পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় ভারত সংলগ্ন সীমান্তবর্তী ৮ জেলায় লকডাউনের সুপারিশ করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতরের বিশেষজ্ঞ কমিটি। গতকাল রোববার স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগতত্ত্ব ও জনস্বাস্থ্য বিষয়ক কমিটির একজন সদস্য এ তথ্য জানিয়েছেন।
নাম প্রকাশে অপারগতা জানিয়ে বিশেষজ্ঞ কমিটির ওই সদস্য জানান, গতকাল এক বৈঠকে বিশেষজ্ঞ কমিটি চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ, নাটোর, সাতক্ষীরা, যশোর, রাজশাহী, কুষ্টিয়া ও খুলনা জেলায় লকডাউনের সুপারিশ করেছে। তিনি জানান, কমিটির সুপারিশ চিঠি দিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে জানাবে। তিনি বলেন, ওইসব জেলায় করোনাভাইরাসের সংক্রমণ তীব্রভাবে বেড়ে যাচ্ছে। এ কারণে শনিবার স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগতত্ত্ব ও জনস্বাস্থ্য বিষয়ক কমিটির বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আলোচনায় কতিপয় সুপারিশ করা হয়।
কমিটির এই সদস্য বলেন, লকডাউনের সময় বাস চলাচল যেন বন্ধ থাকে, এক জেলা থেকে আরেক জেলায় যেন বাস না চলে, সে বিষয়ে জোর দিতে সুপারিশ করা হয়েছে।
জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেছেন, ভারত সীমান্তবর্তী কিছু এলাকায় করোনাভাইরাস সংক্রমণ হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায় কয়েকটি জেলায় ‘বিশেষ নজর রাখা হচ্ছে’। ‘পরিস্থিতি বুঝে’ এসব জেলার লকডাউনের সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তিনি আরো বলেন, সীমান্তবর্তী জেলাগুলোর ওপর আমরা বিশেষ নজর রেখেছি, যদি সেখানে আমাদের নিয়ন্ত্রণ করতে হয়, ওই জায়গাগুলোতে চলাফেরার ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতে পারব। বিষয়গুলো আমরা পর্যবেক্ষণ করছি। আপাতত স্পষ্ট করে কিছু বলা যাচ্ছে না। পরিস্থিতি বুঝে আমরা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করব।
উল্লেখ্য, করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় গত ২৪ মে চাঁপাইনবাবগঞ্জে লকডাউন ঘোষণা করেছে জেলা প্রশাসন। উত্তরাঞ্চলের সীমান্তবর্তী ওই জেলায় লকডাউন এখনও চলছে।
বাংলাদেশে গত ৯ মে প্রথম করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়। করোনাভাইরাসের এ ধরনটির আনুষ্ঠানিক নাম দেয়া হয়েছে বি.১.৬১৭। মিউটেশনের কারণে এর তিনটি ‘সাব টাইপ’ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে বাংলাদেশে পাওয়া গেছে বি.১.৬১৭.২ ধরনটি। এই ভ্যারিয়েন্ট বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়লে করোনার তৃতীয় ঢেউ শুরু হবে। যা হবে বাংলাদেশের জন্য ভয়ঙ্কর। শুধু স্বাস্থ্যসেবায় নয়, দেশের অর্থনীতিকে চরম বিপর্যয়ের মুখে ফেলবে। এ অবস্থায় দেশবাসীকে সতর্ক করে দিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘ভারত থেকে বিপজ্জনক বার্তা পাচ্ছে বাংলাদেশ। আবারও করোনার তৃতীয় ঢেউয়ের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। সামান্যতম উদাসীনতায় দেশের জন্য বিপজ্জনক ভবিষ্যতেরই পূর্ভাবাস।’
ভারতে প্রথম এ মিউট্যান্ট শনাক্ত হয়েছিল বলে একে ভারতীয় ধরন বলা হচ্ছে। ইতোমধ্যে অন্তত ৪৪টি দেশে করোনাভাইরাসের এই ধরনটি ছড়িয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এটিকে চিহ্নিত করেছে ‘ভ্যারিয়েন্ট অব কনসার্ন’ (ভিওসি) হিসেবে।
ভারত থেকে সীমান্ত দিয়ে আসা তিন বাংলাদেশির দেহে করোনাভাইরাসের এই ভ্যারিয়েন্ট শনাক্তের কথা গত ৮ মে প্রথম জানিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদফতর। এ পর্যন্ত প্রায় অর্ধশত মানুষের শরীরে করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া গেছে। গত ২৮ মে শুক্রবার স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা.এবিএম খুরশীদ আলম জানিয়েছিলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৭ জনের শরীরে করোনাভাইরাসের ভারতে উদ্ভূত ধরনটি পাওয়া গেছে, যারা কখনও প্রতিবেশী ওই দেশটিতে যাননি। এর মানে হলো, বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের অতি সংক্রামক এই ধরনটির কমিউনিটি সংক্রমণ ঘটছে। তবে গতকাল রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালেই ১২ জন করোনা রোগী মারা গেছে।
দেশে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হলে গত ৫ এপ্রিল প্রথম লকডাউন শুরু হয়। দ্বিতীয় দফায় ১৪ এপ্রিল কঠোর লকডাউন শুরুর পর বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সীমান্ত বন্ধ করে দেয়া হয়। ১৪ দিন বন্ধ থাকার পর গত ৮ মে আবার ১৪ দিনের জন্য সীমান্ত বন্ধের মেয়াদ বাড়ানো হয়। গতকাল এই সময় আরো বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু দু’দেশের মধ্যে পণ্য আনানেয়া চলছে। আটকে পড়া মানুষ আসা যাওয়া করছেন। গত কয়েক দিনে চিকিৎসার জন্য ভারতে যাওয়া হাজার হাজার মানুষ সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে ফিরে এসেছে। স্বাস্থ্যা অধিদফতরের তথ্য অনুসরে প্রতিদিনই বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে প্রবেশ করেছেন। সীমান্ত এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে আখাউড়া, বিবিরবাজার, বেনাপোল, বাংলাবান্ধা, টেকনাফ, বিলুনিয়া, সোনা মসজিদ, ভোমরা, দর্শনা, বুড়িমারি, সোনাহাট, রৌমারি, হিলি, রাধিকাপুর, তামাবিল, গোয়াইনঘাট, সুতারকান্দি, বিয়ানিবাজার, জকিগঞ্জ, বল্লা চুনারুঘাট, ফুলতলা, চাতলা, নাকুগাও, গোবরাকুড়া, ধনুয়া বকশিগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে মানুষ বাংলাদেশে ফিরে আসছেন। আবার ভারতীয়রা ফিরে যাচ্ছেন। ভারত থেকে সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে ফেরত কয়েক হাজার মানুষকে যশোর ও খুলনায় কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে।
সীমান্ত জেলাগুলোতে করোনা রোগী বেড়ে যাওয়ায় গত সাপ্তাহে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় লকডাউন ঘোষণা করা হয়। লংডাউনের মধ্যেই রাজশাহী বিভাগে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ও মৃত্যু বাড়ছে। এ অবস্থায় স্বাস্থ্য অধিদফতরের বিশেষজ্ঞ কমিটি সীমান্তবর্তী ৮ জেলায় লকডাউনের পরামর্শ দিয়েছে।
প্রসঙ্গত, গতকাল পর্যন্ত দেশে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ৯৮ হাজার ৮৩০ জন। মৃত্যু হয়েছে ১২ হাজার ৫৮৩ জন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।