Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দেবিদ্বারে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অভিযান নিয়ে তুলকালাম কান্ড!

৬ সদস্য জনরোষে

দেবিদ্বার (কুমিল্লা) উপজেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১৯ মে, ২০২১, ৮:৪৫ পিএম

কুমিল্লার দেবিদ্বারে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ৬ সদস্যের একটি দল অভিযান চালাতে গিয়ে তুলকালাম কান্ড ঘটানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে। ওই অভিযানে রাসেল মিয়া (২৭) নামে এক যুবকের ঘরে তল্লাশী চালিয়ে মাদক উদ্ধার এবং ৬ হাজার টাকা আদায়ের ঘটনায় স্থানীয়রা ভূঁয়া ডিবি পুলিশ সন্দেহে তাদের গণধোলাই দেয়। পরে তাদেরকে স্থানীয় পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার বাড়িতে নিয়ে যান। দেবিদ্বার থানা পুলিশ হেফাজত থেকে জেলা মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা আটক ৬ সদস্যকে নিয়ে যাওয়ার কথা থাকলেও সন্ধ্যা সাড়ে ৮টায় এ রিপোর্ট লিখা পর্যন্ত কেউ আসেনি বলে জানা গেছে। বুধবার দুপুরে উপজেলার জাফরগঞ্জ গোমতী নদীর বেরীবাঁধ সংলগ্ন গোদারা ঘাটের মীর বাড়ির মৃত বজলু মিয়ার বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে ।

স্থানীয়রা জানায়, মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর কুমিল্লা কার্যালয়ের পরিদর্শক আবু বকর ছিদ্দিক, এএসআই উত্তম বরন দেবনাথ, আবুল কাসেম, গাড়ি চালক রফিকুল ইসলাম, কনস্টবল মিঠুন চন্দ্র রবি দাস ও শরিফুল ইসলামসহ ৬ সদস্যের একটি দল মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ষ্টিকার লাগানো একটি জিপ নিয়ে জাফরগঞ্জ বাজারে আসেন (গাড়ি নং- ঢাকা-মেট্রো-ঠ-১৩-১৬৭৯)। পরে তারা জাফরগঞ্জ গোমতী নদীর বেরীবাঁধ সংলগ্ন গোদারাঘাট মীর বাড়ির মৃত বজলু মিয়ার বাড়িতে গিয়ে তার ছেলে রাসেল মিয়াকে (২৭) খোঁজ করেন। পরে তাকে না পেয়ে তার বৃদ্ধা মা রফিয়া বেগম (৬৫) ও তার বোন ময়না বেগমকে (২৯) চাপ দিতে থাকেন রাসেলকে উদ্ধার না করে দিলে তাদেরকেই ধরে নিয়ে যাবে। ঘরে মাদক আছে কিনা তাই তল্লাশী চালান, এক পর্যায়ে ঘরে কয়েক বোতল মদ ও কিছু ইয়াবা খুঁজে পান। ওই অভিযানের সংবাদে শত শত লোক বাড়ির আশ-পাশে ভীড় করতে থাকে। তাদের ভূয়া ডিবির লোক মনে করে উপস্থিত লোকজন তাদেরকে বেধরক মারধর করতে থাকে। এ সময় ৩জন পালিয়ে যান। স্থানীয় কিছু লোক এসে জনরোষ থেকে অপর ৩জনকে উদ্ধার করে জাফরগঞ্জ গ্রামের পুলিশের এক উর্ধতন কর্মকর্তার বাড়িতে নিয়ে যান। ওই কর্মকর্তা বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর রেলওয়ে পুলিশের নিরাপত্তা প্রধান ডিআইজি শাহ আলম। তার ভাইয়ের মৃত্যুর কারনে তিনি বাড়িতেই অবস্থান করছিলেন। ডিআইজি শাহ আলম বিষয়টি দেবিদ্বার থানা পুলিশকে জানালে দেবিদ্বার-ব্রাক্ষণপাড়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আমিরুল্লাহ ও দেবিদ্বার থানার ওসি আরিফুর রহমান একদল পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যান। তখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে এনে আটককৃতদের পুলিশ হেফাজতে রাখে।

ময়না বেগম জানান, ওরা কখনো ডিবির লোক, কখনো সিআইডির লোক, আবার কখনো মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের লোক বলে দাবি করেন। আমার ভাই মাদকের সাথে জড়িত না হলেও নিজেরাই ঘরে কিছু মাদক রেখে তারাই উদ্ধার করে আমাদের চাপ দিতে থাকেন। আর মাসোহারার ২০ হাজার টাকা দাবি করেন। আমরা তা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে অনেক বাকবিতন্ডার পর ৭ হাজার টাকায় নেমে আসে। টাকা না দিলে আমাদের জোর করে তুলে নেওয়ার হুমকি দেন। আমার ঘরে থাকা ৬ হাজার টাকা দিলে তারা ওই টাকা ও মাদক নিয়ে দ্রুত চলে যাওয়ার সময় স্থানীয়দের সন্দেহ হয়।

রাসেল মিয়া জানান, সকালে আমি জাফরগঞ্জ বাজারে আসার প্রস্তুতি নেই। এ সময় কিছু অপরিচিত লোক আমার বাড়ির দিকে আসতে দেখে আমার সন্দেহ হয়। ওদের সাথে এলাকার কিছু চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীও ছিল। তাই আমি বাড়ির একটি ঘরে লুকিয়ে থাকি। ওরা আমার মায়ের ঘরে প্রবেশ করে বলেন, আপনার ছেলে মাদক ব্যবসায়ী। তার মসোহারার ২০ হাজার টাকা নিতে এসেছি। এ সময় আমার মা ও বোন দিতে অস্বীকৃতি জানালে তারা ঘর তল্লাশী শুরু করে। তখন নিজেদের রাখা কয়েকটি মদের বোতল ও ইয়াবা খুঁজে পায় বলে জানায়। এ নিয়ে তর্ক-বিতর্ক করতে থাকে। আমার মা-বোনকে নিয়ে যাওয়ার হুমকি দেয়। পরে রফাদফায় ৭ হাজার টাকায় নেমে আসে। তখন আমি ফোনে আমার বোনকে টাকা দিয়ে বিদায় করতে বলি। ঘরে ৬ হাজার টাকা ছিল, তা তাদের দেয়ার পর চলে যায়। পরে স্থানীয়রা ভুয়া সন্দেহে তাদেরকে আটকপূর্বক মারধর করেন।

দেবিদ্বার থানার ওসি আরিফুর রহমান এবং বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর রেলওয়ে পুলিশের নিরাপত্তা প্রধান ডিআইজি শাহ আলমের সাথে এ ব্যাপারে সেল ফোনে কথা বলার চেষ্টা করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে দেবিদ্বার-ব্রাক্ষনপাড়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আমিরুল্লাহ বলেন, কুমিল্লা মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ৬ সদস্যের একটি টিম দেবিদ্বার উপজেলার জাফরগঞ্জ এলাকায় মাদক উদ্ধার অভিযানে আসেন। রাসেলের বাড়ি থেকে কিছু মাদকও উদ্ধার করেন। স্থানীয়দের সাথে ভুল বুঝাবুঝিতে একটু হিচিং হয়। রাসেলের পরিবারের লোকজন বলেছেন, ওদের ওখানে মাদক ছিলনা এবং তাদের কাছ থেকে ৬ হাজার টাকা নিয়ে আসে। তাদের দেয়া টাকার বর্ননা অনুযায়ী মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের একজনের মানি ব্যাগে থাকা ২টি এক হাজার টাকার নোট ও ৮টি পাঁচশত টাকার নোট পাওয়া গেলেও তার সাথে আরো টাকা ছিল। তাই সত্যতা নিরূপন করা কঠিন। বিষয়টি মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তরের উর্ধতন কর্মকর্তাদের অবগত করা হয়েছে। ওনারা আসলে তাদের থানা থেকে হস্তান্তর করা হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: কুমিল্লা


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ