Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার দাবি শিক্ষার্থীদের

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৫ মে, ২০২১, ১২:০০ এএম

করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে গত বছরের ১৮ মার্চ থেকে বন্ধ রয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। দফায় দফায় এই ছুটি বাড়িয়ে আগামী ২৯ মে পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্টরা বলছে এই ছুটি আরও এক দফা বাড়ানো হবে দু’এক দিনের মধ্যে। এদিকে করোনার কারণে দীর্ঘদিন ধরে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়সহ সবধরণের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছেন শিক্ষার্থীরা। অনলাইন মাধ্যমে ক্লাস চালুর কথা বলা হলেও তার সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত বেশিরভাগ শিক্ষার্থী, আবার অনলাইন ক্লাসের পড়াশুনা নিয়েও রয়েছে নানা অভিযোগ। অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চশিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় পড়েছেন চরম বিপাকে। ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ থাকায় বাড়ছে সেশন জট, পিছিয়ে পড়ছে চাকরির ক্ষেত্রে, বেড়ে যাচ্ছে বয়স, অনেকের শেষ হয়ে যাচ্ছে চাকরিতে আবেদনের সময়সীমা। এছাড়া অর্থনৈতিক সঙ্কট, মানসিক চাপও বাড়ছে ব্যাপক হারে। এই অবস্থায় শিক্ষার্থীদের স্বার্থে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর হল ও ক্যাম্পাস খুলে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এই দাবিতে গতকাল সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
তারা মানববন্ধনে বলেন, দীর্ঘদিন হল ও ক্যাম্পাস বন্ধ থাকায় বিভিন্ন কারণে আমরা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছি। এক সময় আমাদের মানসিক বিকারগ্রস্থ হয়ে আত্মহত্যা করা ছাড়া কোন উপায় থাকবে না। তাই, হল-ক্যাম্পাস খুলে দিন, নয়ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থায়ীভাবে বন্ধ ঘোষনা করে আমাদের দড়ি দিন, আমরা সেই দড়ি গলায় দিয়ে আত্মহত্যা করবো।
শিক্ষার্থীরা বলেন, করোনার কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দেশের শিক্ষাব্যবস্থা, নেমে এসেছে স্থবিরতা। দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীদের বেশির ভাগই প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে আসা। তাদের কেউ টিউশন করে, কেউবা পার্টটাইম কাজ করে পড়াশোনার খরচ জোগাড় করে এবং অনেকে বাড়িতে টাকা পাঠিয়ে পরিবারের সদস্যদের ভরণপোষণের দায়িত্ব পালন করে থাকেন। করোনার কারণে দীর্ঘদিন ধরে বাড়িতে থাকায় শিক্ষার্থীরা যেমন আর্থিক কষ্টে দিনাতিপাত করছেন, তেমনি তাদের পড়াশোনার ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। সরকার শিক্ষার্থীদের অনলাইনভিত্তিক পড়াশোনার ব্যবস্থা করে দিলেও নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের শিক্ষার্থীরা ল্যাপটপ ও ব্যয়বহুল ইন্টারনেটের কারণে অনলাইন ক্লাসে অংশগ্রহণ করতে পারছেন না। আবার স্কুল-কলেজের শিশু শিক্ষার্থীরা অত্যধিক অনলাইন ব্যবহারে আসক্ত হয়ে পড়ছে। অনেকে বিভিন্ন ধরনের সাইবার অপরাধে নিজেদের জড়িয়ে ফেলছে। এতে সামাজিক অবক্ষয় বাড়ছে।
পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শামসুল ইসলাম বলেন, এভাবে বছরের পর বছর ক্যাম্পাস বন্ধ করে বহু ছাত্র-ছাত্রীকে মানসিকভাবে অসুস্থ করে দেয়া হচ্ছে, যার মাধ্যমে সৃষ্টি হচ্ছে একটি মানসিক অসুস্থ ভবিষ্যত প্রজন্ম। এই ক্ষতি করোনায় ক্ষয়ক্ষতির তুলনায় অনেক গুণ বেশি, যা বহন করতে হবে যুগের পর যুগ।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জি কে সাদিক বলেন, শহরে না হয় অনলাইনের কল্যাণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ছাত্রছাত্রীরা সংযুক্ত আছে। কিন্তু লাখ লাখ ছাত্রছাত্রী যারা গ্রামে বসবাস করে, তাদের কথা কেউ কি কখনো ভেবে দেখেছি? বেশির ভাগ নিম্ন আয়ের পরিবারের সন্তানেরা হয়তো আর স্কুলেই ফিরতে পারবে না। অনেকেই হয়তো উপার্জনের পথ বেছে নিয়েছে।
তিনি বলেন, “ক্যাম্পাস খুললে করোনা হবে, কিন্তু বন্ধ থাকলে হবে না” এমন একটি ভিত্তিহীন তত্ত্বের উপর ভিত্তি করে এভাবে লাখ লাখ শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন ধ্বংস করা কখনই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।
তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী নূর মোহাম্মদ সুমন বলেন, এতদিন টিকার কথা বলে আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়েছে। বলা হচ্ছে, টিকা দিলে করোনা হবে না, তাই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা যাবে। অথচ দেখা যাচ্ছে, দুই ডোজ টিকা নিয়েও অনেকের করোনা হচ্ছে। তারমানে টিকা দিলেও করোনা চলে যাবে, এমনটা নয়। তাই টিকার জন্য বছর বছর বসে থাকার কোন মানে হয় না। বরং টিকার জন্যে অপেক্ষা মানে হয়রানি বৃদ্ধি ও শিক্ষা জীবন ধ্বংস করার নামান্তর। শিক্ষার্থীরা এ অতিদ্রুত সময়ের মধ্যেই সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বিশ্ববিদ্যালয় হল-ক্যাম্পাস খোলার দাবী জানান। নয়ত দেশ জুড়ে একযোগে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। মানবন্ধনে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্য আরও বক্তব্য রাখেন- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাফায়েত রতন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইব্রাহীম চৌধুরী মুন্না, ইডেন মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী মারুফা প্রীতি, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মুহাম্মদ নাসির, মানারাত ইন্টা: ইউনিভার্সিটির রাশেদুল ইসলামসহ আরো অনেকে।
এদিকে একই দাবিতে মানববন্ধন করেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। গতকাল দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার সংলগ্ন রাস্তায় মানববন্ধনে শিক্ষার্থীদের সার্বিক দিক বিবেচনা করে শিগগির শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার দাবি জানান তারা।
রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থী ইকবাল হোসেন বলেন, বাংলাদেশের সবকিছুই যদি স্বাস্থ্যবিধি মোতাবেক খোলা হয়ে থাকে, তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কেন খোলা হবে না? সেশনজট, লকডাউন মিলিয়ে এক বর্ষেই তিন বছর পার করে ফেলেছি। এখন শুধুই হতাশা বাড়ছে। শুধুমাত্র সুষ্ঠু পরিকল্পনা না থাকার কারণেই আমরা আজকে এই সমস্যায় পড়েছি। শিগগির বিশ্ববিদ্যালয় খোলার দাবি জানাচ্ছি।
চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থী নাহিদুল ইসলাম বলেন, ২০১৯ সাল থেকে আজ পর্যন্ত তৃতীয় বর্ষেই আছি। শপিংমল থেকে শুরু করে সবকিছুই কমবেশি খোলা আছে। বন্ধ শুধু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ###



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ