মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
গঙ্গা ভারতের নদীগুলোর মধ্যে পবিত্রতম এবং বেশিরভাগ হিন্দু বিশ্বাস করেন যে, সেখানে ডুব দিলে শরীর ও আত্মার শুদ্ধি ঘটে। কিন্তু করোনা মহামারির দ্বিতীয় ঢেউয়ে সেই গঙ্গা মোদি প্রশাসনের উন্নাসিকতা, ব্যর্থতা এবং প্রতারণার এক অনন্য প্রদর্শনীতে পরিণত হয়েছে।
উত্তর বিহার রাজ্য সম্প্রতি এপ্রিল ও মে’র করোনা মৃতের সংখ্যা ৫ হাজার ৪শ’ ২৪ থেকে ৯ হাজার ৩শ’ ৭৫ এ সংশোধিত করেছে। কুম্ভ মেলায় করোনা পরীক্ষার দায়িত্ব থাকা বেসরকারী সংস্থাগুলো প্রায় ১ লাখ মানুষের করোনা সংক্রমণের তথ্য গোপন করেছে। সংক্রমণের দ্বিতীয় তরঙ্গে মোদি প্রশাসন করেনা সংক্রান্ত মৃত্যুর তথ্য প্রায় ৩ লাখ ৮০ হাজারে আটকে রাখার চেষ্টা করলেও গঙ্গা সেই নির্লজ্জ মিথ্যাচারকে বিশে^র সামনে তুলে ধরেছে। গত ১২ মে বিহারের বুক্সার জেলার নদীতে ফোলা এবং বিকৃত লাশগুলো ভেসে ওঠে এবং গাজীপুরের একটি জেলায় প্রায় ১শ’ মরদেহ মাছ ধরা জালে আটকে যায়। স্থানীয় এক প্রবীণ পুলিশ কর্মকর্তা জানিয়েছেন যে, মৃতদেহগুলো ভারতের সর্বাধিক জনবহুল রাজ্য উত্তর প্রদেশ থেকে নদীবাহিত হয়ে নেমে এসেছে।
ভারতে মহামারিজনিত বিপর্যয়ের এক পরিষ্কার ধারণা পেতে ভারত জুড়ে প্রতিদিন প্রায় সাড়ে ৫০ লাখ কপি বিক্রি হওয়া হিন্দি ভাষার পত্রিকা ‘দৈনিক ভাস্কর’ উত্তর প্রদেশে গঙ্গার তীরে প্রধান শহর ও জেলাগুলোতে ৩০ জন সাংবাদিক এবং ফটো সাংবাদিক পাঠায়।
সাংবাদিকরা শুধু ১২ ও ১৩ মে’তেই নদীর ধারে ৭শ’ মাইল পথ অতিক্রমকালীন ভেসে আসা ২ হাজার শব গণনা করেন। অথচ, রাজ্য কর্তৃপক্ষের দাবি যে, গত ১ এপ্রিল থেকে ১৩ মে পর্যন্ত মাত্র ৭ হাজার ৮শ’ ২৬ জন করোনায় মারা গেছে। দক্ষিণ উত্তর প্রদেশে হিন্দুদের ভগবান রামের সাথে সংশ্লিষ্টতার জন্য পবিত্র হিসাবে খ্যাত ছোট্ট গ্রাম শ্রিংভারপুরে শত শত গেরুয়া ঢাকা লাশ মাটি থেকে ভেসে উঠেছে। দরিদ্র গ্রামবাসীরা, যারা নিজের আত্মীয়দের দাফন করতে কাঠ কিনতে পারেনি, তারা পবিত্র স্থানটির কাছে শবগুলো কবর দিয়ে কিছুটা স্বস্তি খুঁজেছেন।
এপ্রিল এবং মে’র মাঝামাঝিতে প্রায় এক হাজার মাইলেরও নদীরতট জুড়ে অগভীর গর্তগলোতে প্রায় ৪ হাজার লাশ রাখা হয়েছিল। মে’র প্রথম দিকে অনবরত বৃষ্টি গঙ্গার মাটি, পাথর ও ময়লা ধুয়ে দিয়ে সেখানে সমাধিস্থ লাশগুলি উন্মোচন করেছে দিয়েছে। এবারের বর্ষা লাশগুলোর পাশাপাশি, ভারতের গ্রামীণ স্বাস্থ্যসেবা ও পর্যাপ্ত ভ্যাকসিন সরবরাহে মোদি প্রশাসনের ব্যাপক ব্যর্থতাকেও উন্মোচিত করেছে।
হিন্দু সন্ন্যাসী থেকে রাজনীতিবিদে রূপান্তরিত বিজেপি’র মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ উত্তরপ্রদেশ জুড়ে নিবিড় পরিচর্যা ইউনিটগুলোতে অক্সিজেন, ভেন্টিলেটর এবং বিছানার ঘাটতি এবং উপচেপড়া কবরস্থান এবং শ্মশানের চিত্রগুলোর প্রতিক্রিয়াতে সবকিছু অস্বীকার করেছেন এবং গুজব ছড়ানোর অভিযোগে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইন প্রয়োগ এবং তাদের সম্পত্তি দখল করার জন্য সরকারী কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন।
গ্রামীণ দারিদ্র্য সংক্রমণের দ্বিতীয় তরঙ্গের প্রভাবকে আরও প্রকট করে তুলেছে। তবে মোদি সরকারের এই অযৌক্তিক অবহেলাই ভারতে সর্বশেষতম করোনা বিপর্যয়ের মূল কারণ। গেল এপ্রিলে কর্তৃপক্ষ উত্তর প্রদেশসহ বেশ কয়েকটি রাজ্যে নির্বাচন ও নির্বাচনী প্রচারণার পাশাপাশি, বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম ধর্মীয় সমাবেশ কুম্ভ মেলার অনুমতি দেয় এবং বর্তমানে মাত্র ৩.৪ শতাংশ ভারতীয় পুরোপুরি ভ্যাকসিন পেয়েছে। তাই দেশটিতে করোনার আরও ভয়াবহ তৃতীয় তরঙ্গের একটি সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে।
২০১৪ সালের নির্বাচনে মোদি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার উত্তর প্রদেশে গঙ্গার পবিত্র শহর বারাণসী থেকে সংসদীয় আসনের জন্য লড়েছিলেন। প্রচারণার সময় তখন তিনি বলেছিলেন, ‘আমার মনে হয় মা গঙ্গা আমাকে বারাণসীতে ডেকেছেন।’ আজ গঙ্গা তাকে আবারও ডাক দিয়েছে। সূত্র : দ্য নিউ ইয়র্ক টাইম্স।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।