Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দু’বার জিডি করেও শেষ রক্ষা হয়নি সেই সাহিনুদ্দিনের

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২৪ মে, ২০২১, ১২:০০ এএম

রাজধানীর পল্লবীতে খুন হওয়া ব্যবসায়ী সাহিনুদ্দিন। কিন্তু হত্যাকান্ডের আগে নিজের ও পরিবারের নিরাপত্তা চেয়ে থানায় দুইবার সাধারণ ডায়রি (জিডি) করেছিলেন। কিন্তু এতেও শেষ রক্ষা হয়নি তার। অবশেষে গত ১৬ মে আরেক দফা হামলায় প্রাণ হারাতে হয়েছে তাকে।

জানা গেছে, গত ছয় বছরে তিনবার হামলার শিকার হয়ে এবং অসংখ্য বার হত্যার হুমকি পেয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছিলেন রাজধানীর পল্লবীতে খুন হওয়া ব্যবসায়ী সাহিনুদ্দিন। এছাড়াও গত নভেম্বরেও সংঘবদ্ধ একদল দুর্বৃত্ত সাহিনুদ্দিনের ওপর হামলা চালায়। সেবার প্রাণে বেঁচে গেলেও এবার আর ভাগ্য সহায় হয়নি। ওই একই দলের হামলায় ঘটনাস্থলেই নিহত হয়েছেন তিনি। সাহিনুদ্দিনের মা আকলিমা বেগমের অভিযোগ, পুলিশের অবহেলাই তার ছেলের মৃত্যুর কারণ।
তিনি বলেন, এমন হামলাকারীদের কাছ থেকে পুলিশ আর্থিক সুবিধা নেয়। এ জন্যই আমার ছেলেকে মরতে হয়েছে। জিডি করার পরও পুলিশ তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। ঘটনাস্থলের পাশেই চার-পাঁচজন পুলিশ ছিল। কিন্তু, তারা তাকে বাঁচানোর কোনো চেষ্টাই করেনি। পুলিশ নিরাপত্তা দিলে তার নাতিকে এখন এতিম হতে হতো না বলে মন্তব্য করেন আকলিমা।
পল্লবী থানার পুলিশ ওসি কাজী ওয়াজেদ আলী বলেন, নিরাপত্তা চেয়ে থানায় পৃথক দু’টি জিডি করেছিলেন সাহিনুদ্দিন। কিন্তু, পুলিশ বিস্তারিত তথ্য জানতে চাইলে তিনি আর থানায় আসেননি। ওসি বলেন, কী ধরনের নিরাপত্তা চাওয়া হচ্ছে জানতে এরপর আমরা পুলিশের একটি টিম পাঠাই তার বাড়িতে। পরে জানতে পারি, জিডি করার পর তিনি নিজেই হামলাকারীর সঙ্গে দেখা করতে গেছেন। তাই পুলিশের আর কিছু করার ছিল না এ বিষয়ে। খুনের ঘটনাস্থলের পাশে পুলিশের উপস্থিতির ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওই স্থানের কাছাকাছি কোনো পুলিশ ছিল না। ঘটনার ব্যাপারে জানা মাত্রই পুলিশ ব্যবস্থা নিয়েছে।
হত্যার পটভূমি: পল্লবীর উত্তর কালশীর বুড়িরটেকের আলিনগর এলাকায় লক্ষ্মীপুর-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এম এ আউয়ালের ‘আলিনগর আবাসিক এলাকা’ নামের একটি প্রকল্প আছে। প্রকল্পের সীমানার ভেতর সাহিনুদ্দিনের পরিবারের প্রায় দশ একর জমি রয়েছে। এটি হাভেলি প্রোপার্টি ডেভেলপার লিমিটেড পরিচালিত একটি প্রকল্প। ওই জমি বিক্রি করার জন্য সাহিনুদ্দিনের বাবা জয়নুদ্দিনকে দীর্ঘদিন ধরে চাপ দিয়ে আসছিল হাভেলি প্রোপার্টি। পরিবারের অভিযোগ, জয়নুদ্দিন জমি বিক্রি করতে রাজি না হওয়ায় আউয়াল পেশী শক্তি প্রয়োগ করতে শুরু করেন।
২০১৫ সালের শুরুর দিকে ঢাকার একটি আদালতে এ বিষয়ে মামলা করেন জয়নুদ্দিন। এ মামলা নিয়ে সাবেক এমপি আওয়ালের সঙ্গে জয়নুদ্দিনের ছেলে সাহিনুদ্দিন ও মাইনুদ্দিন বিরোধে জড়িয়ে পড়েন। আওয়াল তার ‘ক্যাডারদের’ ব্যবহার করে দুই ভাইকে ভয় দেখাতে শুরু করেন। ক্রমাগত হুমকি পেয়ে একই বছরের জুনে তাদের মা নিরাপত্তা চেয়ে একটি জিডি করেন। এরপর থেকে আউয়ালের লোকজন কয়েক দফায় সাহিনুদ্দিনের ওপর হামলা চালিয়েছে।
সাহিনুদ্দিনের পরিবারের দাবি, গত বছরের নভেম্বরে চাপাতি হামলার শিকার হওয়ার পর সাহিনুদ্দিন পল্লবী থানায় মামলা করতে গেলেও পুলিশ মামলা নেয়নি। এমনকি হামলাকারী সুমনকে আটকের কয়েকদিন পরেই ছেড়ে দেয়া হয়।
এদিকে, তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, ঘটনার তিন-চার দিন আগে হামলাকারীরা আউয়ালের কলাবাগান অফিসে বসে সাহিনুদ্দিনকে হত্যার পরিকল্পনা করে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জিডি

১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ