পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রাজধানীর উত্তরায় আলোচিত মাদক আইস সিন্ডিকেটের অন্যতম হোতা তৌফিকসহ ৬ জনকে আইসসহ গ্রেফতার করেছে র্যাব। চক্রটি টেকনাফ থেকে ভয়ঙ্কর মাদক আইস সংগ্রহ করে রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ করতো। শুধু তাই নয়, আইস সেবনের জন্য উত্তরায় একটি ‘নিরাপদ জায়গায়’ নিয়ে সেখানেই উচ্চবিত্ত তরুণ-তরুণীদের অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে করা হতো ব্ল্যাকমেইল। বায়িং হাউজের আড়ালে আইস বেচাকেনা করতো ওই চক্রের সদস্যরা। চক্রের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে ছয়জনকে গ্রেফতারের পর গতকাল কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক খন্দকার আল মঈন এসব তথ্য জানান।
তিনি জানান, গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে ভোর পর্যন্ত চলা অভিযানে উত্তরা পশ্চিম থানাধীন এলাকা থেকে এই ছয়জনকে গ্রেফতার করে র্যাব। তারা হলেন- তৌফিক হোসাইন, জামিরুল চৌধুরী ওরফে জুবেইন, আরাফাত আবেদীন ওরফে রুদ্র, রাকিব বাশার খান, খালেদ ইকবাল ও সাইফুল ইসলাম ওরফে সবুজ। এরা বেশিরভাগই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বলে জানিয়েছে র্যাব। র্যাব-৩ এর অভিযান চলাকালে গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে মাদক আইস, ইয়াবা, বিদেশী মদ, গাঁজা ও ১৩টি বিদেশি অস্ত্র, এয়ার গান, রেপ্লিকা অস্ত্র, ইলেকট্রিক শক যন্ত্র, মাদক সেবনের সরঞ্জামাদিসহ ল্যাবরেটরি সরঞ্জামাদি উদ্ধার করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, গ্রেফতারকৃত আসামিরা একটি নির্দিষ্ট সিন্ডিকেটের সদস্য। ক্লোজ গ্রুপের মাধ্যমে রাজধানীতে মাদক সরবরাহ করতেন তারা। টেকনাফ থেকে মাদক সংগ্রহ করতেন। পরবর্তী সময়ে রাজধানীতে সরবরাহ করা হতো উচ্চবিত্ত তরুণ-তরুণীদের কাছে। এছাড়া রাজধানীর মিরপুর গুলশান উত্তরা থেকে আইস সংগ্রহ করে বিভিন্ন জায়গায় পৌঁছে দিতেন তারা। রাজধানীর উত্তরায় অভিযান পরিচালনা করে পরবর্তীতে আরো জানতে পারে, একটি বাইয়িং হাউজের আড়ালে চলছিল আইস কেনাবেচা এবং সেবন। যেসব তরুণ-তরুণীরা তাদের এসব জায়গায় সেবন করতে আসতো, তাদের বিভিন্নভাবে ব্ল্যাকমেইল করা হতো। তরুণ-তরুণীদের আইস এবং ইয়াবা সেবন করিয়ে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে পরিবারের কাছে থেকে ব্ল্যাকমেইল করে টাকা আদায় করতো এই চক্রটি। সিন্ডিকেটের বাইরে আইস সরবরাহ করা হতো না বলেই ক্লায়েন্টদের প্রতিনিয়ত নজরদারিতে রাখতেন তারা।
র্যাব জানায়, এই চক্রের আইস মাদক ব্যবসার অর্থ যোগানদাতা হিসেবে ছিলেন গ্রেফতার জামিরুল চৌধুরী ওরফে জুবেইন। আর গ্রেফতারকৃত তৌফিক মূলত সমন্বয়ের কাজ করতেন। রুদ্র ল্যাবের কেমিস্ট হিসেবে কাজ করতেন। সবুজ আইস সংগ্রহ ও সরবরাহের কাজ করতেন। এছাড়া মাদক বিপণন বহন করার ক্ষেত্রে রাকিব ও খালিদকে ব্যবহার করা হতো। রাজধানীতে আরো ৫০ জনের মতো আইসসেবী রয়েছেন। এই চক্রটি প্রতিনিয়ত তাদের কাছে আইস পৌঁছে দিতো। গত দু’বছর যাবৎ তারা এই আইস ব্যবসার সাথে জড়িত। এর আগে ১০ বছর ধরে তারা ইয়াবার সাথে জড়িত ছিলেন।
উদ্ধার হওয়া এয়ারগান প্রসঙ্গে র্যাব জানায়, মাদকদ্রব্য সেবনের জন্য তারা উত্তরায় একটি বায়িং হাউজের নামে বাসা ভাড়া করে গোপনে মাদক সেবন ও অনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করতেন। সেখানে আইস সেবনের পর তরুণ-তরুণীদের নিয়ে তারা এইমিং গেমস খেলতেন। আর এই এয়ারগান দিয়ে চলতো গেমসটি। তবে উদ্ধার এয়ার গানগুলোর বৈধ কোন কাগজপত্র তারা দেখাতে পারেননি, যদিও এয়ারগান ব্যবহারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন লাগে। তাদের কাছে এয়ারগানগুলো কীভাবে এলো এ বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখছি। আর উদ্ধার হওয়া রেপ্লিকা অস্ত্র দিয়ে তারা বিভিন্ন সময় আগত আইস সেবীদের ভয়-ভীতি দেখাতো।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন আরো বলেন, জুবেইন লন্ডন থেকে বিবিএ, তৌফিক একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবিএ, খালেদ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় হতে এমবিএ, রুদ্র ও সাইফুল এইচএসসি পাস করার পর ড্রপ আউট, খালেদ একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। প্রাথমিকভাবে তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচয় সম্পর্কে কিছু জানানো হয়নি। তবে গ্রেফতারকৃত রুদ্রের নামে তিনটি মাদক মামলা এবং জুবেইনের নামে একটি হত্যা মামলা রয়েছে।
র্যাব আরো জানায়, লন্ডন থেকে বিবিএ করা জামিরুল চৌধুরী ওরফে জুবেইনের বসবাস রাজধানীর উত্তরায়। আগে থেকে ইয়াবাসেবী জুবেইন অধিক লাভের আশায় আইস মাদক এর সাথে জড়িয়ে পড়ে। তার একসাথে ১৫ থেকে ২০টি ইয়াবা লাগতো। উচ্চবিত্ত তরুণ-তরুণীদের টার্গেট করাই ছিল তার কাজ।
ইয়াবার চেয়েও ভয়াবহ ‘ঝাক্কি’: মাদকের নাম ‘ঝাক্কি’, ‘ঝাক্কি মিক্স’, ‘ককটেল মাদক’। আর এটা তৈরি করা হয় আইসের সঙ্গে ইয়াবা, ঘুমের ওষুধ ও অন্যান্য নেশাজাতীয় ওষুধের তরল মিশিয়ে। যা ইয়াবার চেয়েও ভয়াবহ। আর এই মাদক তৈরিতে চক্রটি একটি বাসা ভাড়া নিয়ে বানিয়েছিল ‘মেথ ল্যাব’। যেখানেই তৈরি করা হতো ‘ঝাক্কি’। ‘ঝাক্কি’ একবার সেবন করার পর দুই থেকে তিনদিন পর্যন্ত একজন মানুষ নেশারত কিংবা ঘুমন্ত অবস্থায় থাকত। তারা বাজার থেকে বিভিন্ন ওষুধ ও কেমিক্যাল কিনে মাদকের সঙ্গে মিশ্রণ করত। পরে পাতন পদ্ধতিতে ভেজাল দ্রব্য মিশিয়ে আইসের পরিমাণ বৃদ্ধি এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিতে ইয়াবার রং পরিবর্তন করে ‘ঝাক্কি’ তৈরি করত। চক্রটি আইস ও ইয়াবার পরীক্ষামূলক বিভিন্ন কার্যক্রমও পরিচালনা করছিল। তারা ভেজাল ও পরিশুদ্ধ আইস সরবরাহ ও নিজেরাও ঝাক্কি সেবন করত বলে জানায় র্যাব।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।