Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

খুলনায় বেড়িবাঁধ পরিদর্শনে গিয়ে অপদস্থ হলেন এমপি বাবু

খুলনা ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ১ জুন, ২০২১, ৬:৩৫ পিএম

স্বেচ্ছাশ্রমে কয়রার মহারাজপুর ইউনিয়নের দশহালিয়া গ্রামে বাঁধ নির্মাণের কাজ করছিলেন সহস্রাধিক মানুষ। মঙ্গলবার বেলা ১১ টার দিকে নদীতে ট্রলার যোগে বাঁধ বাধার কাজ পরিদর্শনের জন্য এগিয়ে আসছিল খুলনা-৬ (পাইকগাছা-কয়রা) আসনের সংসদ সদস্য আক্তারুজ্জামান। কিছুটা এগিয়ে আসতেই হঠাৎ করে স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করতে আসা মানুষ মুহুর্মুহু কাঁদা-মাটি ছুড়তে থাকেন। জনরোষে পড়ে পিছু হটতে বাধ্য হন এমপির ট্রলার। পরে অবশ্য ফিরে আসেন।

স্থানীয়রা প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, ২৬ মে ইয়াসের প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে দশহালিয়া গ্রামে বাঁধ ভেঙে মহারাজপুর ও পাশের বাগালী ইউনিয়নের অন্তত ২০টি গ্রাম প্লাবিত হচ্ছে সাগরের লোনাপানিতে। এখনও ভেঙে যাওয়া ওই বাঁধ মেরামত করা সম্ভব হয়নি। প্রতিদিন জোয়ার-ভাটার পানি আসা-যাওয়া করছে গ্রামগুলোর মধ্য দিয়ে। গত তিনদিন ধরে স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁধ মেরামত করছেন এলাকার মানুষ।

মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সাংসদ একটি ট্রলারে করে ওই ভাঙা বাঁধের স্থানে যান। যখনই তাঁর ট্রলারটি ঘাটে ভিড়তে যায়, তখনই কাঁদা ছুড়তে শুরু করেন স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করা মানুষগুলো। বারবার মাইকে ঘোষণা করেও তাঁদের নিবৃত্ত করা যায়নি। প্রায় ১০ মিনিট বৃষ্টির মতো কাঁদা ছুড়ে মারার একপর্যায়ে ট্রলারটি পিছু হটে। প্রায় আধা ঘণ্টা পর কাজ করতে থাকা মানুষকে শান্ত করা হলে আবার এমপি সেই ভাঙা বাঁধের কাছে যান। এ সময় সাংসদ মাইকে স্থায়ী বাঁধ না করতে পারায় নিজের ব্যর্থতার কথা স্বীকার করে সাধারণ মানুষের সঙ্গে বাঁধ মেরামতের কাজে লেগে পড়েন। কিন্তু সেটিও পছন্দ হয়নি কাজ করতে থাকা সাধারণ মানুষের। এমপি কাজে নামার পর অধিকাংশ মানুষ কাজ ছেড়ে দিয়ে চলে যান।

খুলনা-৬ (পাইকগাছা-কয়রা) আসনের সংসদ সদস্য মো. আক্তারুজ্জামান দাবি করেছেন, তাঁকে বহনকারী ট্রলারে কাঁদা ছুড়ে মারা হয়নি। তিনি গণমাধ্যমে বলেন, স্থানীয় মানুষ চান টেকসই বেড়িবাঁধ। প্রতিবছর ভাঙনে তাঁরা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হন। ভাঙন এলাকায় কাজ করছিলেন কয়েক হাজার মানুষ। সেখানে গেলে তাঁকে দেখে মানুষ ক্ষোভ প্রকাশ করে টেকসই বেড়িবাঁধের দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন। তাঁদের ওই দাবি যৌক্তিক। বারবার বাঁধ ভাঙে আর বারবার স্বেচ্ছাশ্রমে তাঁদের কাজ করতে হয়। এ কারণে সাংসদের ওপর তাঁদের ক্ষোভও বেশি। পরে ওই এলাকায় নেমে সাধারণ মানুষের সঙ্গে বাঁধের কাজ করা হয়েছে।

স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করতে যাওয়া মহারাজপুর ইউনিয়নের দেওরা গ্রামের বাবুল নামের সাবেক মেম্বর বলেন, এমপি আসায় জনগণ ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনলে এমপি বক্তব্য দেন এবং সকলের সাথে কাজ শুরু করেন। এসময় সাধারণ জনগণ কাজ ছেড়ে চলে আসে। তিনি আরো বলেন, এই ঘটনায় সময় নষ্ট না হলে আজ বাঁধ বাধার কাজ শেষ করা সম্ভব হতো।

কয়রা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জি এম মোহসিন রেজা বলেন, এমপি ট্রলার থেকে নামবে সেই সময় কিছু মানুষ পরিকল্পিতভাবে ট্রলারে কাঁদা ছুড়ে মারে। পরে তিনি নেমে সাধারণ মানুষের সাথে কথা বলেন।

উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এস এম শফিকুল ইসলাম বলেন, সাধারণ মানুষ স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁধ মেরামতের কাজ করছিলেন। এমন সময় ট্রলারে এমপি এসেছেন শুনেই সাধারণ মানুষ এক জায়গায় হয়ে নদীর ধারে ছুটে যান। এসময় তারা উত্তেজিত হয়ে ট্রলারে কাঁদা ছুড়ে মারতে থাকেন। এতে এমপির শরীরের বিভিন্ন জায়গায় কাদা লাগে। এছাড়া ট্রলারে থাকা অন্যদের গায়েও কাদা লাগে। চেষ্টা করেও সাধারণ মানুষকে নিবৃত্ত করা যায়নি। ট্রলার পিছু হটে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: খুলনা


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ