পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
করোনার দ্বিতীয় ঢেউ প্রথম ঢেউয়ের চেয়ে ব্যাপক ও মারাত্মক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। দ্বিতীয় দফা লকডাউন ও বিধিনিষেধ এখনো শেষ হয়নি। এরই মধ্যে চাঁপাই নবাবগঞ্জসহ দেশের কয়েকটি সীমান্তবর্তী জেলায় করোনার সংক্রমণের হার উদ্বেগজনক হারে বেড়ে চলেছে। গত কয়েকদিনে চাপাই নবাবগঞ্জে করোনা শনাক্তের হার প্রায় ৫৫ শতাংশ। দেশের গড় শনাক্তের হারের চেয়ে এ সংখ্যা প্রায় ৫ গুণ। করোনাভাইরাসের আন্তর্জাতিক অনেকগুলো ভ্যারিয়েন্টের মধ্যে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট সবচেয়ে বিপজ্জনক ও প্রাণঘাতী রূপে আবির্ভূত হয়েছে। লক্ষ্যণীয় বিষয় হচ্ছে, ভারত সীমান্তবর্তী চাপাই নবাবগঞ্জে করোনার বিপজ্জনক সংক্রমণ, মৃত্যুহার দেশের জন্য বড় অশনি সংকেত হয়ে দেখা দিয়েছে। ইতিমধ্যে দেশে বেশকিছু ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। সেই সাথে দেশে ভারতীয় করোনা মহামারীর মধ্যে নতুন আতঙ্ক ব্ল্যাক ফাঙ্গাস রোগীও শনাক্ত হয়েছে। গতকাল ডেইলি স্টার পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা যায়, গত ১৫ দিনে দু’জন রোগীর মধ্যে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে। ধরা পড়া এই দুই রোগীর বয়েস যথাক্রমে ৪৫ এবং ৬০ বছর। একজনের মৃত্যু হয়েছে। চিকিৎসকরা সন্দেহ করছেন, তার মৃত্যুর কারণ ব্ল্যাক ফাঙ্গাস হতে পারে। সাধারণত সদ্য করোনাক্রান্ত, ডায়াবেটিক রোগী এবং দুর্বল রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্য ব্যক্তিরাই বেশি ব্ল্যাক ফাঙ্গাস (মিউকোরমাইকোসিস) রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় সর্বাত্মক লকডাউনের ঘোষণা দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। দেশে করোনা লকডাউন চলছে, তথাপি সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে ভারতীয় মালবাহী যানবাহন চলাচল করছে। ধারণা করা হচ্ছে, এসব যানবাহনের চালক, হেলপারদের অবাধ বিচরণের কারণে সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে করোণার প্রকোপ বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া ভারত থেকে আসাদের কারণেও সংক্রমণের হার বৃদ্ধির কারণ হয়ে রয়েছে। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজনের দেহে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস আতঙ্ক হয়ে দেখা দিয়েছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের সাথে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসও দেশে সংক্রমিত হতে পারে। এতে পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে। এ অবস্থা সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ার আগে ভারতীয় করোনা ভ্যারিয়েন্ট এবং ব্ল্যাক ফাঙ্গাস, হোয়াইট ফাঙ্গাসে মৃত্যুর বিভীষিকা থেকে মুক্ত থাকতে চাইলে সীমান্তে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া ছাড়া বিকল্প নেই। করোনাকালীন সাম্প্রতিক বিশ্ববাস্তবতায় ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট এবং ব্ল্যাক ফাঙ্গাস সারাবিশ্বে উদ্বেগের কারণ হয়ে দেখা দিয়েছে। ভারতের সাথে দীর্ঘ বিশাল স্থল সীমান্ত থাকায় আমাদের জন্য করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট ও ব্ল্যাক ফাঙ্গাস নিয়ন্ত্রণ অনেক বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সীমান্তে ভারতীয় যানবাহন, ড্রাইভার ও শ্রমিকদের যাতায়াত কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। প্রয়োজনে অনির্দিষ্টকালের জন্য সীমান্ত সিল করে দিতে হবে। দেশের অর্থনীতির চেয়ে কোটি মানুষের জীবনের নিরাপত্তা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এ ক্ষেত্রে শৈথিল্য প্রদর্শনের সুযোগ নেই। গাফিলতির কারণে দেশে করোনাভাইরাস যেন ভারতের মতো ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি না করে তা এখনই নিশ্চিত করতে হবে।
করোনা ভাইরাস ও ব্ল্যাক ফাঙ্গাস মহামারির তান্ডব মোকাবেলা এই মুহুর্তে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এই মহামারি মোকাবেলায় সীমান্ত সুরক্ষিত রাখা আমাদের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দিয়েছে। এখনো সীমান্ত দিয়ে মানুষের যাতায়াত চলছে। ভারত থেকে অনেকেই দেশে ফিরছে। এছাড়া অন্যান্য উন্মুক্ত সীমান্ত দিয়ে লোকজন আসা-যাওয়া করছে। এই অবাধ চলাচলই এখন বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা মনে করি, কিছু লোকের জন্য দেশের কোটি কোটি মানুষের বিপদ সৃষ্টি কাম্য হতে পারে না। এজন্য স্থল বন্দরসহ পুরোসীমান্ত সাময়িকভাবে পুরোপুরি সিল করে দিতে হবে। লক্ষ্যণীয় বিষয় হচ্ছে, সীমান্তে এখনও ঢিলেঢালা ভাব রয়ে গেছে। এতে শঙ্কার সৃষ্টি হয়েছে। ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট সীমান্ত জেলাগুলোতে ছড়িয়ে পড়ার পরও যেন আমাদের টনক নড়ছে না। ইতিমধ্যে করোনা লকডাউন আরো শিথিল করা হয়েছে। দূরপাল্লার যানবাহন পুনরায় চালু করা হয়েছে। এহেন বাস্তবতায় চাঁপাই নবাবগঞ্জসহ সীমান্তবর্র্তী জেলা থেকে সম্ভাব্য করোনা রোগীরা ঢাকাসহ সারাদেশে করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট সংক্রমণের কারণ হয়ে দাঁড়ায় কিনা তা নিয়ে দুশ্চিন্তার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। ইতোমধ্যে টিকা কার্যক্রমের দিক থেকে বাংলাদেশ অনেকটাই পিছিয়ে পড়েছে। এর মধ্যে যদি ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট এবং ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের বিস্তার অব্যাহত থাকে তাহলে দেশের অর্থনৈতিক ও মানবিক বিপর্যয় নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এহেন বাস্তবতায় আমাদের করোনা সংক্রমণ ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপনা, চিকিৎসা এবং স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় সামগ্রিক প্রস্তুতি সম্পর্কে নতুন করে ভাবতে হবে এবং কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। ভারতের সাথে সীমান্ত বাণিজ্য এবং যাতায়াত কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ ও নিবৃত্ত করার সর্বাত্মক পদক্ষেপ নেয়ার পাশাপাশি ভারত ফেরত করোনা রোগীদের চলাচলের নিষেধাজ্ঞা কঠোরভাবে বলবৎ করতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।