পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে লকডাউনে বাংলাদেশসহ বৈশ্বিক অর্থনীতির বিশাল ক্ষতি হয়েছে। লকডাউন ও বিধিনিষেধের বাধ্যবাধকতা সত্তে¡ও দেশের গার্মেন্ট কারখানাসহ রফতানিমুখী ও নিত্যপণ্যের সাথে সংশ্লিষ্ট উৎপাদন ব্যবস্থা চালু থাকলেও দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো সেই যে গত বছরের মার্চে বন্ধ হয়েছিল তা পুনরায় চালু করা হয়নি। এ অচলাবস্থায় একাধিক শিক্ষাবর্ষের কোটি কোটি শিক্ষার্থীর শিক্ষা জীবন এক মারাত্মক অনিশ্চয়তায় হাবুডুবু খাচ্ছে। এটি একদিকে যেমন শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ জীবনকে অনিশ্চিত করে দিচ্ছে, তেমনি তাদের পরিবার এবং দেশের ভবিষ্যৎকেও অন্ধকারে ঠেলে দিচ্ছে। যেখানে বিশেষ বিবেচনায় রফতানিমুখী গার্মেন্ট ফ্যাক্টরিগুলোকে চালু রাখা হয়, সেখানে গত ১৪ মাসেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার ব্যাপারে সরকারের শিক্ষামন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্টদের মধ্যে অনীহা লক্ষ করা গেছে। বিধিনিষেধ জারি থাকলেও সারাদেশে মানুষের অবাধ চলাচল বন্ধ হয়নি। এ কারণে করোনা মহামারিতে সরাসরি প্রভাবও খুব একটা দেখা যায়নি। চালু থাকা কোনো গার্মেন্ট ফ্যাক্টরিতে করোনা প্রাদুর্ভাবের কোনো ঘটনা ঘটেনি। এহেন বাস্তবতায় বিশ্ববিদ্যালয়সহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দেয়ার ক্ষেত্রে সরকারের গড়িমসির যুক্তিসঙ্গত ব্যাখ্যা নেই।
বার বার সময় বাড়িয়ে দীর্ঘ ১৪ মাস পর আগামী ১৩ জুন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে সরকার। অবশ্য ইতিপূর্বেও একাধিকবার এরূপ ঘোষণা দিয়েও করোনার নতুন সংক্রণের কারণ দেখিয়ে শেষ পর্যন্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা হয়নি। এবারো কিছুটা অনিশ্চয়তার সুর শোনা গেছে খোদ শিক্ষামন্ত্রীর কণ্ঠেও। তবে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার বর্তমান সিদ্ধান্তের বাইরে রাখা হয়েছে। সরকারের এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ১ জুনের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেয়ার আল্টিমেটাম দিয়ে সারাদেশে বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দিয়েছে বলে গতকাল ইনকিলাবে প্রকাশিত রিপোর্টে জানা যায়। বিশ্ববিদ্যালয় খোলার আগে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের করোনা টিকা নিশ্চিত করার কথা বলা হচ্ছে। অথচ, বর্তমান প্রেক্ষিতে আগামী ৬ মাসের মধ্যেও সব শিক্ষার্থীর জন্য করোনা টিকা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে বলে মনে হয় না। ভারতের ভ্যাকসিন ডিপ্লোম্যাসি ও ভ্যাকসিন রাজনীতির ফাঁদে পড়ে দেশের করোনা ভ্যাকসিনেশন কর্মসূচি শুরুতেই মুখ থুবড়ে পড়েছে। করোনায় দেশের অর্থনীতির ক্ষতি নানাভাবে পুষিয়ে নেয়া গেলেও শিক্ষা ব্যবস্থা ও কোটি কোটি শিক্ষার্থীর অপূরণীয় ক্ষতি পুষিয়ে নেয়া হয়তো কখনো সম্ভব হবে না। গত প্রায় দেড় বছরে দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে লকডাউনের কারণে নানাবিধ সামাজিক-অর্থনৈতিক সমস্যা বেড়ে চলেছে। এমতাবস্থায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার বিষয়টি ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখা দরকার।
করোনাভাইরাস মহামারি একটি বৈশ্বিক দুর্যোগ। প্রত্যেক দেশই নিজ নিজ বাস্তবতার আলোকে এ সংকট মোকাবেলা করে চলেছে। চলতি বছরের শুরুতেই জাতিসংঘের শিক্ষা বিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কোর তরফ থেকে যথাশীঘ্র স্কুল-কলেজ খুলে দেয়ার কথা বলা হয়েছিল। তারা বলেছিল, আরো একবছর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার প্রতিক্রিয়া শিশু-কিশোররা মেনে নিতে পারবে না। দীর্ঘদিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় ইতোমধ্যেই আমাদের সমাজে শিশু-কিশোরদের মধ্যে মারাত্মক প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। দেশে কিশোর অপরাধ ও কিশোর গ্যাং কালচার বিস্তার লাভ করেছে। লাখ লাখ শিশু-কিশোর মনস্তাত্তি¡কভাবে দুর্বল ও অপ্রকৃতস্থ হয়ে পড়ছে। একেকটি পরিবার ও জাতির জন্য এটি অনেক বড় ক্ষতি। করোনাকারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার পরও এক শ্রেণীর বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কঠোরভাবে টিউশন ফি আদায়ের নানাবিধ পন্থা ও চাপ সৃষ্টি করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এসব অভিযোগ অনুসন্ধান করে ন্যায়ভিত্তিক সমাধানের জন্য যেন কেউ বা কোনো কর্তৃপক্ষ নেই। কলকারখানা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর চেয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও শিক্ষাব্যবস্থা কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। এ ক্ষেত্রে অবহেলা ও অবিমৃশ্যকারিতা জাতির জন্য দীর্ঘমেয়াদে বিপর্যয় নিয়ে আসতে পারে। বছর ধরে স্কুল-কলেজ বন্ধ রেখে নাম কা ওয়াস্তে পরীক্ষা গ্রহণ ও অটোপাসের নজির জাতির ভবিষ্যতকে অন্ধকারে নিক্ষেপ করবে। বৈশ্বিক মহামারিতে করোনা সংক্রমণ ও প্রাণহানী নিয়ন্ত্রণ অবশ্যই সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারভিত্তিক সিদ্ধান্ত, তবে তা যেন শুধুমাত্র শিক্ষাব্যবস্থা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের উপরই কার্যকর না থাকে, সে ব্যাপারে খেয়াল রাখতে হবে। বিশ্বের অন্যান্য দেশে আমাদের চেয়ে অনেক বেশি মারাত্মক করোনা সংক্রমণের পরেও যেভাবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রি-ওপেন করছে, আমাদেরকেও সে পথ অনুসরণ করতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।