পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দেশে মেগা প্রকল্পের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদ্মাসেতু প্রকল্প। ইতোমধ্যে করেনোর ধাক্কা এড়াতে পদ্মা সেতু প্রকল্প এলাকা লকডাউন করে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। দ্বিতীয় ঢেউ সামাল দিতে লকডাউনের মধ্যেই চলছে কাজ। এতে করে কর্মরত শ্রমিক কিংবা প্রকৌশলী কারোরই প্রকল্প এলাকার বাইরে যাওয়ার অনুমতি নেই। বাইরে থেকেও কেউ ভেতরে যেতে পারছেন না। যারা নতুন করে কাজে যোগ দিচ্ছেন, তাদের ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিনে থাকার পর প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য পরীক্ষাতেই উত্তীর্ণ হতে হচ্ছে।
এতকিছুর পরেও করোনার ধাক্কা থেকে পদ্মাসেতু প্রকল্পকে রক্ষা করা যাচ্ছে না। সেতুর মূল কাঠামো নির্মাণ সেরে ফেলা গেলেও বাকি কাজের গতি টেনে ধরছে করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ। কঠোর বিধিনিষেধের দ্বিতীয় ধাপে সঠিক সময় মালামাল আনা এবং বিদেশ থেকে বিশেষজ্ঞদের আসা-যাওয়ার সমস্যা হওয়ায় প্রভাব পড়ছে নির্মাণযজ্ঞে। তবে সংশ্লিষ্টরা আশাবাদী, ২০২২ সালের জুনে স্বপ্নের এ সেতু চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করার লক্ষ্য নিয়েই প্রকল্পের কাজ চলছে। পদ্মা সেতুর প্রকল্প পরিচালক শফিকুল ইসলাম বলেন, এপ্রিল পর্যন্ত মূল সেতুর ৯৩ দশমিক ২৫ শতাংশ কাজ শেষ। পুরো প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি ৮৫ দশমিক ৫ শতাংশ।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গত বছরের শুরুতে এ প্রকল্পে প্রায় সাড়ে চার হাজার শ্রমিক কাজ করছিলেন। মহামারীর শুরুতে চীনা শ্রমিকরা চলে যাওয়ার পরও মার্চে কাজে ছিলেন প্রায় দেড় হাজার শ্রমিক। তাদের নিয়েই সীমিত পরিসরে কাজ চলছিল। পরিস্থিতির উন্নতি হলে বছরের শেষে ডিসেম্বরে আবার পুরোদমে কাজ শুরু হয়। প্রকল্প পরিচালক শফিকুল ইসলাম বলেন, মহামারীতে কাজের যে গতি কমেছে, তা এখনো পুরোপুরি সামাল দেওয়া সম্ভব হয়নি। এজন্য সময় বেশি লাগছে। তিনি বলেন, দেশের বাইরে থেকে যে মালামাল আগে এক মাসে আসত, তা এখন দুই থেকে তিন মাস সময় নিচ্ছে। তাতেও কাজ পিছিয়ে যাচ্ছে। তাছাড়া এ প্রকল্পের অনেক বিশেষজ্ঞ দেশের বাইরে, বিশেষ করে চীন থেকে আসা যাওয়া করেন। তাদের দেশে গিয়ে ১৫ থেকে ২০ দিন কোরেন্টিনে থাকতে হচ্ছে। এখন বিমানের টিকেট পাওয়াও তাদের জন্য সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে সব ঠিক থাকলে ২০২২ সালের জুনে এ সেতু চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা যাবে জানিয়ে প্রকল্প পরিচালক শফিকুল ইসলাম বলেন, টার্গেট সময় সামনে নিয়েই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আশা করছি এ সময়েই সব কাজ শেষ করতে পারব। একইরকম আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। সম্প্রতি তিনি সাংবাদিকদের বলেছেন, আগামী বছর নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই পদ্মাসেতুর কাজ শেষ হবে। মন্ত্রী বলেন, সেতুতে ঢালাইয়ের কাজ, সড়কের জন্য প্রস্তুত করা, রেলের জন্য প্রস্তুত করার কাজ এর মধ্যেই শেষ করা হবে। তিনি জানান, বর্তমানে এ প্রকল্পে ৪ থেকে ৫ হাজার শ্রমিক-কর্মচারি কাজ করছেন। অনেক সময় এ সংখ্যা কম বেশি হয়। তবে করোনাভাইরাস সংক্রমণ তেমন দেখা যায়নি। গত এক বছরে ১০ জনের বেশি আক্রান্ত হয়েছে বলে আমার মনে হয় না।
গত বছরের ১০ ডিসেম্বর পদ্মা সেতুর ৪১তম স্প্যান স্থাপনের মধ্য দিয়ে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার পদ্মা সেতুর পুরো মূল কাঠামো দৃশ্যমান হয় সেদিন; তৈরি হয় রাজধানীর সঙ্গে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার সরাসরি সড়ক যোগাযোগের পথ। বর্তমানে সেতুর নিচতলায় রেলওয়ে স্ল্যাব, উপরে রোড স্ল্যাব বসানোর কাজ চলছে। এছাড়া পিচ ঢালাই এবং ল্যাম্পপোস্ট বসানো, বিদ্যুৎ, গ্যাস ও টেলিযোগাযোগ লাইন নেওয়াসহ আরও কিছু কাজ বাকি।
পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্প সূত্র জানায়, এখন পর্যন্ত সেতুর সার্বিক কাজের যে অগ্রগতি, তাতে নির্ধারিত সময়ে সেতুর সড়কপথ প্রস্তুত করা সম্ভব হলেও রেলপথ চালু করা সম্ভব হবে না। কারণ রেলপথ বসানোর কাজ শুরুই হয়নি। সেতু বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আগামী নভেম্বর কিংবা ডিসেম্বরে রেলপথ বসানো শুরু হতে পারে, তবে বিষয়টি এখনো চূড়ান্ত হয়নি। শুধু সেতুর ভেতরে নয়, দুই পাশে সংযোগ রেললাইনের কাজও পিছিয়ে রয়েছে। সব মিলিয়ে পদ্মা সেতু চালুর দিনে ট্রেন চালানো নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। এ অনিশ্চয়তা আরো প্রকট করে তুলেছে চলমান করোনা পরিস্থিতি।
দ্বিতল পদ্মা সেতুর চার লেনের সড়কের উপর দিয়ে চলবে গাড়ি। আর নিচে স্প্যানের ভেতর দিয়ে চলবে ট্রেন। পদ্মা সেতু যেদিন চালু হবে, সেদিন থেকেই ট্রেন চালানোর কথা বলে আসছেন সরকারের নীতিনির্ধারকরা। কয়েক দিন আগে রেলপথ মন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন পদ্মাসেতু রেল প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি দেখতে গিয়েছিলেন। সেখানে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, পদ্মাসেতু চালুর দিন থেকেই ট্রেন চলবে।
কয়েক দফা পিছিয়ে সর্বশেষ আগামী বছরের জুনে সেতুটি যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়ার কথা বলা হচ্ছে। তবে এখন পর্যন্ত কাজের যা অগ্রগতি, তাতে জুনের মধ্যে সেতুতে রেলপথ বসানোর কাজ শেষ হবে কিনা তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। প্রকল্প সূত্র জানায়, সম্প্রতি পদ্মা সেতুর ওপর রেলপথ বসানোর সময় ঠিক করার জন্য সংশ্লিষ্টদের নিয়ে গত মাসে একটি সভা করে সেতু বিভাগ। সভায় পদ্মা সেতু প্রকল্পের ঠিকাদার, পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের ঠিকাদারসহ উভয় প্রকল্পের পরামর্শকসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সভায় সেতুর ওপর রেললাইন বসানোর কাজ আগামী নভেম্বর কিংবা ডিসেম্বরে শুরু করার ব্যাপারে প্রাথমিকভাবে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তবে বিষয়টি এখনো চূড়ান্ত হয়নি। পরবর্তী সময়ে দুই প্রকল্পের ঠিকাদাররা মিলে রেললাইন বসানোর দিন-তারিখ চূড়ান্ত করবেন।
এ প্রসঙ্গে সেতু বিভাগের সচিব মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন বলেন, পদ্মা সেতুর বেশির ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। এখন সেতুর ওপর কংক্রিটের স্ল্যাব বসানোর কাজ করা হচ্ছে। সেতু দিয়ে গ্যাসের লাইনও করা হবে। মূলত এ গ্যাসের লাইনটি নির্মাণের কারণেই এখনই সেতুতে রেললাইন বসানোর কাজটি শুরু করা সম্ভব হচ্ছে না। সেতু বিভাগের সচিব আরো বলেন, কারিগরিভাবে সেতুর ওপর গ্যাস আর রেললাইনের কাজ একসঙ্গে করা সম্ভব নয়। এ কারণে পরিকল্পনা করা হচ্ছে, গ্যাসের লাইনটি দুই কিলোমিটার পর্যন্ত হয়ে যাওয়ার পর রেললাইন বসানোর কাজ শুরু করা হবে। গ্যাসের লাইনের কাজ অন্তত দুই কিলোমিটার শেষ করে রেললাইন বসানোর কাজ শুরু করতে অন্তত চলতি বছরের নভেম্বর-ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় লাগবে। তবে এ কারণে সেতুটি আগামী জুনের মধ্যে চালু করা নিয়ে কোনো সমস্যা হবে না বলে উল্লেখ করেন তিনি। তবে চলতি বছরের ডিসেম্বরে সেতুর ওপর রেললাইন বসানোর কাজ শুরু হলে পরের ছয় মাসে তা শেষ করার কাজটিকে চ্যালেঞ্জিং হিসেবে মনে করছেন প্রকল্পের কর্মকর্তারা।
পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্প সূত্র জানায়, পদ্মা সেতু চালুর দিনেই সেতুর ওপর দিয়ে ট্রেন চালানোর জন্য মাওয়া থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত অংশটির কাজ সবার আগে শেষ করতে চায় রেলওয়ে। এ অংশের প্রায় ২৭ কিলোমিটার এমব্যাংকমেন্টের মধ্যে ১৩ কিলোমিটার শেষ হয়েছে। সব মিলিয়ে মাওয়া-ভাঙ্গা সেকশনের নির্মাণকাজের অগ্রগতি ৬৪ শতাংশ। আগামী জুনের মধ্যে সেকশনটির পুরো কাজ শেষ করে ট্রেন চলাচলের উপযোগী করে তোলাও চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়েছে। অন্যদিকে চলতি বচরের জানুয়ারিতে প্রকল্প কার্যালয় থেকে দেয়া এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, চলমান করোনা সংকটে নির্মাণকাজ থেমে না থাকলেও কাজের অগ্রগতি ব্যাহত হয়েছে। এ কারণে কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ে প্রকল্প শেষ করাকে প্রধান চ্যালেঞ্জ হিসেবে অভিহিত করেছে প্রকল্প কর্তৃপক্ষ।
পদ্মাসেতু নির্মাণের কাজ করছে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি (এমবিইসি) ও নদী শাসনের কাজ করছে চীনের সিনো হাইড্রো করপোরেশন। ১০ হাজার ১৬২ কোটি টাকায় ২০০৭ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে প্রকল্পটি শেষ করার লক্ষ্য ছিল। কিন্তু প্রকল্প শুরু হতেই সময় লেগে যায় ২০১৪ সাল। চারবার প্রকল্প সংশোধন করে এখন ব্যয় ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে।
অন্যদিকে, ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি ৮০ লাখ টাকা ব্যয়ে পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পে ১৮ হাজার ২১০ কোটি ১১ লাখ টাকা দিচ্ছে বাংলাদেশ সরকার। বাকি ২১ হাজার ৩৬ কোটি ৬৯ লাখ টাকা ঋণ দিয়েছে চায়না এক্সিম ব্যাংক। বাকি অর্থ সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে যোগান দেওয়া হচ্ছে। প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয় ২০১৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।