পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ঈদের ছুটি বাড়ানোর দাবিতে টঙ্গী ও কালিয়াকৈরের দুটি কারখানার শ্রমিকেরা বিক্ষোভ, সড়ক অবরোধ ও ভাঙচুর করেছে। এ সময় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে কমপক্ষে ২০ শ্রমিক গুলিবিদ্ধ হয়েছে। এছাড়া আরও ২৫ থেকে ৩০ জন শ্রমিকসহ বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্যও আহত হন। গুরুতর আহতদের ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। পরে অতিরিক্ত পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। গতকাল সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। অন্যদিকে রাজধানীর মিরপুরের কালশীতে স্ট্যান্ডার্ড গার্মেন্টসের শ্রমিকরা ও উত্তর কমলাপুরে তিন্নি গার্মেন্টসের শ্রমিকরা ছুটি, বেতন ও ঈদ বোনাসের দাবিতে রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন।
পুলিশ ও হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গুরুতর আহত ১৩ জন শ্রমিককে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অন্যদের টঙ্গীর শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতাল ও স্থানীয় ক্লিনিকে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।
ঢাকা মেডিক্যালে আহত শ্রমিক মিজানুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, আমাদের এক পোশাক শ্রমিক অফিসকক্ষে গিয়ে মালিকপক্ষের সঙ্গে ঈদের ছুটির বিষয়ে কথা বলেন। তিনি আমাদের পক্ষ থেকে ১০ দিনের ছুটি চান। মালিকপক্ষ থেকে সাত দিনের ছুটি মঞ্জুর করা হয়। এ নিয়ে কথা কাটাকাটি হয়। এরপর ওই শ্রমিক বের হলে পুলিশ এসে তার মাথায় আঘাত করে। এতে মাথা ফেটে রক্তাক্ত হয়। পরে অন্য শ্রমিকরা জড়ো হয়ে তাকে আঘাতের কারণ জানতে চান। এ সময় কোনও কিছু বুঝে ওঠার আগেই পুলিশ তাদের ওপর গুলি চালায়। এতে অনেকেই গুলিবিদ্ধ হন। আহতদের স্থানীয় একটি হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে দুপুর সোয়া ১টার দিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। তাদের শরীরের বিভিন্ন জায়গায় গুলির চিহ্ন রয়েছে।
টঙ্গীর হামীম গ্রুপের ক্রিয়েটিভ কালেকশন লিমিটেড কারখানার পোশাক শ্রমিক দেলোয়ার হোসেন বলেন, সরকারিভাবে ঘোষিত তিন দিনের ছুটির পরিবর্তে শ্রমিকরা ১০ দশ দিনের ছুটি দাবি করেন। কর্তৃপক্ষ সাত দিনের ছুটি মেনে নেয়ার আশ্বাস দিলে শ্রমিকরা সোমবার সকালে ১০ দিনের ছুটির দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করেন। এক পর্যায়ে আমাদের উপর নির্যাতন শুরু হয়। পুলিশ গিয়ে আমাদের ওপর হামলা ও গুলি করে। এতে আমাদের বেশ কয়েকজন শ্রমিক গুলিবিদ্ধ হন। তাদের টঙ্গী শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে গাজীপুর শিল্প পুলিশ (জোন-২)-এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জালাল উদ্দিন জানান, টঙ্গীর মিলগেইট এলাকায় হামীম গ্রুপের পোশাক শ্রমিকরা সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ১০ দিন ছুটির দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করেন। একপর্যায়ে দুপুরের দিকে তারা কারখানায় ভাঙচুর করে পাশের ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে অবরোধ করেন। এ সময় পুলিশ তাদের মহাসড়ক থেকে সরাতে গেলে তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছুড়তে থাকেন। এ সময় ২০ মিনিটের মতো ওই মহাসড়কে যান চলাচল বিঘ্নিত হয়। একপর্যায়ে পুলিশ কয়েক রাউন্ড কাঁদানে গ্যাস ও রাবার বুলেট ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে এবং প্রায় আধঘণ্টা পর মহাসড়কে যানবাহন চলাচল শুরু করে।
টঙ্গী পশ্চিম থানার ওসি শাহ আলম বলেন, সংঘর্ষের সময় শ্রমিকরা আমাদের ওপর চড়াও হয়ে ইট-পাটকেল ছুড়লে আমাদের কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। পরে জীবন রক্ষার্থে পুলিশ কয়েক রাউন্ড রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাসসেল নিক্ষেপ করে। আহতদের টঙ্গীর শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।
টঙ্গীর শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক পারভেজ হোসাইন জানান, ওই সংঘর্ষের ঘটনায় রাবার বুলেটে আহত ২০ জন শ্রমিককে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। এছাড়া আহত একজন পুলিশ সদস্যকেও প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।
অপরদিকে, কালিয়াকৈর উপজেলার বিশ্বাসপাড়া এলাকার স্টার লিঙ্ক ডিজাইন লিমিটেড নামের কারখানার শ্রমিক জাহাঙ্গীর আলম জানান, ওই কারখানার শ্রমিকরা সোমবার সকালে কাজে যোগ দিতে গিয়ে জানতে পারেন তাদের ঈদের ছুটি তিন দিন দেয়া হয়েছে। খবরটি কারখানা শ্রমিকদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়লে ছুটি বাড়ানোর দাবিতে তারা কাজ বন্ধ করে কারখানার সামনে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে অবস্থান নেন এবং বিক্ষোভ শুরু করেন। খবর পেয়ে শিল্প পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে শ্রমিকদের বুঝিয়ে সড়কের পাশে নিয়ে যায়। শ্রমিকদের দাবি, তাদের কমপক্ষে ১২ দিনের ছুটি দিতে হবে।
টঙ্গীর মিল গেইট এলাকার হামিম গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ক্রিয়েটিভ কালেকশন লিমিটেড কারখানার সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) মিজানুর রহমান বলেন, শ্রমিকদের আন্দোলনটি অযৌক্তিক। প্রতি বছরের মতো এবারও ঈদ উপলক্ষে শ্রমিকদের সাত দিনের ছুটি ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। কিন্তু তারা অযৌক্তিকভাবে আন্দোলন চালিয়ে কারখানায় ব্যাপক ভাঙচুর চালিয়েছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ১০ মে থেকেই কারখানা ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।
গাজীপুর শিল্প পুলিশ পরিদর্শক কমর উদ্দিন বলেন, কারখানার শ্রমিকেরা ১২ দিনের ছুটি চাইলেও মালিক পক্ষের সঙ্গে কথা বলে ১০ দিনের ছুটি মঞ্জুর করলে তারা আন্দোলন বন্ধ করেন। দুই কারখানা চত্বরেই অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
এদিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ (পরিদর্শক) বাচ্চু মিয়া জানান, টঙ্গী মিলগেট এলাকায় গুলিবিদ্ধ নয় শ্রমিক ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের জরুরি বিভাগে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট সবাইকে অবগত করা হয়েছে। তাদের মধ্যে দুজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
সড়ক অবরোধের পর ১০ দিনের ছুটি পেলেন গার্মেন্টস শ্রমিকরা
ঈদের ছুটি বাড়ানোর দাবিতে সোমবার সকাল থেকে মিরপুরের কালশীতে সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন স্ট্যান্ডার্ড গার্মেন্টসের শ্রমিকরা। বিকেল নাগাদ পুলিশের মধ্যস্থতায় ১০ দিনের ছুটি মঞ্জুর হয় শ্রমিকদের। মালিকপক্ষের এমন ঘোষণায় শ্রমিকদের বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ কর্মসূচিও শেষ হয়। গতকাল সকাল থেকেই রাজধানীর মিরপুরের কালশীতে স্ট্যান্ডার্ড গার্মেন্টসের সামনে বিক্ষোভ করতে থাকেন শ্রমিকরা। দুপুর ১২টার দিকে তাদের সরিয়ে দেয় পুলিশ। দুপুর ২টার দিকে আবার তারা গার্মেন্টসের সামনের রাস্তায় জড়ো হন।
আন্দোলনরত শ্রমিকরা বলেন, ঈদের বাড়তি ছুটি ও বাড়ি যাওয়ার যথাযথ বন্দোবস্তই হতে পারে সমাধান। একদিকে ছুটি কম, আরেকদিকে সব বন্ধ। নিম্নআয়ের মানুষরা কী করবে? পল্লবী থানার ওসি কাজী ওয়াজেদ বলেন, তারা ১০ দিন ছুটি চেয়েছিল, মালিকপক্ষ তাদের ছুটি দিয়েছে। শ্রমিকরা গার্মেন্টস ডিউটি না করে নিজ নিজ বাসায় ফিরে যাচ্ছে। বিকেলের পর থেকে কোন সমস্যা নেই।
বেতন-বোনাসের দাবিতে গার্মেন্টস শ্রমিকদের সড়ক অবরোধ
রাজধানীর উত্তর কমলাপুরে তিন্নি গার্মেন্টসের শ্রমিকরা বেতন ও ঈদ বোনাসের দাবিতে রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করছেন। শ্রমিকদের রাস্তা অবরোধের কারণে উত্তর কমলাপুর এলাকায় ঘণ্টাব্যাপী যানচলাচল বন্ধ রয়েছে। গতকাল বিকেলে শ্রমিকরা রাস্তা অবরোধ কর্মসূচি পালন করে। পরে পুলিশ, শ্রমিক ও মালিক পক্ষের মধ্যে বৈঠকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
মতিঝিল থানার ওসি ইয়াসির আরাফাত বলেন, রাজধানীর ফকিরাপুলের তিন্নি গার্মেন্টসের শ্রমিকরা বেতন ও ঈদের বোনাস পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ উঠেছে। বেতন ও বোনাসের দাবিতে গার্মেন্টসটির শ্রমিকরা ফকিরাপুল থেকে এসে উত্তর কমলাপুর এলাকায় রাস্তা অবরোধ করে। তাদের রাস্তা অবরোধের কারণে ঐ এলাকায় যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে বিকেল ৫টার দিকে শ্রমিকদের সঙ্গে আলোচনা করেন মালিক পক্ষ। পরে বেতন ও বোনাসের বিষয়ে সমাধান হয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।