Inqilab Logo

সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

‘অনুপ্রবেশ’ বিতর্ক ফের সামনে আনা হচ্ছে

ব্যাঙ্গালোরে বাংলাদেশি তরুণী ধর্ষণ

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৭ জুন, ২০২১, ১২:০৮ এএম

দক্ষিণ ভারতের ব্যাঙ্গালোরে একজন বাংলাদেশি নারীর গণধর্ষণের ঘটনায় ওই শহরের পুলিশ এ পর্যন্ত মোট ১০ অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে। গত ২ জুনও শাহবাজ নামে একজন অন্যতম প্রধান অভিযুক্তকে বন্দুকযুদ্ধের পর আটক করা হয়েছে বলে পুলিশ জানাচ্ছে। ইতোমধ্যে পাশের রাজ্য কেরালা থেকে এই ঘটনার ভিক্টিম ওই নারীকেও শহরে নিয়ে আসা হয়েছে।

এই ঘটনায় অভিযুক্তরা ও ভিক্টিম, সকলকেই ‘অবৈধ বাংলাদেশি’ বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। তাই এই ঘটনাটি নিয়ে ব্যাঙ্গালোরেও তীব্র প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যাচ্ছে। অ্যাক্টিভিস্ট ও মানবাধিকার আইনজীবীরা ভিক্টিমের আইনি অধিকারের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছেন। আবার অনেকে মনে করছেন ব্যাঙ্গালোরকে ‘অনুপ্রবেশ-মুক্ত করার’ এটা একটা সুযোগ।

ব্যাঙ্গালোরের পুলিশ কমিশনার কমল পন্থ-কে টুইট করে নাভিনের মত অনেকেই বলছেন, ব্যাঙ্গালোর থেকে সব অবৈধ বাংলাদেশিকে এখনই তাড়ানো দরকার। পারভিন সুতারের মত কেউ কেউ আবার প্রশ্ন তুলছেন পুলিশের নাকের ডগায় এরা এতদিন ধরে শহরে ছিল কীভাবে? ব্যাঙ্গালোর পুলিশ ও বাহিনীর কর্মকর্তারাও নিয়মিত সাংবাদিক বৈঠক ও টুইট করে এই তদন্তের অগ্রগতি জানাচ্ছেন।

বস্তুত ব্যাঙ্গালোর শহরে বাংলাদেশিদের কথিত অনুপ্রবেশের ইস্যু নিয়ে চর্চা নতুন কিছু নয়। কিন্তু এক বাংলাদেশি তরুণীর ধর্ষণের মর্মান্তিক ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর সপ্তাহখানেক আগে পুলিশ যে অভিযান শুরু করেছে, তা গোটা বিষয়টিতে একটি নতুন মাত্রা যোগ করেছে। অভিযুক্তদের মধ্যে অন্তত তিনজন আলাদা আলাদা ঘটনায় পুলিশি অভিযানের সময় পালাতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন বলেও দাবি করা হয়েছে।

কর্নাটকের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বাসবরাজ বোম্মাইও বলেছেন, প্রথমে তারা ভিডিওটির ‘লোকেশন’ নিয়ে নিশ্চিত ছিলেন না। কিন্তু এখন খুব দ্রুত গতিতে ‘কোনও হস্তক্ষেপ ছাড়াই’ তদন্ত এগিয়ে চলছে। ব্যাঙ্গালোরের একটি এনজিওর কর্মী ও অ্যাক্টিভিস্ট আর কলিমুল্লাহ বলেন, সেখানে অবৈধ বাংলাদেশিরা কিন্তু এতকাল পুলিশকে মাসোহারা দিয়েই থেকেছেন।

তিনি জানাচ্ছেন, ‘আসলে এই শহরে বাংলাদেশিদের মধ্যেও দুটো শ্রেণি আছে। একদল নারী পাচার চক্রের সঙ্গে জড়িত। অভিজাত এলাকায় বড় বড় অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া করে তারা দেহব্যবসা চালায়। বাংলাদেশিদের এরকম প্রায় গোটা তিরিশেক গ্যাং আছে। তারা আয়েশি জীবন কাটায়। শহরের বহু ছাত্র, চাকরিজীবী তাদের গ্রাহক। আর এক দল বস্তিবাসী, পৌরসভার ঠিকাদারের হয়ে তারা ময়লা কুড়িয়ে কোনওক্রমে বাঁচে। কিন্তু এদের ছাড়া ব্যাঙ্গালোরের একদিনও চলবে না। পুলিশ সবই জানে, দুই ধরনের লোকই তাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব রেখে চলে। সাপ্তাহিক হফতা বা রোলকলের পয়সাও নিয়মিত পুলিশের কাছে পৌঁছে যায়।’

সুপরিচিত মানবাধিকার আইনজীবী মৈত্রেয়ী কৃষ্ণান বলেন, এই ঘটনায় ব্যাঙ্গালোর পুলিশ কিন্তু প্রথম থেকেই ‘জেনোফোবিক’ বা ভিনদেশিদের প্রতি বিদ্বেষমূলক মনোভাবের পরিচয় দিয়েছে। সবার আগে এটা একটা ধর্ষণের ঘটনা। সেটায় গুরুত্ব না-দিয়ে পুলিশ প্রথম থেকেই যেভাবে বলতে শুরু করেছে এটা অবৈধ বাংলাদেশিদের কাজ, সেটা খুব দুর্ভাগ্যজনক ও জেনোফোবিক।

তিনি আরো বলেন, ভিক্টিমের সুরক্ষা নিশ্চিত করা, তাকে আশ্রয় দেওয়া সেটা আগে জরুরি ছিল। সুপ্রিম কোর্টের রায় অনুসারে তিনি কিন্তু ক্ষতিপূরণ পাওয়ারও অধিকারী। তিনি ভারতীয় না বাংলাদেশি সেটা এখানে বিচার্য নয়। তার নাগরিকত্ব কোথাকার তাতেও কিছু যায় আসে না।

বছর দেড়েক আগে পশ্চিমবঙ্গের হাওড়া রেল স্টেশনে রেলকর্মীদের হাতে একজন বাংলাদেশি নারীর গণধর্ষণের ঘটনায় আইনজীবী চন্দ্রিমা দাস তার হয়ে যে মামলা করেছিলেন, সুপ্রিম কোর্ট তাতে ভিক্টিমকে দশ লাখ রুপি ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দেন। মৈত্রেয়ী কৃষ্ণান এখানে সেই মামলারও দৃষ্টান্ত টানছেন। তিনি বলছেন ভারতে তদন্ত শেষ হওয়া বা সাজাভোগের পরই অভিযুক্তদের বাংলাদেশের হাতে তুলে দেওয়ার প্রশ্ন উঠবে।

ব্যাঙ্গালোরে অরবিন্দ লিম্বাভালি বা তেজস্বী সুরিয়ার মতো বিজেপি নেতারা অতীতে বহুবার অবৈধ বাংলাদেশি তাড়ানোর ডাক দিয়েছেন। অরবিন্দ লিম্বাভালি এখন কর্নাটক সরকারের ক্যাবিনেট মন্ত্রী। এর আগে তিনি নিজে দাঁড়িয়ে থেকে একাধিকবার অবৈধ বাংলাদেশিদের বস্তি উচ্ছেদে বা ঘরবাড়ি ভাঙায় নেতৃত্ব দিয়েছেন।

দক্ষিণ ব্যাঙ্গালোরের এমপি তেজস্বী সুরিয়া পার্লামেন্টে নিজের বক্তৃতায় দাবি করেছেন, অবৈধ বাংলাদেশিরা ‘জঙ্গি কার্যকলাপে যুক্ত হয়ে’ ব্যাঙ্গালোরের নিরাপত্তার জন্য বড় বিপদ হয়ে দেখা দিয়েছেন। কিন্তু সস্তা রাজনীতি ছাড়া তাতে বিশেষ কিছুই হয়নি, মনে করেন ব্যাঙ্গালোরের বহু বছরের বাসিন্দা ও তথ্য-প্রযুক্তি খাতের বিশেষজ্ঞ সুরঞ্জন সেন।

তিনি বলেন, অবৈধ বাংলাদেশিরা ব্যাঙ্গালোরে তেমন কোনও বড় রাজনৈতিক ইস্যু নয়। তবে বিজেপি নেতারা এটা ক্রমাগত বলে যান, ফলে শহরে কোনও চুরি-ছিনতাই হলে বাংলাদেশিরা শহরে ক্রাইম বাড়াচ্ছে এরকম খবর চলে আসে। আর তারা শহরে থাকলেও যেহেতু মোটামুটি একই বাংলা ভাষাতেই কথা বলেন, তাই বাইরের লোকজন অত বুঝতেও পারেন না এরা বাংলাদেশের মুসলিম না কি পশ্চিমবঙ্গ থেকে আসা মুসলিম।

তিনি বলেন, এক-দুই বছর আগে শহরে একটা বস্তি উচ্ছেদের পর জানা গেল ওটা পুরোটাই নাকি ছিল বাংলাদেশিদের একটা ‘চাউল’ (বস্তি), ওখানেই তারা থাকতেন। তারপর দেখা গেল জনমতও আবার বিভক্ত হয়ে গেল। একদল বলতে লাগলেন এত বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশি শহরে এলেন কী করে- প্রশাসন আগে তার জবাব দিক। অপর দল বললেন যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে তাদের দেশে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করা হোক। কিন্তু তারপর যথারীতি আবার সব থিতিয়েও গেল। ফলে কিছুদিন পর এরকম এক একটা ঘটনা ঘটে। তারপরই ব্যাঙ্গালোর সবাই আবার নড়েচেড়ে বসে।

গত এক সপ্তাহের ঘটনাক্রমে বোঝা যাচ্ছে, বাংলাদেশে ‘টিকটক হৃদয়’ বা ‘রাফি’ নামে পরিচিত অপরাধীদের হাতে পাচার হওয়া তরুণীর গণধর্ষণ আরও একবার ব্যাঙ্গালোরের সেই পুরনো বিতর্ককে সামনে নিয়ে এসেছে। সূত্র : বিবিসি বাংলা।



 

Show all comments
  • Ziaul Hasan ৬ জুন, ২০২১, ২:০৪ এএম says : 0
    আমরা তো এইটা বলতে পারি বাংলাদেশী অপরাধীদের অভয়আশ্রম হচ্ছে ভারত।।।
    Total Reply(0) Reply
  • Al Imran Ws ৬ জুন, ২০২১, ২:০৫ এএম says : 0
    মেয়েরা দালাল থেকে সাবধান না হলে তাদের এই অবস্থা বেশিরভাগ হয়।তাদের কে ভারত সহ অন্যান্য দেশে খারাপ কাজে বিক্রি করে দেয়া হয়।
    Total Reply(0) Reply
  • Ananto Ray ৬ জুন, ২০২১, ২:০৫ এএম says : 0
    বিদেশীরা আসে বড় বড় কলকারখানা বাজের্ট হাতে নিয়ে।আর কোটি কোটি টাকা ইনকাম করে।আর আমরা বিদেশ যাই পরের উপর ভরসা করে।আসো তোমাকে চাকরী দেয়া হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • Maruf Billa ৬ জুন, ২০২১, ২:০৬ এএম says : 0
    একটা কথা কিছুতেই মাথায় আসছে না, বাংলাদেশের এত্তো নাগরিক পাচার হচ্ছে, গোয়েন্দা বাহিনী, এত্তো বাহিনী থেকে কি লাভ, যদি কেউ কিছুই না জানে? তাহলে তাদের মাস গেলে মোটা অংকের টাকা দিয়ে কি লাভ
    Total Reply(0) Reply
  • Bhalo Chinta ৬ জুন, ২০২১, ২:০৬ এএম says : 0
    শুধু বর্ডার নয়, এতগুলো রাজ্য পার হয়ে কিভাবে বিনা বাঁধায় তারা বৈধ কাগজ বিহীন সেখানে গেলো? ভারতের কারণে বাংলাদেশের ক্রিমিনালরা সাহস পায়। তারা জানে ভারত হলো ক্রিমিনালদের অভয় অরণ্য।
    Total Reply(0) Reply
  • আসাদ জামান ৬ জুন, ২০২১, ২:০৬ এএম says : 0
    ঘটনাটি নিয়ে প্রথম যখন এতো মাখামাখি শুরু হয়েছিলো তখন আমার মনে হয়েছিলো এর মধ্যে অন্য কিছু নিশ্চয়ই আছে
    Total Reply(0) Reply
  • Afif Ahamed ৬ জুন, ২০২১, ২:০৭ এএম says : 0
    বাংলাদেশের সব চোর বাটপার অপরাধীদের অভয়াশ্রম ভারত! ওই culprit যদি কোলকাতায় ধরা পড়তো তাহলে অন্য কথা ছিলো.. কিন্তু এতো সুদূর Bengaluru!! এই সব অপরাধী চক্র কে কারা লালন পালন করে ভারতে? এদের এতবড় চক্র ধরা পড়লো টিকটক ভিডিওর মাধ্যমে তোমাদের গোয়েন্দা সংস্থা, পুলিশ, BSF আঙ্গুল চুসছিলো? আবার super power হওয়ার স্বপ্ন কত
    Total Reply(0) Reply
  • Md. Jahirul Islam ৬ জুন, ২০২১, ২:০৮ এএম says : 0
    ভারতের মত একটা দেশে মানুষ কেন স্থায়ী ভাবে বসবাস করার রিস্ক নিতে যায় বুঝিনা।কয়েকবার ঘুরতে গেছি।সুন্দর দেশ বাট নিম্ন-মধ্যবিত্ত, স্থানভেদে চরম দারিদ্র্য একটা দেশ।অল্প টাকার জন্য ব্রোকার রা যেভাবে পিছে পিছে ঘুরে,হোটেল,ট্যাক্সি, বাসের টিকেট ইত্যাদি ম্যানেজ করে দিবে বলে।আর কিছু জায়গা বেশ ভালো হলেও বেশিরভাগ মানুষের জীবনযাত্রার মান খুব খারাপ।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ধর্ষণ


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ