চরিত্র মানুষের শ্রেষ্ঠতম অলঙ্কার
সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাত- মানবজাতি। এ শ্রেষ্ঠত্ব মানুষ তার চরিত্র দিয়ে অর্জন করে নেয়।
ইসলাম বিশ্বজনীন চিরন্তন এক পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা। ইসলামে রয়েছে নারীর সম্মান, মর্যাদা ও সকল অধিকারের স্বীকৃতি, রয়েছে তাদের সতীত্ব সুরক্ষা ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠার জন্য ব্যাপক কর্মসূচী। তাদের সম্মান, মর্যাদা ও সতীত্ব অক্ষুন্ন রাখতেই ইসলাম তাদের উপর আরোপ করেছে হিজাব বা পর্দা পালনের বিধান। ‘পর্দা’ শব্দটি মূলত ফার্সী। যার আরবী প্রতিশব্দ ‘হিজাব’। পর্দা বা হিজাবের বাংলা অর্থ- আবৃত করা, ঢেকে রাখা, আবরণ, আড়াল, অন্তরায়, আচ্ছাদান, বস্ত্রাদি দ্বারা সৌন্দর্য ঢেকে নেয়া, আবৃত করা বা গোপন করা ইত্যাদি। পর্দা ইসলামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ফরজ বিধান; এর গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য।
নারীকে হাদীস শরীফে ‘আওরত’ বলা হয়েছে। আওরত শব্দের অর্থ গুপ্ত, আবরণ, আচ্ছাদন বা আবৃত। সুতরাং নারীর নামেই বুঝা যায় নারীর জন্য পর্দা কতটা আবশ্যকীয়। পারিপার্শ্বিকতার বিবেচনায় বিবেকের দাবীও তাই। আর এ কারণে শরীয়তেও নারীর জন্য পর্দাকে ফরজ করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে ‘হিজাব বা পর্দা’ নারীর সৌন্দর্য ও মর্যাদার প্রতীক। নারীর সতীত্ব ও ইজ্জত-আবরুর রক্ষাকবচ। নারী-পুরুষ উভয়ের চারিত্রিক পবিত্রতা রক্ষার অতি সহজ ও কার্যকর উপায়। এ বিধান অনুসরণের মাধ্যমে হৃদয়-মনের পবিত্রতা অর্জন করা সম্ভব। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘এ বিধান তোমাদের ও তাদের অন্তরের জন্য অধিকতর পবিত্রতার কারণ।’ (সূরা আহযাব: ৫৩)
ইসলাম পর্দা পালনের যে হুকুম আরোপ করেছে, তা মূলত অশ্লীলতা ও ব্যভিচার নিরসনের লক্ষ্যে এবং সামাজিক অনিষ্টতা ও ফেতনা-ফাসাদ থেকে পরিত্রাণের নিমিত্তেই করেছে; নারীদের প্রতি কোনো প্রকার অবিচার কিংবা বৈষম্য সৃষ্টির জন্য করেনি। বরং তাদের পবিত্রতা ও সতীত্ব রক্ষার্থেই তাদের উপর এ বিধানের পূর্ণ অনুসরণ অপরিহার্য করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আল্লাহ তো কেবল চান তোমাদের থেকে অপবিত্রতাকে দূরীভূত করতে এবং তোমাদেরকে সম্পূর্ণরূপে পবিত্র করতে।’ (সূরা আহযাব: ৩৩)। ইসলামের ‘পর্দা বিধান’ অনেকের কাছেই গুরুত্বহীন ও অস্পষ্ট হয়ে আছে। তারা পর্দাকে প্রগতির অন্তরায় ও অবরোধ মনে করেন। তাদের ধারণা- মুসলিম নারীরা পর্দার কারণে নিজেদেরকে ঘরের চার দেয়ালের মধ্যে বন্দী করে রাখবে, এমনকি প্রয়োজনেও ঘর থেকে বের হতে পারবে না এবং কোন কাজেও অংশ গ্রহণ করতে পারবে না। ধর্ম প্রচারক ও দায়ীগণের পর্দাবিধানের নির্দেশনাকে তারা ধর্মান্ধতা ও বাড়াবাড়ি মনে করেন, যা নিতান্তই অজ্ঞতা ও অযৌক্তিক।
পর্দা ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ ফরজ বিধান। মুসলিম নর-নারী সকলের জন্যই পর্দা আবশ্যক। নারী ও সমাজের পবিত্রতা রক্ষায় মহিলার জন্য পুরো শরীর আবৃত করা ফরজ। কেননা মহিলারা প্রকৃতিগতভাবেই দুর্বল এবং পুরুষের পাশবিক আচরণের মুখে অসহায়। সভ্যতা-সংস্কৃতি, শিক্ষা, প্রগতি কোনো কিছুর দোহাই তাদেরকে এসকল পাশবিকতা থেকে রক্ষা করতে পারে না। এ জন্যই আল্লাহ পর্দার বিধান দিয়েছেন, যাতে নারীদের ইজ্জত-আব্রুর রক্ষা হয়। তবে এ পর্দা বিধানের উদ্দেশ্য তাদেরকে সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন করা নয়।
আমাদের সামাজিক ও নৈতিক অবক্ষয় এবং অধঃপতনের সমাজেও আমরা লক্ষ করছি, যেসব নারী পর্দার মধ্যে বেড়ে ওঠে, তারা বখাটেদের অত্যাচার-নির্যাতন থেকে মুক্ত থাকে। সাধারণত পর্দানশীন নারীদের উত্ত্যক্ত করতে দুষ্টরা দ্বিধাবোধ করে, তাদের প্রতি কিছুটা হলেও মমত্ববোধ ও দয়া-অনুগ্রহ প্রদর্শন করে। আর এ কথা স্বয়ং আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে বলেছেন, ‘হে নবী, আপনি আপনার স্ত্রী, কন্যা ও মুমিন নারীদের বলুন, তারা যেন তাদের জিলবাবের (চাদরের) কিয়দংশ নিজেদের উপর টেনে দেয়। এতে তাদেরকে চেনা সহজ হবে, ফলে তাদেরকে উত্ত্যক্ত করা হবে না। আল্লাহ ক্ষমাশীল করুণাময়।’ (সূরা আহজাব, আয়াত : ৫৯)
এ সূরারই ৩৩ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা নারীদের গৃহে অবস্থানের নির্দেশ দিয়েছেন এবং বর্বর যুগের সৌন্দর্য প্রদর্শনে নিষেধ করেছেন। এর অর্থ হলো- মাথা, মুখ, ঘাড়, গলা, বুক, হাত, পা ইত্যাদিকে অনাবৃত রাখা, যেন মানুষ তা দেখতে না পায়। একটি বিষয় বিশেষ লক্ষনীয় যে, মুখমন্ডল আবৃত করা ফরজ কিনা তাতে পূর্বযুগের ওলামায়ে কেরামের মধ্যে মতভেদ থাকলেও, তা ঢেকে রাখা যে উত্তম ও সুন্নাহ সম্মত- তাতে কোনো মতভেদ নেই। তবে ফেতনা ও সামাজিক অনাচারের ভয় থাকলে সবার মতেই মুখ ঢেকে রাখা ফরজ; একান্ত প্রয়োজন হলে ভিন্ন কথা। আর বর্তমান যুগে যেহেতু ফেতনা ব্যাপকভাবে প্রসার লাভ করেছে, তাই এ যুগের ওলামায়ে কেরামের সর্বসম্মত অভিমত হল নারীদের মুখ ঢেকে রাখা ফরজ। সামগ্রিকভাবে মুখ আবৃত করাই উচিত ও নিরাপদ। আর কোরআনের বিভিন্ন নির্দেশের আলোকে মুখ আবৃত রাখার মতটিই জোরদার।
কোনো মুসলিম নারীরই উচিত নয়, আল্লাহর নির্দেশ অমান্য করে নিজের জীবনের বরকত-কল্যাণের উৎস নষ্ট করে দেওয়া। বেপর্দা হয়ে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ অনাবৃত করে কোনো মহিলা কোথাও জাগতিক স্বার্থ লাভ করেন না। একান্তই শয়তানের প্ররোচনা অথবা অমুসলিম বা পরকালভোলা নারীদের অনুকরণের প্রবণতায় তারা এরূপ কঠিন হারামে লিপ্ত হন। হিজাব পালনে কারো জাগতিক কোনো ক্ষতি হয় না, কোনো কর্ম বা প্রয়োজন ব্যাহত হয় না, পারিবারিক-সামাজিক সম্মান বা মর্যাদায় ঘাটতি আসে না। বরং হিজাব পরিহিতা অতিরিক্ত সম্মান-মর্যাদা লাভ করেন এবং আল্লাহর অফুরন্ত দয়া, কল্যাণ ও বরকত লাভেও ধন্য হন। আল্লাহ বলেছেন, দৃষ্টিসংযম, পর্দাপালন ও লজ্জাস্থানের হেফাজত দুনিয়া ও আখেরাতের পবিত্রতা-সফলতা অর্জনের উপায়। এ থেকে দূরে সরে গেলে ধ্বংস ও শাস্তি অনিবার্য।
উলঙ্গপনা ও বেহায়াপনা চতুষ্পদ জন্তুর স্বভাব। যখন মানুষের মধ্যে এ ধরনের স্বভাব পাওয়া যাবে, তখন মানুষের পতন অবশ্যম্ভাবী ও অবধারিত। মানুষকে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন যে সম্মান ও মান-মর্যাদা দিয়েছেন, সে তা থেকে নিচে নেমে আসবে। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাকে যে সব নেয়ামতরাজি দান করেছেন, তা থেকে সে নীচে নেমে আসবে। যারা উলঙ্গপনা, ঘরের বাহিরে যাওয়া ও নারী পুরুষের অবাধ মেলা-মেশাকে সৌন্দর্য বা নারীর অধিকার বলে দাবি করে, বাস্তবে তারা মানবতার দুশমন। তারা মানুষকে মনুষ্যত্ব থেকে বের করে পশুত্বের প্রতি ধাবিত করছে। তারা যদিও নিজেদের সভ্য বলে দাবি করছে, কিন্তু প্রকৃত পক্ষে তারা অসভ্য ও অমানুষ।
মানবতার উন্নতির সম্পর্কই হল, আত্ম-সম্ভ্রম হেফাজত করা ও তার দৈহিক সৌন্দর্যকে রক্ষা করা। মানুষ যখন তার আবরণ ফেলে দিয়ে নিজেকে উলঙ্গ করে ফেলে তখন তার অধঃপতন নিশ্চিত হয়ে পড়ে; মানবতার উন্নতি ও অগ্রগতি ব্যাহত হয়। নারীরা যখন পর্দার আড়ালে থাকে, তখন তাদের মধ্যে আত্ম-সম্মান ও আত্ম-মর্যাদাবোধ অবশিষ্ট থাকে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।