Inqilab Logo

শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ইয়াস’র চোখ ভারতে

অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের গতিবেগ ১৪০ কি.মি. : উড়িষ্যা-পশ্চিমবঙ্গে আঘাত আজ দক্ষিণ, দ. পশ্চিম উপকূল প্রবল জোয়ারে ভাসছে ৮০-একশ’ কিলোমিটার বেগে ঝড়ের সাথে ৩ থেকে ৬ ফুট উঁচু জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্

শফিউল আলম | প্রকাশের সময় : ২৭ মে, ২০২১, ১২:০২ এএম


অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে ‘ইয়াস’। এর গতিবেগ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১৪০ কিলোমিটার। ‘ইয়াস’ ও ভরা পূর্ণিমার সক্রিয় প্রভাবে দেশের উপক‚লীয় জেলাসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৩ থেকে ৬ ফুট উঁচু সামুদ্রিক জোয়ারে প্লাবিত হতে পারে। ঘূর্ণিঝড়ের ‘চোখ’ বা শক্তির কেন্দ্রবিন্দু থাকে। অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘যশ’ বা ‘ইয়াস’র চোখ সরাসরি ভারতের দিকে। এটি তার স্বাভাবিক গতিপথে ধেয়ে গেলে উড়িষ্যা-পশ্চিমবঙ্গ উপক‚লে আঘাত হানতে পারে আজ বুধবার দুপুরের দিকে। অন্যথায় ‘ইয়াস’ গতি-প্রকৃতি বদল কিংবা ঘুরে গেলে সুন্দরবনসহ খুলনায়ও কমবেশি ধাক্কা আসতে পারে। ঘূর্ণিঝড়ের সময়ের সঙ্গেই আজ ভরা পূর্ণিমা ও চন্দ্রগ্রহণ। এই তিনে মিলে আগাম সক্রিয় প্রভাবে গতকাল মঙ্গলবার দুপুর থেকে রাতে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত দেশের বরিশাল ও খুলনা বিভাগের একাংশে দক্ষিণ ও দক্ষিণ পশ্চিম উপক‚ল, চর, দ্বীপের নিমআঞ্চলসমূহ প্রবল জোয়ারে ভাসছে। বিগত ২০ মে’২০২০ইং ঘূর্ণিঝড় ‘আমফান’র জলোচ্ছ্বাসের আঘাতে ভাঙা বেড়িবাঁধ দিয়ে অনেক এলাকা সামুদ্রিক জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হচ্ছে। তলিয়ে যাচ্ছে ফল-ফসলের জমি, বসতভিটা, ক্ষেত-খামার।
সম্ভাব্য দুর্যোগের কবল থেকে জানমাল রক্ষায় অনেকেই ছুটছে নিরাপদ আশ্রয়স্থলে। করোনা মহামারীকালে লাখো উপক‚লবাসী ঘূর্ণিঝড়ের শঙ্কা বুকে নিয়ে ভয়-আতঙ্ক, কষ্ট-দুর্ভোগে পড়লো। ‘ইয়াস’র প্রভাবে ঘণ্টায় ৮০ থেকে একশ’ কিলোমিটার বেগে দমকা থেকে ঝড়ো হাওয়া এবং সেই সাথে জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা রয়েছে।
ঘূর্ণিঝড়ের মুখে ফের কমবেশি ঝুঁকিতে রয়েছে প্রাকৃতিক ঢাল বা বর্ম সুন্দরবন। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া পরিস্থিতিতে সারাদেশে নৌ-চলাচল বন্ধ। সাগর খুবই উত্তাল রয়েছে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সঙ্কেত দেখানো হচ্ছে।
অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’র অগ্রবর্তী অংশ বঙ্গোপসাগরের প্রচুর মেঘ নিয়ে এসেছে। এরফলে সোমবার রাত থেকে গতকাল পর্যন্ত সারাদেশে মাঝারি থেকে ভারী বর্ষণ, কোথাও কোথাও অতিবৃষ্টি হচ্ছে। গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয়েছে ঈশ^রদিতে ৭০ মিলিমিটার। ঢাকায় ৩৭ মি.মি.। এ সময়ে দেশের প্রায় সবক’টি জেলায় স্বস্তির বর্ষণ হয়। তাপমাত্রা আগের দিনের চেয়ে স্থানভেদে ২ থেকে ৪ ডিগ্রি সে. হ্রাস পায়। তবে সিলেটে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৭.৪ ডিগ্রি সে.। আবার উপকূলের অনেক জায়গায় বিরাজ করছে গুমোট থমথমে আবহাওয়া। সঙ্কেত না বাড়ায় চট্টগ্রাম বন্দরে দিনভর স্বাভাবিক কার্যক্রম অব্যাহত থাকে। তবে সমুদ্র উত্তাল থাকায় বহির্নোঙরে মাদার ভেসেল থেকে আমদানি খোলা পণ্যসামগ্রী লাইটারিং কাজ ব্যাহত হয়।
সর্বশেষ ঘূর্ণিঝড় পরিস্থিতি-
আবহাওয়া বিভাগের গতকাল রাতে সর্বশেষ বিশেষ বুলেটিনে আবহাওয়াবিদ মো. হাফিজুর রহমান জানান, উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও এর সংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ আরও উত্তর, উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর ও ঘনীভূত হয়ে অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় আকারে একই এলাকায় অবস্থান করছে। অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরের ৩৯০ থেকে ৫৩৫ কিলোমিটার দক্ষিণ, দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল। অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়টি আরও উত্তর, উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে আজ বুধবার দুপুরে উত্তর উড়িষ্যা ও পশ্চিমবঙ্গ উপক‚ল অতিক্রম করতে পারে।
ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৭৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘন্টায় ১২০ কিলোমিটার। যা দমকা বা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ঘন্টায় সর্বোচ্চ ১৪০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। সমুদ্র খুবই উত্তাল রয়েছে। বন্দরসমূহকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সঙ্কেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় অতিক্রমকালে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার থেকে খুলনা-সাতক্ষীরা পর্যন্ত দেশের ২১টি উপকূলীয় জেলাধীন অঞ্চলের চর, দ্বীপাঞ্চলসমূহে ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে। সেই সাথে ঘণ্টায় ৮০ থেকে একশ’ কিলোমিটার গতিবেগে দমকা বা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। তাছাড়া ঘূর্ণিঝড়ের সাথেই আজ ভরা পূর্ণিমার সক্রিয় প্রভাবে উপকূলীয় এসব এলাকায় নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক সামুদ্রিক জোয়ারের চেয়ে ৩ থেকে ৬ ফুট উচ্চতায় জোয়ারে প্লাবিত হতে পারে।
এদিকে বিদেশি আবহাওয়া স্যাটেলাইট সংস্থাসমূহ ও ভারতের সংবাদমাধ্যম বলছে, অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়টি আঘাতের সময়ে সর্বোচ্চ গতিবেগ হতে পারে ঘণ্টায় ১৫৫ থেকে ১৬৫ কিলোমিটার পর্যন্ত। সমুদ্রে যদি ‘ইয়াস’ আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠে তাহলে এটি সুপার সাইক্লোনে পরিণত হতে পারে। তাছাড়া ভারতের উপকূল বরাবর আঘাতের সময়ে সুন্দরবনসহ খুলনা উপকূলে ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে ঝড়ো হাওয়া ঝাপটা দিতে পারে। সবকিছুই নির্ভর করছে আঘাত হানার আগে শেষ পর্যন্ত ঘূর্ণিঝড়টির মতিগতি-মর্জির উপর। তবে সর্বশেষ গতি-প্রকৃতি অনুযায়ী ঘূর্ণিঝড়টি সরাসরি বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানার আশঙ্কা কম।

 



 

Show all comments
  • খোরশেদ আলম ভূঁইয়া ২৬ মে, ২০২১, ৫:৩২ এএম says : 0
    বিপদের একমাত্র আশ্রয়স্থল মহান আল্লাহ। মহান আল্লাহ আমাদের বিপদমুক্ত করুন।
    Total Reply(0) Reply
  • গ্রিন রবি ২৬ মে, ২০২১, ৫:৩৩ এএম says : 0
    এর থেকে বড় ঘূর্ণিঝড় তৈরি করে রেখেছে সরকার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে, লকডাউনের নামে ইসলামী চিন্তাবীদের গেফতার করে, ইসরায়েল এবং ভারতের সাথে হাত মিলিয়ে।
    Total Reply(0) Reply
  • Yamin Khan ২৬ মে, ২০২১, ৫:৩৪ এএম says : 0
    মানবিকতাকে ধারণ করতে পারলে ঘুর্ণিঝড় মোকাবেলা করা সম্ভব। অন্যান্য প্রাণীরা বিপদে আশ্রয় চাইলেও আশ্রয় দিতে হবে। একজনের বিপদে আরেকজনকে এগিয়ে আসতে হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • Farhad Farhad ২৬ মে, ২০২১, ৫:৩৪ এএম says : 0
    আল্লাহ বাংলাদেশকে রক্ষা করবে।
    Total Reply(0) Reply
  • সত্য পথের পথিক ২৬ মে, ২০২১, ৫:৩৫ এএম says : 0
    সবকিছুই আল্লাহর হুকুমের গোলাম, নিঃসন্দেহে দুনিয়ার বুকে যত প্রকার প্রাকৃতিক বিপর্যয় নেমে আসে এর সবকিছুর মূলে রয়েছে মানুষের পাপ।
    Total Reply(0) Reply
  • Jãsïm Alfaz ২৬ মে, ২০২১, ১২:০২ পিএম says : 0
    যে যার ধর্ম মতে প্রার্থনা করুন, বড্ড খারাপ সময় এটা
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ঘূর্ণিঝড়

২৬ অক্টোবর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ