পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
চুরি ও অফিসিয়াল সিক্রেটস আইনে করা মামলায় সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের জামিন বিষয়ে আদেশের জন্য আগামী রোববার দিনধার্য করা হয়েছে। একই সাথে রাষ্ট্রপক্ষের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উপস্থাপনের জন্য এ দিনও ধার্য করেছেন আদালত। গতকাল বৃৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর হাকিম বাকী বিল্লার ভার্চুয়াল আদালতে সাংবাদিক রোজিনার জামিনের শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। রোজিনার পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী এহসানুল হক সমাজিসহ কয়েকজন। অপরদিকে রাষ্ট্রপক্ষের জামিনের বিরোধিতা করেন অ্যাডভোকেট হেমায়েত উদ্দিন হিরোন। আদালত শুনানি শেষে রাষ্ট্রপক্ষের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উপস্থাপন ও জামিন বিষয়ে আদেশের জন্য আগামী রোববার দিনধার্য করেন। গতকাল আদালতের সামনে গণমাধ্যমকর্মীরা ভিড় করেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও সেখানে ছিলেন। আদালতের বাইরে অপেক্ষায় ছিলেন, রোজিনা ইসলামের স্বামী মনিরুল ইসলাম ও স্বজনরা।
এর আগে গত মঙ্গলবার ১৮ মে রোজিনা ইসলামের রিমান্ড আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত। একই সঙ্গে তার জামিন শুনানির জন্য বৃহস্পতিবার দিনধার্য করেন আদালত। সেদিন সকালে তাকে আদালতে হাজির করে পাঁচদিনের রিমান্ডের আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শাহবাগ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আরিফুর রহমান সরদার। অন্যদিকে তার আইনজীবী প্রশান্ত কুমার কর্মকার তার জামিন চেয়ে আবেদন করেন। শুনানি শেষে বিচারক তার রিমান্ড আবেদন নামঞ্জুর করেন। একই সঙ্গে তার জামিন শুনানির জন্য বৃহস্পতিবার দিনধার্য করেন। এরপর রোজিনার আইনজীবী প্রশান্ত কুমার কর্মকার তার চিকিৎসার জন্য আবেদন করেন। আদালত কারাবিধি অনুযায়ী তার চিকিৎসার জন্য নির্দেশ দেন। এরপর প্রিজন ভ্যানে তাকে গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় মহিলা কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। বর্তমানে তিনি সেখানেই রয়েছেন।
রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে সোমবার ১৭ মে রাতে শাহবাগ থানায় মামলা করা হয়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অভিযোগের ভিত্তিতে মামলাটি করেন স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের উপসচিব ডা. মো. শিব্বির আহমেদ উসমানী। সচিবালয়ে দীর্ঘ ৫ ঘণ্টা আটকে রাখার পর সোমবার রাত ৯টার দিকে রোজিনা ইসলামকে শাহবাগ থানায় আনা হয়। তার বিরুদ্ধে অনুমতি ছাড়া মোবাইল ফোনে সরকারি গুরুত্বপূর্ণ নথির ছবি তোলা এবং আরও কিছু নথি লুকিয়ে রাখার অভিযোগ এনেছে মন্ত্রণালয়।
দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে সুকৌশলে, অসৎ উদ্দেশে ডকুমেন্ট সংগ্রহ : রোজিনা ইসলাম দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে সুকৌশলে, অসৎ উদ্দেশে ডকুমেন্ট সংগ্রহ করেছেন। সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের জামিন শুনানি শেষে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট হেমায়েত উদ্দিন হিরণ একথা বলেন। বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকা মহানগর হাকিম বাকী বিল্লার ভার্চুয়াল আদালতে উভয়পক্ষের শুনানি শেষ হয়।
জামিন শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী যুক্তি উপস্থাপন করে আদালতকে বলেন, এ মামলাটি অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টসহ দন্ডবিধির ৩৭৯ এবং ৪১১ ধারার মামলা। যেগুলো সমস্ত জামিন অযোগ্য ধারার মামলা। অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টের ৩ এবং ৫ ধারায় ১৪ বছর থেকে মৃত্যুদন্ড পর্যন্ত সাজার বিধান রয়েছে। আর যেহেতু এই আসামি করোনার সময়ে দেশের গোপন নথি কোনো অনুমতি ছাড়াই সেগুলো তার শরীরে বিভিন্ন জায়গায় লুকিয়ে রেখেছেন এবং সেখান থেকে ছবি তুলে নিয়েছেন। সেই কারণেই তাকে গ্রেফতার করা হয় এবং সঙ্গত কারণেই তিনি এই ধারাগুলোর অপরাধ করেছেন।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আরো বলেন, আমরা লক্ষ্য করেছি যখন প্রধানমন্ত্রী এই করোনার সময়ে দেশের মানুষকে বাঁচানোর জন্য বিভিন্নভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছেন, যখন ভারত থেকে করোনার টিকা আসা বন্ধ হয়ে গেছে, ঠিক তখনই তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন- চীন এবং রাশিয়া থেকে টিকা আনার জন্য। এ নিয়ে মন্ত্রিসভায় যখন সিদ্ধান্ত হয়, সেখানে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ছিল। ঠিক সেই মুহূর্তে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য, দেশের নিরাপত্তা হুমকির মুখে ফেলে দেয়ার জন্য সুকৌশলে আসামি অসৎ উদ্দেশ্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ডকুমেন্টগুলো সংগ্রহ করেছে।
সেজন্য আমরা বিজ্ঞ আদালতকে বলেছি, এই মামলাটি যেহেতু তদন্তের প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে, তাই মামলা নিষ্পত্তি হওয়া আগ পর্যন্ত, তথ্য উদ্ঘাটন হওয়ার আগ পর্যন্ত তার জামিন না মঞ্জুর করে জেল হাজতে রাখার জন্য আবেদন করেছি। তিনি বলেন, আমরা ভিডিওতে দেখেছি রোজিনা ইসলাম তার অপরাধ স্বীকার করে ক্ষমা চেয়েছেন এবং মুচলেকা দিতে চেয়েছেন। সেই ভিডিওটি আমরা আদালতে শিগগিরই উপস্থাপন করব। আদালত সেগুলো বিবেচনা করে আদেশ দেবেন বলে জানিয়েছেন।
মামলা তদন্তে কোনো চাপ নেই : ডিবি : রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার তদন্তে কোনো ধরনের চাপ নেই বলে জানিয়েছেন ডিএমপির ডিবি রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার এইচ এম আজিমুল হক। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মামলা তদন্ত করতে কোনো জায়গা থেকে কোনো চাপ নেই। মামলার তদন্তের স্বার্থে যা যা করা দরকার, তার সবই করা হবে। মামলাটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও সুন্দরভাবে তদন্ত হবে। এর আগে বুধবার ১৯ মে রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে অফিশিয়াল সিক্রেসি অ্যাক্টে দায়ের করা শাহবাগ থানার মামলাটির তদন্তভার ডিবিতে হস্তান্তর করা হয়।
ডিআরইউ প্রাঙ্গণে প্রতিবাদ সমাবেশ : সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ তদন্তের জন্য বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠনের দাবি জানিয়েছে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ)। একইসঙ্গে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়ায় শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলকে ডিআরইউ প্রাঙ্গণে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছেন ডিআরইউ নেতারা।
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি মুরসালিন নোমানী বলেন, রোজিনা ইসলামের ওপর হামলার ঘটনার তদন্তের জন্য বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করতে হবে এবং সেখানে অবশ্যই সাংবাদিক প্রতিনিধি থাকতে হবে। কারণ, যারা রোজিনা ইসলামকে মেরেছেন, তারা তদন্ত করবেন, সেটি হতে পারে না।
ডিআরইউর সাধারণ সম্পাদক মসিউর রহমান খান বলেন, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে স্ট্যাটাস দিয়েছেন। আমরা ডিআরইউ প্রাঙ্গণে তাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করছি। ডিআরইউর কোনো অনুষ্ঠানে তাকে অতিথি করা হবে না। তাকে অতিথি করলে ডিআরইউতে মিলনায়তন ভাড়া দেয়া হবে না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।