বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
সম্পদ যা কিছু আমাদের হাতে আছে তার সবই তো আল্লাহর দান। কোনো মুমিনই তা অস্বীকার করতে পারে না। সূরা বাকারার ২৫৪ নং আয়াতে আল্লাহ তাআলা সেদিকে ইঙ্গিত করে বলেছেন : ‘আনফিকু মিম্মা রাযাক্বনাকুম’ অর্থাৎ আমি তোমাদেরকে যে রিযিক দিয়েছি তা থেকে ব্যয় করো। সম্পদ যখন আল্লাহ দিয়েছেন, তা ব্যয়ের নির্দেশনাও তিনি দিয়েছেন। কতটুকু ব্যয় করতে হবে, কতটুকু সঞ্চয় করতে হবে তার নির্দেশনাও দিয়েছেন এ পাক কোরআনেই।
পড়ুন : তুমি তোমার হাত তোমার ঘাড়ে আবদ্ধ করে রেখ না এবং তা সম্পূর্ণ প্রসারিতও করো না, তাহলে তুমি তিরস্কৃত ও নিঃস্ব হয়ে পড়বে। (সূরা বনী ইসরাঈল : ২৯)। অর্থাৎ সম্পদ ব্যয়ের ক্ষেত্র যখন সামনে আসে তখন হাত পুরোপুরি গুটিয়েও রাখা যাবে না, আবার যত সম্পদ আছে তার সবই দান করে দেয়া যাবে না। প্রয়োজনীয় ব্যয়ের ক্ষেত্রে কার্পণ্যও করা যাবে না, অপ্রয়োজনে ব্যয় করে সম্পদের অপচয়ও করা যাবে না।
স্বভাবধর্ম ইসলাম জীবনের সর্বক্ষেত্রে যেমন আমাদেরকে ভারসাম্যপূর্ণ আচরণ শিক্ষা দেয়, তেমনি সম্পদ ব্যয়ের ক্ষেত্রেও ইসলামের নির্দেশনা-অপচয় ও কার্পণ্যকে দুই পাশে রেখে এর মাঝ দিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। পবিত্র কোরআনের এক জায়গায় আল্লাহ তাআলার প্রকৃত বান্দাদের কিছু পরিচয় ও বৈশিষ্ট্য আলোচিত হয়েছে। সেখানে তাদের সম্পদ ব্যয়ের নীতি উল্লেখিত হয়েছে এভাবে : যখন তারা ব্যয় করে তখন অপব্যয় করে না, কার্পণ্যও করে না, বরং তারা আছে এতদুভয়ের মাঝে মধ্যম পন্থায়। (সূরা ফুরকান : ৬৭)।
সূরা বাকারার ২৫৪ নং আয়াত, যা আমরা গত আলোচনায় উদ্ধৃত করে এসেছি, তাতে আল্লাহ তাআলা সতর্ক করে দিয়েছেন আমাদেরকে এই বলে- দুনিয়াতে তোমাদেরকে যে সম্পদ দেয়া হয়েছে তার ব্যবহার এবং তা থেকে উপকৃত হতে চাইলে তা ব্যয় করতে হবে দুনিয়াতেই।
মৃত্যু-পরবর্তী জীবনে এ সম্পদ ব্যয় করার কোনো সুযোগ থাকবে না। সেখানে ক্রয়বিক্রয় বলতে কিছু থাকবে না। আবার দুনিয়ার এ জীবনে একজনের হাতে সম্পদ দেখে আরো দশজন তার বন্ধু বনে যায়। ন্যায়-অন্যায়ের পরোয়া না করে তার পক্ষে তারা দাঁড়িয়ে যায়। সম্পদকে কেন্দ্র করে এই যে বন্ধুত্ব, তাও এ দুনিয়াতেই সীমাবদ্ধ।
দুনিয়াতে আল্লাহর দান এ সম্পদকে কাজে লাগিয়ে যদি তাঁর সন্তুষ্টি হাসিল করা না যায়, পরকালে তাহলে এ সম্পদের ফল ভোগ করার কোনো সুযোগ থাকবে না। যেখানে যতটুকু প্রয়োজন, সম্পদ ব্যয় করতে হবে। কী দুনিয়াবি ব্যক্তিগত প্রয়োজন আর কী ইবাদত; কার্পণ্যকে আশ্রয় দেয়া যাবে না কোথাও। ব্যক্তিগত প্রয়োজনে মুমিনের সম্পদ ব্যয়ও কীভাবে তার জন্যে পুণ্য বয়ে আনে, লক্ষ করুন- রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : সন্দেহ নেই, আল্লাহর সন্তুষ্টির প্রত্যাশায় তুমি যা কিছুই ব্যয় কর, তাতে তুমি পুরস্কৃত হবেই, এমনকি তোমার স্ত্রীর মুখে যে খাবার তুমি তুলে দাও তাতেও (রয়েছে তোমার জন্যে পুরস্কার)। (সহীহ বুখারী : ১২৯৫)।
এই হচ্ছে মুমিনের সম্পদ ব্যয়ের ফল। নিজের ক্ষুধা মেটানোর জন্যেও যখন সে কিছু খাবে, তার লক্ষ্য তখন থাকে শারীরিক শক্তি অর্জন, যা কাজে লাগিয়ে সে আল্লাহ পাকের ইবাদত করতে পারবে। স্ত্রী-সন্তানাদির জন্যে যখন সে কোনোকিছু কিনে নিয়ে আসে, তার লক্ষ্য থাকে আল্লাহ পাকের পক্ষ থেকে প্রদত্ত দায়িত্ব পালন এবং তা দিয়ে তাঁর সন্তুষ্টি অর্জন।
এমনকি নতুন কাপড়চোপর যখন সে কিনতে যায় তখনো তার মাথায় থাকে আল্লাহ তাআলার দেয়া নিআমতের প্রকাশ ও কৃতজ্ঞতার কথা। আর এ সম্পদ ব্যয় যদি হয় ফরয ইবাদত যাকাত আদায়ের জন্য, ওয়াজিব কুরবানী কিংবা সদাকাতুল ফিতর আদায়ের জন্যে, এ সম্পদ ব্যয় যদি হয় আল্লাহ তাআলার অভাবী দুঃখী বান্দাদের অভাব ও দুঃখ ঘুচাবার জন্যে, আল্লাহর দ্বীন প্রচারের জন্যে, যদি তা ব্যয় হয় তাঁর সৃষ্টির সেবায় রাস্তার ধারে নলক‚প স্থাপনে কিংবা পথিকদের জন্যে কোনো বিশ্রামাগার নির্মাণে, তাহলে তো এর পুরস্কারের কথা বলাই বাহুল্য। শর্ত একটাই- নিয়তটাকে খালেস করে নিতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।