পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
প্রতিবেশী ভারতে গতকাল ২৪ ঘন্টায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৬ হাজার ১৩৮ জন। এখন পর্যন্ত দেশটিতে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন মোট ২ কোটি ৯১ লাখ ৮২ হাজার ৭২ জন; মারা গেছেন মোট ৩ লাখ ৫৯ হাজার ৬৯৫ জন। এ ছাড়াও করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট ডেল্টা ভয়ঙ্কর ভাইরাস হিসেবে চিহ্নিত। এ অবস্থায় দেশের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত শুধু বন্ধই নয়; সীলগালা করে দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। কারণ ২৬ এপ্রিল থেকে সীমান্ত বন্ধ থাকলেও প্রতিদিনই সীমান্ত দিয়ে মানুষ বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। সীমান্ত দিয়ে আসা মানুষই বাংলাদেশে করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে দিচ্ছে।
জানতে চাইলে করোনা মোকাবেলায় গঠিত জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটির প্রধান অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ সহিদুল্লাহ বলেন, ভারতীয় সীমান্তবর্তী ১৬ থেকে ১৭টি জেলা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। সীমান্ত জেলাগুলো থেকে দেশের অন্যান্য একের পর এক জেলায় সংক্রমণ বাড়ছে। কমপক্ষে দুই সপ্তাহ সীমান্তবর্তী এলাকা সিল করে রাখতে পারলে সংক্রমণ ঠেকানো সম্ভব হবে। সীমান্তবর্তী এলাকায় করোনা পরীক্ষা বাড়ানো হয়েছে। এটা ভালো উদ্যোগ। তবে সীমান্ত সিলগালা করা হলে আরো ভাল ফলাফল পাওয়া যাবে।
বাংলাদেশের করোনা সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির এক সভায় (এপ্রিল মাস) ভারতে সংক্রমণ পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত সীমান্ত বন্ধ রাখার প্রস্তাব করা হয়। ওই কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, ভারতের পরিস্থিতি গুরুতর হওয়ায় সীমান্ত বন্ধ রাখার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। সীমান্ত পুরোপুরি বন্ধ রাখা সম্ভব না হলে ভারত থেকে আসা ব্যক্তিদের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করতে হবে। সীমান্ত বন্ধ রাখার বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ পাঠায়। অতঃপর ২৬ এপ্রিল দুই দেশের সীমান্ত বন্ধ করে দেয়া হয়।
বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে ৪১৫৬ কিমি (২,৫৮২ মাইল) লম্বা আন্তর্জাতিক সীমানা। এটা বিশ্বের পঞ্চম দীর্ঘতম ভ‚মি সীমানা। এরমধ্যে আসাম ২৬২ কিমি (১৬৩ মাইল), ত্রিপুরা ৮৫৬ কিমি (২৭৫ মাইল), মিজোরাম ১৮০ কিমি (১১০ মাইল), মেঘালয় ৪৪৩ কিমি (২৭৫ মাইল) এবং পশ্চিমবঙ্গ ২,২১৭ কিমি (১,৩৭৮ মাইল)। এর বাইরে মিয়ানমারের সঙ্গে কিছু সীমান্ত রয়েছে। করোনা নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশে লকডাউন কার্যকর থাকায় ভারতের সঙ্গে সব ধরনের বিমান যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। তবে সীমান্ত বাণিজ্য যথারীতি চলায় স্থলবন্দর দিয়ে দুই দেশের নাগরিকরাও চলাচল করছেন।
বাংলাদেশে করোনা পরিস্থিতি নিয়ে এখনও উদ্বেগ রয়েছে। জানা যায়, চিকিৎসাসহ নানা কারণে ভারতে গিয়ে আটকেপড়াদের বিশেষ সুবিধা দিয়ে সীমান্ত নিয়ে দেশে প্রবেশের সুযোগ দেয়া হচ্ছে। এছাড়াও সীমান্তে দালালচক্র নানাভাবে রাতের আঁধারে সীমান্ত দিয়ে লোক পারাপার করছে। ভারত থেকে যারা আসছেন তারা করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট বহন করে আনছেন। সেটা সারাদেশে সামাজিক সংক্রমণ ছড়াচ্ছে। যশোর, সাতক্ষীরা, নওগাঁ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও রাজশাহী জেলায় ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বেশি।
সীমান্তবর্তী এলাকাগুলো কঠোর লকডাউনে না রাখতে পারলে সারাদেশে ব্যাপকহারে করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে পারে এমন আশঙ্কা করে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলেন, সীমান্তবর্তী ১৭টি জেলায় করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। এরমধ্যে ৮টি জেলায় সংক্রমণ বাড়ছে অধিক মাত্রায়, যা উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। জেলাগুলো হলো যশোর, সাতক্ষীরা, চুয়াডাঙা, ঝিনাইদহ, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ ও সিলেট।
এছাড়াও খুলনা, বাগেরহাট, ফেনী, লক্ষীপুর, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, রংপুরসহ কয়েকটি জেলায় সংক্রমণ বেশি। ভারতে সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী এবং সীমান্ত বন্ধ কার্যকর থাকলেও দেশের অন্যান্য জেলার মতো সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতেও ঢিলেঢালাভাবে লকডাউন চলছে।
এভাবে চললে সামনে ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হবে। সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে কঠোর লকডাউন দিতে হবে। ভারতীয় সীমান্তবর্তী জেলার মানুষদের ঘর থেকে বের হতে দেয়া যাবে না-এমন লকডাউন প্রয়োজন। একই সঙ্গে অবৈধপথে ভারত থেকে মানুষ আসা বন্ধ করতে হবে। এগুলো করতে না পারলে সংক্রমণ সারাদেশে বেড়ে যাবে, তখন স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষে পরিস্থিতি সামাল দেয়া সম্ভব হবে না।
এদিকে মহামারি করোনাভাইরাসের ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়লে পরিস্থিতি ভয়াবহ হবে বলে আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা। ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট চারদিকে ৩০০ গুণ সংক্রমণ ছড়ানোর ক্ষমতা রাখে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র ও লাইন ডিরেক্টর (অসংক্রামক ব্যাধি নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিন।
এজন্য দেশের জনগণকে সার্বক্ষণিক মাস্ক পরিধানসহ প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, ভারতে অসম্ভব রকমের করোনার সংক্রমণ ঘটছে। প্রতিবেশী দেশটিতে যে দুটি ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া গেছে- ডাবল বা ট্রিপল মিউটেশন ভাইরাস, তা সারা বিশ্বে বিস্ময় হিসেবে দেখা দিয়েছে। এ ডাবল কিংবা ট্রিপল মিউটেশন ভাইরাস যেন কোনোভাবেই দেশে আসতে না পারে, সেজন্য সবাইকে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
এমতাবস্থায় দুই দেশের সীমান্ত বন্ধ (সিলগালা) করে দেয়ার পরামর্শ দেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। বলা হচ্ছে, লকডাউন দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়া গেলেও অতিসংক্রামক ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট দেশে প্রবেশ করলে তখন পরিস্থিতি কোনোভাবেই সামাল দেয়া যাবে না।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের কর্মকর্তারা জানান, করোনা সংক্রমণের হার বেড়ে যাওয়ায় চলতি জুন মাস গত মাসের মতো অস্বস্তিকর যাবে। আর এর অন্যতম কারণ সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে সংক্রমণের হার। খুলনা, রাজশাহী, যশোর, চাঁপাইনবাবগঞ্জে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে গেছে। কেন্দ্র থেকে একটি মেডিক্যাল টিম চাঁপাইনবাবগঞ্জে অবস্থান করে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জে ইতোমধ্যে বলা হয়েছে, জরুরি রোগী ছাড়া যেন কাউকে ভর্তি নেয়া না হয়। খুলনা হাসপাতালে রোগী ভর্তি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। রাজশাহী হাসপাতালে রোগীর চাপ প্রচন্ড। এরপরও সীমান্তবর্তী এলাকায় সংক্রমণ বাড়লেও সীমান্ত দিয়ে অবৈধপথে প্রতিদিনই আসছে বিপুলসংখ্যক মানুষ। তাদের অনেকেই আটক হন বিজিবির হাতে। দেশের ৮টি বিভাগের অন্যান্য জেলার তুলনায় সীমান্তবর্তী খুলনা, রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের বেশকিছু জেলায় করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
জানতে চাইলে সরকারের রোগতত্ত্ব রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, ভারতে যেভাবে সংক্রমণ বাড়ছে, সীমান্ত বন্ধ থাকলেও নানা পন্থায় তাতে বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়া অসম্ভব নয়। প্রতিদিন প্রচুর মানুষ ভারত থেকে স্বাভাবিকভাবেই সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে আসছে। এখন সীমান্ত সিলগালা করে দেয়া উচিত।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগনিয়ন্ত্রণ বিভাগের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. বে-নজীর আহমেদ বলেন, ভারতের এ নতুন করোনা বাংলাদেশের জন্য বড় ঝুঁকিপূর্ণ। ভারতে যে অসংখ্য সংক্রমণ হচ্ছে- সেখান থেকে এ সংক্রমণ আমাদের দেশে আসছে। যেহেতু ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের যোগাযোগ অনেক বেশি। লাখ লাখ মানুষ যাচ্ছে ভারতে, আবার ফিরে আসছে। এটা হচ্ছে বড় ঝুঁকি। এটা ঠেকাতে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে বাংলাদেশকে। প্রয়োজনে সীমান্ত সিলগালা করে দিতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।