Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বিলুপ্তির পথে গ্রামীণ সংস্কৃতি

| প্রকাশের সময় : ২৯ মে, ২০২১, ১২:০২ এএম

বাঙালি জাতির নিজস্ব সংস্কৃতির উপাদানগুলো আমরা গ্রামীণ সমাজে দেখতে পেতাম, যা এখন অনেকটা ম্রিয়মান। একটা সময় ছিল যখন প্রযুক্তির এমন বিন্যাস ছিল না তখন এই বাংলাদেশের গ্রামীণ সমাজে কিছু মনমুগ্ধকর সংস্কৃতি বিরাজমান ছিল, যা এই জাতির পরিচয় বহন করত। ঢেঁকির নামটা শুনলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে গ্রামীণ বধুর ঘাম মাখা মুখের প্রতিচ্ছবি, যারা এই ঢেঁকির মাধ্যমে চাল গুড়া করে আঁটা বের করতেন। সেই আটার মাধ্যমে শীতের দিনে মায়েরা তাদের নিজস্ব কৌশল ব্যবহার করে নানা রকম পিঠা পুলি তৈরি করতেন। শিশু-কিশোর-বয়স্ক সবাই কত আনন্দ করে সেই পিঠা নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে খাওয়া-দাওয়া করত। আজ যেন তা রূপকথার গল্প বলে মনে হবে। মরিচ আদা রসুন বাটার জন্য শিলপাটা ব্যবহার করা হতো, কালের পরিক্রমায় সেটাও হারিয়ে গেছে। আর সেই শিলপাটাতে ধার করার জন্য একশ্রেণির মানুষ ছিল, যারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে ধার করে দিত নানা রকম নকশা সেখানে ফুটে উঠত। আর পারিশ্রমিক হিসেবে তাদের চাল দেওয়া হতো আজা আর এমনটা দেখতে পাওয়া যায় না। এছাড়াও গ্রামীণ মাঠ থেকে ফসল তোলার পর কৃষকদের বিশেষ কোনো কাজ থাকে না, অবসর সময়ে কৃষকদের হাতে ধান বিক্রির টাকা থাকে তখন গ্রামে গ্রামে যাত্রা নাটক পালাগানের একটা প্রচলন ছিল যা এই জাতির বিনোদন চাহিদা পূরণ করত, রাতভর চলত এসব গান বাজনা। এখন ঘরে ঘরে জায়গা দখল করেছে টেলিভিশন। গ্রীষ্মকালে বাড়ির আঙিনায় বসে বাড়ির বয়োজ্যেষ্ঠদের মুখের সেই রূপকথার গল্পগুলো কত যে আগ্রহের ছিল, আজ যেন সেসবকেই রূপকথার বলে মনে হচ্ছে। গ্রামের মানুষদের মধ্যে যখন কোন কিছু নিয়ে বিরোধ হতো, তখন সেই বিরোধ গ্রামীণ পরিবেশে নিষ্পত্তি হতো পঞ্চায়েতের মাধ্যমে। বর্তমানে এখন বিরোধগুলো নিষ্পত্তির জন্য মানুষ থানায় যায় মামলা করতে, কিন্তু মামলা পরিচালনার দীর্ঘসূত্রিতা তাদের নিঃশেষ করে দিচ্ছে। আগের দিনে যেসব চিত্র শহরে দেখা যেত, এখন সেসব চিত্র আমরা গ্রামীণ সমাজে দেখতে পাচ্ছি। তাইতো আজ আর গ্রাম আর শহরকে আলাদা করা যায় না। অথচ, এই গ্রামগুলোই ছিল বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের উৎস। তাই আমরা আমাদের সংস্কৃতিগুলো যেন রক্ষায় সচেতন হই, এমন প্রত্যাশা দেশের সচেতন নাগরিকদের।
জাফরুল ইসলাম
শিক্ষার্থী রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন