পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
করোনাভাইরাস অতিমারীতে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ক্ষতি নজিরবিহীন। জাতিসংঘের এক প্রতিবেদন অবলম্বনে এপি’র এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাসের কারণে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ক্ষতি ১৯২৯ এবং ২০০৯ সালের মহামন্দার চেয়েও অনেক বেশি। এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০২০ সালে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ক্ষতির পরিমান ৮৫ হাজার কোটি টাকা। পশ্চিমা সমৃদ্ধ অর্থনীতির তুলনায় এ অঙ্ক খুব বেশি না হলেও করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ আগের চেয়ে ভয়ঙ্কর রূপে আবির্ভুত হওয়া এবং তা চলমান অবস্থায় তৃতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কা আমাদের অর্থনীতির জন্য বড় অশনিসংকেত হিসেবে দেখা দিয়েছে। তবে আশার কথা এই যে, করোনা বিশ্ব অর্থনীতি টালমাটাল ও স্থবির হয়ে পড়লেও বাংলাদেশের প্রধান রফতানিমুখী খাত গার্মেন্ট শিল্প পুরোপুরি বন্ধ হয়নি। অনেক ঝুঁকি নিয়েই রফতানিমুখী শিল্পকারখানাগুলোর বেশিরভাগ এই করোনাকালেও চালু রাখা হয়েছে। এরপরও শত শত কোটি ডলারের ক্রয়াদেশ বাতিল ও পেমেন্ট পরিশোধে কালক্ষেপনের কারণে অনেক গার্মেন্ট কারখানা লোকসানের মুখে বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। তবে করোনাভাইরাসের বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক বাস্তবতা বাংলাদেশের জন্য কিছু নতুন সম্ভাবনাও জাগিয়ে তুলেছে। বিশেষত ভারতে করোনার ক্রমবর্ধমান সংক্রমণ ও মৃত্যুর ধারাবাহিক রেকর্ড ও বø্যাক ফাঙ্গাস সংক্রমণের ঝুঁকি এবং মিয়ানমারে রাজনৈতিক সংঘাতের কারণে দক্ষিণ এশিয়ায় বিকল্প সোর্স কান্ট্রি হিসেবে বাংলাদেশের সম্ভাবনা বেড়ে গেছে।
একদিকে সতর্কতামূলক লকডাউন, অর্থনৈতিক কার্যক্রম সীমিত পর্যায়ে চালু রাখার মধ্যেও শ্রমঘন গার্মেন্ট কারখানা চালু রেখে দেশের রফতানী আয় ও অর্থনীতির চাকা সচল রাখার ঝুঁকি গ্রহণ করেছে সরকার ও উদ্যোক্তারা। তবে কিছু শৈথিল্য সত্তে¡ও গণপরিবহনসহ নানা ক্ষেত্রে লকডাউনের ইতিবাচক প্রভাব এখন অনেকটা স্পষ্ট। ভারতের ভয়াবহ ভ্যারিয়েন্টের প্রভাব এবং সংক্রমণের হার এখনো নিয়ন্ত্রিত রয়েছে। এটি ধরে রেখে যথাযথ প্রক্রিয়ায় আশঙ্কা মোকাবেলা করা গেলে আমাদের অর্থনৈতিক ক্ষতি পুরণ করে নতুন সম্ভাবনা কাজে লাগানো হয়তো অসম্ভব হবে না। দেশের তৈরী পোশাক খাতের উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিজিএমইএ’র পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, গত বছর করোনা অতিমারির কারণে আকষ্মিকভাবে প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকার ক্রয়াদেশ বাতিল হয়েছিল। চলতি অর্থবছরের ১০ মাসে প্রায় ২ হাজার ৬০ কোটি ডলারের তৈরী পোশাক রফতানি হয়েছে, যা’ গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৬.২৪ ভাগ বেশি। চলতি অর্থবছরের এপ্রিল মাসে পণ্য রফতানির পরিমান ছিল গত অর্থবছরের তুলনায় ৬ গুণ। করোনাভাইরাস অতিমারি মোকাবেলা করে রি-ওপেন বা পশ্চিমা অর্থনীতি ও জীবনযাত্রায় নতুন গতি সঞ্চারিত হওয়ায় অপেক্ষাকৃত কম ঝুঁকিপূর্ণ বাজার হিসেবে বাংলাদেশের প্রতি তাদের আগ্রহ বেড়ে যাওয়ায় এ সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। ভারতে করোনায় টোটাল লকডাউন আর মিয়ানমারের রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে সেখান থেকে পশ্চিমা ক্রয়াদেশের একটা অংশ বাংলাদেশে স্থানান্তরিত হওয়ায় দেশের রফতানি খাতে সুবাতাস বইছে। করোনা ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের আশঙ্কা মোকাবেলা করে রফতানিখাতের সম্ভাবনা কাজে লাগানো অনেক বড় চ্যালেঞ্জ।
মুক্তবাজার অর্থনৈতিক বিশ্ব বাণিজ্য সব সময়ই তীব্র প্রতিযোগিতার সম্মুখীন। প্রতিটি সুযোগকে যথাযথ প্রক্রিয়ায় কাজে লাগাতে পারলেই সাফল্য ধরা দেয়। চীন থেকে শুরু হয়ে ইউরোপ-আমেরিকায় করোনাভাইরাস অতিমারির ভয়াবহ প্রাণঘাতী রূপ সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষাপটে করোনাভাইরাস মোকাবেলাকেই আগামী দিনের অর্থনীতির প্রধান নিয়ামক শক্তি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে অনেকভাবে এগিয়ে থেকেও পিছিয়ে পড়তে দেখা গেছে। বিশেষত করোনার ভ্যাকসিনেশন প্রকল্প শুরুতেই হোঁচট খেয়ে এক প্রকার অনিশ্চয়তা ভর করেছে। মোদ্দা কথা, বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক বাস্তবতায় রফতানি খাতের চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনাকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে করোনাভাইরাস মোকাবেলা, করোনা চিকিৎসা এবং সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। পশ্চিমা অর্থনীতির পাশাপাশি মধ্যপ্রাচ্যের অর্থনীতিতেও নতুন গতি ফিরতে শুরু করেছে। এহেন বাস্তবতায় আমাদের বৈদেশিক কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে বিদ্যমান প্রতিবন্ধকতাসমুহ দুর করার নতুন উদ্যোগ নিতে হবে। করোনাকালে নতুন বৈদেশিক কর্মসংস্থান ব্যহত হলেও প্রবাসি শ্রমিকদের রেমিটেন্স প্রবাহে ততটা নেতিবাচক প্রভাব পড়েনি। করোনাভাইরাস, ফিলিস্তিন-ইসরাইল সংকটসহ নতুন বিশ্ববাস্তবতায় সম্ভাব্য সব ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্ভাবনা কাজে লাগানোর সর্বাত্মক নিরলস প্রয়াস চালাতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।