পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
অভিনেত্রী পরীমণিকে ধর্ষণচেষ্টা ও হত্যাচেষ্টা মামলার অভিযুক্ত শিল্পপতি ও ঢাকা বোট ক্লাবের এন্টারটেইনমেন্ট অ্যান্ড কালচারাল মেম্বার নাসির উদ্দিন মাহমুদ ও অমিসহ পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এদের মধ্যে অমির গার্লফ্রেন্ড স্নিগ্ধা ও নাসিরের সঙ্গী লিপি ও সুমি রয়েছেন। গতকাল সোমবার রাজধানীর উত্তরা ১ নম্বর সেক্টরের ১২ নম্বর রোডের ১৩ নম্বর বাসা থেকে তাদের গ্রেফতার করে ডিএমপির গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। এ ঘটনায় পরীমনি বাদি হয়ে ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন মাহমুদসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে ধর্ষণচেষ্টা ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে সাভার থানায় মামলা দায়ের করেন চিত্রনায়িকা পরীমনি। গ্রেফতারের সময় ওই বাসা থেকে বেশ কিছু মাদক উদ্ধার করে ডিবি। হত্যাচেষ্টা ও ধর্ষণচেষ্টার মামলায় নাসিরসহ অন্যান্যদেরকে সাভার থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হবে। তবে বর্তমানে মাদক উদ্ধারের মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে ডিবি কার্যালয়ে রাখা হয়েছে।
বনানী থানার ওসি নুরে আজম মিয়া দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, পরীমনির বাসার সার্বিক নিরাপত্তার তদারকিতে চার সদস্যের একটি টিম সেখানে রাখা হয়েছে। একই সঙ্গে বাসার আশপাশে নিরাপত্তাও নজরদারিতে আনা হয়েছে।
গ্র্রেফতারের পর ডিএমপির গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি-উত্তর) যুগ্ম কমিশনার হারুন অর রশিদ সাংবাদিকদের বলেন, এটা পরীমনির কস্টিউম ডিজাইনার অমির বাসা। পরীমনির সংবাদ সম্মেলনের পর থেকে নাসির তার তিনজন নারী সঙ্গী নিয়ে এই বাসায় নাসির পালিয়ে ছিলেন। মাদক রাখার অভিযোগে সেই তিনজনকেও আমরা গ্রেফতার করেছি।
অভিযুক্ত নাসির উদ্দিন মাহমুদ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নাসিরের বিরুদ্ধে আগে মাদক ও নারী নির্যাতনের মামলা হয়েছে। নানা অভিযোগে তাকে উত্তরা ক্লাব থেকে বহিষ্কারও করা হয়েছে বলে তথ্য রয়েছে। তার বিরুদ্ধে কেউ যদি অভিযোগ করে, তবে আমরা সেগুলোও তদন্ত করবো।
তিনি বলেন, পরীমনিকে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার ঘটনা নিয়ে রোববার রাতে সংবাদ সম্মেলন করেছিলেন তিনি। সংবাদ সম্মেলনের পরপরই আমরা অভিযানের প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। তবে রাতে মামলা না হওয়ার কারণে গোয়েন্দা পুলিশ অ্যাকশনে যাইনি। সাভার থানায় দায়ের করা মামলার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর আমরা অভিযুক্তদের গ্রেফতার করি।
পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, অভিযানে মাদক উদ্ধারের মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গ্রেফতার আসামিদের মিন্টো রোডে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তবে পরীমনির দায়ের করা মামলায় আসামি নাসির ও অমিকে ঢাকার সাভার থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
পরীমনি ঢাকা বোট ক্লাবের সদস্য নন, তবে তিনি সেখানে গিয়েছিলেন কেন? সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পরীমনি স্বনামধন্য একজন নায়িকা। তিনি ওখানে (বোট ক্লাব) যেতেই পারেন। তিনি সেখানে গেলেই যে তাকে হয়রানি করবে সেটা ঠিক না। আসলে কী ঘটেছে তা বিস্তারিত তদন্ত করে বলতে পারবো।
গতকাল প্রধান আসামিসহ পাঁচজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এ ঘটনায় স্বস্তি প্রকাশ করে পরীমনি বলেন, এত দ্রুতই প্রধান আসামি গ্রেফতার হওয়ায় এখন ভরসা পাচ্ছি। নিশ্চিন্ত হলাম। বাঁচতে পারব। বাকি অভিযুক্ত ব্যক্তিদেরও দ্রুত আইনের আওতায় আনা হোক।
বনানী থানার সেই রাতের সিসিটিভি ফুটেজ দেখেছে পুলিশঃ অভিনেত্রী পরীমণি ঢাকা বোট ক্লাবে ধর্ষণ ও হত্যা চেষ্টার অভিযোগ করতে গত ৮ জুন বনানী থানায় গিয়েছিলেন। পরীমণির থানায় যাওয়ার সেই রাতের সিসিটিভি ফুটেজ দেখেছে গুলশান থানা পুলিশ। সিসিটিভি ফুটেজ দেখা যায়, অসংলগ্ন অবস্থায় তিনি থানায় এসেছিলেন এবং ঠিকভাবে দাঁড়াতে পারছিলেন না। গতকাল সোমবার নিজ কার্যালয়ে ডিএমপির গুলশান বিভাগের ডিসি সুদীপ কুমার চক্রবর্তী এক প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন।
সুদীপ কুমার চক্রবর্তী বলেন, তিনি যে বনানী থানায় এসেছিলেন সেই ভিডিওগুলো আমরা সংগ্রহ করেছি। আমরা দেখেছি উনার কী অবস্থা ছিল। এছাড়া এই ক্ষেত্রে রূপনগর থানা ও সাভার থানা পুলিশ অবশ্যই ঘটনাস্থলের যে সংশ্লিষ্ট সিসিটিভি ফুটেজ আছে সেগুলো সংগ্রহ করার চেষ্টা করবে। বনানী থানার সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে আমরা জানতে পারি, গত ৯ জুন রাত ৩টা ৫২ মিনিটে পরীমণি থানায় আসেন। এ সময় তার সঙ্গে আরও দুইজন ছিলেন। তিনি ঠিকভাবে দাঁড়াতে পারছিলেন না। কিছুটা অসংলগ্ন অবস্থায় তার দুই জন সঙ্গী তাকে প্রায় পাঁজাকোলা করে থানায় নিয়ে আসে। এসময় তিনি কর্তব্যরত ডিউটি অফিসারের কাছে একটি অভিযোগ করেন। অভিযোগটি এমন ছিল, সাভার ও বিরুলিয়া মাঝখানে অবস্থিত ঢাকা বোট ক্লাবে তাকে কয়েকজন ব্যক্তি জোর করে মদের সঙ্গে ড্রাগ মিশিয়ে পান করানোর চেষ্টা করে এবং তিনি অজ্ঞান হয়ে যান।
তিনি বলেন, তিনি যেহেতু অসংলগ্ন অবস্থায় ছিলেন এবং শারীরিক ও মানসিকভাবে অসুস্থ ছিলেন তখন ডিউটি অফিসার তাকে দ্রুত হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। স্বাভাবিক হয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ করার জন্য ডিউটি অফিসার তাকে অনুরোধ করেন। পরে তাৎক্ষণিকভাবে বনানী থানার একটি মোবাইল টিম তাকে নিরাপত্তা দিয়ে বসুন্ধরায় অবস্থিত এভারকেয়ার হাসপাতাল পৌঁছে দেয়। পরের দিন তার থানায় এসে অভিযোগ দায়ের করার কথা ছিল। পরবর্তীতে তিনি থানার অফিসার এবং আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেননি বা অভিযোগ দায়ের করতে আসেননি। তিনি আইজিপি মহোদয় ও ডিএমপি কমিশনার সঙ্গে যোগাযোগ করার কথাও বলেছেন। আসলে উনার ওই পর্যায়ে কারো সঙ্গে কোনো যোগাযোগ হয়নি। তিনি যেহেতু পরবর্তীতে বিষয়টি আমাদের জানাননি তাই এ বিষয়ে আমরা কিছুই জানতে পারিনি।
গ্র্রেফতারের সময় পরীমণিকে নিয়ে যা বললেন নাসিরঃ পুলিশের গাড়িতে ওঠানোর আগে সাংবাদিকদের সামনে পরীমণির আনা অভিযোগ অস্বীকার করেন নাসির উদ্দিন মাহমুদ। তিনি নিজেকে নির্দোষ দাবি করে বলেন, আমি বুধবার ৯ জুন রাতে যখন ক্লাব থেকে বের হই তখন তারা (পরীমণি ও তার বন্ধু) ক্লাবে ঢুকে। তারা তখন মদ্যপ অবস্থায় ছিল। তাদের মধ্যে একটি ছেলে উশৃঙ্খল ছিল। ক্লাবে ঢোকার পর আমাদের বারের কাউন্টার থেকে বড় বড় ও দামি ড্রিংকসের বোতল জোর করে নেয়ার চেষ্টা করে তারা। তখন আমি তাদের কাছে গিয়ে বলি, আপনারা ড্রিংকসগুলা নিতে পারেন না। আমি তাদের বাধা দেই। আমি বলি, এটা শুধুমাত্র ক্লাবের মেম্বারদের জন্য। এখান থেকে মদ নিতে হলে তোমাদের কোনো সদস্যের অ্যাকাউন্টের বিপরীতে নিতে হবে। তারপর আমি আমার সিকিউরিটিদের ডাক দেই। নিরাপত্তারক্ষীরা এসে তাদের নিয়ে যায়। উল্লেখ্য, অভিযুক্ত নাসির ইউ মাহমুদ ঢাকা বোট ক্লাবের সদস্য। তিনি জাতীয় পার্টির (জাপা) একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য। ২০২০ সালের ২৮ ডিসেম্বর জাপার ৯ম কাউন্সিলে তাকে প্রেসিডিয়াম সদস্য করা হয়।
এজাহারে যা বলেছেন পরীমনিঃ মামলার এজাহারে তিনি বলেন, গত ৮ জুন রাত সাড়ে ১১টার দিকে তার বনানীর বাসা থেকে কস্টিউম ডিজাইনার জিমি (৩০), অমি (৪০) ও বনিসহ (২০) দুটি গাড়িযোগে তারা উত্তরার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন। পথে অমি বলে বেড়িবাঁধস্থ ঢাকা বোট ক্লাবে তার দুই মিনিটের কাজ আছে। অমির কথামতো তারা সবাই রাত আনুমানিক ১২টা ২০ মিনিটের দিকে ঢাকা বোট ক্লাবের সামনে গিয়ে গাড়ি দাঁড় করান। কিন্তু বোট ক্লাব বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অমি কোনও এক ব্যক্তির সঙ্গে ফোনে কথা বলে। তখন ঢাকা বোট ক্লাবের সিকিউরিটি গার্ডরা গেট খুলে দেয়। অমি ক্লাবের ভেতরে গিয়ে বলে এখানকার পরিবেশ অনেক সুন্দর তোমরা নামলে নামতে পারো। তখন আমার ছোটবোন বনি প্রাকৃতিক ডাকে সাড়া দিতে বোট ক্লাবে প্রবেশ করে ও বারের কাছের টয়লেট ব্যবহার করি।
টয়লেট হতে বের হতেই এক নম্বর বিবাদী নাসির উদ্দিন মাহমুদ আমাদেরকে ডেকে বারের ভেতরে বসার অনুরোধ করেন এবং কফি খাওয়ার প্রস্তাব দেন। আমরা বিষয়টি এড়িয়ে যেতে চাইলে অমিসহ এক নম্বর আসামি মদ্যপানের জন্য জোর করেন। আমি মদ্যপান করতে না চাইলে এক নম্বর আসামি জোর করে আমার মুখে মদের বোতল প্রবেশ করিয়ে মদ খাওয়ানোর চেষ্টা করে। এতে আমার সামনের দাঁতে ও ঠোঁটে আঘাত পাই।
এজাহারে বলা হয়েছে, এক নম্বর আসামি (নাসির উদ্দিন মাহমুদ) আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে এবং আমার শরীরের বিভিন্ন স্পর্শকাতর স্থানে স্পর্শ করে এবং আমাকে জোর করে ধর্ষণের চেষ্টা করে। সে উত্তেজিত হয়ে টেবিলে থাকা গ্লাস ও মদের বোতল ভাঙচুর করে আমার গায়ে ছুঁড়ে মারেন। তখন কস্টিউম ডিজাইনার জিমি নাসির মাহমুদকে বাধা দিতে গেলে তাকেও মারধর করে নীলাফোলা জখম করে।
পরীমনি বলেন, আমি প্রথমে জাতীয় জরুরি সেবা-৯৯৯ নম্বরে ফোন দিতে গেলে আমার ফোনটি টান মেরে ফেলে দেয়া হয়। এসময় দুই নম্বর আসামিসহ অজ্ঞাতনামা চার জন এক নম্বর আসামিকে ঘটনা ঘটাতে সহযোগিতা করে। আমি অজ্ঞাতনামা আসামিদের দেখলে শনাক্ত করতে পারবো। দুই নম্বর আসামি অমি পরিকল্পিতভাবে আমাকে বর্তমান বাসা থেকে ঢাকা বোট ক্লাবে নিয়ে যায়। সে অজ্ঞাতনামা চার জন আসামি ও নাসির উদ্দিন মাহমুদ আমার শরীরের বিভিন্ন স্পর্শকাতর স্থানে স্পর্শ করে এবং জোরপূর্বক আমাকে ধর্ষণের চেষ্টা করে। আমি আমার সঙ্গীদের সহায়তায় ধর্ষকের হাত থেকে রক্ষা পাই। রাত আনুমানিক তিনটার সময় আমি আমার গাড়িযোগে প্রায় অচেতন অবস্থায় অপর সঙ্গীদের সহায়তায় বাসায় ফিরে আসি। পরীমণি অভিযোগ করেন, আসামিরা বিভিন্ন মাধ্যমে আমাকে বিভিন্নপ্রকার ভয়ভীতি ও হুমকি দিচ্ছে। পরিবার, শিল্পী সমিতি ও অন্যান্যদের সঙ্গে আলোচনা করে এজাহার দায়ের করতে বিলম্ব হলো বলে উল্লেখ করেন তিনি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।