Inqilab Logo

শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মোদির গ্রামীণ ভারত করোনায় দিশেহারা

বেরিয়ে পড়েছে স্বাস্থ্য পরিষেবার কঙ্কালসার চেহারা একদিনে রেকর্ড ৪৫২৯ জনের মৃত্যু

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২০ মে, ২০২১, ১২:০০ এএম

গ্রামীণ স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর কঙ্কালসার চেহারা বের করে দিল কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউ। প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র রয়েছে, চিকিৎসা পরিষেবা নেই। কোভিড পরীক্ষা বাধ্যতামূলক হলেও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেই। অসুস্থকে জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার বন্দোবস্ত নেই। সর্বশেষ মৃত্যু হলে সৎকারের লোক নেই। অগত্যা, গ্রামবাসীরা স্বজনদের লাশ হয় গঙ্গায় ভাসিয়ে দিচ্ছেন, নতুবা ফাঁকা মাঠে সামান্য মাটি খুঁড়ে পুঁতে দিতে বাধ্য হচ্ছেন। সবমিলিয়ে কোভিড মহামারির মোকাবিলায় দিশাহারা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির গ্রামীণ ভারত।

এদিকে গত সপ্তাহে সংক্রমণের চূড়া থেকে ৩ লাখের নিচে নেমে এলেও ফের খানিকটা বেড়েছে আক্রান্তের সংখ্যা। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বুলেটিন অনুযায়ী, ভারতে গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ২ লাখ ৬৭ হাজার ৩৩৪ জন। ফের রেকর্ড গড়েছে দৈনিক মৃত্যু। একদিনে মৃত্যু হয়েছে ৪৫২৯ জনের। তবে আশা জাগাচ্ছেন করোনাজয়ীরা। একদিনে কোভিডমুক্ত হয়েছেন ৩ লাখ ৮৯ হাজার ৮৫১ জন। এখনও উদ্বেগ বাড়াচ্ছে দেশে অ্যাক্টিভ রোগীর সংখ্যা। এ মুহূর্তে দেশটিতে চিকিৎসাধীন ৩২ লাখ ২৬ হাজার ৭১৯ জন। করোনার তৃতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কায় সাবধানবাণী শোনাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।

ভারতের গ্রামীণ পরিস্থিতি জানতে বিজেপির ডবল ইঞ্জিনে চলা উত্তরপ্রদেশের কথা ধরা যাক। সম্প্রতি পঞ্চায়েত ভোট পেরিয়ে এসেছে যোগী-রাজ্য। সিংহভাগ পঞ্চায়েতে ভরাডুবি হয়েছে গেরুয়া শিবিরের। ফলে ওইসব পঞ্চায়েত এলাকায় কোভিড রোধে নাকি মন নেই স্থানীয় প্রশাসনের। এমনই অভিযোগ উঠেছে উত্তরপ্রদেশের বাসি পঞ্চায়েত থেকে। দিল্লি থেকে মাত্র দেড় ঘণ্টার পথ বাসি। গত কয়েকদিন ধরে কোভিডের বেয়াড়াপনা এখানে ভয়াবহ। আক্রান্তের সংখ্যা ৫ হাজার ৪০০। মৃত্যু হয়েছে ৩০ জনেরও বেশি। এখনও প্রতিদিনই আক্রান্তের সংখ্যা লাফিয়ে বাড়ছে। অথচ, চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে হাত গুটিয়ে স্থানীয় প্রশাসন। গ্রামে চিকিৎসকের দেখা নেই। স্বাস্থ্যকেন্দ্রে অক্সিজেন নেই। বিনা চিকিৎসায় বাড়িতেই পড়ে থাকতে হচ্ছে আক্রান্তদের। কপালজোরে কেউ সুস্থ হচ্ছেন। কপাল মন্দ হলে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছেন কেউ কেউ। গ্রামে ডিজিটাল ইন্ডিয়ার পরিষেবাও পৌঁছায়নি। যাকে ব্যবহার করে অন্তত সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘শহর ভারত’-এর কাছে সাহায্যের প্রার্থনা করবেন গ্রামবাসীরা। বাসিতে সদ্য নির্বাচিত ফার্মিং কমিটির সদস্য সঞ্জীব কুমার আক্ষেপের সুরে বলছিলেন, ‘গ্রামে কোভিড আক্রান্তদের মৃত্যুর বড় কারণ অক্সিজেনের অভাব। প্রবল শ্বাসকষ্টে মারা যাচ্ছেন বহু মানুষ।’

কোভিড বিধ্বস্ত গ্রামীণ ভারতে বাসি একটি উদাহরণ মাত্র। একইভাবে উত্তরপ্রদেশে স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর অভাবে ধুঁকছে গ্রামের পর গ্রাম। পাঞ্জাব, হরিয়ানা, মধ্যপ্রদেশ, কর্ণাটক, মহারাষ্ট্র, হিমাচল প্রদেশ, গুজরাত, অন্ধ্রপ্রদেশসহ একাধিক রাজ্যের ছবিটা কমবেশি একই রকম। শহর ও শহরতলির সঙ্গে একরকম টেক্কা দিয়ে দেশের প্রায় প্রতিটি গ্রামে হু হু করে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। প্রতিদিনই কোনো না কোনো গ্রাম থেকে সক্রিয় আক্রান্ত কিংবা মৃত্যুর খবর আসছে। পরিস্থিতির মোকাবিলায় ‘চাচা আপন প্রাণ বাঁচা’র রাস্তায় হাঁটছেন গ্রামবাসীরা। প্রশাসনের ওপর ভরসা না রেখেই গ্রামে বাইরের লোকের প্রবেশের উপর অলিখিত ফতোয়া জারি করেছেন তারা। গ্রাম ঘিরে গড়ে তোলা হয়েছে বাঁশের ব্যারিকেড। কমিটি গড়ে রাত জেগে চলছে পাহারাও।

গ্রামে জনঘনত্ব বৃদ্ধির কারণেই দ্রুত ছড়াচ্ছে সংক্রমণ। তার ওপর গ্রামের মানুষজনের কোভিড বিধি মানার ব্যাপারে গা-ছাড়া মনোভাবও অনেকাংশে দায়ী বলে মনে করছেন প্রশাসনের কর্তারা। ফলে, গ্রামীণ এলাকায় কোভিড রোধে সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি টিকাকরণের উপরও জোর দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু বাধ সাধছে ভ্যাকসিনের আকাল। গ্রামীণ ভারতে টিকার পর্যাপ্ত সরবরাহ করতে প্রতিমুহূর্তে ব্যর্থ হচ্ছে মোদির সরকার। বয়স্কদের টিকাকরণই বহু গ্রামে সম্পন্ন হয়নি বলে অভিযোগ উঠছে। তার ওপর গ্রামীণ স্বাস্থ্য পরিষেবায় এমন কঙ্কালসার চেহারা বেরিয়ে পড়ায় প্রশ্নের মুখে পড়েছে মোদির সাড়ে সাত বছরের শাসনকাল। সূত্র : বর্তমান ও টাইমস অব ইন্ডিয়া।



 

Show all comments
  • ভালোবাসার নীড় ২০ মে, ২০২১, ১:৫১ এএম says : 0
    · মানুষ পোড়ানোর কারনে দুষিত হচ্ছে পরিবেশ, আর তার জন্য অসুস্থতার সংখ্যা বেড়ে চলেছে।
    Total Reply(0) Reply
  • মোঃ শরিয়তউল্লাহ ২০ মে, ২০২১, ১:৫১ এএম says : 0
    ভারতবাসীর জন্য দু:খ প্রকাশ করছি!একইসাথে ভালোবাসা প্রকাশ করছি!! আল্লাহ ভারতবাসীকে সাহায্য করুন!!
    Total Reply(0) Reply
  • Md Ekramul Hoque ২০ মে, ২০২১, ১:৫২ এএম says : 2
    একটা প্রতিবেদন তৈরি করুন ভারতের মতো পরিস্থিতি হলে বাংলাদেশের অগ্রীম প্রস্তুতি সম্পর্কে। আমার মনে হয় বাংলাদেশও ভারতের মতো পরিস্থিতি হবে তাই সরকারকে প্রস্তুতি নিতে পরামর্শ দিয়ে মিডিয়া গুলো ভালো অবদান রাখতে পারেন।
    Total Reply(0) Reply
  • Sheikh Selim ২০ মে, ২০২১, ১:৫২ এএম says : 0
    আমাদের দেশ সবচেয়ে বেশি ঝুকিতে ।কারন আমাদের দেশে পর্যাপ্ত পরিমাণ চিকিৎসার ব্যবস্থা নেই।
    Total Reply(0) Reply
  • Mashiur Rahman Sumon ২০ মে, ২০২১, ১:৫৩ এএম says : 0
    মানুষ পোড়ানোর কারনে আবহাওয়া দূষিত হচ্ছে। তাই মানুষ শারীরিক ভাবে অসুস্থ হচ্ছে। এবং অসুস্থ মানুষ কে করোনা ভাইরাস সহজেই আক্রান্ত করতে পারে।
    Total Reply(0) Reply
  • মোঃ+দুলাল+মিয়া ২০ মে, ২০২১, ৩:০৬ এএম says : 0
    লাশ মাটি দিয়ে দিলে ভারতের জন্য ভালো একটি সুবিধা হতো, বাতাসের সাথে করনা মিলতে পারতে না, কে বুঝাইবে এদের এরা হলেন মূর্তি পুজোর লোক ,এরা মনে করবে মুসলমান মাটি দিয়ে থাকে, আমরা কোন দিবে,এইটা বুজতেছেনা বাতাস দূষিত হয়ে করনা কয়েক রকমের রূপ ধারণ করতেছে আরো মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হবে,
    Total Reply(0) Reply
  • গিয়াস উদ্দীন ফোরকান ২০ মে, ২০২১, ৯:৩৭ এএম says : 0
    আলহামদুলিল্লাহ ধ্বংস ওনিবার্য
    Total Reply(0) Reply
  • Gourishankar Routh ২০ মে, ২০২১, ১০:৪০ এএম says : 0
    এটা সরকারি হিসাব। আসল সংখ্যা আরও চারগুণ।
    Total Reply(0) Reply
  • Dipak Kumar Das ২০ মে, ২০২১, ১০:৪২ এএম says : 0
    ভয় দেখিয়ে লাভ নেই। ভারত বিশ্বের মধ্যে সবথেকে বেশি জনঘনত্বের দেশ। জনসংখ্যার ঘনত্বের তালিকায় ভারতের স্থান একদম শীর্ষে। সুতরাং এগুলো হবেই। যেখানে আমেরিকা, ইতালি, কানাডা, রাশিয়া, ব্রিটেনের মতন কম জনঘনত্বের; মেডিক্যাল সায়েন্সে উন্নত প্রথম সারির দেশগুলি করোনার থাবা নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না, সেখানে ভারত তুলনামূলক ভাবে পদে আছে। তবে জনগণ এবং কেন্দ্র রাজ্য উভয় সরকার সচেতন হলে সংক্রমণ হয়ত আরো একটু কমানো যাবে, কিন্তু ঠেকানো যাবে না কোনোমতেই।
    Total Reply(0) Reply
  • Rajat Kumar ২০ মে, ২০২১, ১০:৪৩ এএম says : 0
    তো কি হয়েছে? সমস্যা কিছু নেই! ইসরাইল তো আমাদের সঙ্গে আছে!
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ