মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ১ বিলিয়ন তথা ১০০ কোটি ডলার হাতিয়ে নিতে চেয়েছিল হ্যাকাররা। ওই প্রচেষ্টায় তারা ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার হাতিয়ে নিতে সমর্থ হয়।
বিবিসি অনলাইনের এক প্রতিবেদনে রিজার্ভ চুরির ওই ঘটনাটি বিশদভাবে তুলে ধরে এ দাবি করা হয়েছে।
গত ২০১৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি যায়। ওই অর্থ যায় ফিলিপাইনের মাকাতি শহরে রিজাল ব্যাংকের একটি শাখার চারটি ভুয়া অ্যাকাউন্টে। চুরি হওয়া অর্থের মধ্যে মাত্র দেড় কোটি ডলার পুনরুদ্ধার সম্ভব হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ঘটনাটি সামনে আসে একটি ত্রুটিযুক্ত প্রিন্টার ঘিরে। মতিঝিলে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের ১০ম তলায় অত্যন্ত সুরক্ষিত কক্ষে প্রিন্টারটি ছিল। এটার কাজ ছিল কোটি কোটি ডলার ট্রান্সফারের রেকর্ড ছাপানো।
কর্মকর্তারা দেখেন ২০১৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি সকাল ৮টা ৪৫ মিনিট থেকে প্রিন্টারটি কাজ করছিল না। ডিউটি ম্যানেজার জুবায়ের বিন হুদা পুলিশকে বলেছিলেন, ‘আমরা ধরে নিয়েছিলাম যে এটি অন্য যেকোনো দিনের মতো একটি সাধারণ সমস্যা। এর আগেও এমন ত্রুটি দেখা গেছে।’
প্রতিবেদনে বলা হয়, আসলে বাংলাদেশ ব্যাংক যে সমস্যায় জর্জরিত, সেটিই যেন প্রথম প্রকাশ পেয়েছিল এ ঘটনার মাধ্যমে। হ্যাকাররা এর কম্পিউটার নেটওয়ার্ক ব্যবস্থায় ঢুকে পড়েছিল। ঠিক ওই মুহূর্তে এ যাবৎকালের সবচেয়ে দুঃসাহসী সাইবার হামলা সংঘটিত হচ্ছিল যার লক্ষ্য ছিল এক বিলিয়ন ডলার বা ১০০ কোটি ডলার চুরি করা।
অর্থ সরাতে হ্যাকাররা নকল ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, দাতব্য সংস্থা, ক্যাসিনোসহ বিস্তৃত নেটওয়ার্ক ব্যবহার করেছে।
কারা ছিল এই হ্যাকাররা এবং কোথা থেকে তারা এ কাজ করেছিল? প্রতিবেদনে বলা হয়, তদন্তকারীদের তদন্তে ডিজিটাল ফিঙ্গারপ্রিন্টগুলো নির্দেশ করেছে, তা হলো উত্তর কোরিয়া সরকার।
উত্তর কোরিয়াকে এই সাইবার-অপরাধের প্রধান সন্দেহভাজন মনে করা হলে তা কারও কারও কাছে বিস্ময়কর ঠেকবে। বিশ্বের সবচেয়ে দরিদ্র দেশগুলোর অন্যতম এই দেশটি। প্রযুক্তিগতভাবে, অর্থনৈতিকভাবে এবং প্রায় সবদিক থেকেই দেশটি বাকি বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন।
যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআইয়ের দাবি, বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্থ চুরি ছিল উত্তর কোরিয়া সরকার সমর্থিত হ্যাকার এবং এশিয়ার মধ্যস্বত্বভোগীদের ছদ্মবেশী দলের বহু বছরের প্রস্তুতির চূড়ান্ত ধাপ।
সাইবার সুরক্ষা ইন্ডাস্ট্রিতে উত্তর কোরিয়ার হ্যাকাররা লাজারাস গ্রুপ নামে পরিচিত। বাইবেলে লাজারাস নামে এক ব্যক্তির উল্লেখ আছে, যিনি মৃত্যুর পর ফের জীবিত হন। এ নামকেই বেছে নিয়েছে হ্যাকাররা। গ্রুপ সম্পর্কে খুব কমই জানা যায়।
এফবিআই এক সন্দেহভাজন ব্যক্তির প্রতিকৃতি আঁকিয়েছেন, যার নাম পার্ক জিন হিয়ক। তিনি পাক জিন-হেক ও পার্ক কোয়াং-জিন নামেও কাজ করেন।
নিজেকে একজন কম্পিউটার প্রোগ্রামার পরিচয় দেওয়া পার্ক জিন হিয়ক উত্তর কোরিয়ার শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর একটি থেকে স্নাতক করেছেন তিনি।
চীনা বন্দর শহর দালিয়ানে উত্তর কোরিয়ার একটি সংস্থা চোসুন এক্সপোতে কাজ করতেন পার্ক জিন হিয়ক। এ সংস্থা সারা বিশ্বে তাদের ক্লায়েন্টদের জন্য অনলাইন গেমিং ও জুয়ার প্রোগ্রাম তৈরি করে।
এফবিআই’র দাবি, পার্ক জিন হিয়ক হলেন দিনের আলোয় প্রোগ্রামার আর রাতের অন্ধকারে দুর্ধর্ষ হ্যাকার।
যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃপক্ষ ২০১৪ থেকে ২০১৭ সাল দুটি সাইবার অপরাধের জন্য পার্ক জিন হিয়ককে অভিযুক্ত করে। ধরা পড়লে তাকে ২০ বছরের সাজা ভোগ করতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।