Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

যে ছয় রোজা সারাবছর রোজা রাখার সাওয়াব দেয়

উসমান বিন আ.আলিম | প্রকাশের সময় : ২১ মে, ২০২১, ১২:০৪ এএম

রহমত, মাগফেরাত, নাজাতের মাস রমজান পেরিয়ে আরেক মাসের আগমন। আরবি চান্দ্রমাসের হিসেবে এটা দশম মাস। এই মাসের নাম শাওয়াল।বরকতময় ও ফযিলতপূর্ণ মাস রমাজানের পর শাওয়াল মাস অন্যতম। এই মাসের সাথে সম্পৃক্ত আছে ঈদুল ফিতরের,ফিতরা আদায় করার,ছয় রোজা রাখার,আছে হজ্বের সাথে সম্পৃক্তও। এই মাসের অন্যান্য আমলের মধ্যে ছয় রোজা রাখারও কথা রয়েছে।
‘শাওয়াল’ আরবি শব্দ। এর অর্থ হলো: উঁচু করা, উন্নতকরণ, উন্নত ভূমি, পাল্লা ভারী হওয়া, গৌরব করা, প্রার্থনায় হস্ত উত্তোলন করা বা ভিক্ষায় হস্ত প্রসারিত করা। এই মাসের আমলের দ্বারা উন্নতি লাভ হয়; নেকির পাল্লা ভারী হয়; গৌরব অর্জন হয় ও সাফল্য আসে।
শাওয়ালের ছয় রোজার বিধান: অধিকাংশ ওলামায়ে কেরামের মতে শাওয়ালের ৬টি রোজা রাখা সুন্নত। ফরজ বা ওয়াজিব নয়। কিন্তু এগুলোকে পরিভাষায় নফল রোজা বলে। কারণ, এগুলো ফরজ ও ওয়াজিব নয়, অতিরিক্ত তথা নফল। হজরত ইবনে মোবারক (রহ.) বলেন, প্রতি মাসের ৩ দিন রোজা রাখার মতো শাওয়ালের ৬ দিন রোজা রাখাও ভালো আমল। আল্লাহ তায়ালা ফরজ ইবাদতের পর সুন্নত ও নফল ইবাদতের প্রতি উৎসাহ ও নির্দেশনা দেন।
শাওয়ালের ছয় রোজা রাখার ফজিলত : শাওয়ালের এই ছয় রোজার ফজিলত অন্যতম। এই ছয় রোজা রাখার কারণে আল্লাহ তায়া’লা বান্দাকে প্রতিদান হিসেবে সারা বছর রোজা রাখার সাওয়াব দেন। যেমন এক হাদীসে হজরত আবু আইউব আনসারী (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, প্রিয় নবী (সা.) এরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি রমজান মাসে রোজা রাখল এবং এ রোজার পর শাওয়াল মাসে ছয়টি রোজা রাখল সে যেন গোটা বছর রোজা রাখল।’ ( মুসলিম : ১১৬৪)। অন্য এক হাদিসে হযরত সাওবান (রা.) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, রমজানের রোজা দশ মাসের রোজার সমতুল্য আর (শাওয়ালের) ৬ রোজা দু’মাসের রোজার সমান।’ (নাসায়ি : ২/১৬২)।
এক বছরের রোজার সওয়াব এভাবে হয় যে, আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনুল কারিমের সুরা আনআমের ১৬০ নাম্বার আয়াতে এরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি একটি নেক কাজ করবে সে দশগুণ বেশি সওয়াব পাবে।’ সে হিসেবে রমজানুল মোবারকের ত্রিশ রোজা তিনশ রোজার সমান হলো। আর শাওয়ালের ৬টি রোজা ষাট রোজার সমান। এভাবে ৩৬টি রোজা বছরের মোট তিনশ ষাটটি রোজার সমান হয়ে গেল। তাহলে আমরা এই ছয়টি রোজা রাখার মাধ্যমে সারা বছর রোজা রাখার সাওয়াব পেয়ে যাই। এই বিষয়টি আরেকটি হাদিস থেকে আরো স্পষ্ট হয়। যেমন, এক হাদীসে বর্ণিত হয়েছে: হযরত উবাইদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, একদিন রাসূল (সা.) কে জিজ্ঞাস করলাম,‘ইয়া রাসূলাল্লাহ আমি কি সারা বছর রোজা রাখতে পারব? তখন রাসূল (সা.) বললেন, তোমার উপর তোমার পরিবারের হক রয়েছে, কাজেই তুমি সারা বছর রোজা না রেখে রমজানের রোজা রাখ এবং রমজানের পরবর্তী মাস শাওয়ালের ৬ রোজা রাখ, তাহলেই তুমি সারা বছর রোজা রাখার সওয়াব পাবে’ (তিরমিজি : ১/১৫৩৪)।
ছয় রোজা রাখার উপকারিতা : রোয়া রাখার উপকারিতার তো শেষ নেই। আমরা অনেক উপকারের কথাই তো জানি। কিন্তু এই নফল রোজার ফজিলতও অন্যতম। যেমন রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘কেয়ামতের দিন মানুষের আমলের মধ্যে সর্বপ্রথম নামাজের হিসাব নেয়া হবে। তিনি আরো বলেন, আমাদের রব ফেরেশতাদেরকে বলেন অথচ তিনি সবকিছু জানেন- তোমরা আমার বান্দার নামাজ দেখ, সেকি নামাজ পূর্ণভাবে আদায় করেছে- নাকি নামাজে ঘাটতি করেছে। যদি পূর্ণভাবে আদায় করে থাকে তাহলে পূর্ণ নামাজ লেখা হয়। আর যদি কিছু ঘাটতি থাকে তখন বলেন, দেখ আমার বান্দার কোন নফল নামাজ আছে কিনা। যদি নফল নামাজ থাকে তখন বলেন,নফল নামাজ দিয়ে বান্দার ফরজের ঘাটতি পূর্ণ কর। এরপর অন্য আমলের হিসাব নেয়া হবে। (আবু দাউদ)।
অন্য এক হাদীসে এসেছে, হজরত সুফিয়ান ছাওরি (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি মক্কায় তিন বছর ছিলাম। মক্কাবাসীর মধ্য থেকে জনৈক ব্যক্তি প্রত্যহ জোহরের সময় মসজিদে হারামে এসে বাইতুল্লাহ তওয়াফ করার পর নামাজ পড়ে আমাকে সালাম দিয়ে চলে যায়। ফলে তার ও আমার মাঝে হৃদ্যতা ও সম্প্রীতির সৃষ্টি হয়। হঠাৎ সে অসুস্থ হয়ে পড়লে আমাকে ডাকল এবং বলল, আমি মারা গেলে তুমি আমাকে নিজ হাতে গোসল দেবে, নামাজ পড়বে এবং দাফন দেবে। ওই রাতে তুমি আমাকে কবরে একাকী রেখে চলে আসবে না। তুমি আমার কবরের কাছে রাতযাপন করবে এবং মুনকার-নকিরের সওয়ালের সময় আমাকে সহায়তা করবে। সুতরাং আমি তাকে নিশ্চয়তা দিই। আমি তার আদেশ মোতাবেক তার কবরের কাছে রাতযাপন করি। আমি তন্দ্রাচ্ছন্ন ছিলাম।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ