্জ-২, রামপুরা উলন মৌজা, বারিধারা নর্থ, বারিধারা পার্ক রোড, গুলশান, বনানী, ঢাকার কালাচাঁদপুরে জমি ও ফ্ল্যাট রয়েছে। স্ত্রী-সন্তানসহ আতিকুরের নিজের নামে ১ কোটি ২০ লাখ টাকার ব্যাংক ঋণ রয়েছে। আতিকের শিক্ষাগত যোগ্যতা বিএসসি পাস।
বাংলাদেশ কংগ্রেসের মনোনীত প্রার্থী জুনায়েদ মোহাম্মদ মিয়া হলফনামায় নিজেকে ‘স্বশিক্ষিত’ উল্লেখ করেছেন। কৃষি খাত থেকে বার্ষিক ২ লাখ ২৫ হাজার টাকা ও দোকান ভাড়া থেকে ২০ হাজার টাকা আয় করেন তিনি। নিজের নামে ২ লাখ ৪৫ হাজার টাকা, ব্যাংকে জমা সাড়ে ৩ লাখ টাকা, ৬০ হাজার টাকার ১ ভরি স্বর্ণ, ১০ হাজার টাকার মুঠোফোন, ৬০ হাজার টাকার আসবাব ও অস্থাবর সম্পদ তার। স্থাবর সম্পদ রয়েছে নিজের নামে ১০ দশমিক ১৪৫ একর কৃষি জমি, ৩ লাখ টাকার ১ শতক জমি, পৈতৃক সূত্রে প্রাপ্ত ৮ কক্ষের বসতঘর ও স্ত্রীর নামে ১ দশমিক ৬৯ একর কৃষি জমি। ঋণ নেই তার কোনো ব্যাংকে। এ আসনে উপ-নির্বাচনে ভোট গ্রহণ হবে আগামী ২৮ জুলাই।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।