Inqilab Logo

শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

গঙ্গার তীরে শত শত নতুন কবর

করোনায় ভারতে লাখ লাখ মানুষের মৃত্যু

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১০ জুন, ২০২১, ১২:০৩ এএম

দাহ করার জন্য শ্মশানে জায়গা হয়নি বলে মানুষজন মৃত স্বজনদের গঙ্গার তীরে এনে মাটি চাপা দিয়ে চলে গেছেন। করোনা মহামারিতে টালমাটাল ভারতে এসব ঘটনা ঘটেছে প্রধানত এপ্রিল মাসে। সেখানে কোভিডের উপসর্গ নিয়ে মারা গেলেও মৃত্যুর আগে শত শত রোগীর কোনো চিকিৎসা তো দূরের কথা পরীক্ষা পর্যন্ত হয়নি। ঘরের ভেতরে বসেই তাদের মৃত্যু হয়েছে। ফলে এসব মৃত্যু সরকারি তালিকাতেও জায়গা পায়নি।

ভারতে বিশেষজ্ঞরা এখন নিশ্চিতভাবেই বলছেন যে, সরকার কোভিডে মৃত্যুর যে হিসেব দিচ্ছে তার চেয়ে অনেক বেশি মানুষ ভারতে - বিশেষ করে দেশের গ্রামাঞ্চলে - মারা গেছে। গ্রামের বাস্তব পরিস্থিতি কি, মৃত্যুর সংখ্যা চাপ দেয়ার অভিযোগ সত্যি কিনা - সরেজমিনে তা অনুসন্ধানের জন্য দিল্লিতে বিবিসির বিকাশ পাণ্ডে এবং অনশুল বর্মা গিয়েছিলেন উত্তর প্রদেশ রাজ্যের কয়েকটি গ্রামে। বিসির সংবাদদাতারা তাদের অনুসন্ধানের জন্য প্রথম যে গ্রামটিতে যান তার নাম কৌশল্যা। দিল্লি থেকে ১০০ কিলোমিটারের মত দূরের এই গ্রাম থেকে প্রচুর মৃত্যুর খবর জানা গেছে। সংবাদদাতারা গ্রামের অনেক সাধারণ মানুষের সাথে কথা বলেন। সেই সাথে কথা বলেন গ্রাম পঞ্চায়েতের নেতাদের সাথেও। কৌশল্যা গ্রামের সমাজকর্মী মুস্তাফিজ খান কাগজে হাতে লেখা একটি লিস্ট দেখিয়ে বলেন, সরকার যা বলছে তাদের গ্রামে মৃত্যুর সংখ্যা তার কয়েকগুণ বেশি। গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য আবরার বললেন, কোভিডের উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুর শিকার এসব মানুষের অধিকাংশরই কোনো পরীক্ষা হয়নি। ওষুধপত্র বা চিকিৎসাও তারা পাননি। গ্রামের বাসিন্দা শফিক আহমেদ - যিনি পেশায় একজন আইনজীবী - জানালেন, ঐ গ্রামের অধিকাংশ মানুষ হয় দিনমজুর না হয় কৃষক বা কৃষি-শ্রমিক। ফলে, তিনি বলেন, খুব কম লোকেই শহরে গিয়ে কোনো বেসরকারি ল্যাবে কোভিডের পরীক্ষা করিয়েছেন। গ্রামের একটি সড়কে বাড়ি বাড়ি গিয়ে কথা বলেন বিবিসির সংবাদদাতারা। জানতে পারেন, প্রতি দুটো বাড়ির অন্তত একটিতে এক বা একাধিক মানুষ কোভিডের উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন।

কৌশল্যার পরে কানৌজা নামে উত্তরপ্রদেশের আরেকটি গ্রামে গিয়েছিলেন বিবিসির সংবাদদাতারা। একই কাহিনী সেখানেও। বহু মানুষ কোভিডের উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন। কিন্তু তাদের পরীক্ষা হয়নি, চিকিৎসা হয়নি। কানৌজা গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য উমেশ শর্মা একটি খাতা বের করলেন যাতে তার গ্রামের কোভিডে মৃতদের নাম লেখা রয়েছে। বললেন, ‘এদের মধ্যে এক বা বড় জোর দু’জনের নাম সরকারি হিসাবের মধ্যে গেছে, বাকি ৩০-৫৫ জনের কোনো হিসাব নেই।’ দুই গ্রামেরই লোকজন বললেন, এপ্রিল এবং মে মাসে কোভিড সংক্রমণ যখন চূড়ায় ছিল, গ্রামের সরকারি স্বাস্থ্য ক্লিনিক অচল ছিল। প্রতিটি গ্রামে একটি প্রাথমিক চিকিৎসা কেন্দ্র রয়েছে। সেখানে একজন ডাক্তার থাকার কথা, নার্স থাকার কথা। কিন্তু কৌশল্যা গ্রামের প্রাথমিক চিকিৎসা কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায় সেখানে নির্মাণ কাজ চলছে। কোনো ডাক্তার বা নার্স নেই। শুধু ক›জন শ্রমিক বসে রয়েছেন। গ্রামবাসীরা বলছেন, সরকারি এই চিকিৎসা কেন্দ্রগুলোতে শুধু যদি কিছু অক্সিজেনের ব্যবস্থা থাকতো তাহলেও অনেকগুলো প্রাণ হয়তো বাঁচতো।

এলাহাবাদ প্রসঙ্গে কর্মকর্তারা বলছেন, অনেক হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে মৃতদেহ না পুড়িয়ে নদীর পাশে মাটি চাপা দেয়ার চল রয়েছে। এটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। তবে স্থানীয় অনেক মানুষ এবং সাংবাদিকরা বিবিসিকে বলেন, এবছর এই মাটি চাপা দেয়ার সংখ্যা অস্বাভাবিক মাত্রায় বেশি। ‘এই একটি জায়গাতেই এ বছর ২৪০০ থেকে ৩০০০ লোককে মাটি চাপা দেয়া হয়েছে।’ বিবিসিকে বলেন স্থানীয় শ্রীংভেরপুর শ্মশানের পুরোহিত লবকুশ মিশ্র। এলাহাবাদের কাছে মেনডারা গ্রামের পঞ্চায়েত প্রধান বিবিসিকে জানান, তার গ্রামে ডজন ডজন মানুষ কোভিডের লক্ষণ নিয়ে বিনা চিকিৎসায় মারা গেছে। মহেশ্বর কুমার সোনি বলেন, মৃত এসব রোগীর কখনো কোভিডের পরীক্ষাও হয়নি। ‘আমাদের গ্রামে এই হারে মৃত্যু আমরা জীবনেও দেখিনি। ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।’

মেনডারা গ্রামের পঞ্চায়েত প্রধান বলেন, সরকারের উচিৎ তদন্ত করে কোভিডে মৃতদের পরিবারগুলোকে ক্ষতিপূরণ দেয়ার ব্যবস্থা করা। গ্রামের মানুষজন বলছেন, বহু মানুষ যে কোভিডের পরীক্ষা বা চিকিৎসার অভাবে মারা গেছেন সরকারের উচিৎ তা অন্তত স্বীকার করা। তাতে অন্তত সেসব মৃত মানুষদের কিছুটা মর্যাদা দেয়া হবে। সূত্র : বিবিসি বাংলা।



 

Show all comments
  • Mohammad Imran Ali ১০ জুন, ২০২১, ১:৪৪ এএম says : 0
    ভারত নামক সাম্প্রদায়িক দেশটির মতো আমাদের দেশের পরিনতি যেন একই না ঘটে সেজন্যে সবার সচেতন হওয়া জরুরি।
    Total Reply(0) Reply
  • Sree Arpon Ghosh ১০ জুন, ২০২১, ১:৪৪ এএম says : 0
    কমবেশি পৃথিবীর সব দেশেই এই একই সরকারি অক্ষমতা বিরাজমান... আমাদের বাংলাদেশেও হয়তো প্রকৃত নির্নয় হচ্ছে না বা করা সম্ভব না...
    Total Reply(0) Reply
  • সুমিত্রা চ্যাটার্জী ১০ জুন, ২০২১, ১:৪৪ এএম says : 3
    চিনেও মারা গেছিল। সেটা চীন সরকার গোপন করেছিল। এটা একটা রাষ্ট্রীয় পলিসি। সরকারের ব্যর্থতা ঢাকতে সরকার এমনটা করে।
    Total Reply(1) Reply
    • Md. Tanvir Hossain ১০ জুন, ২০২১, ৮:২৭ এএম says : 0
      You should not validate the failure of the BJP by setting the example of China. PRC is a Communist and single-party totalitarian country. Does it mean India is the same? The ignorance and unwillingness of the policymakers or arm-chair politicians are responsible for killing thousands of innocent people in India
  • আমি চির 'বিদ্রোহী বীর' ১০ জুন, ২০২১, ১:৪৫ এএম says : 0
    আল্লাহর গজব যখন কোন জাতিকে পাকড়াও করে তখন তাদের কোন অস্তিত্ব রাখে না!!
    Total Reply(0) Reply
  • Mamun Chowdhury ১০ জুন, ২০২১, ১:৪৫ এএম says : 0
    মৃত্যুর সংখ্যা অনেক বেশি যা প্রকাশ করলে সরকারের সমালোচনা হবে তাই মোদি সরকার তথ্য গোপন করাকে নিরাপদ ভেবেছে।
    Total Reply(0) Reply
  • MD Shahin ১০ জুন, ২০২১, ১:৪৫ এএম says : 0
    ভারতের আরো কয়েকটি ভাগ হওয়া প্রয়জন। তাহলে হয়তো ভারতের দূর্গম এলাকার গরিব -দুঃখিদের নতুন রাষ্ট্রের সরকারগুলোর চোখে ধরা পেতে পারে।
    Total Reply(0) Reply
  • Ghum Kutum ১০ জুন, ২০২১, ১:৪৬ এএম says : 0
    ভারতের পাশের রাষ্ট্রো গুলো ভারতের বডার গুলা সিল করে নাকাবন্দি করে রাখা অতি প্রয়োজন হয়ে পরেছে। গোমুত্রের উপর অন্ধ বিশ্বাসের পার্শ্ব প্রতিকৃয়া এগুলা। যার প্রভাবে আমরাও আক্রান্ত।।।
    Total Reply(0) Reply
  • Md. Shakhwat Hossain Rasel ১০ জুন, ২০২১, ১:৪৬ এএম says : 0
    আসলে যাদের আপনজন হারিয়েছে শুধু তারাই জানে তাদের জীবন থেকে কি হারিয়ে গেছে। আল্লাহ্ আমাদের এমন কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে না ফেলেন। আল্লাহ পৃথিবীর সবাইকে হেফাজত করুক সেই দোয়া করি।
    Total Reply(0) Reply
  • ash ১০ জুন, ২০২১, ৫:২১ এএম says : 0
    MODIIIIIIIIIIIIIIIIIIII O MODDIIIIIIIIIII ??? JAO ARO RAFAL KINOOOOO
    Total Reply(0) Reply
  • MD.BORATUZZAMAN ১০ জুন, ২০২১, ১০:০৯ এএম says : 0
    Mudhi Is a Black Sheep Priminister Historical of India.................
    Total Reply(0) Reply
  • Monjur Rashed ১০ জুন, ২০২১, ১২:৪১ পিএম says : 0
    Incredible India ( suffering a lot despite having fourth largest economy in the world) !!!!!
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ