বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
কুড়িগ্রামে মেগা প্রকল্পের নামে তিস্তা নদীর ভাঙ্গন রোধে জরুরি বরাদ্দ না থাকায় ক্ষুব্ধ তিস্তা পাড়ের মানুষ।
বর্ষার আগেই পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে তিস্তা নদী তার ভয়ালরূপ দেখাতে শুরু করেছে। তিস্তা নদীর ভাঙ্গনে বিলিন হচ্ছে ঘরবাড়ি,ফসলী জমিসহ বিভিন্ন সরকারী-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। আসন্ন বন্যার আগে ভাঙ্গন রোধে পদক্ষেপ না নিলে দুই জেলার কয়েক হাজার মানুষ ক্ষতি মুখে পড়বে।
কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের তৈয়ব খাঁ এলাকার ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধা বখত জামালের অশ্রুসিক্ত আর্তনাদ দেখলে তিস্তা নদীর ভাঙ্গন রুদ্ররূপ সম্পর্কে ধারণ হবে। মাত্র এক যুগে তিস্তা নদীর কড়াল গ্রাসে ৪বার ভাঙ্গনে বসতভিটে সহ প্রায় আড়াই বিঘা ফসলি জমি বিলিন হয়েছে। বর্তমানে নদীর তীরেই মাথা গোঁাজার শেষ সম্বল জমি টুকুও পড়েছে হুমকির মুখে। এটি বিলিন হয়ে গেলে অসুস্থ স্ত্রীকে নিয়ে বখত জামালের আশ্রয় হবে খোলা আকাশের নিচে। সন্তানরাও থাকে তাদের পরিবার নিয়ে আলাদা। খোঁজ রাখে না। বখত জামালের মতো শত-শত পরিবার এখন তিস্তা নদীর ভাঙ্গনের মুখে পড়েছে। ভারী বৃষ্টিপাত আর উজানে পানি বৃদ্ধির ফলে তিস্তা নদী রুদ্ররুপ ধারণ করেছে। গত এক সপ্তাহে তিস্তার ভাঙনে বিলিন হয়ে গেছে শত-শত বিঘা আবাদি জমি, গাছপালাসহ শতাধিক বাড়ী ঘর। ভেঙে গেছে মুল সড়কের ৪০ মিটার। প্রশাসন এবং পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে ভাঙন মোকাবেলায় নানান প্রতিশ্রুতি দেয়া হলেও চোখের সামনে বাড়িঘর ভেঙ্গে যেতে দেখে ক্ষুব্ধ তিস্তা পাড়ের মানুষ। কুড়িগ্রামে উজানে ভারতীয় অঞ্চলে প্রচুর বৃষ্টিপাতের কারণে ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, ধরলার নদীর পানি বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে। ফলে দেখা দিয়েছে তীব্র নদী ভাঙন। বিশেষ করে তিস্তা নদীর পানি হু-হু করে বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে। হঠাৎ করে পানিবৃদ্ধি এবং তীব্র স্রোতে কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার বজরা,রাজারহাটের বিদ্যানন্দ এবং পাশ্ববর্তি গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের কাসিম বাজার এলাকায় তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। বিলিন হয়েছে পুকুর, ফসলী জমিসহ বাগান। হুমকীর মূখে রয়েছে ঐতিহাসিক কাসিমবাজার হাটসহ সরকারি-বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। তীব্র ভাঙনে বসতবাড়ী বিলিন হয়ে গেলেও জনপ্রতিনিধি ও পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে কার্যকর কোন উদ্যোগ গ্রহন না করায় সংশ্লিষ্টদের প্রতি হতাশ ও ক্ষুব্ধ এলাকার ভাঙন কবলিতরা।
ক্ষতিগ্রস্থ বখত জামাল অশ্রু চোখে বলেন,তিস্তা নদীর আমার সোগ খাইছে। এলা দু’শতক জমিও নাই থাকপার। যেটুকু সেটা বিলিন হলে আমার থাকপার কিচ্ছু নাই। আমি পথের ফকির হয়া গেছি। আল্লাহ আমাকে ফকির বানাইছে। বাবা তোমার গুলার হাত-পাও ধরি কই চাচা হই আমার বাড়িঘর অক্ষা করি দ্যাও আল্লাহ তোমার একালেও ভালো পরকালেও ভালো করবে।
কাশিম বাজার এলাকার জব্বার আলী বলেন,সংসদে বেশ সুন্দর বড়-বড় বক্তব্য দেয়,আরে মিয়া সংসদে বক্তব্য দেয়া বাদ দিয়া তোর এলাকায় দেখি যা। তোর এলাকার কি অবস্থা হইছে তুমি চোখে দেখ না। এসব কথা বলে জনপ্রতিনিধিদের উপর ক্ষোভ ঝাড়েন ভাঙ্গন কবলিতরা।
বজরার বাসিন্দা সহিদুর রহমান বরেন,অব্যাহত নদী ভাঙ্গনে ভিটে-মাটি, গাছপালা ও ফসলি জমি হারিয়ে সর্বশান্ত হয়ে যাচ্ছে এখান মানুষ। নদী ভাঙ্গন থেকে রক্ষা পেতে জনপ্রতিনিধি,প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছে ধরনা দিয়েও কোন লাভ হচ্ছে না।
তৈয়ব খাঁ এলাকার মোশাররফ বলেন,তিস্তা নদীর মেগা প্রকল্পের নামে জরুরি বরাদ্দ না থাকায় ভাঙ্গন রোধে কোন পদক্ষেপ নেই পানি উন্নয়ন বোর্ডের। আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবী জানাই তিনি যেন তিস্তার ভাঙ্গন রোধে দ্রুত ব্যবস্থা নেন।
বজরা ইউপি চেয়ারম্যান রেজাউল করিম আমিন বাবলু বলেন,গত কয়েকদিনে ইউনিয়নের পশ্চিম বজরা এলাকায় ব্যাপক ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যেই নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে এলজিইডি’র পাকা সড়কসহ পুরান বজরা জামে মসজিদ এবং বেশ কিছু ব্যবসা প্রতিষ্ঠান,বাড়িঘর বিলিন হয়ে গেছে। ভাঙ্গনের মুখে পশ্চিম বজরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবকাঠামো ভেঙ্গে নেয়া হচ্ছে। ৫০-৬০টি বাড়ি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। হুমকির মুখে রয়েছে পুরান বজরাহাট, পশ্চিম বজরা দাখিল মাদ্রাসা,চর বজরা পূর্বপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এছাড়াও চর বজরা পূর্ব বেড়ি বঁাধ ভেঙ্গে যাওয়ায় তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে বজরা ইউনিয়নের ব্যাপক ক্ষতি হবে।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ড নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম বলেন,তিস্তা নদীর ভাঙ্গন রোধ এবং সৌন্দর্য্য বৃদ্ধি নামক প্রায় ৮হাজার ২শ কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য সরকার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এটি বাস্তবায়ন হলেও তিস্তা নদীর ভাঙ্গন রোধে স্থায়ীভাবে সমস্যা সমাধান হবে। বর্তমানে তিস্তার ভাঙন রোধে অস্থায়ীভাবে জিও ব্যাগ এবং জিও টিউব দিয়ে রোধ করার চেষ্ঠা করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। এছাড়াও স্থায়ীভাবে কাজ করার জন্য প্রকল্প পরিকল্পনা কমিশনে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানান তিনি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।