Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

লকডাউন শেষ হলেও মানতে হবে স্বাস্থ্যবিধি : ডা. শাহরিয়ার রোজেন

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৫ জুন, ২০২১, ৬:৪৩ পিএম

স্বাভাবিক জীবনযাত্রা থেকে হঠাৎ করে লকডাউন, আবার লকডাউন থেকে অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাত্রা; এমন পদ্ধতি অবলম্বন করলে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভবপর হবে না বলে মন্তব্য করেছন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও সিনিয়র পলিসি বিশ্লেষক (কানাডা) ডা. শাহরিয়ার রোজেন।

তিনি যায়যায়দিনকে বলেন, করোনা নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রয়োজন ধাপভিত্তিক প্রতিরোধ ব্যবস্থা। লকডাউন শেষে ধাপে ধাপে বিধি-নিষেধ শিথিল করতে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডাসহ বিশ্বের অধিকাংশ দেশ এই পদ্ধতি গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশেও মহামারী নিয়ন্ত্রণে সংক্রমণের গতি-প্রকৃতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করে ধাপে ধাপে বিধিনিষেধ শিথিল করতে হবে। না হলে হঠাৎ শিথিলতায় ডেকে আনতে পারে বড় বিপদ। তাই দরকার সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা।

এই বিশেষজ্ঞ যায়যায়দিনকে বলেন, ধাপভিত্তিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হবে লকডাউন তুলে দেয়ার পর দীর্ঘ সময়ের জন্য জনসমাগম নিষিদ্ধ করা। কারণ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ লকডাউন তুলে নেয়ার পর জনসমাগম নিষিদ্ধের মাধ্যমে সংক্রমণ অনেকটা নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছে। অপরপক্ষে ভারতসহ বিশ্বের কয়েকটি দেশে জনসমাগম নিয়ন্ত্রণ করতে না পারায় সংক্রমণ অনেক বেড়ে গেছে।

বাংলাদেশে বড় ধরণের সভা-সমাবেশ, সামাজিক অনুষ্ঠান এবং বিভিন্ন বিনোদনমূলক কর্মকান্ড বেড়ে যাওয়ায় এপ্রিল মাসে সংক্রমণ অনেক বেড়ে যায়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের গবেষণার ফলাফল থেকে দেখা যায় যে, জনসমাগম থেকেই কোভিড-১৯ ভাইরাস বেশি ছড়ায়। এ কারণে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আসার আগ পর্যন্ত সব ধরনের সামাজিক অনুষ্ঠান, কমিউনিটি সেন্টার, পর্যটনকেন্দ্র, রাজনৈতিক সমাবেশসহ জনসমাগম বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে।

তবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত আকারে অর্থনৈতিক কর্মকান্ড চালানো যেতে পারে। অনধিক ৫০ শতাংশ মানুষ দিয়ে একাধিক শিডিউলে রোটেশনের ভিত্তিতে অফিস-আদালত, কল-কারখানা সীমিত আকারে চালু রাখা যেতে পারে। ব্যাংক বা শপিংমল সপ্তাহের প্রতি কর্মদিবসে খোলা না রেখে নিয়মিত বিরতি দিয়ে সীমিত আকারে খোলা রাখা যেতে পারে। মানুষের ভিড় কমাতে লম্বা সময়ের জন্য দোকানপাট, মার্কেট এবং শপিংমল খোলা রাখতে হবে। কাঁচা বাজারগুলো উন্মুক্ত জায়গায় পরিচালনা করতে হবে। অনলাইন ডেলিভারি এবং ভার্চুয়াল মিটিং উৎসাহিত করতে হবে।

তিনি বলেন, ঈদে ঘরমুখো মানুষের ভিড় এবং বাংলাদেশে বিপদজনক ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট প্রবেশের ফলে অদূর ভবিষ্যতে সংক্রমণ আবার বেড়ে যাওয়ার সম্ভবনা দেখা দিয়েছে। বিশেষত সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলোতে সংক্রমণ হঠাৎ করে বেড়ে গেছে, যা অত্যন্ত আশংকাজনক। কেবলমাত্র জেনোম সিক্যুয়েন্সিংয়ের উপর নির্ভর করায় ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত করার জন্য পর্যাপ্ত টেস্ট হচ্ছে না। টার্গেটেড আরটি-পিসিআর টেস্টের মাধ্যমে দ্রুত সময়ে এবং অল্প খরচে এই বিপদজনক ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত সম্ভব। ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত করার জন্য বাংলাদেশে অতি দ্রুত টার্গেটেড আরটি-পিসিআর টেস্ট শুরু করা উচিত। পাশাপাশি সামনের দিনগুলোতে জেলাভিত্তিক তথ্য-উপাত্ত পর্যবেক্ষণ করে প্রয়োজনে অঞ্চলভিত্তিক লকডাউন আরোপ করতে হবে।

আরেকটা বিষয় মনে রাখাতে কেবল সরকারের উদ্যোগের মাধ্যমে করোনা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়, এজন্য সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণ জরুরি। নিজেদের প্রতিরক্ষার জন্য সবাইকে কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি পালন যেমন; মাস্ক পরা, হাত ধোঁয়া, জনসমাগম এড়ানো এবং সামাজিক দূরত্ব মেনে চলতে হবে। এই সহজ কিন্তু বিজ্ঞানসম্মত উপায়গুলো শতবছর পূর্বে স্প্যানিশ ফ্লু মহামারী নিয়ন্ত্রণে কার্যকর হয়েছিল। করোনার বিপদজনক ভ্যারিয়ান্টকেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার মাধ্যমে প্রতিরোধ সম্ভব।

তাছাড়া করোনা মহামারীর সবচেয়ে কার্যকর সমাধান হলো ভ্যাকসিনেশন। ভ্যাকসিন বা টিকা মৃত্য প্রতিরোধ করে। পাবলিক হেলথ ইংল্যান্ড- এর সার্ভেইল্যান্স রিপোর্ট অনুযায়ী যুক্তরাজ্যে টিকা ব্যবহারের মাধ্যমে ৬৫ বছর বা তার বেশি বয়সীদের মাঝে ১৩ হাজার করোনাজনিত মৃত্য প্রতিরোধ করা গেছে। একদিন আগে টিকা নিয়ে আসা মানে হলো অনেকগুলো মৃত্যু প্রতিরোধ করা। ২০ ফেব্রুয়ারি নিউইয়র্ক টাইমসের ভ্যাকসিনেশন ট্র্যাকার-এর তথ্যানুযায়ী টিকা প্রদানের (মোট ডোজ সংখ্যায়) ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে ১৭তম, যা ছিল প্রশংসার দাবিদার। মার্চের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত খুব দ্রুততার সঙ্গে মোট জনসংখ্যার ৩ দশমকি৩ শতাংশ মানুষকে টিকা দেওয়া হয়। কিন্তু এরপর সংকট দেখা দিলে টিকাদান একেবারে কমে যায়। এমনকি এপ্রিল ও মে মাসে মোট জনসংখ্যার মাত্র শূন্য দশমিক ২ শতাংশ মানুষ টিকা পেয়েছে। তাই মহামারী নিয়ন্ত্রণে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে অতিদ্রুত টিকা সংগ্রহ করতে হবে এবং জনগণকে টিকার আওতায় আনতে হবে।

মনে রাখতে হবে, লকডাউন শেষে সব ধরনের বিধিনিষেধ তুলে নিলে সংক্রমণ অনেক বেড়ে যাবে। এ কারণে করোনার সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের সবচেয়ে বাস্তবসম্মত উপায় হলো ধাপে ধাপে বিধিনিষেধ শিথিল করা, অধিকাংশ জনগোষ্ঠীকে টিকার আওতায় আনা এবং দীর্ঘ সময়ের জন্য সামাজিক অনুষ্ঠান, কমিউনিটি সেন্টার, পিকনিক ও বিনোদনমূলক কার্যক্রম, রাজনৈতিক জনসভাসহ সব ধরনের জনসমাগম নিষিদ্ধ করা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: লকডাউন

৭ এপ্রিল, ২০২২
১৩ জানুয়ারি, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ