Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ভূমিকম্পের গর্জন থামছে না সিলেটে, কামরান ভবন পরিত্যক্ত ঘোষণা

সিলেট ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ৮ জুন, ২০২১, ৬:২২ পিএম

ভূমিকম্পের গর্জন বন্ধ হচ্ছে না সিলেটে। বিশেষজ্ঞদের আশংকা ও সর্তকতার মধ্যে পুনরায় দুই দফা ভূমিকম্পে কেঁপে উঠেছে সিলেট। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ৩ দশমিক ৮ দেখা গেছে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়া অফিস ঢাকার জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ মমিনুল ইসলাম। এমনকি ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ঢাকা থেকে ১৮৮ কিলোমিটার দুরে সিলেটের দক্ষিণ সুরমা উপজেলার জালালপুর।

গত (সোমবার) সন্ধ্যায় দুই দফা ভূমিকম্পে রাজা জিসি হাইস্কুলের একটি ভবনে ফাটল দেখা দিয়েছেন। ’ফাটলের খবর পেয়ে গতকাল (মঙ্গলবার) দুপুরে জেলা শিক্ষা ভবনের নির্বাহী প্রকৌশলী নজরুল হাকিমের নেতৃত্বে একটি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। পরিদর্শন শেষে ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করেছে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর, সিলেট। এদিকে আজ (বুধবার) সিলেটের সকল শ্রেণীর মানুষদের ভূমিকম্পের ব্যাপারে কথা বলবেন সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। এছাড়া নিষেধাজ্ঞাজারি থাকার পরও ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে দোকান খোলা রাখার অপরাধে অভিযান পরিচালনা অব্যাহত রেখেছে সিসিক।

সূত্র জানায়, ভূমিকম্পে ফাটল দেখা দেয়া প্রাচীন বিদ্যাপিঠ রাজা জি সি হাইস্কুলের ‘কামরান ভবন’টি প্রায় ২৮ বছর আগে তৈরী করা হয়েছিলো। সেই সময় ভবনটি ভূমিকম্প সহনীয় মাত্রায় তৈরী করা হয়নি। পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী নজরুল হাকিমের বলেন, ‘মূল ভবনের কাঠামো বেশ পুরনো। এই ভবনটি নির্মাণে ভূমিকম্প সহনীয় করা হয়নি। তবে এখন ভবন নির্মাণে ভূমিকম্প সহনীয় ব্যবস্থা মেনে গড়ে তোলা হচ্ছে। কিন্তু ফাটলকৃত ভবনে সহনীয় ব্যবস্থা রাখায় হয়নি বলে ভূমিকম্পে ক্ষতি সাধিত হয়েছে। তাই এটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে।’ এছাড়া শ্রেণীকক্ষের চাহিদা মিটাতে ৬ তলা নতুন একটি ভবন নির্মাণ করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বর্তমানে রাজা জিসি স্কুলের জন্য একতলা একটি ভবনের বরাদ্দ আছে বাজেট। এ ভবনটির বরাদ্দ বাড়িয়ে উন্নীত করা হবে ৬ তলায়। একই সাথে শ্রেণীকক্ষের চাহিদা দ্রুত মিটানো হবে তাদের।’

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বদর উদ্দিন আহমদ কামরান ভবনটির প্রত্যেকটি রুমে ফাটল দেখা দিয়েছে। ভবনের একটি অংশ দেবে গেছে মর্মেও ধারণা করা হচ্ছে। বিজ্ঞানাগারের দেয়ালে বড় ধরনের ফাটল সৃষ্টির ফলে পলস্তরা খসে পড়েছে।

রাজা জিসি হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক আবদুল মুমিত জানান, ১৮৮৬ সালে রাজা জিসি হাই স্কুল স্থাপিত হয়। এ বিদ্যালয়ে ২০০৬ সালে একটি ভবন নির্মিত হয়। এ সময় ওই ভবনের নিচ তলা পাকাকরণ হয়। আর ২০১৭ সালের দিকে দ্বিতীয় তলার কাজ সম্পন্ন হয়। ২০১৯ সালে ভবনটির ২য় তলা হস্তান্তর করে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর। নগরীতে গতকাল সন্ধ্যায় ৩.৮ মাত্রার ভূমিকম্পে ফাটল দেখা দেয় এই ভবনে। এমনকি ওই ভবনের প্রত্যেকটি রুমে ফাটল দৃশ্যমান। ফাটল থেকে বাদ পড়েনি রুমের ভিমেও। তিনি আরও বলেন, বিজ্ঞানাগারসহ ঐ ভবনটিতে ১০টি শ্রেণীকক্ষ রয়েছে। এই ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হলে স্কুল খুললে শিক্ষার্থীদের মাঠে বসিয়ে ক্লাস করাতে হবে। তিনি সরকারের কাছে বিকল্প ব্যবস্থা করার জন্যও আবেদন জানান। অপরদিকে ভূমিকম্পে রাজা জিসি স্কুলে ফাটল ধরার খবর পেয়ে তাৎক্ষনিক পরিদর্শন করেন সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। এসময় ভূমিকম্পের ঝুঁকিপূর্ণ সিলেটে আগামীর জন্য কি পদক্ষেপ নেওয়া হবে জানতে চাইলে সাংবাদিদেরকে তিনি বলেন, ‘আগামী বুধবার সিলেটের সকল শ্রেণীর মানুষদের সাথে কথা বলবো আমি। ইতোমধ্যে আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এবং শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের এ বিষয়ে কথা বলেছি। তাদের সমন্বয়ে একটি টিম গঠন করে নগরীর সকল জায়গায় জরিপ করা হবে। এর পর চিহ্নিত করা হবে সকল ঝুঁকিপূর্ণ ভবন। কারণ বিশেষজ্ঞরা আগেই সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছিলেন আমাদের। তারা ১০ দিন সতর্ক থাকার পরামর্শ দিলেও গতকাল ৯ দিনের দিনই ফের দুইবার ভূমিকম্পে কাঁপলো সিলেট।’

অপরদিকে, ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে দোকান খোলা দুই ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা ও ৩শ টাকা করে জরিমানা করেছে সিসিকের ভ্রাম্যমান আদালত। গতকাল দুপুরে সিসিকের এ অভিযানে অংশ নেন সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ সহ মহানগর পুলিশের একটি দল।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সিলেট


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ