মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
নরেন্দ্র মোদি এমন ক্যারিশম্যাটিক নেতা যিনি যেখানেই যান, কথা বলেন, সেখানের মানুষের মন নিমিষেই জয় করে নেন। সবাই না ভাবলেও বিজেপি নেতাদের মনোভাব এমনটাই ছিল। কিন্তু সে দিন বোধ হয় অতীত হয়ে গেছে। এখন আর তার কোন কারিশমা কাজে আসছে না। বলা যায় নরেন্দ্র মোদি এবং সেই সঙ্গে তার দল বিজেপির উল্টোরথ শুরু হয়ে গেছে। এটি মনে করার সঙ্গত শত কারণ রয়েছে। তবে সেগুলোর কেন্দ্রে যেগুলো আছে সেগুলো বিবেচনায় নিলে বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠবে।
পশ্চিমবঙ্গসহ ৫টি রাজ্যে বিধান সভার নির্বাচন এবং ফলাফলে তার উল্টোরথের বিষয়টি স্পষ্ট। সারাদেশকে করোনার উর্বরক্ষেত্র হিসেবে উন্মুক্ত করে দিয়ে তিনি বারবার পশ্চিমবঙ্গে হানা দিয়েছেন বাংলা দখলের জন্য। ভাবখানা এমন, নির্বাচনের ফলাফল বেরোয়নি বলে বিজেপি ক্ষমতায় যায়নি। অর্থাৎ বিজেপি তো ক্ষমতায় এসেই গেছে, শুধু ফলাফল বেরোতে বাকি। ২০১৬ সালের চেয়ে অনেক ভাল ফল করলেও তার মনোবাসনা কিন্তু পূর্ণ হয়নি। হতাশাজনক ফলাফলের পর সম্বিৎ ফিরে পেলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। কিন্তু বড্ড দেরি হয়ে গেছে। ততদিনে তার উল্টোরথ শুরু হয়ে গেছে। তা না হলে যে অযোধ্যায় রাম মন্দির নির্মাণের জন্য সুপ্রিম কোর্টকে পর্যন্ত ব্যবহার করেছেন হিন্দু চরমপন্থীদের পক্ষে রায় দেবার জন্য সেখানে কেউ পরাজিত হয়? স্থানীয় পর্যায়ের এ নির্বাচনে বোঝা গেছে হঠাৎ উস্কে দিয়ে যে হিন্দুদের ভোট তার পক্ষে টেনেছিলেন তারা আর এখন তার বশে নেই।
শুধু তাই নয়, পঞ্চায়েত ভোটে খোদ নরেন্দ্র মোদির কেন্দ্র বারাণসীতেই ধরাশায়ী অবস্থা হল বিজেপির। উত্তরপ্রদেশের আরও এক ধর্মীয় স্থান মথুরাতেও পরাজিত হয়েছে বিজেপি। চারটি দফায় উত্তরপ্রদেশের পঞ্চায়েত ভোট হয় শেষ হয় গত ২৯ এপ্রিল। গ্রাম পঞ্চায়েত, গ্রাম প্রধান, ব্লক পঞ্চায়েত ও জেলা পঞ্চায়েত এ চারটি বিভাগে নির্বাচন হয়। তবে এর মধ্যে বিজেপির সবচেয়ে বেশি ভরাডুবি হার হয় অযোধ্যা ও বারাণসীতে। অযোধ্যায় ৪০টি জেলা পঞ্চায়েত আসনের মধ্যে মাত্র ৬টিতে জয়ী হয়েছে বিজেপি। অযোধ্যায় ২৪টি আসনে সমাজবাদী পার্টি জয়ী হয়েছে। এ অযোধ্যাতেই রামমন্দির তৈরি ছিল বিজেপির অন্যতম লক্ষ্য। গত বছর সেই মন্দির তৈরি হয়েছে। অযোধ্যায় ৫টি আসনে জয়ী হয়েছে বহুজন সমাজবাদী পার্টি।
বারাণসী নরেন্দ্র মোদির লোকসভা কেন্দ্র। বারাণসী জেলা পঞ্চায়েত আসনে ৪০টির মধ্যে মাত্র ৭টিতে জয়ী হয়েছে বিজেপি। ১৫টি আসন পেয়েছে সমাজবাদী পার্টি। মথুরায় মাত্র ৩টি জেলা পঞ্চায়েত আসন পেয়েছে বিজেপি। সব মিলিয়ে যোগীরাজ্যে বিজেপির থেকে অন্য বিরোধীরা এগিয়ে রয়েছে। উত্তরপ্রদেশের জেলা পঞ্চায়েতের ৩০৫০টি আসনের মধ্যে এখনও পর্যন্ত ৯১৮টি আসনে বিজেপি জয়ী হয়েছে বলে দাবি করেছে। উত্তরপ্রদেশের জেলা পঞ্চায়েতে বিজেপি ও সমাজবাদী পার্টি ছাড়া আম আদমি পার্টিও ভালো ফল করেছে বলে দাবি। তবে স্বতন্ত্ররাই জিতেছেন অধিকাংশ স্থানে। যে কারণে ইতোমধ্যে বিজেপি টাকা ছেড়ে তাদের দলে ভেড়ানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছে বলে জানা যাচ্ছে।
নরেন্দ্র মোদির উল্টো রথের কারণ শুধু ৫ রাজ্য আর পঞ্চায়েতের ভোটে বিজেপির ভরাডুবি নয়, ভারতে এখন কোভিডের যে তাণ্ডব চলছে, তার অন্যতম প্রধান শিকার হিন্দু তীর্থস্থান বারাণসী এবং তার আশপাশের অঞ্চল। শুধু বারণসী শহরে নয়, ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে আশপাশের প্রত্যন্ত গ্রামেও। চিকিৎসা ছাড়াই ঘরে বসে ঐ সব গ্রামের বাসিন্দারা মারা যাচ্ছেন। উত্তর প্রদেশ রাজ্যের এ অঞ্চলের ক্রুদ্ধ বাসিন্দাদের অনেকে এখন খোলাখুলি প্রশ্ন করছেন এই চরম দুঃসময়ে তাদের এমপি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি লাপাত্তা কেন। কোভিডে সবচেয়ে বিপর্যস্ত এলাকাগুলোর অন্যতম বারাণসীতে হাসপাতাল অবকাঠামো ভেঙে পড়েছে, রোগীরা হাসপাতালে গিয়ে বেড পাচ্ছেন না, অক্সিজেন নেই, অ্যাম্বুলেন্স নেই। এমনকি কোভিড টেস্টের ফলাফল পেতে এক সপ্তাহ পর্যন্ত লেগে যাচ্ছে। গত দশদিনে বারাণসী এবং আশপাশের অঞ্চলের ওষুধের দোকানগুলোতে ভিটামিন, জিংক বা প্যারাসিটামলের মত মামুলি ওষুধ পর্যন্ত মিলছে না।
ক্ষুব্ধ মানুষজন বলছেন যে, মানুষটিকে ভোট দিয়ে তারা এলাকার এমপি নির্বাচিত করেছিলেন সেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এদিকে পা পর্যন্ত মাড়াচ্ছেন না। বারাণসী শহরের বাসিন্দারা বলছেন, মার্চে প্রথম অশনি সঙ্কেত দেখা দিতে শুরু করে। দিল্লি এবং মুম্বাইতে সংক্রমণ বাড়ার পর ঐসব শহরে যখন বিধিনিষেধ আরোপ শুরু হয়, হাজার হাজার অভিবাসী শ্রমিক ভিড় উপচে পড়া বাসে, ট্রাকে, ট্রেনে করে বারাণসী এবং আশপাশের গ্রামগুলোতে তাদের বাড়িতে ফিরে আসে। অনেক মানুষ আবার ২৯ মার্চ হোলি উদযাপনের জন্যও আসে। এরপর ১৮ এপ্রিল গ্রাম পঞ্চায়েত নির্বাচনে ভোট দিতেও শত শত মানুষ দিল্লি, মুম্বাই থেকে হাজির হয়। বিশেষজ্ঞরা বার বার সাবধান করলেও কেউ তাদের কথায় কান দেয়নি। এখন তার পরিণতি ভোগ করতে হচ্ছে বারাণসী অঞ্চলকে। উত্তর প্রদেশ রাজ্যে নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে কোভিডে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন রাজ্যের কমপক্ষে ৭০০ শিক্ষক। সংক্রমণ বাড়া শুরু হলে বারাণসীর হাসপাতালগুলো দ্রুত কোভিড রোগীতে ভরে যায়। ফলে সিংহভাগ মানুষকে এখন নিজ দায়িত্বে এই মহামারি সামলাতে হচ্ছে।
মৃত্যু চাপা দেয়া হচ্ছে? : বারাণসীতে সরকারি হিসাবে মোট রোগীর সংখ্যা ৭০,৬১২, আর মৃত্যুর সংখ্যা ৬৯০। কিন্তু সংক্রমণের সংখ্যার ৬৫ শতাংশই রেকর্ড করা হয়েছে পহেলা এপ্রিল থেকে। সরকারের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী প্রতিদিন মারা যাছে ১০ থেকে ১১ জন। রোববারের মৃতের সংখ্যা ছিল ১৯। কিন্তু সেখানে যাদের সাথেই বিবিসি কথা বলেছে তারা বলেন, সরকারের এই পরিসংখ্যান পুরোপুরি ভুয়া, বানোয়াট, অসত্য।
শহরের মনিকার্নিক ঘাটের কাছে বহুদিনের পুরনো এক বাসিন্দা বললেন, গত এক মাস ধরে শ্মশান ঘাটে বিরতিহীনভাবে মরদেহ পোড়ানোর কাজ চলছে। ‘যেদিকে তাকাবেন অ্যাম্বুলেন্সের আওয়াজ এবং মরদেহ’। আগে, বারাণসীর দুটো প্রধান শ্মশান ঘাটে দিনে ৮০ থেকে ৯০টি দাহ হতো। কিন্তু, ঐ বাসিন্দার কথায়, গত এক মাস ধরে দিনে ৩০০-৪০০ দাহ হচ্ছে। সূত্র : বিবিসি, টাইমস অব ইন্ডিয়া।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।