পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মাদারীপুরের শিবচরে বাংলাবাজার-শিমুলিয়া নৌরুটের কাঁঠালবাড়ী ঘাট সংলগ্ন এলাকায় গতকাল সকালে বাল্কহেডের সাথে স্পিডবোটের সংঘর্ষে ২৭ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। দুর্ঘটনার তদন্তে ছয় সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসন। এ তথ্য জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক ড. রহিমা খাতুন।
কাঁঠালবাড়ী নৌপুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গতকাল ভোর ৬টার দিকে মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া ঘাট থেকে যাত্রীবাহী একটি স্পিডবোট ৩১ যাত্রী নিয়ে মাদারীপুরের বাংলাবাজার ঘাটের উদ্দেশে রওনা দেয়। স্পিডবোটটি শিবচর কাঁঠালবাড়ী ঘাটের কাছে আসলে পদ্মা নদীতে নোঙর করা একটি বালুবোঝাই বাল্কহেডের পেছনে সজোরে ধাক্কা লেগে উল্টে দুমড়ে-মুচড়ে যায়। খবর পেয়ে নৌপুলিশের একটি দল দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে উদ্ধার অভিযান শুরু করে। পরবর্তীতে কোস্ট গার্ড এসে উদ্ধার অভিযানে অংশ নেয়। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত তিন শিশু, এক নারীসহ ২৭ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় ৫ জনকে জীবিত উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানোর পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১ জনের মৃত্যু হয়েছে। জীবিত উদ্ধার ৫ জনের মধ্যে একজন ওই স্পিডবোটের চালক শাহ আলম। তাকে আটক করেছে পুলিশ। দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত নিহত ৬ জনের পরিচয় পাওয়া গেছে। নিহতরা হলো মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার টেকেরহাট শংকরদির পাড় গ্রামের তারা মিয়া বয়াতীর ছেলে আবু তাহের বয়াতী, কুমিল্লার দাউদকান্দি গৌরীপুর এলাকার আবুল হোসেনের ছেলে কাউছার, চাঁদপুর মতলব থানার মোহনপুর গ্রামের আলী হোসেন, বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জ থানার ছাদেক বেপারীর ছেলে রিয়াজউদ্দিন, ফরিদপুর বোয়ালমারী থানার একই পরিবারের বাবা পান্নু সরদার ও তার ছেলে ইয়ামিনের পরিচয় জানা গেছে। সংবাদ লেখা পর্যন্ত অন্যদের পরিচয় জানা যায়নি।
লাশগুলো উদ্ধার করে কাঁঠালবাড়ী ঘাটের পাশে একটি স্কুল মাঠে রাখা হয়েছে। সেখানে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অবস্থান করছেন। এ দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে মাদারীপুর স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক মো. আজহারুল ইসলামকে প্রধান করে ছয় সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসন। এছাড়াও দুপুরে ঢাকা থেকে বিআইডবিøউটিএ এবং বিআইডবিøউটিসির কর্মকর্তারা দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
কাঁঠালবাড়ী নৌপুলিশের ওসি আব্দুর রাজ্জাক বলেন, দুর্ঘটনার পর থেকে এ পর্যন্ত ২৭ জনের লাশ উদ্ধার করেছি। আহতাবস্থায় ৫ জনকে উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। প্রথম দফার পর বর্তমানে দ্বিতীয় দফায় উদ্ধার কাজ চলছে।
শিবচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিরাজ হোসেন বলেন, স্পিডবোটের চালক গুরুতর আহত। তাকে পুলিশের নজরদারিতে রেখে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। তার অবস্থা গুরুতর হওয়ায় হাসপাতালের চিকিৎসক তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তিনি আরও বলেন, স্পিডবোটের চালক মাথায় গুরুতর আঘাত পেয়েছেন। তার পুরো মাথায় ব্যান্ডেজ। তিনি কিছুই বলতে পারছেন না। মুমূর্ষু অবস্থায় আছেন।
কোস্টগার্ড সদর দফতরের মিডিয়া কর্মকর্তা লে. কমান্ডার আমিরুল হক বলেন, সমন্বিত চেষ্টায় এখন পর্যন্ত একজনকে জীবিত এবং ২৬ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এর বাইরে চারজনকে জীবিত উদ্ধার করেছেন স্থানীয়রা। জীবিত পাঁচ জন শিবচরের স্থানীয় হাসাপাতালে চিকিৎসাধীন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুপুরে একজন মারা গেছেন। এখনও কতজন নিখোঁজ রয়েছেন তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ঘটনাস্থলে আমাদের ডুবুরি দল কাজ করছে। প্রয়োজনে আরও দক্ষ উদ্ধারকারী টিম পাঠানো হবে।
মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক ড. রহিমা খাতুন বলেন, নৌদুর্ঘটনা তদন্তে ছয় সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে আগামী তিন কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। লকডাউনে স্পিডবোট বন্ধ থাকার পরেও কেন এমন দুর্ঘটনা এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, স্পিডবোটটি মুন্সীগঞ্জ থেকে ছেড়ে বাংলাবাজার আসে। তারা নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে স্পিডবোট ছাড়ে। এসব বিষয় কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। নিহত প্রত্যেকের দাফনের জন্য তাদের পরিবারের কাছে ২০ হাজার টাকার করে দেয়া হচ্ছে।
এলোমেলো স্পিডবোট চালাচ্ছিল চালক : শিবচরের দোতরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে বসে কাঁদছিলেন ৩৫ বছর বয়সী আদুরি বেগম। তাকে সান্ত¡না দেয়ার কেউ নেই। স্বজন হারানোর কান্না থামছেই না। শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌপথে দুই নৌযানের দুর্ঘটনার প্রতক্ষ্যদর্শী তিনি। দুর্ঘটনায় তার স্বামী আরজু মিয়া ও দেড় বছর বয়সী ছেলে ইয়ামিন প্রাণ হারিয়েছেন। আদুরির বাড়ি ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার মাইগ্রো গ্রামে। স্বামী-সন্তান নিয়ে থাকতেন ঢাকার হাসনাবাদে। গত রোববার রাতে আদুরির মা মনোয়ারা বেগম মারা যান। মায়ের লাশ দেখতে স্বামী-সন্তান নিয়ে গ্রামে যাচ্ছিলেন তিনি।
আদুরি বেগম অভিযোগ করেন, চালক ঠিকমতো স্পিডবোট চালাতে পারছিলেন না। দুর্ঘটনায় মৃত ব্যক্তিদের মধ্যে আছেন আদুরি বেগমের স্বামী আরজু মিয়া ও দেড় বছরের সন্তান ইয়ামিন। পদ্মার পাড়ে আহাজারি করতে করতে ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী আদুরি বেগম বলছিলেন, ‘শিমুলিয়া ঘাট থাইকা গাদাগাদি কইরা স্পিডবোট ছাড়ে চালক। যাত্রার শুরু থিকাই এলোমেলো স্পিডবোট চালাচ্ছিল। শুরুতে একবার বোটটি উল্টো যাচ্ছিল। চালকের কারণেই আইজ আমার স্বামী-সন্তান হারাইলাম।’
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।