Inqilab Logo

বুধবার, ২২ মে ২০২৪, ০৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৩ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

১৪ ফেব্রুয়ারি জেদ্দায় দ্বিপাক্ষিক হজ চুক্তি : ওমরাহ জটিলতা নিরসনে সউদী যাচ্ছে সংসদীয় স্থায়ী কমিটি

প্রকাশের সময় : ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

শামসুল ইসলাম ঃ ওমরাহ জটিলতা নিরসনের লক্ষ্যে আজ মঙ্গলবার সউদী আরব যাচ্ছেন ধর্ম মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটি’র এক সদস্যবিশিষ্ট প্রতিনিধি দল। ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমানের পরামর্শক্রমে বন্ধকৃত ওমরাহ দ্রুত চালু করার লক্ষ্যে সউদী ডেপুটি ওমরাহ মন্ত্রী ড. ঈশা রাওয়াজের সাথে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করার জন্য ধর্ম মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটি’র সদস্য প্রফেসর ড. আবু রেজা মুহাম্মদ নেজাম উদ্দিন নদভী এমপি ও হাবের ইসি সদস্য সৈয়দ গোলাম সরওয়ার আজ বেলা দুইটায় সাউদিয়া এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইট (এস ভি-৮০১) যোগে রিয়াদের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করবেন। আগামীকাল বুধবার রাতে রিয়াদে সউদী ডেপুটি ওমরাহ মন্ত্রী ড. ঈশা রাওয়াজের সাথে তার দপ্তরে সফররত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির প্রতিনিধি দল বৈঠকে মিলিত হবেন। বৈঠকে বাংলাদেশী ওমরাহ যাত্রীদের ভিসা (মোফা) চালুর বিষয়টি প্রধান্য পাবে। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে। ওমরাহ’র নামে সউদী আরবে মানব পাচারের ঘটনা উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় ২০১৫ সালের মার্চ মাস থেকে সউদী আরবে বাংলাদেশ থেকে ওমরাহ যাত্রীর ভিসা বন্ধ রয়েছে। এতে গত মাহে রমজানেও হাজার হাজার প্রকৃত ওমরাহ যাত্রী ওমরাহ পালনের জন্য মক্কা-মদিনায় যাওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। দীর্ঘদিন যাবৎ ওমরাহ চালু না হওয়ায় শত শত প্রকৃত ওমরাহ যাত্রী বিভিন্ন এজেন্সিতে পাসপোর্ট জমা দিয়েও মাসের পর হয়রানির শিকার হচ্ছেন। প্রকৃত ওমরাহ যাত্রীরা ওমরাহ করতে মক্কা-মদিনায় যাওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হওয়ায় তাদের মাঝে চরম অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। এতে বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমর্যাদাও ক্ষুন্ন হচ্ছে। এক শ্রেণীর অসাধু ওমরাহ এজেন্সির মালিক ওমরার নামে সউদীতে চাকরি সন্ধ্যানকারীদের পাঠিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
ওমরাহ’র নামে সউদীতে হাজার হাজার নো-ব্যাক প্রেরণ করায় সউদী হজ মন্ত্রণালয় বাংলাদেশী ওমরাহ যাত্রীদের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে ওমরাহ’র অন-লাইন সিস্টেম বন্ধ করে দিয়েছে। ভ্রাতৃপ্রতিম সউদী আরবে বৈধভাবে ওমরাহ পালন কার্যক্রম বন্ধ থাকায় বাংলাদেশের হাজার হাজার প্রকৃত ওমরাহ যাত্রীগণ চরম বিপাকে পড়েছেন।
২০১৪ সালে বাংলাদেশ থেকে ওমরাহ করতে ১১ হাজার ৪৮৫ জন সউদী আরব গিয়ে ফেরত আসেনি। ওমরাহ’র নামে সউদীতে মানব পাচারের সাথে জড়িত ওমরাহ এজেন্সিগুলোকে কোনো ছাড় দেয়া হবে না বলে ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান ঘোষণা দিয়েছিলেন।
সউদী আরবে ওমরাহর নামে মানব পাচারের অভিযোগের প্রমাণ মেলায় ৯৫টি ওমরাহ এজেন্সিকে গত ১৮ নভেম্বর শাস্তি দিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। শাস্তি দেয়ার ক্ষেত্রে যে সব ওমরাহ এজেন্সি’র ২/১ জন যাত্রী ওমরাহ করতে গিয়ে দেশে ফিরেনি তাদের লাইসেন্স বাতিল, জরিমানা ও জামানত বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে সউদী সরকারের ওমরাহ নীতিমালা অনুযায়ী ওমরাহ যাত্রী ১% মওকুফ করার বিষয়টি বিবেচনা করা হয়নি। এ ব্যাপারে ক্ষতিগ্রস্ত ওমরাহ এজেন্সিগুলো ধর্ম মন্ত্রণালয়ে তাদের শাস্তি লাঘবের জন্য আপিল করেছে। এদের অনেকের শুনানিও নেয়া হয়েছে। ৬৯টি ওমরাহ এজেন্সির লাইসেন্স বাতিল ছাড়াও সেগুলোর জামানত বাজেয়াপ্ত ও জরিমানা করা হয়। শুধু জরিমানা করা হয়েছে ২৬টি এজেন্সিকে।
সউদী সরকার বাংলাদেশী ওমরাহ যাত্রীদের উপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নিয়েছে এমন ঘোষণা আসার পর ওমরাহ যাত্রীদের মাঝে আশার আলো দেখা দিয়েছিল। গত ১৪ ডিসেম্বর ঢাকাস্থ সউদী দূতাবাস কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে এক চিঠিতে ওমরাহ ভিসা খুলে দেয়ার বিষয়টি অবহিত করেছিল। ধর্ম মন্ত্রণালয় ১৪৩৭ হিযরী সনের ওমরাহ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রাথমিকভাবে ৭০টি ওমরাহ এজেন্সির তালিকা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সউদী রাষ্ট্রদূতের কাছে প্রেরণ করেছে। পরে ওমরাহ কার্যক্রম পরিচালনার অনুমোদন পেয়েছে আরও ৪৭টি এজেন্সি। প্রায় ৩শ’ ওমরাহ এজেন্সির মধ্যে সউদী আরবে ওমরাহ’র নামে মানব পাচারের অভিযোগে ৯৫টি ওমরাহ এজেন্সি’র বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছেন ধর্মমন্ত্রী। যেসব এজেন্সির বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই তাদের ওমরাহ কার্যক্রম পরিচালনার অনুমতি দেয়া হয়েছে।
গত ২১ ডিসেম্বর ধর্মমন্ত্রী মতিউর রহমান বলেছিলেন, ‘ওমরাহর নামে কেউ যেন মানব পাচারে জড়িত না হয় সেজন্য আমরা ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে সরাসরি মনিটরিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আগামী ১২ ফেব্রুয়ারী ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান সউদী- বাংলাদেশ দ্বি-পাক্ষিক হজ চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য সউদী আরবে যাবেন। আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি জেদ্দায় সউদী হজমন্ত্রী ও বাংলাদেশের ধর্মমন্ত্রী নিজ নিজ দেশের পক্ষে হজ চুক্তিতে স্বাক্ষর করবেন। ধর্মমন্ত্রীর সাথে তার সফরসঙ্গী হিসেবে যাবেন ভারপ্রাপ্ত ধর্মসচিব আব্দুল জলিল, অতিরিক্ত সচিব শহীদুজ্জামান, ধর্মমন্ত্রীর এপিএস শফিকুল ইসলাম শফিক, মন্ত্রীর পিও আবু সাঈদ। হাবের সভাপতি মো. ইব্রাহিম বাহার ও মহাসচিব শেখ আব্দুল্লাহ ও আইটির দু’জন সদস্যও আগামী ১০ ফেব্রুয়ারি সউদী আরবে যাচ্ছেন হজ ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম পর্যবেক্ষণের জন্য। হাবের মহাসচিব শেখ আব্দুল্লাহ জানান, ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান হজ চুক্তি করতে সউদী আরবে গিয়ে বাংলাদেশের ওমরাহ ভিসা চালুর লক্ষ্যেও সউদী ডেপুটি ওমরা মন্ত্রী’র সাথে বৈঠক করবেন। সউদী সরকার শিগগিরই বাংলাদেশের ওমরাহ চালু করে দিবেন বলেও হাব মহাসচিব শেখ আব্দুল্লাহ আশাবাদ ব্যক্ত করেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ১৪

১৪ নভেম্বর, ২০২২
২৮ আগস্ট, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ