Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ইয়াস’র ক্ষতের উপর আসছে ‘গুলাব

বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপ-নিম্নচাপ-ঘূর্ণিঝড়ের ঘনঘটা : ফুলছে প্রধান নদ-নদী

চট্টগ্রাম ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ১০ জুন, ২০২১, ১২:০০ এএম

ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাস ‘ইয়াস’র ক্ষত এবং প্রভাব কাটেনি এখনো। এবার আসছে নিম্নচাপ-ঘূর্ণিঝড় ‘গুলাব’ বাংলা অর্থ ‘গোলাপ’। পরবর্তী ঘূর্ণিঝড়ের নামটি পাকিস্তানের দেওয়া। যার অর্থ ‘গোলাপ ফুল’। ভারতের আবহাওয়া বিভাগ, আন্তর্জাতিক আবহাওয়া স্যাটেলাইট সংস্থাগুলোর পূর্বাভাসে জানা গেছে, আগামী শনিবার কিংবা রোববার নাগাদ বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপ সৃষ্টি হয়ে রূপান্তরিত হতে পারে নিম্নচাপে। এটি পরবর্তীতে ঘূর্ণিঝড়েও রূপ নিতে পারে। তখন নাম ঘোষিত হবে ‘গুলাব’ বা ‘গোলাপ’। এর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগরে মেঘমালা আরও ঘনীভূত ও বিস্তার লাভ করবে। বাংলাদেশ, ভারত ও আশপাশের অঞ্চলে বর্তমান দক্ষিণ-পশ্চিম বর্ষার মৌসুমী বায়ু ক্রমেই সক্রিয় এবং আরও জোরদার হয়ে উঠতে পারে। ইতিমধ্যে বাংলাদেশ ও উত্তর-পূর্ব ভারতসহ বিস্তীর্ণ এলাকায় বর্ষারোহী মৌসুমী বায়ু প্রবেশ করেছে। তা সক্রিয় ও বিস্তৃত হচ্ছে। এর ফলে বৃষ্টি, বজ্রপাতসহ বৃষ্টিপাতের মাত্রা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। মৌসুমী বায়ুর আগাম প্রবেশ ও সক্রিয়তায় বৃষ্টিপাত বৃদ্ধির সাথে সাথে দেশের প্রধান নদ-নদীগুলো ফুলে-ফেঁপে উঠছে। তবে এখনও বিপদসীমা অতিক্রম করেনি।
গত ২৬ মে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস ভারতের উড়িষ্যা-পশ্চিমবঙ্গে মূলত আঘাত হানে। তবে ওইদিন ভরা পূর্ণিমা ও চন্দ্রগ্রহণের সক্রিয় প্রভাব থাকায় দেশের টেকনাফ-সেন্টমার্টিন থেকে শুরু করে দক্ষিণ-পশ্চিমের বাগেরহাট-সাতক্ষীরা পর্যন্ত বিস্তীর্ণ চর, সমুদ্র উপকূল ও দ্বীপাঞ্চলে অস্বাভাবিক জোয়ার-জলোচ্ছ্বাস ছোবল হানে। এতে জনবসতি, ফল-ফসল, ক্ষেত-খামার, বেড়িবাঁধ, রাস্তাঘাট, বন্যপ্রাণীসহ ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাস ইয়াস’র ক্ষত না কাটতেই আরেক ঘূর্ণিঝড় ‘গোলাপ’ (গুলাব) এবার চোখ রাঙাচ্ছে। ইয়াস’র অব্যাহত প্রভাবে গত মঙ্গলবার পর্যন্ত ভারতের উড়িষ্যা উপকূলে দমকা থেকে ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টিপাত হয়। তাছাড়া পশ্চিমবঙ্গের অনেক জেলায় ব্যাপক বজ্রপাত এবং বৃষ্টি হয়েছে। এতে হতাহত হয় অনেকে। বিশ^ আবহাওয়া সংস্থার (ডব্লিউএমও) পক্ষ থেকে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, ইরান, মালদ্বীপ, সউদি আরব, ওমান, মায়ানমার, থাইল্যান্ড, আরব আমিরাত এবং ইয়েমেন মিলিয়ে এসকাপ প্যানেলভুক্ত দেশগুলোর আবহাওয়া বিভাগ সমন্বিতভাবে ঘূর্ণিঝড়ের নাম আগাম নির্ধারণ করে থাকে।
পর্যায়ক্রমে একেকটি ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ ও ঘোষণা করা হয়। ইয়াস’র আগে ভারতের পশ্চিম উপকূলে আঘাত হানে আরেক ঘূর্ণিঝড় ‘তাওকতে’। সম্ভাব্য নিম্নচাপ, ঘূর্ণিঝড় (গোলাপ) আকারে ঘনীভূত হবে কিনা এবং বাংলাদেশ ও ভারতের উপকূলে আঘাত হানবে কিনা তা আবহাওয়াবিদরা এখনই সুনির্দিষ্টভাবে পূর্বাভাস দেননি। মৌসুমী বায়ুর সক্রিয় প্রভাব থাকায় এটি প্রবল বৃষ্টি ঝরিয়ে দুর্বল হয়েও পড়তে পারে। তবে যথাসময়েই গোলাপের শক্তির প্রমাণ মিলবে।
বৃষ্টি-বজ্রবৃষ্টি অব্যাহত
দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ু (বর্ষা) আগমন ও সক্রিয় হওয়ার সাথে সাথে দেশের অনেক জায়গায় বৃষ্টি-বজ্রসহ বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে। গতকাল বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয় তেঁতুলিয়ায় ১১৬ মিলিমিটার। এ সময় ঢাকায় ২৩, নেত্রকোনায় ৫৬, টাঙ্গাইলে ৪০, বগুড়ায় ৫৫, হাতিয়ায় ১১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল রাজশাহীতে ৩৫.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে জানা গেছে, মৌসুমী বায়ু দেশের অধিকাংশ অঞ্চলে প্রবেশ ও ক্রমে বিস্তার লাভ করছে। দেশের পূর্বাঞ্চলে সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারি অবস্থায় রয়েছে। আজ দেশের অনেক জায়গায় হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি-বজ্রবৃষ্টি হতে পারে। কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে।
নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি
পাউবোর বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র গতকাল জানায়, দেশের প্রধান নদ-নদীসমূহের ১০১টি পানির সমতল পর্যবেক্ষণ স্টেশনের মধ্যে ৫৬টিতে পানি বৃদ্ধি পায়। ৪০টিতে হ্রাস ও ৪টিতে অপরিবর্তিত থাকে। পাউবো জানায়, ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা নদীর পানির সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা আগামী ৪৮ ঘণ্টা অব্যাহত থাকতে পারে। গঙ্গা নদীর পানির সমতল হ্রাস পাচ্ছে ও তা আগামী ৪৮ ঘণ্টা অব্যাহত থাকতে পারে। অপরদিকে পদ্মা নদীর পানির সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে ও তা আগামী ২৪ ঘণ্টায় অব্যাহত থাকবে। এ সময়ে তিস্তা নদীর পানির সমতল স্থিতিশীল থাকতে পারে।
ভারতের আবহাওয়া বিভাগ জানায়, উত্তর-পূর্ব ভারতে প্রধান নদ-নদীসমূহের উজানে বিক্ষিপ্ত মাঝারি থেকে ভারী বর্ষণ হচ্ছে। কোথাও কোথাও হচ্ছে অতিবৃষ্টি। গতকাল সকাল ৯টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় উজানে ভারতের গ্যাংটকে ১১৪ মিলিমিটার, গোয়ালপাড়ায় ৮১ মি.মি. এবং তেজপুর, দার্জিলিং, জলপাইগুড়িতে ভারী বর্ষণ হয়। অন্যদিকে একই সময়ে দেশের উত্তর জনপদের পঞ্চগড়ে ১০৫ মি.মি. এবং বগুড়ায় ৮৫ মি.মি. বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে পাউবো।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ঘূর্ণিঝড়

২৬ অক্টোবর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ