মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
করোনার ধ্বংসলীলায় কাঁপছে পুরো ভারত। দেশটিতে নতুন করোনা সংক্রমণ বা মৃত্যুর সংখ্যা প্রতিদিনই আশঙ্কাজনক হারে নতুন রেকর্ড তৈরি করছে। নতুন অঞ্চলগুলোতে করোনার থাবায় অক্সিজেন এবং হাসপাতালের বিছানা ঘাটতি বেড়েই চলেছে। ১ মে শুধু সরকারি রেকর্ডেই ৩ হাজার ৬শ’ ৮৯ জন মারা গেছে এবং যদিও প্রকৃত সংখ্যাটি আরো বেশি হৃদয় বিদারক এবং দুর্ভাগ্যজনক। গত ২৯ এপ্রিল শেষ হওয়া ৮ দফার ভোটের লোকসভা নির্বাচনের প্রচারণার নিমগ্নতায় ভারত কখন করোনার দ্বিতীয় এবং সব থেকে বড় প্রলয়ঘরে পরিণত হয়েছে, সেদিকে মনোযোগ দেবার দায় বোধ করেননি দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং তার ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি)। তবে, পশ্চিমবঙ্গে এবং অন্য ৩টি রাজ্যের ২ মে’র ভোটের ফল জানিয়ে দিয়েছে যে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে জাতীয় দায়িত্ব এবং জনমানুষের জীবনকে হুমকির মধ্যে ফেলে নিজের গদি বাঁচাতে অন্ধ হয়ে তিনি যেসব কর্মকান্ড করেছেন, সেসব তার কোনও কাজে আসেনি।
বিজেপি বহুল প্রত্যাশিত রাজ্য আসামকে (৩৬ মিলিয়ন জনসংখ্যা) ধরে রাখতে পারলেও দক্ষিণের দুই রাজ্য কেরালা (জনসংখ্যা ৩৫ মিলিয়ন) এবং তামিলনাড়– (জনসংখ্যা ৮২ মিলিয়ন) একটিও আসন পেতে ব্যর্থ হয়েছে। ভোটাররা কেরালায় মোদির হিন্দু জাতীয়তাবাদের বিরোধী বামপন্থীদের একটি জোটকে এক বিস্ময়কর বিজয় দিয়েছে এবং তামিলনাড়–তে তারা বিজেপির স্থানীয় মিত্রকে পরাজিত করেছে এবং জাতীয় রাজনীতিতে বিজেপির ঐতিহাসিক প্রতিদ্ব›দ্বী কংগ্রেসের মিত্রকে বেছে নিয়েছে। তবে পশ্চিমবঙ্গে (জনসংখ্যা ৯১ মিলিয়ন) মোদি সবচেয়ে বেশি জব্দ হয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী মোদি নিজেই সেখানে প্রায় ২০টি বিশাল সমাবেশের আয়োজন করেছিলেন এবং যে কোনো মূল্যে জেতার জন্য প্রচুর অর্থ ও জনশক্তি ব্যয় করেছিলেন। পরিশেষে, মোদির দল পশ্চিমবঙ্গে মাত্র ৭৭টি আসন দখল করতে পেরেছে। সেখানে মোদির প্রধান প্রতিপক্ষ মমতা ব্যানার্জির অল ইন্ডিয়া তৃণমূল কংগ্রেস (টিএমসি) ২শ’ ১৩ আসন জয় করে নিরঙ্কুশ আধিপত্যের প্রমাণ দিয়েছে। সাংবাদিক শেখর গুপ্ত টিএসি’র এই জয়কে মোদির সরকারের ৭ বছরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনী পরাজয় হিসাবে অভিহিত করেছেন।
কেন মোদির জয়-পরাজয় ভারতের ২৮টি রাজ্যের মধ্যে একটি রাজ্য পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে এত গুরুত্বপূর্ণ? উত্তরটি হ’ল, হিন্দু জাতীয়তাবাদের বীজ যে ভারতের যেকোনও জায়গায়, এমনকি হিন্দি মূল ভাষা নয় এমন একটি স্বতন্ত্র সংস্কৃতি এবং শক্তিশালী ধর্মনিরপেক্ষতার ঐতিহ্য বহনকারী অঞ্চলেও রোপণ করা যায়, বিজেপি এবং তার হিন্দু-জাতীয়তাবাদী আন্দোলনকে সমর্থনকারী স্বৈরচারী অঙ্গ সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (আরএসএস) সেউ নজির সৃষ্টি করতে চেয়েছিল।
টিএমসি পশ্চিমবঙ্গের শ্লথ অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে খুব কম কাজ করেছে। এই রাজ্যটি হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠদের বিভিন্ন জাত এবং প্রায় ৩০ শতাংশ মুসলিম সংখ্যালঘুর মধ্যে বিভক্ত। মোদি একদিকে যেমন অর্থ, উন্নয়ন এবং অগ্রগতির প্রতিশ্রুতি দিয়ে, এবং অন্যদিকে মুসলিম বিরোধী হিন্দুত্ববাদী দল তৈরি করে এর আগে বহুবার সফলভাবে এই জাতীয় পরিস্থিতি নিজের কাজে লাগিয়েছেন।
পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির প্রচার-প্রচারণা এতোটাই কুৎসিত ছিল যে, তা ভারতীয় রাজনীতির নূন্যতম মাণদন্ডকেও অতিক্রম করে য়ায়। সেসময় মোদির ডান হাত অমিত শাহ কটাক্ষ করে বারবার বলেছেন যে, স্থানীয় মুসলিমরা বাস্তবে বিপজ্জনক বাংলাদেশী ‘অনুপ্রবেশকারী’ যারা ‘ভারতীয়’ চাকরি চুরি করতে বেরিয়েছে। তাদেরকে সহায়তা করে ‘সন্তুষ্ট’ করার অভিযোগ তোলেন মমতার বিরুদ্ধে।
একটি ভোটকেন্দ্রে গন্ডগোল চলাকালীন পুলিশ মুসলিম ভোটারদের গুলো করে হত্যা করলে বিজেপির সদস্যরা প্রকাশ্যে উল্লাস প্রকাশ করে। এবং নির্বাচনে জয়লাভের জন্য মহামারী চলাকালীন বিজেপি উচ্চস্বরে ঘোষণা দেয় যে, নির্বাচিত হলে তারা রাজ্যের প্রত্যেককে বিনামূল্যে করোনা টিকা দেবে। এর কোনওটিই কাজে এসেছে বলে মনে হয় না।
তবে, সাধারণভাবে মোদির সমালোচনা করা এবং জাতীয় পর্যায়ে মোদির কর্মকান্ডকে চ্যালেঞ্জ জানাতে তার সমস্ত সমালোচককে একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক শক্তিতে পরিণত করতে পারাটা সম্পূর্ণ ভিন্ন বিষয়। ভারতের এককালের প্রভাবশালী কংগ্রেস দল, যেখান থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং এর নেতা রাহুল গান্ধী সহ বহু শক্তিশালী নেতার উত্থান ঘটেছে, তাদের মধ্যে মোদিকে জাতীয় পর্যায়ে মোদিকে ধরাশায়ী করার মতো যথেষ্ট উদ্যোম ও শক্তি অভাব রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ, কেরালা এবং তামিলনাড়–তে বিজেপির বিরুদ্ধে জয় প্রমান করেছে যে, কিছুই অসম্ভব নয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।