পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রাজধানী ঢাকার পরিবেশদূষণ মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। চলতি বছরের শুরু থেকে বায়ুদূষণের ক্ষেত্রে ঢাকা বিশ্বের শীর্ষ শহরের তালিকায় ছিল। অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠা কলকারখানার ধোঁয়া আর উন্নয়নে খোঁড়াখুঁড়ির ধুলায় ঢাকার বাতাস ছিল বিষাক্ত। বৃষ্টি শুরু হওয়ার পর বায়ুদূষণ কিছুটা কমলেও পানিবদ্ধতায় নগরবাসীর দুর্ভোগ আরো বাড়ছে। সামান্য বৃষ্টিতে রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক ও অলিগলি তলিয়ে যায়। এতে শহরের রাস্তায় ফেলে রাখা ময়লা আবর্জনা এবং স্যুয়ারেজের ময়লা একাকার হয়ে শহরের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। এতেকরে রাজধানী ঢাকার পরিবেশ মারাত্মকভাবে দূষিত হয়।
ঢাকার বিভিন্ন রাস্তা এখন ময়লা আবর্জনার ডাস্টবিনে পরিণত হয়েছে। বিভিন্ন এলাকায় বাড়ি থেকে বের হলেই দেখা যায় রাস্তাঘাটে ময়লা-আবর্জনা। কাগজ, প্লাস্টিকের ব্যাগ অথবা বোতল, গৃহস্থালি আবর্জনা, করোনা সুরক্ষার বিভিন্ন সামগ্রী এসব ময়লা ফেলার নির্ধারিত স্থানে যেমন পড়ে আছে, তেমনি রাস্তার যেখানে সেখানেও পড়ে থাকতে দেখা যায়। শাহজাহানপুর, মালিবাগ, খিলগাঁও, শান্তিনগর, যাত্রাবাড়ি, শনির আখড়াসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ময়লা নির্ধারিত স্থানে যেমন দু’তিন দিন পড়ে থাকে। তেমনি নির্ধারিত স্থান ছাড়াও রাস্তার বিভিন্ন স্থানে ময়লা পড়ে থাকতে দেখা যায়।
এ ছাড়াও করোনাকালে মেডিক্যাল বর্জ্য ঢাকার পরিবেশ দূষণে নতুন মাত্রা হিসাবে যোগ হয়েছে। এ বর্জ্য নগরবাসীর জন্য মড়ার উপর খাঁড়ার ঘায়ের মতো। করোনা সংক্রমণ থেকে বাঁচতে মাস্ক, হ্যান্ড গ্লাভস, হেড কভার, সু কভার, গগলস, ফেইস শিল্ড বা গাউন এসব সামগ্রী ব্যবহার করে বর্জ্য হিসাবে যেখানে সেখানে ফেলে দেয়া হয়। এসব প্লাস্টিক বর্জ্য রাজধানীর রাস্তায় যত্রতত্র ফেলায় মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি ও পরিবেশগত বিপর্যয় ঘটছে। একই সাথে বৃষ্টির পানিতে ভেসে ড্রেনে যাচ্ছে এবং তাতে নগরীর ড্রেনেজব্যবস্থা বিকল হচ্ছে। মেডিক্যাল বর্জ্যরে পাশাপাশি নিষিদ্ধ পলিথিনের অবাধ ব্যবহারেও রাজধানীর ড্রেনেজব্যবস্থা অচল হয়ে পড়েছে। এর ফলে সামান্য বৃষ্টিতেই তলিয়ে যাচ্ছে ঢাকার অলি-গলিসহ সমস্ত রাজপথ।
এই পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে রাজধানীর ঢাকা আবারো বিশ্বের মধ্যে বসবাসের অযোগ্য শহরের তালিকায় উঠে এসছে। ইকোনোমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (ইআইইউ) জরিপে সম্প্রতি এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের অভিমত, যানজট, গণপরিবহনে নৈরাজ্যকর অবস্থা, বায়ুদূষণ, শব্দদূষণ, ওয়াসার পানিদূষণ, অপরিকল্পিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, স্যুয়ারেজ ব্যবস্থাপনা, সামান্য বৃষ্টিতে পানিবদ্ধতা এসব কারণে বিপর্যস্ত ঢাকার পরিবেশ। এগুলো ছাড়াও ফুটপাথ দখল, হাঁটাচলার জায়গার অপ্রতুলতা, পার্ক, বিনোদন, জনঘনত্ব, জীবনযাপনের ব্যয়, পরিচ্ছন্নতা, সবুজায়ন, নির্মাণকাজের অরক্ষিত অবস্থা ও ভোগান্তি, মানসিকচাপ, নারীবান্ধব পরিবেশের অভাব সব মিলিয়ে ঢাকা বসবাসের অযোগ্য নগরীতে পরিণত হয়েছে।
পরিবেশবাদীদের অভিযোগ নগরীর পরিবেশ বিপর্যয় ও নগরবাসীর দুর্ভোগ দূর করার ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ চরম উদাসীন। বিশেষ করে রাজধানীর এই যে দূষণ, এই যে পরিবেশ বিপর্যয় এ ব্যাপারে পরিবেশ অধিদফতর নীরব। পরিবেশের জন্য ভয়াবহ ক্ষতিকর নিষিদ্ধ পলিথিন রাজধানীতে অবাধে উৎপাদন ও বিপণন হচ্ছে। এসব পলিথিন রাজধানীর ড্রেনেজব্যবস্থা বিকল করে দিচ্ছে। মেডিক্যাল বর্জ্য যেখানে সেখানে ফেলায় নগরবাসীর স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে, রাজধানীর পরিবেশ বিপর্যয় ঘটছে। অথচ পরিবেশ অধিদফতর এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। বরং সরকারির এ প্রতিষ্ঠানটির এক শ্রেণির অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজসে পলিথিন উৎপাদন ও বিপণনের অভিযোগ রয়েছে।
বাংলাদেশ পারিবেশ আন্দোলনের (বাপা) নির্বাহী সভাপতি ড. আব্দুল মতিন ইনকিলাবকে বলেন, ঢাকার পরিবেশ রক্ষায় পরিবেশ অধিদফতরের যথাযথ দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ। পলিথিন উৎপাদন ও বিপণন সরকারিভাবে নিষিদ্ধ করা হলেও অধিদফতরের কিছু অসাধু কর্মকর্তা কর্মচারীদের যোগসাজসে পলিথিন উৎপাদন ও বিপণন অব্যাহত রয়েছে। বুড়িগঙ্গার তীর ঘেঁষে অবৈধভাবে গড়ে উঠা বিভিন্ন কারখানার বর্জ্যে পরিবেশদূষিত হচ্ছে। অথচ পরিবেশ অধিদফতর কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না। বরং অসাধু কর্মকর্তারা এসব অবৈধ কারখানা থেকে মাসোহারা নিচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
ঢাকার বিভিন্ন রাস্তা এখন ময়লা আবর্জনার ডাস্টবিনে পরিণত হয়েছে। ময়লা আবর্জনা নেই এমন রাস্তা-ঘাট রাজধানীতে খুঁজে পাওয়া খুবই বিরল। রাজধানীতে প্রতিদিন পাঁচ হাজার মেট্রিক টনের বেশি ময়লা তৈরি হচ্ছে। শহরটিতে জনসংখ্যা যেমন বাড়ছে মানুষজনের তৈরি ময়লা আবর্জনাও বাড়ছে। বিভিন্ন এলাকায় বাড়ি থেকে বের হলেই দেখা যায় রাস্তা ঘাটে ময়লা আবর্জনা। বিভিন্ন এলাকায় জলাশয় বা ঝিলও ময়লা আবর্জনার নর্দমায় পরিণত হয়েছে। এসব ময়লা আবর্জনা সময় মতো পরিষ্কার না করায় রাজধানীর পরিবেশদূষণ দিন দিন বেড়েই চলছে।
শাহজাহানপুর ঝিলপাড় এলাকার ব্যবসায়ী আজিজুল ইসলাম গতকাল ইনকিলাবকে বলেন, এ ঝিলটা গত বছর একবার পরিষ্কার করা হয়েছিল। এখন আবার ময়লা-আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। দুর্গন্ধে থাকা যায় না। এ ছাড়া এ আবর্জনায় ভরা ঝিল মশার প্রজনন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।
সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতার কাজে নিয়োজিত কর্মী সোহেল বলেন, আমরা প্রতিদিনই এলাকার ডাস্টবিন থেকে ময়লা গাড়িতে করে নিয়ে যাই। অনেক এলাকায় মানুষ যেখানে সেখানে ময়লা ফেলে। এসব ময়লা দু’তিন দিন পড়ে থাকে এবং দুর্গন্ধ ছড়ায়। লোকবল এবং গাড়ি সঙ্কটের কারণে এসব ময়লা প্রতিদিন পরিষ্কার করা সম্ভব হয় না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।